Wednesday, May 1, 2013



বিপ্লবের তৃতীয় বর্ষে মিসর
গত ২৫ জানুয়ারি ছিল একনায়ক হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা গণ-অভ্যুত্থান দিবস। ২০১১ সালের ওই দিন থেকে রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ার হয়ে ওঠে যুগপৎ স্বৈরতন্ত্রবিনাশী ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী বিপ্লবের 'বিশ্বমঞ্চ'সেই গণজাগরণের জোয়ারে কবেই খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে মুবারকের মসনদ! কিন্তু জোয়ার একটু ভাটার দশায় যেই না পড়েছে, মাথাচাড়া দিয়েছে আরেক হোসনি মুবারক, 'মুবারক-২'! মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি তাঁর পূর্বসূরির 'সুযোগ্য' প্রতিনিধি হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন গণপাটাতনে। এ যেন লঙ্কার রাবণ বানানোর দুর্নামের মতো ফের ফারাওয়ের আগমনে মিসরের পরিচয় দাগিয়ে দেওয়া! কিন্তু ফারাওবিনাশী প্লাবনের মতো বিপ্লবস্পন্দিত বুকের জিহাদি জনতাও মজুদ সেখানে বুক চিতিয়ে। ক্ষমতার রঙিন কাচঘেরা ঘরে বসে এ কথা এখনো ঠিক ঠাওর করতে পারছেন না মুরসি। গোটা বিশ্ব সাক্ষী, মুবারকের এই দিব্যজ্ঞানের অভাব থাকার খেসারত কিন্তু তাঁকে দিতে হয়েছে পাই-পয়সার হিসাবে! তাই মুরসির জমা-খরচের খাতায় সামান্য ভুলে চড়া অঙ্কের সুদ যোগ হওয়ার বিধানই প্রযোজ্য হবে। 'মুবারকি' পথে হাঁটার গতিমুখ না ফেরালে মুরসির কপালে দুঃখই আছে- দেশটির চলমান অস্থিরতা সে বার্তাই দিচ্ছে!

ফের ২৫ জানুয়ারি!
২৫ জানুয়ারি মুবারকবিরোধী গণজাগরণের দিনে মুরসির মসনদ ধরে ঝাঁকুনি দেওয়ার ঘোষণা ছিল আগে থেকেই। 'ইসলামী' ভাবধারায় রচিত বিতর্কিত খসড়া সংবিধানের ওপর দুই দফা নেওয়া 'ভোটারশূন্য' গণভোটে জয়ের পর মুরসি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। গত ১৫ ও ২২ ডিসেম্বরের গণভোটের আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশের পর ২৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান বিরোধী জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টকে (এনএসএফ) আলোচনায় বসারও আহবান জানান মুরসি। কিন্তু লোকদেখানো সেই আহবানে সাড়া দেয়নি উদারপন্থী বিরোধীরা। বরং ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী মুরসিবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেয় তারা। সেইমতো বিপ্লবের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে আগের দিনই রাজপথে নামে গণতন্ত্রকামী মিসরবাসী। মুরসি-সমর্থক ইসলামপন্থীরাও মুবারকবিরোধী আন্দোলনের হিস্যা দাবি করে তাদের কর্মসূচি সাজায়। তারাও রাস্তায় নামে মুরসির গুণগান গাইতে। ফলে মুখোমুখি দুই শিবিরের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। যুযুধান দুই পক্ষের সহিংসতায় প্রাণ যায় অন্তত ১১ জনের। সুতরাং আবারও আন্দোলনের ময়দানে জ্বলে ওঠে 'ফারাওবিরোধী' আগুন! আর সেই আগুনে কাঠখড়ি ঢেলে দেয় ২৬ জানুয়ারি আদালতের একটি রায়। মুহূর্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। মাত্র তিন-চার দিনে কমবেশি প্রাণ হারায় ৬০ জন। আহতের সংখ্যার কোনো লেখাজোখা নেই। অব্যাহত সহিংসতা ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সুয়েজ খাল সংলগ্ন তিন শহর- পোর্ট সাইদ, সুয়েজ ও ইসমালিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করেন মুরসি। পাশাপাশি শহরগুলোতে জারি করা হয় সান্ধ্য আইনও (কারফিউ)। তবে এতে জনতার অসন্তোষের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম পড়েনি! ১৯৮১ সালে আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা জরুরি অবস্থা বলবৎ ছিল তিন দশকেরও বেশি সময়। গত বছরের মে মাসে 'তথাকথিত' স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে মিসর। তাই গা সয়ে যাওয়া সরকারের ওই আইনি বর্মের তোয়াক্কা না করে রাস্তা ছাড়েনি জনতা।

