ওবামার ব্যর্থ প্রজেক্ট আফগানিস্তান
মোট খরচের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। দু-পক্ষ
মিলিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত বিগত এক দশক জুড়ে চলা মার্কিনীদের ‘প্রজেক্ট
আফগানিস্তান’-এর। এখনও দমানো গেল না তালিবানদের। বরং নতুন
কায়দায় আরও শক্তিবৃদ্ধি করে ফিরে আসছে তালিবানরা। তাদের পরপর গেরিলা হামলায় রোজই
প্রাণ হারাচ্ছেন ন্যাটোর সেনারা। জওয়ানদের মৃত্যুর কারণে ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান
থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ও
দক্ষিণ কোরিয়া। ন্যাটো সদস্যভুক্ত অন্য দেশগুলোর সাধারণ মানুষ বারবার
প্রতিবাদ-আন্দোলন সংঘটিত করছেন আফগানিস্তানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন রাখার প্রশ্নে।
ন্যাটোর বৈঠকেও বিভিন্ন দেশের অসহিষ্ণু মনোভাব টের পাচ্ছে আমেরিকা। উলটোদিকে আরও
আগ্রাসী হচ্ছে তালিবানরা। সম্প্রতি দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে ২
মহিলাসহ ১৭জনের মাথা কেটে খুন করল তালিবানরা। কান্দাহার-এর মতো এদেশে চলছে তাদের
সমান্তরাল শাসন ব্যবস্থা। দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ
ওয়াশিংটনের ‘পুতুল’ হামিদ কারজাই।
তালিবানিদের চোরাগোপ্তা হামলায় আতঙ্কিত মার্কিন ফৌজও। গেরিলা আক্রমণে নিয়মিত প্রাণ
যাচ্ছে তাদের। তালিবান সমস্যার কোন সুষ্ঠু সমাধান হলো না এক দশকে, অথচ দোরগোড়ায় এসে গেল ওবামার নির্বাচন। কপালে চিন্তার ভাঁজ পেন্টাগনের।
কাবুলের মার্কিন দূতাবাস ও সেনা ছাউনিগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। প্রতিদিনই সেখানে
নিয়ে আসা হচ্ছে তালিবানি হামলায় নিহত মার্কিন সেনাদের দেহ, যেটাকে
কফিন বন্দী করে পাঠাতে হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। বিদেশের মাটিতে এক দশকেরও বেশি
নিজেদের সেনা মোতায়েন রাখার জন্য প্রতিনিয়তই ঘরে বাইরে সমালোচনা ও প্রশ্নবাণে
জর্জরিত হচ্ছেন ওবামা। ‘প্রজেক্ট আফগান’ মনে করিয়ে দিচ্ছে ভিয়েতনামকে।
কৌশলীভাবে ওবামা বলছেন, ২০১৪-এর মধ্যে আফগানিস্তান থেকে
তাদের সমস্ত সেনা তুলে নেবে আমেরিকা। কিন্তু আইনের ফাঁকের মতো দখলদারির সূত্র বলছে,
মার্কিন সেনাবাহিনীর কিছু অংশ মাত্র ফিরে যাবে স্বদেশে, থেকে যাবে তাদেরই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কয়েক হাজার সেনা এবং সামরিক
পরামর্শদাতারা। ফলে ২০২০-তেও সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার সম্ভব কিনা ভবিষ্যৎ
সময়ই তার উত্তর দেবে।
অন্যদিকে ন্যাটো ও মার্কিন সেনার ওপর তালিবানদের গেরিলা
আক্রমণের নতুন নামকরণও হয়েছে — ‘গ্রিন অন ব্লু অ্যাটাকস্’।
ক্রমবর্ধমান এই আক্রমণ। ২০১২-এর প্রথম আট মাসেই মোট ২৬ বার হামলা চালিয়েছে
তালিবানরা। তারা রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করে ‘ইসলাম রক্ষার’
শপথ নিয়ে মরণপত্র ‘ধর্মযুদ্ধের ডাক দিয়েছে। দক্ষিণ
ওয়াজিরিস্তানের এক তালিবান কমান্ডার ‘এশিয়া টাইমস্ অন লাইন’-এ সুস্পষ্টভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলছেন ‘বিদেশী
শক্তি ইসলামকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এবং আফগানিস্তানের সামাজিক রীতিনীতি নষ্ট করার
চক্রান্তে একদশকব্যাপী এই দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যেই
ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।’
কিছু বিচ্ছিন্ন কিন্তু মারাত্মক সংবেদনশীল ঘটনাও কাজ করছে
আফগানদের তীব্র মার্কিন বিদ্বেষের জন্য। যেমন, বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে ন্যাটো সেনাদের
দ্বারা ইসলাম ধর্মগ্রন্থ ‘পবিত্র কোরান’ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত তালিবান জঙ্গীর মৃতদেহের ওপর
মার্কিন সেনাদের প্রস্রাব ত্যাগের ঘটনা।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ‘গ্রিন অন ব্লু
অ্যাটাকস্’, এখনো পর্যন্ত এরকম বিক্ষিপ্ত হামলায় মারা গেছেন
৫০জনেরও বেশি মার্কিন সেনা। আফগান পুলিস ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ছদ্মবেশে তাদের লোক
