কালো
শ্বেতপত্র...
বহ্বারম্ভে লঘু ক্রিয়া। গত দেড়-দু’বছর ধরে
কালো টাকা নিয়ে দেশজুড়ে তুলকালাম কাণ্ডের পর শ্বেতপত্র প্রসব করলো কেন্দ্রীয়
সরকার। বিদেশে গচ্ছিত ভারতীয়দের বিস্ময়কর ধরনের বিপুল মাত্রার কালো টাকা সম্পর্কে
যাবতীয় তথ্যাদি দেশবাসীকে জানাবার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের তৃতীয়
বর্ষপূর্তির মুখে সংসদে যে শ্বেতপত্র পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি তাতে
আর যাই থাকুক কালো টাকা সম্পর্কে জনগণের জিজ্ঞাসা এবং প্রত্যাশা পূরণের কিছু নেই।
ফলে গোটা ব্যাপারটাই হাস্যকর হয়ে উঠেছে। কালো টাকার উৎস, গন্তব্য
এবং আয়তন সম্পর্কে প্রত্যাশিত কোনো তথ্যই সরকার দিতে পারেনি বা দেয়নি যাতে একটা
ন্যূনতম ধারণা তৈরি হতে পারে। উলটে কালো টাকার মালিক সম্পর্কে তথ্য না জানিয়ে
সরকার তাদের আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ কালো টাকা সম্পর্কে মূল যে
বিষয়গুলি জানানো অবশ্য কর্তব্য সেগুলি সবই প্রায় অনুপস্থিত শ্বেতপত্রে। ঠিক কত
পরিমাণ কালো টাকা বিদেশে মজুত আছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়নি
নির্বাচনী তহবিলে কিভাবে কালো টাকার দাপট চলে তার বিবরণ। শুধুমাত্র সুইডেন সরকারের
তথ্য হিসেবে বলা হয়েছে সুইস ব্যাঙ্কে ২০১০ সালে ভারতীয়দের ৯২৯৫ কোটি টাকা জমা আছে।
২০০৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৩২৭৩ কোটি টাকা। মাঝের চার বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা
কোথায় উধাও হয়ে গেল সে সম্পর্কে শ্বেতপত্র নীরব। ফলে নামে কালো টাকা নিয়ে
শ্বেতপত্র হলেও আসলে সেটা শ্বেতপত্র হয়নি, হয়েছে কালো শ্বেতপত্র।
২০১০ সালে আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল
ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি জানিয়েছিল, ১৯৪৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ভারত
থেকে বেআইনীভাবে মোট ৪৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে এবং কালো টাকা
হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন করমুক্ত দেশ বা অঞ্চলে গচ্ছিত হয়েছে। সুইস ব্যাঙ্কিং
অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৬ সালে বিদেশের ব্যাঙ্কগুলিতেই ভারতীয়দের
জমা আছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু শ্বেতপত্র এমন সব তথ্য-রিপোর্টকে
অস্বীকার করে জানিয়েছে,
সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ২০০ কোটি
ডলারের কম কালো টাকা জমা আছে। এর থেকে সরকারের সততা, সদিচ্ছা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার
হয়ে যাচ্ছে। কালো টাকা উদ্ধার বা কালো টাকার মালিকদের শাস্তির কোনো সদিচ্ছা
সরকারের নেই। বরং গোটা ব্যাপারটাকেই লঘু করে দেখিয়ে গুরুত্বহীন করে দেবার চেষ্টা
হয়েছে। শ্বেতপত্রে কালো টাকার সন্ধানই যদি না মেলে তাহলে কালো টাকা নিয়ে হইচই করার
কোনো অর্থ হয় না। সরকার সেটাই চাইছে। সরকার জানে কোন্ কোন্ পথে কালো টাকা পাচার
হয়। কোথায় যায় এবং কোন্ পথে ফের বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, শেয়ার
বাজারে লেনদেন, পি
এন বা পার্টিসিপেটরি নোট ইত্যাদির মাধ্যমে আইনী পথে দেশে ফিরে আসে এবং সাদা হয়ে
যায়। গোটা ব্যাপারটা উল্লেখ করা হলেও সরকার যাবতীয় দায় এড়িয়ে গেছে। আসলে কেঁচো
খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরোনোর ভয়ে এবং তাতে তাবড় তাবড় রাজনীতিক, আমলা এবং
শিল্পপতিদের জড়িয়ে পড়ার ভয়ে সরকার গোটা ব্যাপারটায় জল ঢালার চেষ্টা করেছে। এটা আদৌ
শ্বেতপত্র নয়, চুনকাম
মাত্র।
একদল আন্তর্জাতিক সাংবাদিক
প্রায় আড়াই লাখ গোপন ফাইল ঘেঁটে বার করলেন আয়কর কেলেঙ্কারি। পৃথিবীর ১৭০
দেশেররাজনৈতিক নেতা ও ধনী শিল্পপতিদের গোপন লেনদেনের হদিশ আছে এই সব ফাইলে। খবর
এইটুকু হলে বোধহয় আমাদের খুব একটা উত্সাহ থাকত না। তবে খবর এইটুকু নয়। এই লিস্টে
নাম আছে বেশ কিছু ভারতীয়রও। আন্তঃসীমান্ত সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটিই
এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম উদ্যোগ। ইন্টারন্যাশনাল কনসোরটিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ
জার্নালিস্টস(আইসিআইজে) দাবি করছে যে এই স্ক্যামে জড়িত আছে প্রায় এক লাখ কুড়ি
হাজার অফশোর সংস্থা এবং এক লাখ তিরিশ হাজার ব্যক্তি। ওয়াশিংটনের এই সংস্থা একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলে যে ভারত সহ প্রায় ৪৬টি দেশের ৮৬ জন সাংবাদিকের সাহায্য
নিয়ে এই কাজটি করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে 'সিক্রেসি ফর সেল: ইনসাইড দ্য গ্লোবাল অফশোর মানি মেজ' সব থেকে বৃহত্তম ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং প্রজেক্ট।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো প্রথম ১০০
দিনের মধ্যে কালো টাকা উদ্ধার করা হবে। ক্ষমতায় আসার পর ৪বছর কেটে গেছে কালোটাকা
উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। সুইস ব্যাঙ্কে জমা আছে ভারত থেকে
পাঠানো বিপুল পরিমাণ কালোটাকা। এতে জমা আছে মন্ত্রী, আমলাসহ কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কালোটাকা। সুইস ব্যাঙ্কের অ্যাসোসিয়েশনের
২০০৬ সালের হিসাব অনুসারে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতের ১৫০০ বিলিয়ন ডলার বেআইনী অর্থ মজুত
রয়েছে। যা বিশ্বের সমস্ত দেশের মজুত কালোটাকার বেশি। এই অর্থ হলো দেশের মোট বিদেশী
ঋণের ১৩ গুণ। এই অর্থে দেশের গরিব ৪৫ কোটি জনগণের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে
দেওয়া যায়। এই বিপুল পরিমাণ কালো টাকা দেশ উদ্ধার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশী ঋণ
পরিশোধ সম্ভব। প্রত্যেক বছর সুইজারল্যান্ডে ৮০০০০ মানুষ ভারত থেকে যাতায়াত করে। এর
মধ্যে ২৫০০০ জন বারেবারেই ঐ দেশে যায়। এদের অনেকেই কালোটাকার লেনদেনের সঙ্গে জড়িত
বলে সন্দেহ করা হয়। সব জেনেও দেশের প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। অসাধু ব্যবসায়ী,
দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক, অসৎ আই এ এস,
আই আর এস এবং আই পি এস অফিসারদের কালো টাকা জমা রয়েছে সুইস
ব্যাঙ্কে। আই পি এল, কমনওয়েলথ গেমস, আদর্শ
আবাসন, টু জি স্পেকট্রাম থেকে কত বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাঙ্কে
জমা পড়েছে সেটাই খুঁজে বের করুক কেন্দ্রীয় সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই
কালোটাকা পাচার হচ্ছে বিদেশের ব্যাঙ্কে। সুইস ব্যাঙ্কে জমা কালোটাকার মালিকদের নাম
প্রকাশেও সরকার এক পা এগোতে পারেনি।
সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কার
বার বার
কালোটাকার উদ্ধার ও কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার প্রশ্নে কেন্দ্রীয়
সরকারকে তিরস্কার-ভর্ৎসনা করেও যখন সরকারকে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল করা সম্ভব হয়নি
তখন একরকম বাধ্য হয়েই সুপ্রিম কোর্ট নিজ উদ্যোগে গড়ে দিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল।
কেন্দ্রীয় সরকার তার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দেবার পর সেই
কর্তব্য পালনে এগিয়ে এসেছে সুপ্রিম কোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের
হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা। এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার, মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে এবং সোনিয়া গান্ধীর পরামর্শে
কেন্দ্রের সরকার ক্রমশ গতি হারাচ্ছে। এই সরকার দেশী-বিদেশী বৃহৎ পুঁজির মুনাফার
স্বার্থে ঢালাও উদারনীতি প্রয়োগ করতে যতটা সক্রিয় তার চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ক্রিয়
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায়। ওয়াশিংটন সহমতের অনুসারী উদারনীতিতে
মনমোহন সিং এবং তাঁর সরকার এতটাই অন্ধ যে এই উদারনীতির ফলে যে দুর্নীতির উৎস মুখও
খুলে যাচ্ছে সেদিকে নজর দিচ্ছে না।
উদারনীতির সঙ্গে দুর্নীতি যে হাত ধরাধরি করে চলে তার নজির বিশ্বের
