Saturday, June 29, 2013

snowden nsa

'স্নোডেন প্রভাব' পর্যুদস্ত ‌আমেরিকা
একটি সিনেমার মধ্যে যা যা থাকে এডওয়ার্ড স্নোডেনের কাহিনী তার চেয়েও সমৃদ্ধ। নিজের চাকরি এবং আদর্শের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিলেন। ফাঁস করলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নজরদারির খবর। নিজ দেশের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তিনি। অবস্থান নিলেন হংকংয়ে। সেখান থেকে আমেরিকার প্রধান 'শত্রু'রাষ্ট্র রাশিয়া। হয়তো এখন সেখানে স্বস্তিতেই আছেন। কিন্তু রাশিয়া যদি একবার মনোভাব পরিবর্তন করে তবে! আপাতত তা হচ্ছে না। তাকে সহায়তা করে আমেরিকার গালে 'থাপ্পড়' মারার মনোভাব নিয়েছে মস্কো। তাকে মরিয়া হয়ে খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। নেই বৈধ কোনো পাসপোর্টও। তারপরও সিনেমার নায়কদের মতো ঘুরছেন এদেশ থেকে ওদেশে। স্নোডেনকে নিয়ে এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীন শাসিত হংকং থেকে বর্তমানে মস্কোর বিমানবন্দরে তিনি। আমেরিকার অভিযোগ, চীন প্রত্যক্ষভাবে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। অন্যদিকে বেইজিং বলছে, হংকং তাদের আইন অনুযায়ী স্নোডেন ইস্যুটি দেখভাল করেছে। স্নোডেনের রাশিয়ায় গমন নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, স্নোডেন রাশিয়ার সীমান্তে পা-ই দেননি। এর একদিন পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট করলেন রাশিয়ার বিমানবন্দরের ট্রানজিট পয়েন্টে রয়েছেন স্নোডেন। সে কারণে আইন অনুয়ায়ী তিনি রাশিয়ার মাটিতে পা দেননি। স্নোডেনের রাশিয়ায় আগমন থ্রিলার গল্পের মতো। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছিলেন, তিনি মস্কো থেকে হাভানায় যাবেন। সেখান থেকে ইকুয়েডর। এ খবরের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর হাভানার দিকে। কিন্তু হাভানার বিমান ছাড়ার পর দেখা গেল নির্ধারিত আসনে নেই তিনি। বিশ্লেষকদের অভিমত, গণমাধ্যমের নজর সরাতেই এমন বক্তব্য রেখেছেন অ্যাসাঞ্জ। হাভানায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্নোডেনকে নিয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ আমেরিকার অস্বস্তি বাড়াতে চায় চীন ও রাশিয়া। এর মাধ্যমে মূলত আমেরিকার ক্ষমতার ফাঁক দেখতে চায় তারা। দেখাতে চায় মার্কিন কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক রবার্ট জার্ভিস বলেন, কী করে একজন মানুষ কোনো বৈধ পাসপোর্ট না নিয়েও এক দেশ থেকে আরেক দেশ যাচ্ছেন এবং যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন? এ ঘটনাকে আমেরিকার কূটনৈতিক পরাজয় বলেই মনে করছেন তিনি। রবার্ট বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যেভাবে হাসিমুখে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাতে তার মুখে বিজয়ীর হাসি দেখেছি আমরা। মস্কোর সঙ্গে কোনো চুক্তি না থাকায় কূটনৈতিকভাবে রাশিয়ার ওপর চাপ দিতেও ব্যর্থ আমেরিকা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্নোডেনকে উদ্ধার করতে বিশ্বব্যাপী যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা তা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। আমেরিকার কোনো বন্ধু দেশে যাওয়ার মতো বোকামি না করলে তাকে হস্তগত করা আমেরিকার জন্য অসম্ভব। বিশ্লেষকদের মতে, স্নোডেনকে সমর্থন না করার মতো কোনো কারণ নেই চীন ও রাশিয়ার। পলাতক স্নোডেন তথ্য ফাঁস করেছেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা কীভাবে চীনের যোগাযোগ নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। ৫০-এর দশকে এনএসএ প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন গোয়েন্দাবৃত্তিতে অতিষ্ঠ রাশিয়াও। তাই আমেরিকার গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করে দেওয়া পলাতক আসামিকে তারা আশ্রয় দেবে, এটাই স্বাভাবিক। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাসাঞ্জ যে দেশে আশ্রয় নেবেন সে দেশের সঙ্গে আমেরিকার বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলেও বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় স্নোডেনকে বহিষ্কার করা আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যেই পড়ে। সে ক্ষেত্রে কোনো দেশ তাকে বহিষ্কার না করলে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির বৈধ অধিকার আমেরিকার রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, 'স্নোডেন ইফেক্টে' বড় ক্ষতি হলো পশ্চিমীদের। পশ্চিমি গোয়েন্দারা কীভাবে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ওপর আড়ি পাতে, তারা কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব তথ্য রাশিয়া বা চীনের জানা হয়ে যেতে পারে। আগামী মাসেই বেইজিংয়ের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে, সেখানে চীনের দিকে আঙুল তোলাটা আগের মতো সহজ হবে না। আমেরিকার জন্য আরও ভয়ের বিষয় হলো এডওয়ার্ড স্নোডেনের কাছে আরও বহু গোপন তথ্য রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি রাশিয়া কিংবা ল্যাটিন আমেরিকা যেখানেই ঘুরে বেড়ান ঘুম কেড়ে নেবে মার্কিন কর্মকর্তাদের।

—ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইম অবলম্বনে।

myanmar buddhist terror

বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ...
শান্তিপ্রিয়তা ও ধৈর্যের জন্য বিশ্বে খ্যাতি রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত এ ধর্মের প্রতি বিশ্বের জনগণের আলাদা শ্রদ্ধা রয়েছে। আড়াই হাজার বছর ধরে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান চাওয়া মানসিকভাবে নির্বাণস্তরে পৌঁছে যাওয়া, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ পৌঁছেছিলেন। বিশ্বে প্রায় ৪৮ কোটি ৮০ লাখ লোক এ ধর্মের অনুসারী। থাইল্যান্ড, মায়ানমার, শ্রীলংকা, চীন, জাপান ও তিব্বতে সর্বাধিক জনগণ এ ধর্ম অনুসরণ করে। বিশ্বের ইতিহাসে ইসলাম, খ্রিস্টান কিংবা হিন্দু ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সহিংসতার খবর অহরহ থাকলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সবচেয়ে শান্তিকামীর খেতাব পেয়ে এসেছে। বৌদ্ধদের গায়ে এখনও কোনো সহিংসতা বা লড়াইয়ে জড়িত থাকার খবর ছিল না বলে জনমনে ভিন্ন মাত্রার শ্রদ্ধা ছিল। সম্প্রতি সেই শ্রদ্ধায় ভাঙন ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় মায়ানমার ও শ্রীলংকায় বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত থাকার খবর হতাশ করেছে এ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষকে। মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উস্কানিদাতা হিসেবে সরাসরি একজন ধর্মীয় নেতার নাম উঠে এসেছে।
ঘৃণার মন্ত্র প্রচারে বৌদ্ধভিক্ষু :
 মায়ানমারের ভিক্ষু আশিন ভিরাথুকে সরাসরি দায়ী করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মিন্দালাইয়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আশিন ভিরাথু এক প্রভাবশালী বৌদ্ধভিক্ষু। ভিরাথুকে বার্মিজ বিন লাদেন খেতাবও দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে সহিংস বলেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও সাধারণ মুসলিম অধিবাসীদের ওপর হওয়া বর্বরোচিত নির্যাতনের পেছনে এই ভিক্ষুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে। মুসলিমবিরোধী মন্তব্যগুলোকে কেন্দ্র করেই টাইম ম্যাগাজিন তার ওপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রচণ্ড রকমভাবে মুসলিমবিরোধী এই বৌদ্ধভিক্ষু। তাই এককথায় তাকে সন্ত্রাসী খেতাবও দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক সমাবেশে পাপমোচনের জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উৎখাতের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সে সময় তিনি মায়ানমারে অবস্থানরতদের পাগলা কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেন। ভিরাথুর মতে,
 মুসলমানরা সমস্যা সৃষ্টিকারী। মায়ানমারে যত সমস্যা, সেগুলো মুসলমানদের কারণেই হয়েছে। তিনি যে কোনো মূল্যে মায়ানমারে অবস্থানরত ৬০ লাখ মুসলমানকে দাবিয়ে রাখতে চান কিংবা তাদের এই ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে চান। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, 'এ কারণে কেউ আমাকে উগ্রপন্থি বললে আমি গর্ববোধ করি। কেননা আমি আমার দেশকে সমস্যামুক্ত রাখতে কাজ করছি।' তিনি আরও বলেন, 'মুসলমানরা শুধু সন্তান উৎপাদন করতেই ব্যস্ত। তারা আমাদের নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করছে এবং সন্তান জন্ম দিচ্ছে।' এমনকি মুসলিমবিরোধী গানও রচনা করেছেন ভিরাথু।
অস্ত্র ভিক্ষায় ব্যস্ত ভিক্ষুরা :
 ভিক্ষুরা সম্প্রতি তাদের প্রার্থনায় অস্ত্রও চাইছেন ভিক্ষা হিসেবে। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের সহিষ্ণুতা নিয়ে যে ইতিবাচক ধারণা মানুষের আছে, তার কোনো লক্ষণ নেই আশিন ভিরাথুর মতো চরমপন্থি বৌদ্ধভিক্ষুদের। ধ্যানে মগ্ন থাকার চেয়ে অস্ত্র বহন আর বিষোদ্গারপূর্ণ বক্তব্য দেওয়াতেই ব্যস্ত রয়েছেন এ রকম সন্ত্রাসী মনোভাবাপন্ন বৌদ্ধভিক্ষুরা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্ত্র প্রয়োজন। অস্ত্রের পাশাপাশি আরও কতশত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন ভিক্ষুরা মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা উস্কে দিতে।
পরিসংখ্যান দাবি করেছে,
 মায়ানমারে গত দু'বছরে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বৌদ্ধভিক্ষুরা উস্কানি দিয়ে পাঁচ শতাধিক মুসলমানকে হত্যা করেছে এবং দেড় লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। দেশব্যাপী উগ্রবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ধর্মোপদেশসংবলিত বক্তব্য ডিভিডি আকারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকের মধ্য বিলি করা হচ্ছে। মুসলমানদের তৈরি জিনিস ও পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হচ্ছে নিয়মিত ধর্মোপদেশে। সহিংসতা জোরদার করতে কমিউনিটি সেন্টার খোলা হচ্ছে এবং দেশব্যাপী ৬০ হাজারের বেশি বৌদ্ধ শিশুকে নিয়ে রোববারের স্কুল কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। সানডে ধাম্মা স্কুল নামক কর্মসূচিতে শিশুদের মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানবিদ্বেষী ধারণা।
শুধু মায়ানমার নয়,
 শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের মতো বৌদ্ধপ্রধান দেশগুলোতেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মুসলমানের উদ্দেশ করে সম্প্রতি শ্রীলংকার সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা গাদাবোদা অ্যাথেথে গানাসারা থেরো জাতীয় ধর্মীয় পরিষদের বার্ষিক সভায় বলেন, এটি বৌদ্ধদের দেশ; এখানে বৌদ্ধদের সরকার। অন্য কোনো ধর্মের লোকদের তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হবে না, সেটি তিনি তার ভাষণেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। টাইম অবলম্বনে

Friday, June 28, 2013

us cyber crime

মার্কিন ইতিহাসে নয়বার

দেশের শত্রুদের কাছে তথ্য ফাঁস করা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৭ সালে একটি আইন করা হয়। প্রচারমাধ্যমের কাছে সরকারি গোপন তথ্য প্রকাশ করার জন্য মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে ওই আইনটির প্রয়োগ ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ পর্যন্ত নয়বার (সবগুলো ১৯৭১ সাল থেকে) কেন্দ্রীয় সরকার সংবাদপত্র, ব্লগ, বই বা অন্য কোনো প্রচারমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তি আইনে অভিযুক্ত করেছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলাই হয়েছে গত আট বছরে। গোপন তথ্য প্রকাশের দায়ে এডওয়ার্ড স্নোডেনও একই ঝুঁকির সম্মুখীন। আগের নয়টি ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো:

পেন্টাগন পেপার্স: ১৯৭১ সালে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড্যানিয়েল এলসবার্গ ও তাঁর সহকর্মী অ্যান্টরি রাসো নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্য কয়েকটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে গোপন সামরিক নথিপত্র ফাঁস করেন। ওই নথিপত্র পেন্টাগন পেপার্স নামে পরিচিতি পায়। ওই গোপন নথিতে ভিয়েতনামে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার মাত্রা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সরকার এলসবার্গের বিরুদ্ধে গোপনে (সম্ভবত অবৈধভাবে) আড়ি পেতেছিল এটি প্রমাণ হওয়ার পর বিচারক তথ্য ফাঁসের অভিযোগ খারিজ করে দেন।

সোভিয়েত আলোকচিত্র: মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক স্যামুয়েল মরিসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালে জেনস ডিফেন্স উইকলি সাময়িকীকে সোভিয়েত রণতরীর ছবি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও জুরি মরিসনকে দোষী সাব্যস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই প্রচারমাধ্যমকে গোপন তথ্য দেওয়ায় গুপ্তচরবৃত্তি আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। মরিসনের দুই বছর জেল হলেও প্যারোলে মুক্তি পান প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাঁকে ক্ষমা করেছিলেন।