নিঃশব্দে নিয়োগ করে চলেছে তালিবানরা। সি আই এ-র অধরা থেকে যাচ্ছে তালিবানদের এই ‘গোপন নিয়োগ’। চিন্তিত ওবামা ঘন ঘন বৈঠক করছেন
কারজাই-এর সাথে। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার সেনা মার্কিন ‘পুতুল’
কারজাইকে রক্ষায় ব্যস্ত। প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানে
মার্কিন আগ্রাসনের মূল লক্ষ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, পেন্টাগনের
নজর ছিল ক্যাসপিয়ান বেসিনের তেল সম্পদের ওপর কবজা রাখা, যার
ভায়া মাধ্যম হবে কাবুলে এক ‘পুতুল সরকার’। এর ফলে এই অংশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ও আটকানো যাবে।
ইতিমধ্যেই খুব সম্প্রতি ওবামা
প্রশাসনের জন্য খুশির খবর শুনিয়েছে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এক
সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাওয়াদ ওমর ঘোষণা করেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তেল
উৎপাদন করবে আফগানিস্তান। ফলে সহজেই অনুমেয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী
ক্রমশ আরো দৃঢ় করবে তাদের কর্তৃত্ব। এদিকে আফগানিস্তান জুড়ে রোজই আত্মপ্রকাশ করছে
নিত্যনতুন সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালিবানরা। সম্প্রতি
তাদের শিকার প্রতিবেশী পাকিস্তানের ১৪ বছরের প্রতিবাদী কিশোরী মালালা ইউসুফজা।
ভয়াবহ অবস্থার দিকে ধাবমান সমগ্র আফগানিস্তান। আগামী দিনে ক্ষমতা দখলের লড়াই-এ ‘গ্রিন অন ব্লু অ্যাটাক’ আরও রক্তক্ষয়ী চেহারা নিতে
চলেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান সেরকমই। এক দশক মার্কিন
দখলদারিতে থেকেও স্পষ্ট নয় কাবুলের দেওয়াল লিখন।
ড্রোন হামলার বাস্তবতা
আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে
ন্যাটোর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মোট ৩৩৬টি ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর
মধ্যে রাষ্ট্রপতি ওবামার আমলেই হয়েছে ২৮৪টি আক্রমণ। রাষ্ট্রপতি বুশের সময় হওয়া
৫২টি ড্রোন হামলার থেকে অনেক বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সাফাই গেয়ে বলা
হয়েছে, হামলা
গুলির লক্ষ্য ছিল উগ্রপন্থীরা। কিন্তু ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা পায়নি শিশুরাও।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ড্রোন
হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭৫টি শিশু। ‘এ
ইয়ার অব ড্রোন অ্যাটাক’ শীর্ষক
ওই পরিসংখ্যানটি তৈরি করেছে নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। এর থেকে
জানা যায়, ২০১০সালে
মোট ১১৪টি ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছিল। রিপোর্টটি থেকে আরো জানা যায়, বুশের সময়ের থেকে ওবামার আমলে
ড্রোন হামলার লক্ষ্যেরও পরিবর্তন হয়েছে। বুশের সময় যেখানে ২৫% আল-কায়েদা এবং ৪০%
তালিবানী উগ্রপন্থীদের ঠিকানা আক্রমণের লক্ষ্য ছিল। সেখানে ওবামার আমলে তা কমে
যথাক্রমে আল-কায়েদা ৮% এবং তালিবানের ক্ষেত্রে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০% হয়েছে।
এছাড়া ওবামার সময় ড্রোন হামলায় নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় চার গুণ।
২০০৪সালে থেকে ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২,৬৬০জন। আহতের সংখ্যা ১,০৯৭জন। সব থেকে বেশি হামলা
হয়েছে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে।
ভুলে যাওয়া যুদ্ধের পরিণাম
পরপর হামলায় জওয়ানদের মৃত্যুর
কারণে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে
ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়া একই কাজ করেছে। আফগানিস্তানের তুলনামূলক শান্ত প্রদেশে
মোতায়েন ছিল নিউজিল্যান্ডের ১৪০ জওয়ান। কিন্তু একের পর এক হামলায় কিউই সেনাদের
মনবল তলানিতে। সকলেই ঘরে ফিরতে মরিয়া। মান খোয়ানোর আতঙ্কে তড়িঘড়ি আফগানিস্তান থেকে
সেনা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ওয়েলিংটন। অবশ্য আফগানিস্তান থেকে হাতে গোনা ওই
ক’জন
সেনার বাড়ি ফেরা খবর নয়। বাজার গরম করছে মৌলবাদেই আফগানিস্তানের প্রত্যাবর্তনের
গল্প!