২৫ জানুয়ারির উৎস!
সাম্প্রতিক সংকটের শুরু ২৫ জানুয়ারি হলেও এর মূল আসলে আরো গভীরে প্রোথিত। কার্যত গত ২২ নভেম্বর জারি করা প্রেসিডেন্ট মুরসির 'স্বৈরাচারী' একটি ডিক্রিই ফের গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় দেশটিতে। প্রবল বিতর্কিত ওই অধ্যাদেশের শাঁসকথা ছিল, মুরসির মনপসন্দ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতও কোনো সওয়াল তুলতে পারবে না। ঘুমঘোরে দেখা শেষরাতের খোয়াবও চাইলে প্রেসিডেন্ট বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন অনায়াসে- এমন 'ঐশ্বরিক' ক্ষমতার রাশ মুরসির হাতে ন্যস্ত করাই ছিল ওই ডিক্রির উদ্দেশ্য ও বিধেয়। ফলে মুবারকের কচ্ছপ-কামড় থেকে দেশকে মুক্ত করা জনতা মুরসির পাতি ফাঁস থেকে গণতন্ত্রের 'মৃত্যু' ঠেকাতে ফের পথে নামতে এতটুকু দোনমন করেনি।
এই পটভূমিতে তড়িঘড়ি খসড়া সংবিধানের অনুমোদন দিয়ে আন্দোলনের গতিপথ বেপথু করার চেষ্টা করেন মুরসি। বিতর্কিত ওই খসড়া সংবিধানের ওপর গণভোটের ডাক দেন তিনি। কিন্তু তাতেও জনতার আন্দোলনের গতি লক্ষ্যচ্যুত হয় না। বরং গণভোট বর্জনের পাশাপাশি তা বাতিলের আন্দোলন জারি রাখে বিক্ষোভকারীরা। সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘাতে প্রাণহানি ঘটে অন্তত আটজনের। আহত হয় হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতি পুরোটাই প্রতিকূল দেখে শেষমেশ স্বৈরাচারী অধ্যাদেশটি বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন মুরসি।
ওই খসড়া সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্বে ন্যস্ত থাকা সাংবিধানিক পরিষদ গোড়া থেকেই ইসলামপন্থীদের আধিপত্যপুষ্ট ছিল। তাদের দাপটের সামনে ক্রমে কপ্টিক খ্রিস্টান ও উদারপন্থী সদস্যরা একে একে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফলে শেষতক তা হয়ে দাঁড়ায় 'বিশুদ্ধ' ইসলামিক পরিষদ। তাই এমন একটি একচক্ষুবিশিষ্ট পরিষদের প্রণীত খসড়া সংবিধানকে 'নিজেদের' বলে মেনে নিতে পারেনি উদারপন্থী, প্রগতিশীল (সেক্যুলার) ও গণতন্ত্রীরা। মুবারকবিরোধী গণবিপ্লবের কারিগরদের সাফ কথা, এই সংবিধানের 'স্পিরিট' স্বৈরাচারবিরোধী বিপ্লবের আদর্শের সঙ্গে শতভাগ সাংঘর্ষিক। মানুষের মৌলিক অধিকারকে ছোট করা হয়েছে সংবিধানে। 'ইসলামী' ওই সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি নারীর অধিকার, মর্যাদা। ফলে 'প্রশ্নবিদ্ধ' গণভোটে তা পাস হলেও এখনো তার বিরোধিতায় সমান সরব বিরোধীরা।

ফের ১ ফেব্রুয়ারি!
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পোর্ট সাইদের একটি মাঠে কায়রোর আল-আহলি ও স্থানীয় আল-মাসরি ক্লাবের মধ্যে খেলা চলার সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ওই সহিংসতার বলি হয় ৭৪ জন। একই সঙ্গে চরম হিংসাত্মক ও মর্মন্তুদ ওই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে গত ২৬ জানুয়ারি ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন কায়রোর একটি আদালত। বিপ্লবের দুই বছর পূর্তির আবহে কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল কায়রোসহ দেশের কয়েকটি শহর। এ পরিস্থিতিতে ওই ফুটবল দাঙ্গা মামলার রায়ে মানুষের ক্ষোভের জোয়ারে বাঁধভাঙা বন্যার পানি যোগ হয়। এখনো অনেক মিসরীয় মনে করে, আল-আহলির সমর্থকদের শাস্তি দিতেই মুবারকের অনুগত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ওই দাঙ্গা বাধানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ তাহরির স্কয়ারে মুবারকবিরোধী বিক্ষোভের অগ্রভাগে ছিল আল-আহলি সমর্থকরা। ফলে এ রায়ে অনেকেই রাজনীতির গন্ধ পান। তাঁদের ভাষ্য, আল-আহলি ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘাত এড়াতেই রায়ে 'হস্তক্ষেপ' করেছেন মুরসি। কারণ দণ্ডপ্রাপ্তদের সবাই আল-মাসরি ক্লাবের সমর্থক। ফলে রায়ের পর পোর্ট সাইদে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে এক হয়ে উত্তেজিত আল-মাসরি সমর্থক ও জনতা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোয়। চড়াও হয় তারা পুলিশের ওপর; কয়েকটি থানাও আক্রমণ করে বসে বিক্ষুব্ধ জনতা। হামলা হয় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও কার্যালয়ে। পুলিশ কুলিয়ে উঠতে না পারলে পরে নামানো হয় সেনাবাহিনী। সহিংসতার আগুন পোর্ট সাইদের সীমানা পার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইসমালিয়া, সুয়েজসহ কায়রোতেও।