ইরান নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য: ২০০৫ সালে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মী লরেন্স ফ্র্যাংকলিনকে দুই ইসরায়েল সমর্থক লবিস্টকে ইরান বিষয়ে গোপন তথ্য দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ফ্র্যাংকলিন দোষ স্বীকার করেন এবং তাঁর ১২ বছর কারাদণ্ড হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ওই মামলা টেকেনি। ফ্র্যাংকলিনের সাজা কমে ১০ মাস হয়।

এফবিআই অনুবাদক: এফবিআইয়ের অনুবাদক শামাই লাইবোইটজ্ কাজ করার সময় শুনেছিলেন এমন তথ্য একদিন ব্লগে দেখা যায়। ২০০৯ সালে দোষ স্বীকার করেন তিনি। বিচারে তাঁর ২০ মাস কারাদণ্ড হয়।

এনএসএর অপচয়: এনএসএর সাবেক কর্মকর্তা টমাস ড্রেকের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে অভিযোগ ওঠে তিনি সংস্থাটির আড়িপাতা কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে ড্রেক দাবি করেন, তিনি বাল্টিমোর সান পত্রিকার কাছে শুধু এনএসএর একটি কর্মসূচিতে অপচয়ের তথ্য প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের ১০টি অভিযোগ খারিজ করা হয়। কোনো কারাদণ্ড হয়নি। 


উইকিলিকস : সাত লাখেরও বেশি গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে সামরিক আদালতে মার্কিন সেনাসদস্য ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের বিচার চলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গোপন দলিল ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। ম্যানিং গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০টি অপেক্ষাকৃত হালকা অভিযোগে অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করাসহ আরও ২১টি অভিযোগ রয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আগামী কয়েক মাস তাঁর বিচার চলার কথা।

উত্তর কোরিয়া গোয়েন্দা তথ্য: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষক স্টিফেন কিম ফক্স নিউজ চ্যানেলের এক প্রতিবেদকের কাছে কিছু তথ্য ফাঁস করেন। তথ্যগুলো ছিল নতুন মার্কিন অবরোধের জবাবে উত্তর কোরিয়া কী করতে পারে সে ব্যাপারে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন নিয়ে। গ্র্যান্ড জুরি ২০১০ সালে কিমকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য ফাঁস ও মিথ্যা ভাষণের দায়ে অভিযুক্ত করেন। কিম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বিচার শুরু হবে।

বইয়ের জন্য তথ্য: সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা জেফ্রি স্টার্লিংয়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমস -এর প্রতিবেদক জেমস রাইজেনকে অবৈধভাবে ইরান সম্পর্কে গোপন তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। রাইজেন তাঁর বই স্টেট অব ওয়ার এর জন্য ওই তথ্য নিয়েছিলেন। সরকার প্রতিবেদক রাইজেনকে তাঁর তথ্যের সূত্রের পরিচয় প্রকাশের জন্য চাপ দিয়েও সফল হয়নি। এ কারণে মামলাটি থমকে আছে।

জেরাবিষয়ক তথ্য: সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকুর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে সাংবাদিকদের কাছে সিআইএর জেরা কর্মসূচির বিষয়ে গোপন তথ্য প্রকাশের অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি একটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন এবং তাঁর আড়াই বছর কারাদণ্ড হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাজা ভোগ শুরু করেছেন কিরিয়াকু।
সূত্র: রয়টার্স

mandela sujan moore

দক্ষিণআফ্রিকা
একদিন ম্যান্ডেলাকে যাঁরা চাননি
সুজান মুর
হাসপাতালের সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে, আমরা এখনো জানি না চূড়ান্ত মুক্তির কত কাছে চলে গেছেন ম্যান্ডেলা। তাঁর বিদায়ের এই কালে তাঁর অসুস্থতা নয়, বরং কথা বলতে চাই তাঁর শক্তি নিয়ে। খুদে রাজনীতিবিদেরা এই অতিকায় মানুষটিকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়ানোর আগে, আমি মনে করতে চাই, কীভাবে তিনি তীব্রভাবে বেঁচে ছিলেন অন্যদের জীবনে। আমার স্মৃতির একটা অংশ বলছে, বিশ্বের অনেক রাজনীতিবিদই তাঁকে সাধু মনে করতেন না, অথচ আজ তাঁদের কর্মচারীরাই লিখবে ম্যান্ডেলা সম্পর্কে তাঁদের হূদয়স্পর্শী শোকগাথা।
আসলেই, ম্যান্ডেলার বিদায় ক্ষণে আমি সেসব নেতা ও দলের শোক প্রকাশ দেখতে চাই না, যাঁরা একদিন তাঁকে সন্ত্রাসী এবং তাঁর সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী বলে বর্ণনা করতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকাকে অর্থনৈতিক অবরোধ করা ঠিক হয়নি। ওই সব দলের তরুণ সদস্যরা ম্যান্ডেলার ফাঁসি চাই লেখা টি-শার্ট পরতেন। অবশ্য সত্য যে ব্রিটেনের রক্ষণশীল টোরি দলের সবাই-ই বর্ণবাদের সমর্থক ছিলেন না। 

আমাদের আজ স্মরণ করা উচিত, ব্যাপারটা আসলে কেমন ছিল তখন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বামপন্থীদের এককাতারে এনেছিল। আমি নিজেও ঘটনাক্রমে এর সঙ্গে জড়িত হই। হয় না এ রকম যে ঘটনাক্রমে আপনি রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলেন? অসাধারণ মানুষজনের সংস্পর্শে এসে, ব্যতিক্রমী জমায়েতের অংশ হয়ে এবং হঠাৎ কোনো ঘটনার অভিঘাতে? আমার বেলায়ও তেমনই ঘটেছিল।
১৯৮১ সালে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ফিরে আমি উত্তর লন্ডনের একটি সেবাকেন্দ্রে চাকরি নিই। সেখানকার স্থানীয় শিশুদের নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। মেয়েরা চোদ্দতেই বখে যাচ্ছিল। ছেলেরা অন্যের বাড়ির জানালা ভাঙত, গাড়ি চুরি করত। সেখানে এক আফ্রিকান নারীকে আমি পাশে পাই। তিনি সব সময়ই ওই সব দুষ্টু শিশু-কিশোরদের স্কুল না পালিয়ে উকিল হতে বলতেন। তিনি শৃঙ্খলায় বিশ্বাস করতেন আর আমি বিশ্বাস করতাম সৌজন্যে। তাই রাতের পর রাত একটানা কথা বলে যেতে আমাদের অসুবিধা হতো না। তিনি ছিলেন আমার দেখা শালীন নারীদের একজন। মাঝেমধ্যে তাঁর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোন পাওয়ার পর তাঁকে কাঁদতে দেখতাম। শুনতাম যে সেখানে নিয়মিত খুন-জখম ও গুপ্তহত্যা চলে। তাঁর নাম ছিল আদেলাইদে ট্যাম্বো, তাঁর স্বামীর নাম ছিল অলিভার ট্যাম্বো। তাঁরা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) নির্বাসিত নেতা।
তাঁর কাছ থেকেই আমি এএনসি সম্পর্কে জানা শুরু করি। জানতে পারি, কীভাবে ১৯৫২ সালে প্রতিরোধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ম্যান্ডেলাকে নির্যাতন করা হয়। কীভাবে তাঁর ওপর নির্যাতন চলে এবং কীভাবে অবশেষে তাঁকে রুবেন দ্বীপে বন্দী করা হয়। একটা ছোট কুঠরিতে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। শাস্তির অংশ হিসেবে পাথর ভাঙতে ভাঙতে তাঁর চোখের স্থায়ী ক্ষতি হয়। সে সময়ই ট্যাম্বো দম্পতিকেও দেশ ছাড়তে হয়। তার আগে এক পাহাড়ি কারাগারে তাঁরা আটক থাকেন। আমি বলি, আপনারা কি একটা জানলাও ভাঙতে পারতেন না? 