অন্যত্র ভূরি ভূরি পাওয়া গেলেও ভারতে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইউ পি এ
সরকার। এই সরকার উদারনীতির পথে যতই সক্রিয় ও তৎপর হয়েছে ততই দুর্নীতি-কেলেঙ্কারিতে
জড়িয়েছে। বস্তুত এত দুর্নীতি অতীতে আর কোন সরকারের আমলে সংগঠিত হয়নি যা হয়েছে
মনমোহন সিংয়ের আমলে। এই সরকার দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের শিরোপা অর্জন
করেছে। গোটা দুনিয়ার কাছে ভারতের মান-মর্যাদা কালিমালিপ্ত করেছে এই সরকার। স্বয়ং
প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন মিডিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির
বার্তা এতটাই ছড়িয়েছে যে, ভারতে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীরা
দ্বিধান্বিত হয়ে গেছে। এমন একটি সরকার যে কালো টাকার প্রশ্নে কোনরকম গুরুত্ব দেবে
না এবং কালো টাকার কারবারিদের আড়াল করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কেন্দ্রীয়
সরকার সম্পর্কে শীর্ষ আদালতের তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো আইন প্রণেতা, আইন রক্ষক ও আইন লঙ্ঘনকারীদের অশুভ আঁতাত প্রশ্নে রাষ্ট্র যদি নরম বা
শিথিল মনোভাব নেয় তাহলে অর্থনীতি ও সমাজের ওপর যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রণের নৈতিক
কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে যায়।
এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে রাজনীতিক, শিল্পপতি ও আমলাদের অশুভ যোগসাজশে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে গোপনে পাচার হয়ে গেছে এবং বিদেশী ব্যাঙ্কে জমা হয়ে আছে। অর্থনীতিতে সরকারের নজরদারি শিথিল হয়ে যতই বাজারের ও পুঁজিপতিদের স্বাধীনতা বেড়েছে ততই কর ফাঁকি দেওয়া ও হিসেবে কারচুপির ঘটনা বেড়েছে। এইভাবে কর ফাঁকি দেওয়া ও হিসাব বহির্ভূত টাকা চলে গেছে বিদেশের ব্যাঙ্কে। এসব জানার পরও সেই টাকা উদ্ধারে এবং কর ফাঁকির ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের কাজ এগোচ্ছে না। এমনকি কালো টাকার কারবারিদের নাম জানা থাকা সত্ত্বেও সরকার তা প্রকাশ করছে না। সরকার সচেতনভাবে কালো টাকার মালিকদের আড়াল করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। আসলে কালো টাকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধের উদারনীতির রাশ টানতে হতে পারে। পুঁজিপতিদের স্বার্থে সরকার তা করতে রাজি নয়। তাতে যদি বিদেশে ভারতের কালো টাকার পাহাড় আরও বড় হয় এবং কালো টাকার কারবারিদের সংখ্যা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বাড়ে তাতেও মনমোহন সিংদের আপত্তি নেই।
এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে রাজনীতিক, শিল্পপতি ও আমলাদের অশুভ যোগসাজশে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে গোপনে পাচার হয়ে গেছে এবং বিদেশী ব্যাঙ্কে জমা হয়ে আছে। অর্থনীতিতে সরকারের নজরদারি শিথিল হয়ে যতই বাজারের ও পুঁজিপতিদের স্বাধীনতা বেড়েছে ততই কর ফাঁকি দেওয়া ও হিসেবে কারচুপির ঘটনা বেড়েছে। এইভাবে কর ফাঁকি দেওয়া ও হিসাব বহির্ভূত টাকা চলে গেছে বিদেশের ব্যাঙ্কে। এসব জানার পরও সেই টাকা উদ্ধারে এবং কর ফাঁকির ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের কাজ এগোচ্ছে না। এমনকি কালো টাকার কারবারিদের নাম জানা থাকা সত্ত্বেও সরকার তা প্রকাশ করছে না। সরকার সচেতনভাবে কালো টাকার মালিকদের আড়াল করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। আসলে কালো টাকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধের উদারনীতির রাশ টানতে হতে পারে। পুঁজিপতিদের স্বার্থে সরকার তা করতে রাজি নয়। তাতে যদি বিদেশে ভারতের কালো টাকার পাহাড় আরও বড় হয় এবং কালো টাকার কারবারিদের সংখ্যা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বাড়ে তাতেও মনমোহন সিংদের আপত্তি নেই।
রাজনীতিক, আমলা এবং শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা তাদের
হিসাব বহির্ভূত টাকা গোপনে বিদেশে পাচার করে বিভিন্ন দেশের ব্যাঙ্কের গোপন
