চীনে গণপ্রজাতান্ত্রিক
সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর
কী করে
সাচ্চা ক্যাপিটালিস্ট হতে হয় শেখাচ্ছে চীন!
১৯৩৬ সালে
প্রকাশিত কমিকস ‘দ্য ব্লু লোটাস্’-এর কাহিনী নিয়ে টিনটিনকে যেতে হয়েছিল চীনে। টিনটিন
চীনে গিয়েছিল আফিম ব্যবসার পিছনে কে কে আছে সেটা তদন্ত করতে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক
রাত দশটা। সাংহাইয়ের নৈশপল্লী। রাস্তায় গাঢ় অন্ধকার। শুধু সরাইখানার মাথায় আলো।
অস্পষ্ট আলোয় সরাইখানার দেওয়ালে লেখা ‘ব্লু লোটাস’।
ছায়ামূর্তির মতো কারা যেন এসে দাঁড়াচ্ছে
আর নিঃশব্দে খুলে যাচ্ছে দরজা। ভিতরে ঢুকলেই যেন অন্য ভুবন। উজ্জ্বল আলো,
মহার্ঘ আসবাব, লাল-কালো ড্রাগনের ছবি, পরিচারকদের মার্জিত সহবত। সব মিলিয়ে একটা ধাঁধানো সৌন্দর্যের সঙ্গে
আফিমের গা-গোলানো গন্ধের অদ্ভুত মিশেল। আফিমের নেশায় বুঁদ, আধশোয়া,
সারি সারি খদ্দের। সবারই চোখ বোজা। নেশার ভান করে গোপন ষড়যন্ত্রের
খোঁজে আড়ি পেতে পড়ে রয়েছে শুধু টিনটিন। চীনকে আফিমের নেশা থেকে মুক্ত করতে সাংহাইয়ে
পৌঁছে গিয়েছিল টিনটিন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আফিম যুদ্ধ করেছিল চীন। সেই যুদ্ধটার সূত্রপাত
হয়েছিল কেন জানেন? ব্রিটিশ সরকার পণ্য রপ্তানি করতে চেয়েছিল চীনে। প্রত্যাখ্যান করেছিল
ব্রিটিশদের প্রস্তাব। এদিকে চীন থেকে চা রপ্তানি করে ব্রিটিশদের বাণিজ্য ঘাটতি
দেখা দিয়েছিল। ঘাটতি মেটাতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ব্রিটিশরা চীনের
দক্ষিণাঞ্চলে আফিম বিক্রি শুরু করে। একসময় চাইনিজরা আফিমে আসক্ত হয়ে গেলে, চীনের সরকার ব্রিটিশদের এই অনৈতিক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
চীন সে যুদ্ধে হেরে যায়। পরিনামে হংকং দ্বীপ ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায় শত বছরের
জন্য। কিন্তু পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা বদলে দেয় আফিম খোর
ঘুমিয়ে থাকা দুর্বল মানুষের এই দেশটিকে। বিদেশি পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে কোনও দেশের
এমন শক্তিশালী মনোভাব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্যের কাছ থেকে জ্ঞান ধার করা
ছাড়া তারা অন্য কিছু সহজে ধার করে না। কিন্তু এই দেশটি সারা দুনিয়ায় তাদের মানুষ
পাঠায়। কেন জানেন? গোটা দুনিয়া থেকে তারা শেখে। আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি তরুণ গবেষক
পাঠায় যে দেশটি, সেটা হল চীন। শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়
প্রায় ১০ হাজার চীনা ছেলেমেয়ে প্রতিবছর আমেরিকায় যায়। তারা সকল প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে
পড়ে। গবেষণার অভিজ্ঞতা নেয়। যাকে বলে ‘ইন্টেলেকচুয়াল
স্ক্যানিং’। চীনের লক্ষ্য, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে
এখানে গবেষণার যত অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে, টেকনিক আছে সেগুলো
স্ক্যান করে নিয়ে যাওয়া। চীন সে দেশের ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সহস্র
মেধাবী প্রকল্প চালু করেছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে মেধাবী তরুণদের ফিরিয়ে নিয়ে কয়েক
হাজার কোটি টাকা তাদের দেওয়া হয়। তরুণরা নিজের নিজের ক্ষেত্রে গবেষণা করতে থাকে।
এমন একটি প্রকল্প মাত্র কুড়ি বছর চালু থাকলে কুড়ি হাজার গবেষক তৈরি হয়ে যায়। ভাবুন,
কী দূরদর্শী ও টেকসই পরিকল্পনা তাদের!
অথচ, এক সময় বহির্বিশ্বের সঙ্গে তেমন কোনও অর্থনৈতিক সম্পর্কই ছিল না
চীনের। কোনও শক্তিশালী দেশের সঙ্গে ছিল না তেমন কোনও বিদেশি বিনিয়োগ অথবা কূটনৈতিক
সম্পর্কও। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট নেতা চেয়ারম্যান মাও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
প্রতিষ্ঠার পর সেই ছবিই ক্রমশ বদলাতে শুরু করে। মাওয়ের মৃত্যুর পরেই দল ঘোষণা করে দেয়, সাংস্কৃতিক
বিপ্লবের ছুটি। নতুন মন্ত্র হল, চার প্রগতি। ১৯৬৩ সালে
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঝাও এন লাই বললেন, শিল্প-কৃষি-প্রতিরক্ষা-বিজ্ঞান
এই চারের উন্নয়ন ছাড়া বিকাশ অসম্ভব। হাল ধরলেন দেং জিয়াও পিং। ১৯৭৮ সালে চীন
সরকারি ভাবে ঘোষণা করল চার প্রগতিই এখন একমাত্র পাথেয়। বলেই ক্ষান্ত হল না। কী
ভাবে হবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হল। দেং বললেন, বেড়াল সাদা না কালো কী আসে-যায়!