না, সুজান।তিনি বলেন, ‘পারতাম না, জানালাগুলো ছিল বুলেটপ্রুফ কাচের তৈরি।এভাবেই তাঁদের সেখানে থাকতে হতো। 

এভাবেই এএনসির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। সে সময় আমি যাঁদের চিনতাম, সবাই বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ছিল। কে এমন বর্বরতা সমর্থন করতে পারে? এটা কেবল বর্ণবাদের চেয়েও বেশি কিছু ছিলবর্ণবাদী বোথা সরকার কালো মানুষদের মানুষ মনে করত না, মনে করত পশু।
১৯৮৪ সালে ব্রিটিশ শিল্পী জেরি ড্যামারস নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দাওশীর্ষক গান লিখলেন। কিন্তু তার পরও বর্ণবাদ টিকে রইল এবং তাকে সমর্থন জুগিয়ে যেতে থাকল ব্রিটেনের টোরি সরকার। এই দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এখনো মনে করেন যে থ্যাচারের শাসন ছিল সার্থক। অথচ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোথা সরকারের পৃষ্ঠপোষক। এই সেদিন, ২০০৬ সালে সেই দলেরই নেতা ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্বীকার করেছেন যে এএনসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা এবং অবরোধের বিরোধিতা করে মার্গারেট থ্যাচার ভুল করেছিলেন। যেসব প্রবীণ রাজনীতিবিদ জানতেন যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণহত্যা করা হয়েছে, তাঁরাও যখন বিলম্বে সত্য স্বীকার করেন, তখন তাঁদের মানবিকতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। যদিও তাঁরা জানতেন, এটা দক্ষিণ আফ্রিকান কালো মানুষদের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা।
আমি যখন দেখি, ইংরেজ বাগিচাশিল্পী অ্যালান টিচমার্শ ম্যান্ডেলার জন্য আশ্চর্য বাগান বানাচ্ছেন বা ব্যান্ডদল স্পাইস গার্লস ম্যান্ডেলার কোলে উঠে বসছে, তখন ভাবি, ওরা কি জিল স্কট-হেরনের জোহানেসবার্গ গান (১৯৭৫) শুনেছেন কিংবা কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে ম্যান্ডেলার মুক্তি দাবি করেছিলেন?
এমনকি ডেভিড ক্যামেরনও ২৩ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন এমন এক কোম্পানির খরচে, যারা বর্ণবাদের 

পক্ষে ছিল। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে ক্যামেরনও নিজে বর্ণবাদকে সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু তাঁর পক্ষেও না জেনে থাকা সম্ভব ছিল না যে দক্ষিণ আফ্রিকায় কী ঘটছে। অনেকেই তা জানত এবং অনেকেই তখন দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্য বর্জন করে চলত।
ক্যামেরনের ভক্ত ডিলান জোনস একটা বই লিখেছেন, তাতে তিনি দাবি করেছেন, আশির দশক ছিল কোমলতার যুগ। একেবারেই ঠিক নয়। ওই দশকেই আমরা নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দাওস্লোগানে কনসার্ট করেছিলাম। সেটা ছিল জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ। কনসার্টের মঞ্চের শোভা ছিল ম্যান্ডেলার বিরাট প্রতিকৃতি। তাঁর হাসির ঝলক আমাদের উৎফুল্ল করত আবার কাঁদাত। যখন তিনি রুবেন দ্বীপের কারাগারে পাথর ভেঙে চলছেন, তখন সূর্যের আলোর ঝলক তাঁর চোখের স্থায়ী ক্ষতি করেছিল। কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদ অটুট ছিল। যখন তিনি মুক্তির দিকে হেঁটে যাচ্ছেন, (লং ওয়াক টু ফ্রিডম, বা মুক্তির দিকে দীর্ঘযাত্রা ছিল ম্যান্ডেলার আত্মজীবনীর নাম) তখন তিনি লিখেছেন, ‘যদি আমি মন থেকে ঘৃণা মুছে না ফেলতাম, তাহলে হয়তো আজও আমি বন্দী থাকতাম। 

তাঁর জীবন এক সুন্দরের উদাহরণ। কিন্তু ইতিহাস ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যাঁরা একদিন তাঁর সংগ্রামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ যেন তাঁরা তাঁর শুভানুধ্যায়ী সাজতে না পারেন।
ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘কোনো অনুভূতিই সামান্য নয়।তিনি তাঁর জনগণকে অতীত মনে রাখতে বলেছিলেন। আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, যাঁরা আজ ম্যান্ডেলার পরবর্তী জীবনের ঔজ্জ্বল্যের মধ্যে নিজেদেরও আলোকিত দেখাতে চান, তাঁদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আগে, আমাদেরও নিজেদের অতীত মনে রাখা উচিত।
খুবই দুঃখের হলেও, তাঁকে আমাদের বিদায় জানাতে হবে। তার আগে আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, কেমন ছিল তাঁর বিদায়ের আগের সময়; আর কীভাবে তাঁর মৃত্যুর পর অনেকেই ইতিহাস নতুন করে লেখা শুরু করবে। যাঁরা ভুল করেছিলেন, তাঁদের ক্ষমা করা অবশ্যই সম্ভব, কিন্তু ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।


ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
সুজান মুর: ব্রিটিশ সাংবাদিক।