অ্যাকাউন্টে জমা করে। প্রধানত অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা দেশে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে
পাচার করা হয়। আইনকে ফাঁকি দিয়ে এবং আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এই টাকা যেমন বিদেশে
পাচার হয়ে যায় তেমনি নানা পথ ঘুরে সেই আইনকে ফাঁকি দিয়ে এবং আইনের ফাঁকফোকর
দিয়ে সেই টাকার একাংশ সাদা হয়ে দেশে ফিরে আসে। এই প্রক্রিয়া কম বেশি সব দেশে
লক্ষ্য করা গেলেও ভারত সবার শীর্ষে। বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রকাশ, বিদেশে গচ্ছিত মোট কালো টাকার বেশি অংশটাই ভারতের। অর্থাৎ অসৎ উপায়ে
বেআইনী পথে টাকা রোজগার এবং কর ফাঁকি দেবার জন্য টাকা গোপন করার ক্ষেত্রে ভারতের
রাজনীতিক- আমলা- শিল্পপতি- ব্যবসায়ীরা সারা বিশ্বের মধ্যে অগ্রণী। একইভাবে
কালোটাকা বিদেশে পাচার এবং তা সাদা করে ফের দেশে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে আইনী ও
প্রশাসনিক দুর্বলতাও ভারতে সবচেয়ে বেশি। কালো টাকার একটা বিরাট অংশ বিদেশে
পাচার হলেও বেশির ভাগটাই থেকে যায় দেশে। ফলে এই বিপুল পরিমাণ কালো টাকা দেশের
অভ্যন্তরে সমান্তরাল অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। অথচ সরকার কি দেশে, কি বিদেশে এই কালো টাকা উদ্ধারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিদেশে
পাচার করে কালো টাকা সাদা করে দেশে ফেরত আনার নানা কৌশল কালো টাকার কারবারিদের
জানা আছে। তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও কালো টাকা সাদা করার হাজারো কৌশল চালু আছে।
কিন্তু দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাঙ্কগুলি যে কালো টাকা সাদা করার পসরা সাজিয়ে বসে
আছে তা এতকাল জানা ছিলো না। এই অবিশ্বাস্য চক্রের হদিশ দিয়েছে একটি অনলাইন
সংবাদমাধ্যম। এই সংস্থাটির কর্মীরা গোপন ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে অনেকদিন ধরে দেশের
শীর্ষ তিনটি বেসরকারী ব্যাঙ্ক আই সি আই সি আই, এইচ ডি এফ সি
এবং এক্সিস ব্যাঙ্কের বহু শাখায় ঘুরে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে এনেছে তাতে দেখা
যাচ্ছে কালো টাকা সাদা করা এই ব্যাঙ্কগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা। কালো টাকার
কারবারিদের জন্য তারা এই পরিষেবার আয়োজন করেছে। কোবরাপোস্ট ডটকম নামক অনলাইন
পত্রিকাটি তাদের গোপন অপারেশনটির নাম দিয়েছে ‘রেড স্পাইডার’। কালো টাকার মালিকদের
হয়ে তারা কালো টাকা সাদা করার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের পরামর্শ চেয়েছে। অবিশ্বাস্য
হলেও ব্যাঙ্ক যেসব পরামর্শ দিয়েছে তা ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। তহলকা খ্যাত
সাংবাদিকের নেতৃত্বেই হয় এই গোপন অভিযান। সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশের
সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রাজনীতি চঞ্চল হয়ে ওঠে। তিন ব্যাঙ্কের তরফ থেকে তড়িঘড়ি
বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করা হয় এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তের কথা
বলা হয়। বিচলিত অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বেসরকারী ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করে
জানান সরকার এখনই কোনো পদক্ষেপ নেবে না। আসলে দেশে নতুন নতুন বেসরকারী ব্যাঙ্ক
খোলার অবাধ ছাড়পত্র দেবার জন্য যে অর্থমন্ত্রী চটফট করছেন এমন এক চাঞ্চল্যকর
সংবাদ তাঁর পক্ষে হজম করা সহজ হচ্ছিল না। অর্থমন্ত্রী বরাবরই বেসরকারী পুঁজির
গুণগ্রাহী। অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে তিনি বেসরকারী পুঁজিরই অগ্রাধিকার এবং আধিপত্য
চান। ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আধিপত্য তাঁর কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না। তাই
অর্থমন্ত্রক ফিরে পেয়ে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন কত তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্ক আইন সংশোধন
