শক্তি দেখাতে উন্মত্ত উত্তর কোরিয়া!
উত্তর কোরিয়া বরাবর দাবি করছে, তাদের নিশানায়
রয়েছে এক নম্বর শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ক'টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, তার সব ক'টিই নাকি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মাধ্যমে ধরে ফেলা হয়েছে। এমন কি এ কথাও
জানানো হয়েছে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আমেরিকার
অধীনস্ত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি সুদূর মার্কিন মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতেও
প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া…
পরমাণু হামলা হুঙ্কারের প্রতীক উঠছে উত্তর কোরিয়া। এই
মুহূর্তে হাতে যে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি মজুত রয়েছে, তাতে উত্তর
কোরিয়া নাকি যে কোনো বিধ্বংসী আক্রমণ চালাতে পারে। সেসব অস্ত্র দিয়ে যে কোনো
সময় তারা আক্রমণ চালাতে পারবে দক্ষিণ কোরিয়া, হাওয়াই
দ্বীপপুঞ্জ, জাপান, গুয়াম কিংবা
যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে! উত্তর কোরিয়া বিগত কয়েক মাসে যেসব হুংকার উচ্চারণ
করছিল, এটা হলো তার সর্বশেষ গর্জন। এর মধ্যে গত শনিবার তারা
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে 'যুদ্ধাবস্থা'র
ঘোষণা দেয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিরক্ষা বিভাগে নতুন নতুন চমকের মুখ দেখেছে
উত্তর কোরিয়া। উন্নত মানের অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে সেনাবাহিনীর হাতে এসেছে
অত্যাধুনিক সাঁজোয়া গাড়িও। তার প্রায় প্রতিটিই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন দেশের
সর্বময় কর্তা কিম জং উন স্বয়ং। কোথাও রদবদলের দরকার হলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেটা
করিয়ে নিয়েছেন। অবশেষে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং শত্রুদের সোজাসুজি হুঁশিয়ারিও কিম
জং উনের নির্দেশক্রমেই হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া বরাবর দাবি করছে, তাদের নিশানায়
রয়েছে এক নম্বর শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ক'টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, তার সব ক'টিই নাকি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মাধ্যমে ধরে ফেলা হয়েছে। এমন কি এ কথাও
জানানো হয়েছে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আমেরিকার
অধীনস্ত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি সুদূর মার্কিন মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতেও
প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। হুমকি রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্যও। আমেরিকার অন্যতম
সহযোগী এই রাষ্ট্রের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো সময় হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহের শুরুতে বিবৃতির মাধ্যমে প্রথমে হুঁশিয়ারি দেয় উত্তর কোরিয়া। তার
কয়েকদিন পর এসব পরমাণু হামলার প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনামাতে স্বাক্ষর করেন উত্তর
কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে 'চেওনান'
ডুবোজাহাজ বিপর্যস্ত তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। সিউল মনে করে,
উন্নত প্রযুক্তির এই ডুবোজাহাজটির ডুবে যাওয়া মোটেই কোনো
আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এর পিছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার ভয়ঙ্কর মস্তিষ্ক! এদিকে দক্ষিণ
কোরিয়ার সঙ্গে ১৯৫৩ সাল থেকে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সমাপ্ত করার
হুঁশিয়ারি দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ১৯৫০-৫৩ সালের দুই কোরিয়ার যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে
এখনও শেষ হয়নি। দুই পক্ষই অস্ত্র সংবরণ করে রয়েছে মাত্র। সীমা লঙ্ঘন করে যাতে
পিয়ংইয়ংয়ের বাহিনী না হানা দিতে পারে দক্ষিণ দিকে তার জন্য অন্তত ৪০ হাজার মার্কিন
সৈন্য এখনও রয়েছে কোরীয় উপদ্বীপে।
কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত এক বছরে দুবার পরমাণু
পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রথমটি গত ডিসেম্বরে আর সর্বশেষ পরীক্ষাটি হয়েছে
গত ১২ ফেব্রুয়ারি। দুবারই বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়ে কমিউনিস্ট দেশটি। জাতিসংঘ
শুরু থেকেই দেশটির ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু
তাতে কোনো কাজই হয়নি। সর্বশেষ কঠোরতা জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫
সদস্য এক বিবৃতিতে বলেন,
এবার উত্তর কোরিয়ার আর্থিক লেনদেনও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব কারণেই
কি আরো বেশি জেদ চেপেছে উত্তর কোরিয়ার? অনেক রাজনৈতিক
বিশ্লেষক এমনটিই মনে করছেন। দেশটির অস্থিরমতি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, কোনো 'বেগতিক অবস্থা' দেখলে
হামলা করতে একটুও দ্বিধা করবেন না তিনি। উত্তর কোরিয়া মনে করছে, এরপরও 'হুঁশ' ফিরছে না
যুক্তরাষ্ট্রের। কেননা, দক্ষিণ কোরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে
একযোগে বি-৫২ স্টিল্থ বোমারু বিমান নিয়ে সামরিক মহড়ায় পর্যন্ত অংশ নিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র। অত্যাধুনিক এই বিমান শুধু যে পরমাণু অস্ত্র পরিবহনেই সক্ষম তা নয়,
এই বিমানের প্রযুক্তি এমনই যে তার উপস্থিতি রাডারেও ধরা পড়ে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন 'স্পর্ধা' ক্ষমার
অযোগ্য অপরাধ বলে মনে করেছে উত্তর কোরিয়া। সে কারণে সম্ভবত শুধু 'কথা' নয়, এবার 'কাজে' নামার পরিকল্পনা করছে উত্তর কোরিয়া।
ইতিমধ্যেই সেনাপতিদের জায়গা মতো ক্ষেপণাস্ত্র সাজিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন। এর
মধ্যে গত শনিবার তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে 'যুদ্ধাবস্থা'র ঘোষণা দেয়। তবে পিয়ংইয়ংয়ের এমন মনোভাবকে যুক্তরাষ্ট্র 'আগুন' নিয়ে খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। জানিয়েছেন,
উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে আসা যে কোনো হামলার জন্যই তৈরি তারা। আর
আক্রমণ করলে তার উপযুক্ত জবাবও পাবে পিয়ংইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, 'উত্তর কোরিয়ার ওপর খুব কাছ থেকে নজর রাখা হচ্ছে। আমাদের কাছে যা খবর,
তাতে এখনও পর্যন্ত সীমান্তে কোনো নড়াচড়া চোখে পড়েনি।' এদিকে উত্তর কোরিয়ার মিত্ররাষ্ট্র চীন সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে অসন্তোষ ও
ঊষ্মা প্রকাশ করেছে। সবার কাছে সংযমের অনুরোধের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াকে বিচারবুদ্ধি
প্রয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধ্বংসাত্মক অস্ত্র কোনো সমস্যার সমাধান
দেয়নি কখনো। উত্তর কোরয়াির প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের এসব হুমকি ও
অস্ত্রসম্প্রসারণ বিশ্বকে আরো বেশি নাজুক করবে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর
সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা ছাড়া এসব হুমকি আর কোনো ইতিবাচক ফল দেবে না।
কোরীয় উপদ্বীপে অস্ত্র সমাবেশের নতুন স্নায়ু
যুদ্ধ
এতদিন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার রণহুঙ্কারের কোনো যোগ্য
জবাব দিতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া। এবার আর সেই খামতি রাখলেন না দেশটির প্রেসিডেন্ট
পার্ক গিউন হাই। আর এভাবেই কোরীয় উপদ্বীপে অস্ত্র সমাবেশের স্নায়ু যুদ্ধ নতুন
মাত্রা পেয়েছে।
২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকারে থাকা একটি দ্বীপে
