Sunday, June 16, 2013

Valentina Tereshkova

মহাকাশে নারীর ৫০ বছর

১৬ জুন নারীর মহাকাশ জয়ের ৫০ বছর। ১৯৬৩ সালের এই দিনে প্রথম নারী হিসেবে মহাশূন্যে পাড়ি জমান সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেনতিনা তেরেসকোভা। 



সোভিয়েত চাইল সাম্যবাদী সমাজ গড়তে, পশ্চিমারা চাইল পুঁজিবাদী পৃথিবী। বাধল স্নায়ুযুদ্ধ। আর যাই হোক, স্নায়ুযুদ্ধ অবশ্য বিজ্ঞানবিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিল! মার্কিন শিবিরকে বুদ্ধিবৃত্তিক ঝটকা দিতেই সোভিয়েত শিবির স্বপ্ন আঁকল_ মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠানোর। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যগাগরিনকে প্রথম নভোচারী মানব হিসেবে মহাশূন্যে ভ্রমণ করিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এমনকি দু'বছরের মাথায় ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভ্যালেনতিনা তেরেসকোভাকে প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে মহাশূন্যে পাঠায় সাম্যবাদী শিবির। ভস্টক-৬ নভোযানে চড়ে পৃথিবীকে মোট ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন তেরেসকোভা। বাবা ছিলেন ট্রাক্টর চালক। স্কুল ছাড়ার পর মায়ের মতো নিজেও ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়েছিলেন তেরেসকোভা। মানে ফ্যাক্টরিকন্যা থেকে মহাকাশকন্যা! 

তেরেসকোভা ৫০ বছর আগে যে আলো ফেলেছিলেন মহাকাশে, তা নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তার দেখানো পথ ধরে অজানাকে জানতে পথিক হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরাও। তেরেসকোভা তাই সাহসের নাম। তেরেসকোভা এক প্রভার প্রতীক। তার মাধ্যমেই শুরু, অন্তত মহাকাশচর্চায় আর লৈঙ্গিক বৈষম্যের শিকার নন নারীরা। কিংবা বলা চলে, ওরকম বৈষম্য কমিয়ে আনতে পেরেছে বিশ্ব। এমনকি সাদা-কালোর বৈষম্য ঘুচিয়েছেন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নারী নভোচারী মে জেমিসন। পৃথিবীর তিনটি দেশ প্রথম নভোচারী হিসেবে বেছে নিয়েছে নারীকেই। যুক্তরাজ্য, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ধর্মান্ধতাও ঘুচেছে মহাকাশচর্চায়, পৃথিবীর প্রথম মুসলিম নভোচারীও নারী, ইরানের আনুশেহ আনসারি।
মহাকাশে যেমন ভ্রমণ করেছেন ফ্যাক্টরির সামান্য কর্মী [তেরেসকোভা], তেমনি ফটোগ্রাফার, পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, ডাক্তারসহ নানা পেশার নারী নভোচারীও পাড়ি দিয়েছেন মহাশূন্যে। এ উপলক্ষ্যে ডিসকাশন প্রজেক্ট প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা অনুষ্ঠান করবে।

তেরেসকোভার পথ ধরে...
যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮৩ সালের ১৮ জুন। স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জারে চড়ে শ্যালি মহাশূন্য ভ্রমণ করেন প্রথম মার্কিন নারী নভোচারী হিসেবে। এমনকি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কমবয়সী নভোচারী তিনি। জন্ম ১৯৫১ সালের ২৬ মে। স্টানফোর্ড থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। ২০১২ সালের ২৩ জুলাই প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে মারা যান। 

যুক্তরাজ্য
১৯৯১ সালের ১৮ মে। প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে এক নারীকে পাঠিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তার নাম হেলেন শারম্যান। শারম্যান পৃথিবীর প্রথম নারী নভোচারী, যিনি মির স্টেশন ভ্রমণ করেন। মহাকাশে ছিলেন ৮ দিন। মূলত রসায়নবিদ। জন্ম ১৯৬৩ সালের ৩০ মে।
কানাডা
১৯৯২ সালের ২২ জানুয়ারি শুধু কানাডার প্রথম নারী হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন রবার্টা বন্ডার। প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতক। প্যাথোলজিতে স্নাতকোত্তর। পেশায় নিউরোলজিস্ট। জন্ম ১৯৪৫ সালের ৪ ডিসেম্বর। শখ প্রকৃতির ছবি তোলা।
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী
১৯৯২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। পৃথিবীর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী নভোচারী হিসেবে ভ্রমণ করেন মহাশূন্য, স্পেস শাটল এনডেভারে চড়ে। জেমিসনের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্রের আলআবামায়। তবে পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল আফ্রিকা অঞ্চলে। স্বপ্ন ও সাফল্য নিয়ে তার দর্শন, 'স্বপ্ন সত্যি করার সবচেয়ে ভালো পন্থা হলো, জেগে ওঠা।'
এশিয়ার প্রথম নারী
বায়ু ও মহাশূন্যযান চালানো বিশেষজ্ঞ খুঁজতে ১৯৮৫ সালে জাপানের ন্যাশনাল স্পেস এজেন্সিতে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতায় সেরা তিন নারীর একজন চিয়াকি মুকাই। এর আগে পেশায় চিকিৎসক চিয়াকি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কিইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার সুবাদে তিনি জাপানের প্রথম নারী হিসেবেই শুধু নন, এশিয়ার প্রথম নারী হিসেবে মহাশূন্যে যান ১৯৯৪ সালের ৮ জুলাই। জন্ম ১৯৫২ সালের ৬ মে। 