ভুলে যাওয়া যুদ্ধ
এক দশকের ওপর কেটে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের আফগানিস্তান আগ্রাসনের। তবু দেশ
থেকে সন্ত্রাসবাদকে নিকেশ করা যায়নি। বরং ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে উগ্রপন্থীরা।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশের এক গ্রামে ২জন মহিলাসহ ১৭জনের
মাথা কেটে খুন করা তার অন্যতম উদাহরণ। তালিবান আরো আগ্রাসী হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ করতে
তৎপর দেশের জনজীবনকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ। সাহায্যের জন্য পশ্চিমপানে
চেয়ে রাষ্ট্রপতি কারজাই। উগ্রবাদী আক্রমণে শুধু আফগানরাই নয়, পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছে
মার্কিন সেনারাও। আগামী নভেম্বরে মার্কিন মুলুকে রাষ্ট্রপতি ভোট। তার আগে অনেকেরই
মুখে মুখে ফিরছে আফগান প্রসঙ্গ। মানুষের অভিযোগ, ওবামা সরকার এই যুদ্ধ বেমালুম ভুলে গেছে। তাই
লাগাতার ইয়াঙ্কি সেনাদের হত্যার ঘটনা ঘটে চললেও পরিস্থিতি সামলাতে সম্পূর্ণ উদাসীন
ডেমোক্র্যাটরা। তাই সময় কেটে যাচ্ছে। কিন্তু তালিবানী সমস্যা সেই তিমিরেই। ২০১৪
সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেছে। যদিও
অবস্থা যতটা গোলমেলে, তাতে
এই কাজ করতে ওয়াশিংটনকে যে প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হবে বলার প্রয়োজন নেই।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী ফিরে গেলেও থেকে যাবে তাদেরই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত
কয়েক হাজার জওয়ান এবং সামরিক পরামর্শদাতা। যাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে আল-কায়েদা ও
অন্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলির হামলা মোকাবিলা করা। একই সঙ্গে মোতায়েন থাকবে মার্কিন
বায়ুসেনা। কার্যক্ষেত্রে ওপর ওপর যতই বলা হোক না যে আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালেই
ফিরে আসবে মার্কিন সেনা। কিন্তু বাস্তবে তা হবে না। আর ২০২০ সালেও তা সম্ভব হবে কি
না তা নিয়ে সন্দীহান খোদ পেন্টাগন। বলাবাহুল্য একটা দীর্ঘ সময়ই আফগানিস্তানে মজুত
থাকবে আগ্রাসী দখলদাররা।
প্রোজেক্ট আফগান
পরিকল্পনা এক কথা। তা
বাস্তবায়িত করা অন্য। ২০০৩ সাল। যে সময় ইরাকের রাজধানী বাগদাদে পা রেখেছিল
যুদ্ধউন্মাদ জল্লাদেরা। তখন হোয়াইট হাউস অথবা পেন্টাগনের কর্ণধাররা বোধহয় কল্পনা
করতে পারেনি জুনিয়ার বুশের আস্ফালনের পরিণতিও হতে পারে সিনিয়ার বুশ-এর মতো। বছরের
পর বছর কেটে যাবে। তবু ইরাকে নাস্তানাবুদ হতে হবে মার্কিন - ন্যাটো জোটকে। তৈরি
করতে হবে স্থানীয় সেনা ছাউনি। বাগদাদেই গড়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী দূতাবাস। আর
সময়ের ফেরে তারই পরিণতি হবে ‘স্ট্রাটেজিক
কমান্ড সেন্টারে’।
কূটনৈতিক কাজের বদলে পরিচালিত হবে সামরিক কর্মকাণ্ডে।
বাগদাদের অনুরূপ অবস্থা আজকের
কাবুলেরও। প্রত্যহ ডাঁই হচ্ছে মার্কিন সেনার দেহ। ঘরেবাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে
ওবামা প্রশাসন। তাদের অনেকেরই অভিযোগ,
ডেমোক্র্যাটরা সামনের বিশ বছর আফগান ভূখণ্ডে পাকাপাকিভাবে
থাকার কথা ভাবছে। বিদেশের মাটিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে সেনা রাখার বিরুদ্ধে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। যা উস্কে দিচ্ছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের
স্মৃতিকে। ঘটনাচক্রে সে সময়ই আমেরিকার বড় শহরগুলিতে যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল এবং
সমাবেশ হয়েছিল। আওয়াজ উঠেছিল ভিয়েতনাম থেকে অবিলম্বে মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে
আনার।
একদিকে দেশের মাটিতে যখন