১ ফেব্রুয়ারির উৎস!
দুর্ভাগ্যের কথা, বিপ্লবধ্বস্ত মিসরের সাধারণ মানুষের জীবনে সবে স্বস্তির ছোঁয়া লেগেছিল একটু, এর মধ্যে আবার এই রাজনৈতিক অস্থিরতা। প্রেসিডেন্ট মুরসির 'স্বৈরাচারী ও ইসলামপন্থী' কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মিসরীয় সমাজ এখন পুরো দ্বিধাবিভক্ত। এই বিভাজন ইসলামপন্থী ও অ-ইসলামপন্থী প্রগতিশীল, গণতন্ত্রীদের মধ্যে। মুরসির কার্যকলাপে আবার একনায়কত্বের আশঙ্কা তৈরি হলেও বস্তুত যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে তাঁর রাজনৈতিক শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুডও তাঁর সিদ্ধান্তের সরাসরি অংশীদার। ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়া জরুরি অবস্থাকে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ মনে করে ইসলামপন্থীরা। ডিক্রির ব্যাপারেও তাদের আপত্তি ছিল না। জরুরি অবস্থা জারির পরপর মুরসির হাতে রাস্তায় সেনা নামানোর ক্ষমতা দিয়ে একটি আইনেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কথা, মুরসির ওই ডিক্রি জারি কিন্তু আকস্মিক কোনো বিষয় ছিল না। মুবারকের পতনের পর সামরিক বাহিনীর হাতে যে বিপুল ক্ষমতা পুঞ্জীভূত ছিল, মুরসি তা 'বাইপাস' করার চেষ্টা করেছেন শুরু থেকেই। সর্বোচ্চ সামরিক পরিষদের (এসসিএএফ বা স্কাফ) ক্ষমতা কমানোসহ ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ হোসেন তান্তাউয়িসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে প্রেসিডেন্টের হাতে সামরিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ তারই প্রমাণ।
মুরসিকে সামনে রেখে ইসলামপন্থী মিসরের সঙ্গে বিপ্লবস্নাত মিসরের এই তীব্র টক্করের কূটনৈতিক গুরুত্বও অনেক। যুক্তরাষ্ট্র আগেই জানিয়ে দিয়েছে, গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে থাকলে মার্কিন সহায়তা মিলবে, নচেৎ নয়। এই হুঁশিয়ারির পেছনের অনুচ্চারিত কথাটি হলো, ইসলামীকরণের প্রচেষ্টা বাদ দিলেই 'নতুন' মিসরের সঙ্গে মার্কিন কূটনৈতিক পিরিতি অসম্ভব। পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের এত দিনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্র দেশটির সঙ্গে যদি সম্পর্ক চুকেবুকেই যায়, তা ওয়াশিংটনের পক্ষেও হবে বড় দুঃসংবাদ। সব মিলিয়ে আরব বসন্তের যাই যাই বেলায়, গাজা-ইসরায়েল সংঘর্ষের পর মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এমনিতেই টলমল, মিসরের বর্তমান সংকট তাকে আরো বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দৃশ্যত পরিস্থিতি ক্রমেই ঢালু পথে খাদের দিকেই গড়াচ্ছে। এই অধোগতি ঠেকাতে না পারলে 'রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পতনের' আশঙ্কা করেছেন স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল-সিসিও। আশার কথা, বহু মতেপথে বিভক্ত সেক্যুলার বিরোধীরা এবার সংকটকালে এক তাঁবুর তলায় দাঁড়িয়েছেন। মুবারক জামানার ইতি ঘটার পর অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রকৃতপক্ষে উদারপন্থীরাই ভালো করেছিল। কিন্তু নিজেদের ভেতরের বিভাজনের কারণে তাকে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এবার কি কিছু করতে পারবে তারা? মুরসির আলোচনার আহবান একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করেছে এনএসএফ।
তবে গত বৃহস্পতিবার মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি হয়েছে তারা। নোবেলজয়ী মোহাম্মদ এলবারাদি আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে 'আশাবাদী'ইসলামপন্থীদের সঙ্গে সনদে স্বাক্ষর করে বিক্ষোভের নামে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েই ক্ষান্ত হননি এলবারাদিরা, পূর্বঘোষিত গত শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকেও নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখেন তাঁরা। কিন্তু গণতন্ত্রকামীরা এতে দমে যায়নি, বরং নতুন উদ্যমে দাবির ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে নিজেরা। এদিনের বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দোরগোড়ায় দাঙ্গা পুলিশের গুলিতে অন্তত একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। 'তথাকথিত' নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের আন্দোলন অকালে শুকিয়ে যায় না, তারই জানান দিল আরেকবার মিসরীয়রা।

No comments:

Post a Comment