করে বেসরকারী সংস্থাকে ব্যাঙ্ক শিল্পে ঢোকাতে। ইতোমধ্যে আইন সংশোধন হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে গাইড লাইনও প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন ব্যাঙ্ক খোলার
জন্য পা বাড়িয়ে আছে কয়েক ডজন বেসরকারী সংস্থা। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক শিল্পকে রীতিমত
মাছের বাজার করে ছাড়ার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বর্তমানে প্রধান বেসরকারী
ব্যাঙ্কগুলির কালো টাকা সাদা করা নেটওয়ার্ক ফাঁস হবার ফলে অত্যুৎসাহী চিদাম্বরম
কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছেন সন্দেহ নেই। সরকারের উচিত দ্রুত তদন্ত করে সত্য
উদ্ঘাটন করা এবং অভিযুক্ত ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। রাজনৈতিক
দলগুলির উচিত দেশের ও জনগণের স্বার্থে বেসরকারী ব্যাঙ্কের বিস্তার প্রতিরোধ করা।
সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে বেসরকারী ব্যাঙ্ক সম্পর্কে। রাষ্ট্রায়ত্ত
ব্যাঙ্কের গুরুত্ব ও আধিপত্য বৃদ্ধিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে।
কম করে দেখানো হিসেবেও সুইস ব্যাঙ্কে ১১হাজার কোটি টাকা
এটি এখন
সরকারী।সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ প্রায় ২৫০কোটি মার্কিন ডলার।
১১হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদিও ভারতীয়দের নামে যে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুইস ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে, সেই তুলনায় সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই
তথ্য একেবারেই কম করে দেখানো বলে মনে করছেন বেসরকারী ব্যাঙ্কাররা।
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতের বিপুল অঙ্কের কালো টাকা নিয়ে বিচারব্যবস্থার নজরদারি এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে ভারতীয়দের অনেকেই গোপন সঞ্চয় নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মরিসাসের মতো নিরাপদ জায়গায়। সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিসেব, গত তিন বছরে এভাবে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৫০কোটি ডলার।
এই প্রথম সুইৎজারল্যান্ডের একাধিক ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের আমানতের কথা জানিয়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (এস এন বি) জানিয়েছে, ২০১০সালের শেষে এধরনের আমানতের পরিমাণ ১৯৪.৫কোটি সুইস ফ্রাঁ (২৫০কোটি ডলার)। সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মুখপাত্র ওয়াল্টার মিয়ার জানিয়েছেন, এরমধ্যে ২১০কোটি ডলার রয়েছে ভারতীয় ব্যক্তিবিশেষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার নামে সেভিংস এবং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। বাকি ৫০কোটি ডলার রয়েছে ভারত থেকে ‘অপারেট’ করা ব্যক্তিবিশেষের নামে।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই অ্যাকাউন্টগুলির পরিচয় জানানোর জন্য। জবাবে এস এন বি’র মুখপাত্র ওয়াল্টার মিয়ার জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কের কাছে এর চেয়ে বেশি তথ্য নেই। তিনি জানিয়েছেন, সুইৎজারল্যান্ডের বৃহত্তম দু’টি ব্যাঙ্ক ইউ বি এস এবং ক্রেডিট সুইসেতেই রয়েছে ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশি আমানত। যদিও নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে একজন বেসরকারী ব্যাঙ্কার ভারতীয়দের প্রকৃত আমানতের পরিমাণ হতে পারে ১৫০০-২০০০কোটি ডলার। তাঁর দাবি, দেড় লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে বলে বারে বারে যে তথ্য ঘুরে ফিরে আসে, তা মোটেই ঠিক নয়। তাঁর দাবি, ‘২৫০কোটি মার্কিন ডলার রয়েছে বলে সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য যেমন ঠিক নয়, তেমনই ঠিক নয়, দাবি, দেড় লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে বলে ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য।’ ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তাঁর দাবি, ‘ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ ১৫০০-২০০০কোটি ডলার।’ তিনি জানিয়েছেন, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় আমানতকারীরা এখন অর্থ নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর এবং দুবাইয়ে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (এস এন বি) তথ্য জানাচ্ছে, গত তিন বছরে সুইস ব্যাঙ্কগুলিতে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ কমেছে ৫০কোটি ডলার (২২৫০কোটি টাকা)। ২০০৮সালে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩০০কোটি ডলার। ২০০৯সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৭০কোটি ডলার। আর ২০১০সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০কোটি ডলার।
তবে কেন সুইৎজারল্যান্ড থেকে ভারতীয়রা তাদের অর্থ মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মরিশাসের মতো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা জানায়নি ব্যাঙ্ক।
সম্প্রতি এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা বেকায়দায় ফেলেছে কেন্দ্রকে।
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত এই অর্থ তো আসলে ‘জাতীয় অর্থের বিশুদ্ধ ও সোজাসাপটা লুট। জাতীয় সম্পদ লুট।’ দেশের শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘বিষয়টিকে শুধু কর ফাঁকি দেওয়ার সাপেক্ষে দেখা উচিত নয়। এ তো দেশের টাকা লুট করা। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র কেনাবেচা ও অন্য অপরাধও।’ এর আগেও, এনিয়ে সরকারকে ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কাজ হয়নি। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে না বলে ফের এই অসন্তোষ প্রকাশ। জার্মানির ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকার নির্দিষ্ট তথ্য ২০০৮সালে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এলেও, কোনও পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। উলটে ওই তালিকা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে না চেয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছে। এই নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবং সুপ্রিম কোর্টের এই ধমকেও কাজ হয়নি। বোধোদয় হয়নি সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এটি না কী চটজলদি সমাধানের কাজ নয়। শেষে এনিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
‘কোথা থেকে আসছে এই অর্থ ? কীভাবে পাচার হচ্ছে? কীভাবে একে রাখা হচ্ছে? কে রাখছে? কারা মদত দিচ্ছে? দেশের সম্পদের সঙ্গে এই বিপুল অঙ্কের অর্থকে যুক্ত করার কতটা, কী সুযোগ আছে? আমরা যদি সেটা না ভাবি, তবে আমরা আসলে দেখব এক চোখ দিয়ে। যেতে পারব না সমস্যার সমাধানের দিকে। কালো টাকার প্রশ্নটিও একই রকম প্রাসঙ্গিক। এটি একটি সমান্তরাল অর্থনীতি।’
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতের বিপুল অঙ্কের কালো টাকা নিয়ে বিচারব্যবস্থার নজরদারি এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে ভারতীয়দের অনেকেই গোপন সঞ্চয় নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মরিসাসের মতো নিরাপদ জায়গায়। সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিসেব, গত তিন বছরে এভাবে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৫০কোটি ডলার।
এই প্রথম সুইৎজারল্যান্ডের একাধিক ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের আমানতের কথা জানিয়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (এস এন বি) জানিয়েছে, ২০১০সালের শেষে এধরনের আমানতের পরিমাণ ১৯৪.৫কোটি সুইস ফ্রাঁ (২৫০কোটি ডলার)। সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মুখপাত্র ওয়াল্টার মিয়ার জানিয়েছেন, এরমধ্যে ২১০কোটি ডলার রয়েছে ভারতীয় ব্যক্তিবিশেষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার নামে সেভিংস এবং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। বাকি ৫০কোটি ডলার রয়েছে ভারত থেকে ‘অপারেট’ করা ব্যক্তিবিশেষের নামে।