Wednesday, May 22, 2013

taliban, afganistan, pakistan...



নওয়াজের নেতৃত্বে পাকিস্তান ও ন্যাটো পরবর্তী আফগানিস্তান
তালিবান জঙ্গিরা কি আরো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন দল বিজয়ী হওয়ায় নতুন সরকার গঠন নিয়ে এখন নানা কথাবার্তা চলছে। বিজিত দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদেরকে খুব স্বাভাবিকভাবেই জোট সরকার গঠনের দিকে যেতে হচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশ্লেষকদের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে, তের বছর পর ক্ষমতায় আসা নওয়াজ সংঘাতময় পাকিস্তানে তালিবান জঙ্গিদের কতখানি দমাতে পারবেন? তিনি কি একটি রক্তপাতহীন পাকিস্তান উপহার দিতে পারবেন? নাকি তার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে? দেশটিতে দিনে দিনে জঙ্গি হামলা মারাত্মক আকার ধারণ করায় এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। একই ধরনের কথা উঠছে আফগানিস্তানের বেলায়ও। সেখানেও বলা হচ্ছে আগামী বছর ন্যাটো বাহিনী চলে গেলে তালিবান জঙ্গিরা এ সুযোগে কি তাদের ফায়দা লুটবে না? প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বা তা কতটুকু সামাল দিতে পারবেন?
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে এক অর্থে বলা যেতে পারে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দু'দেশেই বছরের পর বছর তালিবান জঙ্গিরা শক্তভাবে আস্তানা গেড়ে আছে। তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ক্রমশ সক্রিয় আত্মঘাতী চক্রকে তারা ব্যবহার করছে। এতে প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে অনেক লোক। এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না তাদের হামলা থেকে। সমপ্রতি পাকিস্তানে নির্বাচনী প্রচারণাকালে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। অপহরণ করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির পুত্র আলি হায়দার গিলানিকে। তালিবানের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকির পর দেশ ছেড়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো। অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণাকালে নওয়াজ শরীফ বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তারা দেশের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নিজেদের সম্পৃক্ততার ইতি টানবেন। যদি তা-ই হয় তাহলে হয়তো তারা তালিবানের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কোন শান্তিপূর্ণ পথ তৈরি করতে যাবেন। তবে সবই নির্ভর করছে তালিবানরা কতখানি আন্তরিক তার উপর। কেননা পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা কম কষ্টকর নয়। নওয়াজ শরীফের দল বিজয়ী হওয়ার পর আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, আসুন সন্ত্রাস তথা জঙ্গিবাদ দমনে আমরা এক হয়ে কাজ করি। আমরা এর শিকড় উত্পাটনে একতাবদ্ধ হই। এগুলো যদি কথার ফুলঝুরি হয় তাহলে তো আর কোন কিছুুই থাকে না। আর যদি সত্যিকার অর্থে তা-ই বুঝায় তাহলে ভবিষ্যতে এটি যে দুটো দেশের জন্য এক বিরাট ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা পাকিস্তানে নতুন সরকার আসায় তার প্রভাব যে আফগানিস্তানেও পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য বিবিসির খবরে বলা হয়, পাকিস্তানে নতুন সরকার আসায় আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে যত যা-ই হোক দু'দেশের যে জঙ্গিই প্রধান সমস্যা তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিকে পাকিস্তানে দাবানলের মতো জঙ্গিরা দেশটাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অপরদিকে আফগানিস্তানও ওই একই আগুনে পুড়ছে। উভয় দেশই এখন জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা হিসাবে ব্যবহূত হচ্ছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দুই দেশেরই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আন্তরিক উদ্যোগের প্রয়োজন। এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিকই তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি নওয়াজের নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য নতুন সরকারের কাছে শান্তি ও সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, সরকার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হলে তারা সংলাপে বসতে রাজি। এক্ষেত্রে সরকারের যা দরকার তাহলো শুধু আন্তরিকতার। টিটিপি মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান বলেন, সংলাপে বসলে হামলা বন্ধ হবে, উম্মুক্ত হবে নানা সমাধানের পথ। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসেও এই সংগঠনটি তত্কালীন জোট সরকারকে শর্তযুক্ত আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখন তা সরকারের ইতিবাচক সাড়ার অভাবে আলোর মুখ দেখেনি। উল্লেখ্য পাকিস্তানের বহু হত্যাকাণ্ড ও চলমান সহিংসতার জন্য মূলত এ সংগঠনটিকেই দায়ী করা হয়। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে নওয়াজ শরিফ বলেছিলেন, তালিবানের আলোচনার প্রস্তাবকে তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। নওয়াজের এ বক্তব্যকে তারা শ্রদ্ধার চোখেই দেখেন বলে জানান এহসান। এরকম একটা বক্তব্যের পর বিশ্লেষকরা তালিবানের এ প্রস্তাবকে মঙ্গলজনক বলেই মনে করছেন।