প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রপতি ওবামার আফগান নীতি। একই সময় আফগানিস্তানেও মানুষের
চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে মার্কিন সেনারা। কিছুদিন আগে একটি ঘটনাই যার জ্বলন্ত
প্রমাণ। খবরে প্রকাশ, বছর
পনেরোর এক আফগান কিশোর মার্কিন সেনা ছাউনিতে চা দেওয়ার কাজ করতো। ঘটনার দিন সেই
বালকই আচমকা সেনা বাহিনীর জিমে ঢুকে এলোপাথারি গুলি চালায়। এই ঘটনায় মারা যায় ৩জন
মার্কিন সেনা। আহত হয় একজন।
সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই
ফের খবরের শিরোনাম হয় দেশে গ্রামরক্ষী বাহিনীর প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবকের গুলিতে
ছয়-সাতজন মেরিন স্পেশাল ট্রুপের জওয়ানদের নিহত হওয়ার ঘটনা। স্থানীয় মানুষ
জানিয়েছেন, বছর
সত্তোরের ওই প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবক ঘটনার দিন তাঁর বন্দুকের মুখ উগ্রপন্থীদের বদলে
ঘুরিয়ে দেন আগ্রাসী ইয়াঙ্কি সেনাদের দিকেই। দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও এমন ঘটনার
খবর পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা পরিচিত পেয়েছে ‘গ্রিন
অন ব্লু অ্যাটাকস্’ হিসেবে।
এই অবস্থার জন্য দেশের পুলিস প্রশিক্ষণ আপাতত বন্ধ। মার্কিন মেরিন সেনারা আফগান
যুবকদের প্রশিক্ষণ দিত। কাবুলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার আফগান
যুবক বর্তমানে পুলিস ট্রেনিংসের অপেক্ষায় আছেন। সংবাদসংস্থার খবরে প্রকাশ ন্যাটোর
শীর্ষ বৈঠকের পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সঙ্কট বাড়ছে
কেউ বলছে ‘গ্রিন অন ব্লু অ্যাটাকস্’ আবার কারো মুখে ‘ইনসাইডার অ্যাটাকস্’। নামে যাই হোক। আফগান বাহিনীর
বন্দুকের নল দিকভ্রষ্ট হওয়ার কারণে সঙ্কটে ন্যাটো জওয়ানরা। ইতোমধ্যেই দেশে ৩০টি
এমন হামলা হয়েছে। মারা গেছে ৫০ জনের ওপর ন্যাটো সেনা। ২০১২ সালে আফগানিস্তানে
হানাহানিতে মৃত্যুর ঘটনার যা ১৪%। নিহত ন্যাটো সেনার বেশির ভাগই আমেরিকার। ৩রা
সেপ্টেম্বর কাবুলে মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল থমাস কলিনস এক সাংবাদিক
সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
বহু ক্ষেত্রেই তালিবান এই
হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এই মৌলবাদী উগ্রপন্থী গোষ্ঠী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে
এমন হামলার ঘটনা এবার থেকে বারবার হবে। কারণ আফগান বাহিনী এবং পুলিসে তাদের অনেক
সন্ত্রাসবাদী রয়েছে। যারা শুধুই সময়ের অপেক্ষা করছে।
এদিকে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে
দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে রাষ্ট্রপতি ওবামা। গোটা বিষয়টি দেখার জন্য তিনি বেশ
কয়েকবার শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি কারজাইয়ের সঙ্গেও।
অবশ্য কাবুল এর দায় নিতে নারাজ। কারজাই ‘গ্রিন
অন ব্লু’ হামলার
দায় কৌশলে ইরান এবং পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
বিষয়টির গভীরতা বোঝা যায়
সম্প্রতি জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ’র
চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসির কাবুল সফরকে ঘিরে। এই সফরের সময় তিনি আফগান
শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন। এর পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল জন
অ্যালেন ৪০জন পদস্থ সেনা আধিকারিকদের বৈঠক ডাকেন। ঐ বৈঠকে এমন হামলার ঘটনা কেমন
করে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ন্যাটোর
সদস্য দেশগুলি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আলোচনা শুরু করায় মহা
ফাঁপড়ে হোয়াইট হাউস। স্বভাবতই নিউজিল্যান্ডের সেনারা নিজেদের দেশে ফেরায় বেকায়দায়
ওবামা।
No comments:
Post a Comment