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই অ্যাকাউন্টগুলির পরিচয় জানানোর জন্য। জবাবে এস এন বি’র মুখপাত্র ওয়াল্টার মিয়ার জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কের কাছে এর চেয়ে বেশি তথ্য নেই। তিনি জানিয়েছেন, সুইৎজারল্যান্ডের বৃহত্তম দু’টি ব্যাঙ্ক ইউ বি এস এবং ক্রেডিট সুইসেতেই রয়েছে ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশি আমানত। যদিও নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে একজন বেসরকারী ব্যাঙ্কার ভারতীয়দের প্রকৃত আমানতের পরিমাণ হতে পারে ১৫০০-২০০০কোটি ডলার। তাঁর দাবি, দেড় লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে বলে বারে বারে যে তথ্য ঘুরে ফিরে আসে, তা মোটেই ঠিক নয়। তাঁর দাবি, ‘২৫০কোটি মার্কিন ডলার রয়েছে বলে সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য যেমন ঠিক নয়, তেমনই ঠিক নয়, দাবি, দেড় লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে বলে ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য।’ ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তাঁর দাবি, ‘ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ ১৫০০-২০০০কোটি ডলার।’ তিনি জানিয়েছেন, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় আমানতকারীরা এখন অর্থ নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর এবং দুবাইয়ে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (এস এন বি) তথ্য জানাচ্ছে, গত তিন বছরে সুইস ব্যাঙ্কগুলিতে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ কমেছে ৫০কোটি ডলার (২২৫০কোটি টাকা)। ২০০৮সালে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩০০কোটি ডলার। ২০০৯সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৭০কোটি ডলার। আর ২০১০সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০কোটি ডলার।
তবে কেন সুইৎজারল্যান্ড থেকে ভারতীয়রা তাদের অর্থ মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মরিশাসের মতো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা জানায়নি ব্যাঙ্ক।
সম্প্রতি এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা বেকায়দায় ফেলেছে কেন্দ্রকে।
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত এই অর্থ তো আসলে ‘জাতীয় অর্থের বিশুদ্ধ ও সোজাসাপটা লুট। জাতীয় সম্পদ লুট।’ দেশের শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট মন্তব্য, ‘বিষয়টিকে শুধু কর ফাঁকি দেওয়ার সাপেক্ষে দেখা উচিত নয়। এ তো দেশের টাকা লুট করা। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র কেনাবেচা ও অন্য অপরাধও।’ এর আগেও, এনিয়ে সরকারকে ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কাজ হয়নি। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে না বলে ফের এই অসন্তোষ প্রকাশ। জার্মানির ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকার নির্দিষ্ট তথ্য ২০০৮সালে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এলেও, কোনও পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। উলটে ওই তালিকা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে না চেয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছে। এই নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবং সুপ্রিম কোর্টের এই ধমকেও কাজ হয়নি। বোধোদয় হয়নি সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এটি না কী চটজলদি সমাধানের কাজ নয়। শেষে এনিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
‘কোথা থেকে আসছে এই অর্থ ? কীভাবে পাচার হচ্ছে? কীভাবে একে রাখা হচ্ছে? কে রাখছে? কারা মদত দিচ্ছে? দেশের সম্পদের সঙ্গে এই বিপুল অঙ্কের অর্থকে যুক্ত করার কতটা, কী সুযোগ আছে? আমরা যদি সেটা না ভাবি, তবে আমরা আসলে দেখব এক চোখ দিয়ে। যেতে পারব না সমস্যার সমাধানের দিকে। কালো টাকার প্রশ্নটিও একই রকম প্রাসঙ্গিক। এটি একটি সমান্তরাল অর্থনীতি।’
No comments:
Post a Comment