Monday, June 24, 2013

us attack russia

রাশিয়ায় গোয়েন্দাগিরি

গোয়েন্দাগিরি সো‍‌ভিয়েত রাশিয়ার আকাশপথে মার্কিন গোয়েন্দা বিমানগুলি এই কাজেই লিপ্ত ছিল সে সময় কেন? কারণ একটাই তথ্য চাই আরো অনেক অনেক তথ্য সোভিয়েত রাশিয়ার শক্তি বা যুদ্ধাস্ত্র, শিল্প, সম্পদ সম্পর্কে চাই গোপন নথিপত্র আর এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েই আমেরিকা বলির পাঁঠা করেছিল শয়ে শয়ে আমেরিকান যুবকদের মৃত্যুর মুখে তাদের ঠেলে দেওয়া হয়েছিল সেই সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলো বেশ কিছু রাশিয়ানও যারা সোভিয়েত রাশিয়া থেকে কোনো এক সময়ে বিতাড়িত ‍‌য়ে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছিল আর শেষে আমেরিকার চাপে পড়ে বাধ্য হয়েছিল ওই সব গোপন ক্রিয়াকলাপে কৌশলে এদেরকেই কাজে লাগিয়েছিল আমেরিকা
কিন্তু তারপর? এতসব তথ্য কি হলো? এগুলি দিয়ে কোন্মহৎ উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছিল আমেরিকার? সরা বিশ্বেরই বা কি এসে গিয়েছিল এতে? গোছা গোছা রিপোর্ট, ফাইলের পর ফাইল, ফটোগ্রাফ, গাদা গাদা প্রিন্টআউটের ওপর পড়তে শুরু করলো ধুলোর আস্তরণ তা ক্রমশ আরও শুরু হলো শেষে আমেরিকা পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্র প্রতিরক্ষা দপ্তরের ঘরগুলি হয়ে উলো ধুলোয় ঢাকা এক একটি আবর্জনা কক্ষ এর কিছুই আর শেষপর্যন্ত ফিরে দেখা হয়নি তাহলে কেন এত উদ্যোগ? আসলে শত্রুতা কমিউনিস্ট দেশের প্রতি সাম্রাজ্যবাদীদের শত্রুতা সে সময়ে আমেরিকার ওই আগ্রাসী মনোভাব বিন্দুমাত্র স্বস্তি দেয়নি সোভিয়েত রাশিয়াকে
সোভিয়েত রাশিয়াসে সময়ে আপাদমস্তক এক রহস্যময় দেশ বিশ্ববাসীর কাছে চার্চিলের ভাষায়, ‘কি এক অপার রহস্য যেন ছাইচাপা হয়ে আছে শক্তিধর এই দেশটিতে সেটা খুঁজে বার করতেই হবে১৯৪০-এর দশক থেকে সেই চেষ্টাই চলেছে অবিরত প্রথমদিকে ইউ এস মিলিটারি, সি আই এবং জাতীয় সুরক্ষা বাহিনী বিমান পাঠাতো তথ্য সংগ্রহের জন্য চলতো ইলেকট্রনিক ডাটা বা বৈদ্যুতিন তথ্য আহরণের কাজ সোভিয়েত নিউক্লিয়ার পাওয়ার বা মিসাইল সম্পর্কে গোপনে খুঁটিনাটি জেনে নেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য তুর্কি ইরানের বেসক্যাম্প থেকে ছোটো ছোটো বিশেষ এক ধরনের আধুনিক গোয়েন্দা বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতো সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে এর ‍‌ঙ্গে ছিল স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, টেলিফোনে আড়িপাতার ইলেকট্রনিক যন্ত্র সবকিছুর মাধ্যমেই নজরদারির পাকা ব্যবস্থা এক এক সময়ে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই প্লেনগুলি সোভিয়েতের ওপর চক্কর কাটতো নেমে পড়তো ছোটোখাটো কোনো গোপন ডেরাতে তবে বেশিরভাগ  সময়েই লুকিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফটো নেওয়া চলতো্যাডারের সিগন্যাল বুঝে তা জ্যাম করা বা সোভিয়েত সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য এক বিপদজনক গোয়েন্দাগিরির খেলায় নেমেছিল মার্কিন প্রতিরক্ষার এজেন্টরা অনেকক্ষেত্রেই ধরনের বিমানগুলি ধরা পড়ে যেতো সোভিয়েত বাহিনীর হাতে সো‍‌ভিয়েত  যুদ্ধ বিমান বা অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট ফায়ারের মাধ্যমে এগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়াতেমন কোনো ব্যাপারই ছিল না তাদের কাছে গুলি করে সেগুলিকে অকেজো করে দিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনা হতো অনেক বিমানকেই বিমানের ভেতর বেঁচে যাওয়া শত্রুদের বন্দী করে ফেলা হতো নিমেষেই
১৯৫০ এবং ১৯৫১ সালে যে নজরদারি বিমানকে গুলি করে নামানো হয়েছিল রাশিয়ার বুকে তাতে বিমানের ১০ জনই মারা যায় শেষপর্যন্ত ১৯৬৯ সালে এরকম এক ঘটনায় নিহত হলো ৩১ জন জাপান সাগরের ওপরে ঘটনা ঘটে এটা ঘটায় উত্তর  কোরিয়ার এক যুদ্ধ বিমান আর এই মধ্যবর্তী প্রায় ১০ বছর সময়ের মধ্যে প্রায় গোটা বার এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে খবর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকান এয়ারক্র্যাফট এবং এই কমিউনিস্ট দেশের যুদ্ধ বিমানের আঘাত পালটা আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ঝুরি ঝুরি
সে সময়ে শুধুই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সংখ্যা তাদের পরিণতি নিয়ে যখন মার্কিন যুদ্ধ বিমানগুলিকে গুলি করে বা ভয় দেখিয়ে জোর করে নামিয়েছিল সোভিয়েত বাহিনীর জওয়ানরা তখন এগুলির সংখ্যা নিয়ে ব্যাখ্যা পালটা ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজও চলছিল পুরোদমে ১৯৯২ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলৎসিন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন ৯টি ইউ এস যুদ্ধ বিমানকে গুলি করে নামানো হয়েছিল ১৯৫০ সালের প্রথম দিকে বেঁচে যাওয়া ১২ জন আমেরিকানকে বন্দী করা হয়েছিল তাদের পরিণতি এখনো ঠিক হয়নি এর াঁচমাস পরে রাশিয়ার প্রাক্তন জেনারেল রাশিয়ান-ইউ এস কমিশনের কো-চেয়ারম্যান গোটা বিষয়টি অনুসন্ধান করেন নিরুদ্দেশ আমেরিকানদের প্রসঙ্গে তিনি একটি ইউ এস সেনেটে বলেন, ওই ঠাণ্ডা যুদ্ধে নজরদারি চালানোর জন্য ৭৩০ জন এয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের পরিণিত নিয়েও যথেষ্টই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে
ঠিক যা ঘটেছিল ইউ- বিমানের ক্ষেত্রে ১৯৬০ সালের ১লা মে প্লেনটিকে গোপনে নামিয়ে আনা হয়েছিল রাশিয়ার বুকে সে সেই বিমান নয় অন্যান্য যে কো‍‌নো বিমান থেকে এটি ছিল আধুনিক উচ্চতাসম্পন্ন চট করে একে নাগালের মধ্যে পাওয়া কঠিন ছিল এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ফ্রান্সিস গ্যারি পাওয়ার হঠাৎ করে এটির নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা নিয়ে আমেরিকা খুবই বিব্রত ছিল সে সময়ে সারা দেশে হইচই দেশের লোকের কাছে তো আর মুখরক্ষা হয় না কি জবাব দেওয়া যায়? কিছু বললেই তো প্রকাশ পাবে যে রাশিয়ার শক্তির কাছে হেরে গেছে আমেরিকা শেষে নানারকম মুখরোচক গল্প বানিয়ে মানুষের কাছে বলা ছাড়া আর কোনো উপায় তাদের ছিল না সত্যিটা প্রকাশ পেল শেষে যখন রাশিয়ানরা প্লেন এবং পাইলটকে সবার সামনে হাজির করলো এই ধরনের একটি অত্যাধুনিক মেঘভেদী বিমানকেও যে তারা কবজায় আনতে পারে এটা প্রথমেই বিশ্বাসই করতে পারেনি আমেরিকার সেনা গোয়েন্দা বাহিনীর কর্তারা তারা বললো রাশিয়ানদের অনেক গোপন খবর বার করার ক্ষমতা ছিল এই বিশেষ বিমানের খবর পাওয়াও গিয়েছে নাকি বেশ কিছু
অনেক সময়ে সো‍‌ভিয়েত বিমান বাহিনী আমেরিকার বিমানের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ এনে তার বিরোধিতা করেছিল আমেরিকা তাদের বক্তব্য সোভিয়েত সীমানার বাইরে গিয়ে জাপান সাগরের ওপর তারা এটা করেছে যদিও নজরদারি খবর সংগ্রহকারী বিমানগুলি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পড়ে রাশিয়ার মানুষের বক্তব্য তারা ঠিকই করেছে এই ইউ- এর কারণেই প্যারিসের আইজেনহাওয়ার-ক্রুশ্চেভ বৈঠক শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায় সে সময়ে সারা পৃথিবীর মানুষ সেদিকেই তাকিয়েছিল
ইউ- এর ঘটনা কি সত্যিই এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আমেরিকার কাছে? ইতিহাস কি বলে? কর্নেল ফ্লেচার প্রাউটি শোনালেন একটু অন্যরকম কথা ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রাউটি ছিলেন সি আই এবং পেন্টাগনের মধ্যে সংযোগকারী বিশেষ প্রতিনিধি তাঁর বইসিক্রেট টিম’- প্রকাশ সি আই - একাংশ এবং পেন্টাগনের কয়েকটি এজেন্ট নাকি এর পেছনে ছিল তারা চক্রান্ত করেই উধাও করেছিল এই বিশেষ বিমানটিকে কারণ ঠাণ্ডা যুদ্ধের টেনশন তারা বরদাস্ত করেনি ধরনের বক্তব্য থেকেও কি কিছু পরিষ্কার হলো? সবই শেষপর্যন্ত ধোঁয়াশাই থেকে গেল সবার কাছে
তবে এর ব্যাখ্যা একটা দিয়েছিলেন প্রাউটি বিমানটি উধা‍‌ হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছিলেন, ইউ- এর ইঞ্জিনে পর্যাপ্ত লিকুইড হাইড্রোজেনের প্রয়োজন ছিল ওই উচ্চতায় যাওয়ার জন্য যদি তুর্ক থেকে ওড়ার আগে হাইড্রোজেনের আধারটি আংশিক ভর্তি করা হয় তবে তা সোভিয়েত এলাকায় ঢোকার পরপরই হয়তো নেমে আসতে বাধ্য হবে এক্ষেত্রে সোভিয়েত রাশিয়ার দাবি তিনি অগ্রাহ্য করেছেন প্লেনটি হঠাৎ নিচে নেমে এসেছিল বলেই তা সোভিয়েত বাহিনী গুলি করে নামিয়ে নিতে পেরেছিল ১৯৮৩ সালেই সোভিয়েত ইউনিয়ন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিমান ধ্বংস করেছিল গোয়েন্দাগিরির অপরাধে প্রাউটি মন্তব্য করেছিলেন এই বলে যে একটি বিদেশী রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিমানকে ক্যামেরায় গোয়েন্দাগিরি করতে দেখা গেছে
রাশিয়ানদের কাছে গোয়েন্দা বিমান হলো মহাকাশে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী এক আতঙ্ক কিন্তু আমেরিকা কি বলেছিল? তারা বলেছিল গোয়েন্দা বিমান সব দেশেরই আছে তারা তথ্যও সংগ্রহ করে যদিও এটা সবাই জানতো যে আমেরিকার আকাশে কোনো সোভিয়েত প্লেন দেখা যায়নি সোভিয়েত রাশিয়ার আতঙ্ক অনভিপ্রেত ছিল না মোটেই তাদের বক্তব্য এই ধরনের গোয়েন্দা বিমানগুলি যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টিকারী তাতে বোমাও থাকতে পারে সেটা মোটেই বিচিত্র কিছু নয় কারণ রাশিয়ার মানুষ ভুলে যাননি নাজিদের আগ্রাসী ভূমিকার কথা কিংবা ১৯৫৮ সালে এপ্রিলের সেই ঘটনা কথা সেখানে ্যাডারের ভুল সচেতক সিগন্যালের কারণে একটি মার্কিন যুদ্ধ বিমান পরমাণু বোমা নিয়ে উড়ে গিয়েছিল সোভিয়েতের দিকে ভুল ধরা পড়ার পর অবশ্য তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল
না, আমেরিকানরা বোমা না ফেললেও ভেতর থেকে ফোপরা করে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বহু মানুষকে তারা নামিয়ে দিয়েছিল রাশিয়ার মাটিতে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে তারা প্রায় সকলেই ছিল রাশিয়ার মানুষ সি আই এবং আরো কয়েকটি এজেন্সি তাদের নিয়ো করেছিল কাজে অভিভাসন সংস্থাগুলি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব রাশিয়ান সলিডারিটিস বা ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব লেবার (এন টি এস) বলে পরিচিত
রুশ বিপ্লবের পর অনেক রাশিয়ান ছেলেই আমেরিকা অন্যান্য কয়েকটি দেশে চলে গিয়েছিল এছাড়াও অনেকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী আমেরিকায় থাকার কথা ভেবেও রাশিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিল এদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কাজে লাগিয়েছিল আমেরিকা দুটি গ্রুপই নাজিদের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্ত হয়েছিল যুদ্ধের সময়ে যদিও এন টি এস সাধারণভাবে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীভুক্ত অভিভাসন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেতাদের এই যৌথ ক্রিয়াকলাপ স্তালিনবাদের বিরুদ্ধেই কাজ করতো