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। বিনা উস্কানির সেই হামলায় প্রাণ
হারিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার চার নাগরিক। কিন্তু তখন সিউল প্রশাসনের তরফে কঠোর
সমালোচনা ছাড়া বেশি কিছু শোনা যায়নি। কিন্তু এবার উত্তর কোরিয়ার রণহুঙ্কারের
পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি যুদ্ধজাহাজ নামিয়ে প্রতি আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে
দক্ষিণ কোরিয়া। হুমকির এ ধরন থেকে বোঝা যায়, এই তিন বছরে প্রস্তুতি বেশ ভালোমতোই
নিয়ে ফেলেছে তারা। অন্তত দেশটির সংবাদ সংস্থা 'ইওনহাপ'
বারবার আশ্বস্ত করছে দেশের বাসিন্দাদের, হামলা
হলে প্রতিরোধ করতে পারবে দক্ষিণ কোরিয়া। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য
ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রতিরোধ করতে দক্ষিণ কোরিয়া সাত হাজার ছয়শ' টন ওজনের দু'টি সিজং ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ
পাঠিয়েছে। নৌ-পথ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত বরাবর
ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ নির্ণায়ক রাডার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। 'গ্রিন পাইন' নামের এই ব্যবস্থায় অনেকটা এলাকাজুড়ে পর
পর বসানো থাকে শক্তিশালী রাডারগুলো। 'গ্রিন পাইন' ছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণের আগাম সতর্ক বার্তা দিতে তৈরি রাখা হয়েছে 'পিস আই' বিমান। মাটির বহু ওপর দিয়ে উড়তে থাকা এই
বিমানের রাডার ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণের সঙ্গে সঙ্গেই কম্পাঙ্কের পরিবর্তন 'অনুভব' করে খবর পাঠিয়ে দিতে পারে। এর ফলে হামলা আর
অতর্কিত থাকে না। মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করা যায় এগোতে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রকে। এর আগে গত
সপ্তাহেই দেশের পূর্ব উপকূলে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সমাবেশ শুরু করেছে উত্তর
কোরিয়ার সেনাবাহিনী। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধপরিস্থিতি ঘোষণা, হটলাইন যোগাযোগ ছিন্ন করা, পরিত্যক্ত পরমাণু
চুল্লিকে নতুন করে চালু করার চেষ্টা— কোনো কিছুতেই ফল না
হওয়ায় সত্যি সত্যি ক্ষেপণাস্ত্র সমাবেশের পথে এগিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক উন।
বিদেশি কূটনীতিকরা উত্তর কোরিয়া ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও সহায়তা করার কথাও বলে
দিয়েছে সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তাদের আর
নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হবে না।
দেশের পূর্ব উপকূলের একটি ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণ কেন্দ্রে
যে ক্ষেপণাস্ত্রকে তৈরি করতে দেখা গেছে সেটি 'মুসুদান'। কাউন্সিল
ফর ফরেন রিলেশনের তথ্য অনুযায়ী উত্তর কোরীয় এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা প্রায় চার
হাজার কিলোমিটার। ক্ষেপণাস্ত্র সমাবেশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়াম
দ্বীপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্ত পোক্ত করার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে মার্কিন
সেনারাও। গুয়ামের 'অ্যান্ডারসন বেস' এই
এলাকায় আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি। গুয়ামের পাশাপাশি আলাস্কাতেও ১৪টি
ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাকে 'তৈরি থাকার' নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
যদিও এখনও পর্যন্ত 'মুসুদান' ক্ষেপণাস্ত্রর
কোনো পরীক্ষামূলক উেক্ষপণ উত্তর কোরিয়া করেছে বলে জানা যায়নি, তবু সতর্কতার কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না মার্কিন প্রশাসন ও তার 'বন্ধুরাষ্ট্র' জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ
কোরিয়ার সেনাদের দেখা গেছে সীমান্ত এলাকায় উত্তরের আক্রমণের মোকাবিলায় তৈরি হতে।
সেখানে মোতায়েন মার্কিন সেনারাও রাসায়নিক যুদ্ধের মহড়া শুরু করে দিয়েছে। তবে
সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে গুয়াম দ্বীপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর
পেন্টাগন জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানে 'টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স' সিস্টেম
বসিয়ে ফেলবে আমেরিকা। তবে পরিস্থিতি গরম হওয়ার পর থেকে উত্তর কোরিয়াকে নিজেদের
ক্ষমতা দেখাতে দেরি করেনি আমেরিকা। আইজেনহাওয়ারের আমলে ব্যবহূত বি-৫২, রোনাল্ড রিগানের আমলের বি-২ এবং হালের জর্জ বুশের আমলের এফ-২২— সবই পাক খেয়েছে কোরীয় উপদ্বীপের ওপর। পিয়ংইয়ংকে চমকে দেয়ার মতো আর
কোনো বিমান নেই আমেরিকার।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা আসলে কতটুকু: এই ক্ষমতার আস্ফাালন
নিয়ে কৌতূহল সবার। সেই ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত দাবি করছে— পরমাণু অস্ত্র
তৈরি করে ফেলেছে তারা। সঙ্গে দূরপাল্লার এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা
নাকি অনায়াসে পার করে ফেলতে পারে অর্ধেক পৃথিবী। আদৌ কি এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি
করতে পেরেছে উত্তর কোরিয়া? কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশনস-এর
রিপোর্ট অনুযায়ী, পাল্লার নিরিখে উত্তর কোরিয়ার হাতে এখন
মাঝারি থেকে দূরের লক্ষ্যে আঘাত করার মতো চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এক হাজার
কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত করতে পারে নদং ক্ষেপণাস্ত্র। গোটা দক্ষিণ কোরিয়া
তো বটেই, এমনকি জাপানের বেশ কিছুটা এলাকাও এই
ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার আওতায় পড়ে। তাপোদং-১ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২ হাজার ২০০
কিলোমিটার পর্যন্ত। অর্ধেক মঙ্গোলিয়া আর জাপানের সম্পূর্ণ এলাকায় আঘাত হানতে
সক্ষম উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্র 'মুসুদান'-এর পাল্লা চার হাজার কিলোমিটার। অর্ধেক রাশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ার বেশ কিছুটা অংশে (মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কাম্বোডিয়া) এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে
পারে। তাপোদং-২ হলো উত্তর কোরিয়ার হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র।
পাল্লা ছয় হাজার কিলোমিটার। গোটা ভারত-পাকিস্তান পার করে পশ্চিমে ইরান সীমান্ত
পর্যন্ত এবং পূর্বে আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আলাস্কা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এই
ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ১০ হাজার কিলোমিটার পাল্লা বিশিষ্ট যে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দাবি
করেছেন কিম জং উন, তা সত্যি বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
কাজেই সরাসরি মার্কিন ভূখণ্ডে আঘাত করার জায়গায় এখনও নেই পিয়ংইয়ং। তবু সাবধানের
মার নেই। কখন কী করে বসেন অস্থিরমতি কিম জম উন, তা বলতে
পারেন না কেউই। কেননা উত্তর কেরিয়ার 'রাবার স্ট্যাম্প
পার্লামেন্ট' যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাষ্ট্রের
সর্বময় নেতা কিম জং উনের নির্দেশ সেখানে শেষ কথা। সে কারণে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার
কাছে উত্তর কোরিয়ার সংসদের পরিচয় 'রাবার স্ট্যাম্প
পার্লামেন্ট' নামে। সিদ্ধান্ত যা নেয়ার তা নেন পিয়ংইয়ংয়ের
একমাত্র শাসক কিম জং উন। তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাতে সহমত পোষণ করেন মাত্র। সব
শেষে সেই সিদ্ধান্তে পড়ে সরকারি সিলমোহর। ভয়টা সে কারণে সবচেয়ে বেশি।
No comments:
Post a Comment