এবার দেখা যাক ন্যাটো নেতৃত্বাধীন ইসাফ বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোর্সেস) ২০১৪ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে দেশটির অবস্থা কোন পথে গিয়ে দাঁড়ায়। বিবিসির ডেভিড লয়েন সমপ্রতি তার এক নিবন্ধে বলেছেন, সম্ভবত সামনের বছর জুনের দিকে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী সমগ্র দেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ১৯৯২ সালে দেশটিতে রাশিয়া সমর্থিত সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পর এই প্রথম তারা ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পাকতিকা প্রদেশের (এখানে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে) ক্যাম্প থান্ডারের কমান্ডার জেনারেল মোহাম্মদ শরিফ ইয়াফটুলি বলেন,আমি গর্বিত যে এখানে নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যদলের উত্থান ঘটেছে। তিনি বলেন,তালিবানের আর আফগানিস্তান পুনরায় দখল করার মতো সামর্থ্য নেই। কারণ তারা সামনা-সামনি যুদ্ধ করতে পারে না। যদি তারা শক্তিশালী হতো তাহলে তারা কাপুরুষের মতো স্কুলে গিয়ে মেয়েদের উপর হামলা চালাতো না। তারপরও তিনি তালিবানদের 'ভাই' উল্লেখ করে বলেন, আফগান সৈন্যদের তাদের মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে। কর্ণেল আব্দুল কাদির বলেন, পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য সেনাবাহিনীকে অবশ্যই তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে ২০১৪ সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী চলে গেলে দেশটির নিরাপত্তার জন্য ৯টি স্থায়ী ঘাঁটি থাকার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারজাই বলেছিলেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যরা যে থাকতে চাচ্ছেন তা আমাদের ভালোর জন্যই। শর্ত হচ্ছে এখানকার শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তার প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে যদি ন্যাটো বাহিনী চলে যায় তাহলে জঙ্গি অধ্যুষিত দেশটির নিরাপত্তা যে প্রশ্নের সন্মুখীন হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? আবার নওয়াজ শরীফ নির্বাচনে জয়লাভের পর দেশটিতে মার্কিন ড্রোন হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, এটা দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের নতুন সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কেননা আমেরিকা চায় তালিবান ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সামরিক অভিযান চালাক। কিন্তু পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী মার্কিন এ নীতির বিরোধিতা করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, আমেরিকা উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অভিযানের পরিণতির বিষয়টি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সবমিলিয়ে আমেরিকাকে দূরে রেখে নওয়াজ জঙ্গি দমনে কতটা সার্থক হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আবার তালিবানের সঙ্গে নমনীয় থেকেও তার চলার পথ কতটা সহজ হবে তাও বলা দুষ্কর। তাই সংঘাতময় পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থে কোন কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করা সহজ নয়। এক্ষেত্রে সময়ই বলে দিবে কোন পথে হাঁটছে পাকিস্তান।

No comments:

Post a Comment