যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব
এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি
লোকের বাস। শুধু তাই নয়,
এ অঞ্চল বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল গত কয়েক বছল ধরে দারিদ্র বিমোচন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এ অঞ্চলের ওপর
তীক্ষ নজর রাখছে। সমপ্রতি
ওবামা সরকারের ব্যুরো অব ইস্ট এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক এ্যফেয়ার্স-এর ভারপ্রাপ্ত
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ ইয়ুন এ অঞ্চল নিয়ে মার্কিন সিনেটে যে প্রতিবেদন
জমা দিয়েছেন তাতে তিনি এ অঞ্চলের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন জোরালোভাবে।
এতে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য এ অঞ্চলের
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক খাতে নজর দেয়া উচিত। সামনের
দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক খাতে বিনিয়োগও অনেকাংশে এ অঞ্চলের ওপর নির্ভর
করতে পারে। আগামী যুগের জন্য এ অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ
হিসেবে তৈরি করতে হলে জন-যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ কাজটি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ভৌগোলিক, ইতিহাসগত এবং অর্থনৈতিক কারণে দক্ষিণ এশিয়া আগামী
দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ইয়ুন উল্লেখ করেছেন।
ইয়ুন তার প্রতিবেদনে বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে
যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের
অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছে এ কারণে যে, এশিয়া-প্যাসিফিক
অঞ্চলে ইতিমধ্যে একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এছাড়া এর উল্টো দিকটাও এখন ঘটছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করছেন। এতে করে
যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারও ভালো হচ্ছে। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এখন
রেকর্ডসংখ্যক আমেরিকান বসবাস করছে। তাদের কেউ চাকরি করছে, কেউ
ব্যবসা করছে, আবার কেউ পড়াশোনা করছে। এসব কারণে এশিয়া
প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তাও এখন যুক্তরাষ্ট্রের মূল এজেন্ডা হওয়া উচিত।
ইয়ুনের মতে, শুধু অর্থনৈতিক কারণে যে এশিয়া প্যাসিফিক
অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এ অঞ্চলের
সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের একটি রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে। অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার
জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া,
অষ্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের মতো
দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এ অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রশ্নে সহযোগী
এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে সবসময় ইতিবাচক হিসেবে দেখে।
তবে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আরো মজবুত করতে
সহযোগী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বকে আরো এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন উয়ুন। তিনি তার
রিপোর্টে লিখেছেন,
সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হলে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম,
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই,
নিউজিল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক আরো কাছাকাছি নিতে হবে। আর চীনের সাথে
সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি দুই
দেশের সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পূর্ব
ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো চীনের দিকে দৃষ্টি বাড়িয়েছে। এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের
পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তবে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক হবে সফলতা নির্ভর।
ইয়ুন তার রিপোর্টে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুশাসন, গণতান্ত্রিক
চেতনা এবং অন্যান্য সামাজিক সূচকের প্রশংসা করে বলেছেন, গণতন্ত্র
এবং স্বাধীনতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি গ্রহণ করেছে তা এ অঞ্চলের জন্যও
প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে তিনি মিয়ানমারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য
মিয়ানমার তার দ্বার উম্মুক্ত করেছে। দেশটির সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার
ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হওয়া উচিত সম-অংশীদারিত্ব। এশিয়ার জন্য
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনেকটা কঠিন হলেও কূটনৈতিক, সামরিক এবং
অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তা অর্জন করতে পারে।
ইয়ুন তার রিপোর্টে আরো বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ
পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ওই অঞ্চলের নানা ফোরামের সাথে জড়িত। এসব ফোরামের অনেকটিতে
যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রয়েছে। সেদিক থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে
যুক্তরাষ্ট্রেও একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের
প্রভাবকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রশ্নে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত একমত হয়ে কাজ
করছে। ১৯৯১ সাল থেকে ভারত যে পূর্বমুখী কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছে তাও
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসছে। পূর্বপাশের দেশগুলো দেখছে, ভারত তাদের সামনে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠছে। এটি এ অঞ্চলের শক্তিধর
দেশগুলোর মধ্যে একটি ব্যালেন্স তৈরি করছে বলেও মনে করে তারা।
ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০০৯ সালে এশিয়া অঞ্চলের
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আলোচনার জন্য যে চুক্তি করেছে তাতে একটি নতুন পথ খোলা
হয়েছে বলে মনে করেন ইয়ুন। তার মতে, দুই দেশ যে কোন ইস্যুতে খোলামেলা
আলোচনার সুযোগ পাচ্ছে। কোন কোন ইস্যুতে দুই দেশ একমত হলেও এমন কিছু ইস্যু আছে
যেগুলোতে ঐক্যমতে পৌঁছা যাচ্ছে না। তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর যে সম্পর্কের ভিত
তৈরি হয়েছে তা টিকিয়ে রাখতে পারলে অনেক কাজ এগিয়ে যেতে পারে। রিপোর্টে ভারতের
অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের
বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে সামপ্রতিককালে ভারত মিয়ামারের সাথে যে হাইওয়ে
নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সেটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রকল্পে
যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ মহাসড়ককে পূর্ব এশিয়ার
প্রবেশদ্বার বলে উল্লেখ করা হয়।
No comments:
Post a Comment