এই এন টি এস এর মূল ভিত্তি পশ্চিম জার্মানি ১৯৫০ সালের পুরোটা জুড়েই এই সংস্থার সাহায্যকারী ছিল সি আই জার্মানিতে সি আই - স্কুল বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল ইনস্টিটিউ ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ইউ এস এস আর এই নাম একই ধরনের স্কুল ছিল ব্রিটেন আমেরিকাতেও এই এজেন্সি এন টি এস সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতো সোভিয়েতের মাটিতে নামানোর আগে তারা রীতিমতো তৈরি হয়েই নামতো নানারকম অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, কোলাপসিবল সাইকেল নিয়ে, ফ্রগম্যান স্যুট ‍‌রে তারা প্লেন থেকে নেমে পড়তো বিপজ্জনক এলাকার বিদ্যুৎবাহী তার প্রতিরোধ করার জন্য তাদের সঙ্গে থাকতো রবার ম্যাট তাদের লাগানো হতো মিলিটারি নথিপত্র বা বিভাগগুলির খোঁজ খবরের জন্য এগুলিই সে সময় তথ্য হিসেবে পেতে চাইতো পশ্চিমীরা এছাড়া তাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসমূলক কাজও করাতো মার্কিন মদতপুষ্ট ওই ‍‌জেন্সিগুলি ব্রিজ রেলের লাইন উপড়িয়ে বিশৃঙ্খলা, গণ্ড‍‌গোলের সৃষ্টি করে মিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে অস্ত্র যুদ্ধে নেমেছিল
কতনজকে এভাবে আনা হয়েছিল তার হিসাব নেই শুধুই আকাশপথে নয়, নৌকাযোগে বর্ডার পেরিয়েও তাদের আনা হয়েছে শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেকট্ইন দ্য অ্যাক্টনামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল তাতে প্রায় ২৪ জনের তালিকা রয়েছে যাদের রাশিয়ানরা গ্রেপ্তার করেছিল ওইভাবে অনুপ্রবেশের জন্য বেশ কয়েকজনের জেল হয়েছিল কয়েকজনকে মেরে ফেলাও হয়েছিল সে সময়ে জার্মান অধিকৃত সোভিয়েত অঞ্চলে এমন একজনকে ধরা হয়েছিল যে বহু হত্যাকাণ্ডের ঙ্গে যুক্ত ছিল বইতে বলা হয়েছে, এমন বহুলোককে ধরা হয়েছে যাদের কোনো তালিকা করা সম্ভব হয়নি রাশিয়ানদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে পশ্চিম জার্মানিতে নানা ধরনের চক্রান্ত গড়ে উঠেছিল সে সময়ে এইসব অনুপ্রবেশকারীদের সম্বন্ধে রাশিয়ানরা বলেছিল এরা অনেকেই বিভিন্ন তার রেডিও বিকনস ছিনতাই করতোসেগুলি আমেরিকানদের বোমা বানানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতো তাদের কেউ পশ্চিমে ফিরতো নানা তথ্য নিয়ে কাউকে আবার অন্য কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হতো সোভিয়েত রাশিয়ারই অন্য কোনো জায়গায় সেখানে তারা এজেন্টের কাজ করবে বলে প্রস্তুতি নিতোঅ্যান্টি কমিউনিজম’-এর প্রচারপত্র ছড়ানো হতো রাশিয়ার মাটিতে সেগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো জলে ভাসতো তার কিছু
সোভিয়েত নাগরিকদের অনেকেই পশ্চিমে এসেছিল এন টি এস সদস্যদের সঙ্গে মোলাকাত করতে তাদের খবরের কাগজ আর বইপত্র রাশিয়া ইউক্রেনে বিলি করতো তারা (এন টি এস) বিভিন্ন এলাকায় কালো বাজারের মাধ্যমে চালাতো তাদের কর্মপ্রক্রিয়া ছোটো ছোটো দোকান করতো সস্তায় জিনিস বিক্রিবাটা করতো এভাবেই তারা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো নর্থ আফ্রিকা থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়া নেটওয়ার্ক ছিু সি আই - নাবিক, পর্যটক, চাকুরিজীবী, খেলোয়াড় এবং পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত বাহিনীর সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ রাখতো তাদের ওপর কাজ করতো তথ্যের সন্ধানে চর হিসাবে নিযুক্ত করার জন্য লোভ দেখাতো মুক্ত বিশ্বের কখনো কখনো ভয়ও দেখাতো সোভিয়েত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের উত্যক্ত করারও উদ্যোগ নেওয়া হতো মাঝে মধ্যেই শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে হয়রানি করার জন্যঅ্যান্টি কমিউনিজমছড়িয়ে দেওয়ার জন্য
এই ধরনের বক্তব্য বা বিষয় এরপর আমেরিকার সরকারকে বই প্রকাশনার ব্যবসায়ে উৎসাহিত করেছিল বিভিন্ন মার্কিন বিদেশী প্রকাশক এবং ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্সির সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় ১৯৬৭ সালে প্রায় এক হাজার বই শুধুমাত্র প্রচারের উদ্দেশ্যেই প্রকাশিত হয়েছিল বহু বই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য দেশে বিক্রি হয়েছিল তবে আশঙ্কা ছিল এত বই প্রকাশ করার যখন সি আই এবং ইউ এস আই প্রচুর সংখ্যক বই নিজেরা কিনে নেবে বলে সম্মত হলো, সে সময়েও বেশ কিছু বই লেখা প্রকাশিত হয়েছিল এই বিপুল আর্থিক বিনিয়োগের ফলাফল নির্ধারণ করার কোনো পথ অবশ্য ছিল না এক্ষেত্রে খোদ আমেরিকা সরকারের সরাসরি হাত না থাকলেও বিভিন্ন লেখক লেখিকাদের সাহায্য করার জন্য ওয়াশিংটন নানা তথ্য জোগাতো বলে অভিযোগ ছিল রাশিয়ানদের ১৯৬৭ সাল নাগাদ এই ধরনের কাজ শেষ হয়ে এলো যদিও অন্যান্য দেশে এদিক ওদিকে তা ভালোই চলছিল ১৯৭৬ সালে একটি সেনেট কমিটি বললো কয়েক বছর ধরে যখন এই পদ্ধতি চলছে, সি আই প্রায় ২৫০টি বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বেশিরভাগই বিদেশী ভাষায় পরে তাদের আবার কয়েকটি পুনর্মুদ্রণ ঘটেছিল আমেরিকায় বেশিরভাগ বই এর প্রকৃত পরিচয় এখনো পর্যন্ত বিশেষভাবে সংরক্ষিত তবে তাদের মধ্যে কিছু প্রকাশ পেয়েছে সেগুলি হলোদ্য ডায়নামিকস অব সোভিয়েত সোসাইটিওয়াল্ট রস্টো; দ্য নিউ ক্লাসমিলোভান ডিজিলাসকনসাইস হিস্টরি অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টিরবার্ট বারবন; ইন পারস্যুট অব ওয়ার্ল্ড অর্ডাররিচার্ড এন গার্ডনার; দ্য ফরেন এইড প্রোগ্রামস অব দ্য সোভিয়েত ব্লক অ্যান্ড কমিউনিস্ট চায়নাকুর্ট মুলেট; পিকিং অ্যান্ড পিপলস ওয়ারমেজর জেনারল স্যাম গ্রিফিথ; দ্য ইয়েনানা ওয়েইয়োডেসিও ্যাভিনস; লাইফ অ্যান্ড ডেথ ইন সোভিয়েত রাশিয়াভ্যালেন্টিন গঞ্জালেস; দ্য অ্যান্টহির্লসুজানে লাবিন; দ্য পলিটিকস অব স্ট্রাগল : দ্য কমিউনিস্ট ফ্রন্ট অ্যান্ড পলিটিক্যাল ওয়ারফেয়ারজেমস ডি অ্যাটকিনসন; ফ্রম কলেনিয়ালিজম টু কমিউনিজমহোয়াং ভ্যান চি; হোয়াই ভিয়েতনামফ্র্যাঙ্ক ট্র্যাগার; টেরর ইন ভিয়েতনামজে মালিন সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক, এর বাইরে ‍‌সি আই জর্জওরেল এরঅ্যানিম্যাল ফার্মকার্টুন সারা পৃথিবীজুড়েই বিনিয়োগ বণ্টন করেছিল
