Saturday, June 29, 2013

myanmar buddhist terror

বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ...
শান্তিপ্রিয়তা ও ধৈর্যের জন্য বিশ্বে খ্যাতি রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত এ ধর্মের প্রতি বিশ্বের জনগণের আলাদা শ্রদ্ধা রয়েছে। আড়াই হাজার বছর ধরে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান চাওয়া মানসিকভাবে নির্বাণস্তরে পৌঁছে যাওয়া, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ পৌঁছেছিলেন। বিশ্বে প্রায় ৪৮ কোটি ৮০ লাখ লোক এ ধর্মের অনুসারী। থাইল্যান্ড, মায়ানমার, শ্রীলংকা, চীন, জাপান ও তিব্বতে সর্বাধিক জনগণ এ ধর্ম অনুসরণ করে। বিশ্বের ইতিহাসে ইসলাম, খ্রিস্টান কিংবা হিন্দু ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সহিংসতার খবর অহরহ থাকলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সবচেয়ে শান্তিকামীর খেতাব পেয়ে এসেছে। বৌদ্ধদের গায়ে এখনও কোনো সহিংসতা বা লড়াইয়ে জড়িত থাকার খবর ছিল না বলে জনমনে ভিন্ন মাত্রার শ্রদ্ধা ছিল। সম্প্রতি সেই শ্রদ্ধায় ভাঙন ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় মায়ানমার ও শ্রীলংকায় বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত থাকার খবর হতাশ করেছে এ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষকে। মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উস্কানিদাতা হিসেবে সরাসরি একজন ধর্মীয় নেতার নাম উঠে এসেছে।
ঘৃণার মন্ত্র প্রচারে বৌদ্ধভিক্ষু :
 মায়ানমারের ভিক্ষু আশিন ভিরাথুকে সরাসরি দায়ী করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মিন্দালাইয়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আশিন ভিরাথু এক প্রভাবশালী বৌদ্ধভিক্ষু। ভিরাথুকে বার্মিজ বিন লাদেন খেতাবও দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে সহিংস বলেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও সাধারণ মুসলিম অধিবাসীদের ওপর হওয়া বর্বরোচিত নির্যাতনের পেছনে এই ভিক্ষুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে। মুসলিমবিরোধী মন্তব্যগুলোকে কেন্দ্র করেই টাইম ম্যাগাজিন তার ওপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রচণ্ড রকমভাবে মুসলিমবিরোধী এই বৌদ্ধভিক্ষু। তাই এককথায় তাকে সন্ত্রাসী খেতাবও দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক সমাবেশে পাপমোচনের জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উৎখাতের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সে সময় তিনি মায়ানমারে অবস্থানরতদের পাগলা কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেন। ভিরাথুর মতে,
 মুসলমানরা সমস্যা সৃষ্টিকারী। মায়ানমারে যত সমস্যা, সেগুলো মুসলমানদের কারণেই হয়েছে। তিনি যে কোনো মূল্যে মায়ানমারে অবস্থানরত ৬০ লাখ মুসলমানকে দাবিয়ে রাখতে চান কিংবা তাদের এই ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে চান। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, 'এ কারণে কেউ আমাকে উগ্রপন্থি বললে আমি গর্ববোধ করি। কেননা আমি আমার দেশকে সমস্যামুক্ত রাখতে কাজ করছি।' তিনি আরও বলেন, 'মুসলমানরা শুধু সন্তান উৎপাদন করতেই ব্যস্ত। তারা আমাদের নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করছে এবং সন্তান জন্ম দিচ্ছে।' এমনকি মুসলিমবিরোধী গানও রচনা করেছেন ভিরাথু।
অস্ত্র ভিক্ষায় ব্যস্ত ভিক্ষুরা :
 ভিক্ষুরা সম্প্রতি তাদের প্রার্থনায় অস্ত্রও চাইছেন ভিক্ষা হিসেবে। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের সহিষ্ণুতা নিয়ে যে ইতিবাচক ধারণা মানুষের আছে, তার কোনো লক্ষণ নেই আশিন ভিরাথুর মতো চরমপন্থি বৌদ্ধভিক্ষুদের। ধ্যানে মগ্ন থাকার চেয়ে অস্ত্র বহন আর বিষোদ্গারপূর্ণ বক্তব্য দেওয়াতেই ব্যস্ত রয়েছেন এ রকম সন্ত্রাসী মনোভাবাপন্ন বৌদ্ধভিক্ষুরা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্ত্র প্রয়োজন। অস্ত্রের পাশাপাশি আরও কতশত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন ভিক্ষুরা মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা উস্কে দিতে।
পরিসংখ্যান দাবি করেছে,
 মায়ানমারে গত দু'বছরে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বৌদ্ধভিক্ষুরা উস্কানি দিয়ে পাঁচ শতাধিক মুসলমানকে হত্যা করেছে এবং দেড় লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। দেশব্যাপী উগ্রবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ধর্মোপদেশসংবলিত বক্তব্য ডিভিডি আকারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকের মধ্য বিলি করা হচ্ছে। মুসলমানদের তৈরি জিনিস ও পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হচ্ছে নিয়মিত ধর্মোপদেশে। সহিংসতা জোরদার করতে কমিউনিটি সেন্টার খোলা হচ্ছে এবং দেশব্যাপী ৬০ হাজারের বেশি বৌদ্ধ শিশুকে নিয়ে রোববারের স্কুল কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। সানডে ধাম্মা স্কুল নামক কর্মসূচিতে শিশুদের মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানবিদ্বেষী ধারণা।
শুধু মায়ানমার নয়,
 শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের মতো বৌদ্ধপ্রধান দেশগুলোতেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মুসলমানের উদ্দেশ করে সম্প্রতি শ্রীলংকার সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা গাদাবোদা অ্যাথেথে গানাসারা থেরো জাতীয় ধর্মীয় পরিষদের বার্ষিক সভায় বলেন, এটি বৌদ্ধদের দেশ; এখানে বৌদ্ধদের সরকার। অন্য কোনো ধর্মের লোকদের তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হবে না, সেটি তিনি তার ভাষণেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। টাইম অবলম্বনে

No comments:

Post a Comment