'স্নোডেন
প্রভাব' পর্যুদস্ত আমেরিকা
একটি সিনেমার মধ্যে যা যা
থাকে এডওয়ার্ড স্নোডেনের কাহিনী তার চেয়েও সমৃদ্ধ। নিজের চাকরি এবং আদর্শের মধ্যে
তিনি দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিলেন। ফাঁস করলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নজরদারির
খবর। নিজ দেশের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তিনি। অবস্থান নিলেন হংকংয়ে। সেখান
থেকে আমেরিকার প্রধান 'শত্রু'রাষ্ট্র
রাশিয়া। হয়তো এখন সেখানে স্বস্তিতেই আছেন। কিন্তু রাশিয়া যদি একবার মনোভাব
পরিবর্তন করে তবে! আপাতত তা হচ্ছে না। তাকে সহায়তা করে আমেরিকার গালে 'থাপ্পড়' মারার মনোভাব নিয়েছে মস্কো। তাকে মরিয়া হয়ে
খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। নেই বৈধ কোনো পাসপোর্টও। তারপরও সিনেমার নায়কদের
মতো ঘুরছেন এদেশ থেকে ওদেশে। স্নোডেনকে নিয়ে এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আমেরিকার
স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীন শাসিত হংকং থেকে বর্তমানে মস্কোর বিমানবন্দরে তিনি। আমেরিকার
অভিযোগ, চীন প্রত্যক্ষভাবে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা
করেছে। অন্যদিকে বেইজিং বলছে, হংকং তাদের আইন অনুযায়ী
স্নোডেন ইস্যুটি দেখভাল করেছে। স্নোডেনের রাশিয়ায় গমন নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি
হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, স্নোডেন
রাশিয়ার সীমান্তে পা-ই দেননি। এর একদিন পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট
করলেন রাশিয়ার বিমানবন্দরের ট্রানজিট পয়েন্টে রয়েছেন স্নোডেন। সে কারণে আইন
অনুয়ায়ী তিনি রাশিয়ার মাটিতে পা দেননি। স্নোডেনের রাশিয়ায় আগমন থ্রিলার গল্পের
মতো। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছিলেন,
তিনি মস্কো থেকে হাভানায় যাবেন। সেখান থেকে ইকুয়েডর। এ খবরের পর
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর হাভানার দিকে। কিন্তু হাভানার বিমান ছাড়ার পর দেখা গেল
নির্ধারিত আসনে নেই তিনি। বিশ্লেষকদের অভিমত, গণমাধ্যমের নজর
সরাতেই এমন বক্তব্য রেখেছেন অ্যাসাঞ্জ। হাভানায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। বিশ্লেষকরা
বলছেন, স্নোডেনকে নিয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ আমেরিকার অস্বস্তি
বাড়াতে চায় চীন ও রাশিয়া। এর মাধ্যমে মূলত আমেরিকার ক্ষমতার ফাঁক দেখতে চায় তারা।
দেখাতে চায় মার্কিন কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক
বিশ্লেষক রবার্ট জার্ভিস বলেন, কী করে একজন মানুষ কোনো বৈধ
পাসপোর্ট না নিয়েও এক দেশ থেকে আরেক দেশ যাচ্ছেন এবং যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন?
এ ঘটনাকে আমেরিকার কূটনৈতিক পরাজয় বলেই মনে করছেন তিনি। রবার্ট বলেন,
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যেভাবে হাসিমুখে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাতে তার মুখে বিজয়ীর হাসি দেখেছি
আমরা। মস্কোর সঙ্গে কোনো চুক্তি না থাকায় কূটনৈতিকভাবে রাশিয়ার ওপর চাপ দিতেও
ব্যর্থ আমেরিকা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্নোডেনকে উদ্ধার
করতে বিশ্বব্যাপী যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা তা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হতে
যাচ্ছে। আমেরিকার কোনো বন্ধু দেশে যাওয়ার মতো বোকামি না করলে তাকে হস্তগত করা আমেরিকার
জন্য অসম্ভব। বিশ্লেষকদের মতে, স্নোডেনকে সমর্থন না করার
মতো কোনো কারণ নেই চীন ও রাশিয়ার। পলাতক স্নোডেন তথ্য ফাঁস করেছেন আমেরিকার জাতীয়
নিরাপত্তা সংস্থা কীভাবে চীনের যোগাযোগ নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে লাখ লাখ মানুষের
ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। ৫০-এর দশকে এনএসএ প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন
গোয়েন্দাবৃত্তিতে অতিষ্ঠ রাশিয়াও। তাই আমেরিকার গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করে দেওয়া
পলাতক আসামিকে তারা আশ্রয় দেবে, এটাই স্বাভাবিক। মার্কিন
কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাসাঞ্জ যে দেশে আশ্রয় নেবেন সে দেশের
সঙ্গে আমেরিকার বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলেও বৈধ পাসপোর্ট না থাকায়
স্নোডেনকে বহিষ্কার করা আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যেই পড়ে। সে ক্ষেত্রে কোনো দেশ তাকে
বহিষ্কার না করলে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির বৈধ অধিকার আমেরিকার রয়েছে। বিশ্লেষকরা
বলছেন, 'স্নোডেন ইফেক্টে' বড় ক্ষতি
হলো পশ্চিমীদের। পশ্চিমি গোয়েন্দারা কীভাবে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ওপর আড়ি পাতে,
তারা কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব তথ্য রাশিয়া বা চীনের জানা
হয়ে যেতে পারে। আগামী মাসেই বেইজিংয়ের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু
হচ্ছে, সেখানে চীনের দিকে আঙুল তোলাটা আগের মতো সহজ হবে না। আমেরিকার
জন্য আরও ভয়ের বিষয় হলো এডওয়ার্ড স্নোডেনের কাছে আরও বহু গোপন তথ্য রয়েছে। এ
অবস্থায় তিনি রাশিয়া কিংবা ল্যাটিন আমেরিকা যেখানেই ঘুরে বেড়ান ঘুম কেড়ে নেবে মার্কিন কর্মকর্তাদের।
—ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক
টাইম অবলম্বনে।
No comments:
Post a Comment