নানারকম বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য সে সময় সমাজতন্ত্রের ছড়ানো হয়েছিল রেডিওর মাধ্যমে সারাদিন ধরে অনবরতই চলতো প্রচার রেডিও লিবার্টি, রেডিও ফ্রি রাশিয়া, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, রেডিওইন আমেরিকান সেক্টরআমেরিকার কোণায় কোণায় এবং ভয়েস অব আমেরিকা সারা বিশ্বে সবই বিভিন্ন প্রাইভেট সংস্থার বিনিয়োগ যা গিফ্ হিসাবে আসতো তা সে আমেরিকান কর্পোরেশনরই হোক বা নাগরিকদের অনুদানই হোক অথবা কোনো ব্যক্তিগত উৎস থেকেই হোক না কেন আসলে সি আই ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রায় সব খরচাই গোপনে বিভিন্ন মাধ্যমে বহন করেছিল
এই স্টেশনগুলি কমিউনিস্টদেরমিডিয়া গ্যাপগুলি পূরণ করতো সারা পৃথিবীর ভালো ভালো ছবি তুলে ধরতো তাদের নিজেদের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে তাদের লক্ষ্য ছিল মিউনিস্টদের যা কিছু হচ্ছে সবই খারাপ কথা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা প্রাক্তন সি আই অফিসিয়াল ভিক্টর মারসেট্টি বলেছিলেন পূর্ব ইউরোপের ভালো হচ্ছে এবং কমিউনিস্ট সরকারের খারাপ হচ্ছেএটা প্রচার করাই রেডিওগুলোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল
রাশিয়ানরা যারা ওইসব স্টেশনে স্টেশনে কাজ করতো আর স্বাধীনতা, গণতন্ত্র মানবতার প্রচার করতো, পরে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল তাদের চিহ্নিত করেছিল আমেরিকার বিচার বিভাগ হিটলারের কুখ্যাত এইনস্যাটজগ্রুপেন সদস্য হিসেবে ওই রাশিয়ানরা কাজ করতো বলে বিচার বিভাগের অভিমত ছিল সো‍‌ভিয়েত ইউনিয়নের প্রচুর সংখ্যক জিউকে হত্যা করেছিল এরাই এদের মধ্যেই একজন স্ট্যানসিল স্ট্যানকিয়েভিচ যার হুকুমে এক ব্যাপক হত্যাকাণ্ড হয়েছিল বাইলো রাশিয়াতে তথ্য অস্ত্র বাঁচাতে মৃত বাচ্চাদের সঙ্গে জ্যান্ত বাচ্চাদেরও কবর দেওয়া হয়েছিল সে রেডিও  লিবার্টিতে কাজ করতো জার্মান যুদ্ধের ভিলেনরা যারা সি আই এর হয়ে কাজ করতোতারাও সোভিয়েতদের বিরুদ্ধেঅপারেশনচালাতো
কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোভিয়েত সম্পর্কে তথ্যগুলি কোনো কাজে আসেনি অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে নানারকম তথ্যযেগুলি জোগাড় হয়েছিল তা ছিল নিষ্ফল অন্তঃসারশূন্য কিন্তু এই তথ্যই শেষপর্যন্ত ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছু লোকের কাছে যুদ্ধোত্তরকালে পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়া ওই সকল অভিভাসীদের জীবিকা ছিলতথ্য ব্যবসা এটাই তাদের পণ্য সোভিয়েত নাগরিকদের সঙ্গে কোনো বৈঠক, কথাবার্তা অথবা কাল্পনিক কোনো মিটিং থেকে একটি সাধারণ রিপোর্ট তৈরি করে একটি রাজনৈতিক রঙ মি‍‌‍‌শিয়ে বাজার ছাড়া হতো একই সময়ের মধ্যে রিপোর্টের চারটি বয়ান তৈরি হতো বিভিন্ন তথ্য সাজিয়ে চারজন সেগুলি লিখতো এগুলি আলাদাভাবে আমেরিকা, ব্রিটিশ, ফ্রান্স পশ্চিম জার্মানির ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কাছে বিক্রি করা হতো সি আই - কাছে সব বক্তব্যই থাকতো এগুলি অন্যান্য দেশের এজেন্সির কাছে পাঠানো হতো সোর্স গোপন করে ফলে রিপোর্টর পর রিপোর্ট জমা হয়ে ফাইল মোটা হতো ক্রমশ
এভাবেই ওয়াশিংটন সি আই - রাশিয়ান ফাইল পাহাড় প্রমাণ হয়ে গেল হিজিবিজি তথ্যে ভগের গেল ঘরবাড়ি অনেক তথ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার মধ্যে চিঠিপত্র আদান প্রদানের মারফৎ পাওয়া গিয়েছিল ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর মধ্যেই হয়েছিল এসব ১৯৭৯ সালে পোস্ট অফিস কাউন্সিল থেকেই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল তারা বলেছিল ‘If there was no national security mail cover Prograss, the FBI might be inhibited  in finding out if a nation was Planning war against US.” আসলে আতঙ্ক শক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি আমেরিকার দিকে এগিয়ে আসে তাহলে কি হবে? এই ভয়েই আমেরিকা সে সময়ে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন প্রাক্তন সি আই আধিকারিক হ্যারি রসিজকে লিখেছিলেন অভিভাসীদের প্রাথমিক কাজ হিসাবে সো‍‌ভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করানো হয়েছিল ওই আতঙ্ক থেকেই একই কারণে গোয়েন্দা বিমানও পাঠানো হয়েছিল সোভিয়েতের আকাশে মনে করা হতো সোভিয়েত বুঝি ধেয়ে আসছে পশ্চিমের দিকে যে কোনো দিনই ইংলিশ চ্যানেল পার করে এসে পড়বে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর জওয়ানরা

কিন্তু বাস্তবে ধারণা ছিল নিতান্তই অমূলক এরকম কোনো যুদ্ধের সতর্কবাণী রাশিয়ার দিক থেকে কখনো এসেছে বলে এজেন্টদের রিপোর্টে কিছু ছিল না প্রবল কমিউনিস্ট বিরোধী হ্যারি রসিজকের লেখাতে সে কথাই প্রকাশ পেয়েছে