ফ্রান্স 

১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট প্রথম ফরাসি নারী নভোচারী হিসেবে মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন। শুধু তাই নয়, ক্লডি হচ্ছেন প্রথম ইউরোপীয় নারী, যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ভ্রমণ করেন। সয়ুজ নভোযানে চড়ে মোট দু'বার মহাকাশে ভ্রমণ করেছেন ক্লডি। জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৩ মে। পেশায় চিকিৎসক। 

প্রথম ভারতীয় নারী 

২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, নাসার কন্ট্রোল রুমের বিজ্ঞানীরা চেয়ে আছেন নভোযান কলম্বিয়ার ফিরতি যাত্রার দিকে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে কলম্বিয়া। হঠাৎ মিশন কমান্ডারের গলা শোনা গেল, 'রজার..,'। তারপর নিস্তব্ধতা। আকাশের বুক চিরে দেখা গেল তিনটে আলোর রেখা। তারপর, সব শেষ। কলম্বিয়ার নয় তারকা টুকরো টুকরো খণ্ড এসে পড়ল মাটিতে। ওর মধ্যে মিশে আছে ৭ নভোচারীর শরীরও। ওই সাতের একজন কল্পনা চাওলা। ১৯৯৭ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন। জন্ম কার্নালে।
ইরানের প্রথম নভোচারী নারী
যুক্তরাজ্যের পর ইরান তার প্রথম নভোচারী হিসেবে পায় একজন নারীকে। তিনি আনুশেহ আনসারি। ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রুশ নভোযান সয়ুজে চড়ে মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন তিনি। একদিকে প্রথম ইরানি, অন্যদিকে প্রথম মুসলিম নভোচারী। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর প্রথম নারী মহাকাশ পর্যটক। নিজস্ব অর্থায়নেই তিনি মহাকাশে গিয়েছিলেন। জন্ম ১৯৬৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। 

দক্ষিণ কোরিয়া
২০০৬ সালে যখন দক্ষিণ কোরিয়া তার প্রথম মহাকাশচারী খুঁজে, তখন নির্বাচিত হন ই সো ইয়ন ও কো সান। পরে দু'জনকেই পাঠানো হয় রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য। প্রাথমিক পরীক্ষণে চূড়ান্ত হয় কো সানের নাম। প্রশিক্ষণ শিবিরে বারবার নিয়ম ভাঙার অভিযোগে কো সানকে বাদ দেওয়া হয়। তার বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়ে যান ইয়ন। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম কোরীয় হিসেবে মহাশূন্যে পাড়ি দেন। দুই রুশ নভোচারীর সঙ্গে সয়ুজে চড়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। তার মহাকাশ ভ্রমণের মধ্য দিয়েই দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে নাম লেখায় যুক্তরাজ্য ও ইরানের পর যে দেশের প্রথম মহাকাশচারী হচ্ছেন কোনো নারী। জন্ম ১৯৭৮ সালের ২ জুন। 

চীন
মহাশূন্য ভ্রমণে যেতে হলে নারীদের অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে_ এই শর্ত নাকি দিয়েছিল চীনা নভোচারী কেন্দ্র। যুক্তি_ বিবাহিত নারী শারীরিক ও মানসিক, উভয় দিক দিয়েই ফিট থাকে! ফিটনেস কম ছিল না ইয়াংয়ের। পিপলস রিপাবলিক আর্মি এয়ারফোর্সে যোদ্ধা পাইলট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর ২০১২ সালের ১৬ জুন মহাশূন্যে পাড়ি দেন চীনের প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে। ১৯৬৩ সালের এই দিনেই বিশ্বের প্রথম নারী নভোচারী ভালেনতিনা তেরেসকোভা। লিউ ইয়াংয়ের জন্ম ১৯৭৮ সালের ৬ অক্টোবর।

No comments:

Post a Comment