ইঁদুর ধরতে পারলেই হল। ইঁদুর ধরতে গিয়ে চীন আরম্ভ করল বিশেষ অর্থনৈতিক
অঞ্চল (এসইজেড)। ব্যবসার পক্ষে চীন হয়ে উঠল স্বর্গরাজ্য।
দেং-রা যখন শিল্প বিপ্লব আরম্ভ করলেন, তখন চীনে সামন্ততন্ত্র প্রায়
লুপ্ত। যে কারণে আমেরিকার চমকপ্রদ অভ্যুদয় হয়েছে। আমেরিকার কাছ থেকে চীনারা আর
একটা জিনিস শিখেছে। প্রতিযোগিতার সার্বভৌমত্ব। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনও প্রতিযোগিতার
সম্প্রসারণ করেছে। চীনারা চতুর বানিয়া। তারাও বুঝেছে, মালিকানা
নয়, প্রতিযোগিতাই প্রথম এবং প্রতিযোগিতাই শেষ কথা। কে জিতবে
বা হারবে সেটা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। দেং সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু
মাও তাকে সংশোধনবাদী আখ্যায়িত করে দল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তার সমর্থকরা ‘চার কুচক্রীর’ হাতে বহু নির্যাতনও ভোগ করেছেন।
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় দেং টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি। নীরবে তাস খেলে সময়
কাটিয়েছেন। মাও-এর মৃত্যুর পর দেং পার্টিতে ফিরে আসেন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ
শুরু করেন। তিনি সাংহাই সহ বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল গঠন করে
বিদেশি পুঁজিকে চীনে আহ্বান করেন। আমেরিকার যে সব শিল্প মজুরির ভারে বন্ধ হয়ে
গিয়েছিল, সব কারখানার মালিকরা চীনে কারখানা নিয়ে এসে পুনরায় চালু করেছিলেন। চীন
হচ্ছে সস্তা শ্রমের দেশ। জাপানও চীনে কারখানা স্থাপন করে সস্তা শ্রমের লোভে। তাইওয়ান
কিন্তু শিল্পে চীনের চেয়ে এগিয়ে ছিল। দেং ঘোষণা করলেন, তাইওয়ানের উদ্যোক্তারা
নিরাপদে শিল্প গড়ে তুলতে পারবে। তাদের কারখানায় বা পুঁজিতে চীন হস্তক্ষেপ করবে না।
তাইওয়ানের উদ্যোক্তারাও দলে দলে সাংহাইয়ের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে এসে
শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছিল। দেং এই রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল গড়ে তুলে চীনের
ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেন এবং ব্যক্তি মালিকানা স্বীকার করে নেওয়ায় চীনেও বহু
উদ্যোক্তা আত্মপ্রকাশ করে। দেং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এমন গতি সঞ্চার করে দেন যে
চীনেই বিলোনিয়ারের আত্মপ্রকাশ করা আরম্ভ করে। দেং-এর কৃষি-অর্থনীতির বিকাশ ঘটানোর
সুফলকে কাজে লাগিয়ে চীনাপণ্য আজ গ্রাস করেছে গোটা পৃথিবীকে। অর্থনীতিতে একের পর এক
যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটানোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের
নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে চীন। শুধু এশিয়া মহাদেশেই নয়, আজ
গোটা দুনিয়ার পরাক্রমশালী এক রাষ্ট্রের নাম চীন।
চীনে এখন পছন্দের শব্দ ‘উদ্ভাবণ’। কী রকম? দৃশ্যটা
ভাবুন! কৃত্রিম এক হ্রদের শান্ত শীতল জলে এক জোড়া কালো রাজহাঁস সাঁতার কাটছে। আর
উল্টোদিকে কাঁচ ঘেরা বিশাল ভবনের মধ্যে বসে হাজারো গবেষক, নকশাবিদ,
ইঞ্জিনিয়ার চিন্তায় বিভোর। নতুন স্মার্টফোন কেমন হবে, কীভাবে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করবে, কীভাবে
অ্যাপল আর স্যামসাংকে টপকে বাজারে সেরার আসনে বসবে। আয়োজন চলছে তারই। প্রিমিয়াম
ফিচার আর তুলনামূলক কম দামের হুয়াওয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্মস্থান এটি। হুয়াওয়ের
শেনঝেন ক্যাম্পাসে গেলেই আপনার চোখে পড়বে প্রকৃতির সবুজ আর আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি
গবেষণার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এই শহরের মধ্যে সবুজের বুক চিরে বিশ্বের সবচেয়ে বড়
স্মার্টফোন সংযোজন কারখানা গড়ে তুলেছে হুয়াওয়ে। সংস্থার ‘বিগ
বস’ রেন ঝেংফেই এই হ্রদের পাড়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন।
হুয়াওয়ের কর্মীদের এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে বলেন। এই দুর্লভ রাজহাঁসগুলো
নিউজিল্যান্ড থেকে এনেছেন। কালো রঙের রাজহাঁস থাকার কারণে হুয়াওয়ের কর্মীদের কাছে
ওই হ্রদ ‘ব্ল্যাক সোয়ান লেক’ নামে
পরিচিত। এখানে অনেক কর্মী তাঁদের শিশুদের নিয়ে আসেন। অনেকেই এর পাড়ে বসে থাকেন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ব্ল্যাক সোয়ান বা কালো রাজহাঁসকে প্রতীকী অর্থেই তুলে ধরেছে
প্রতিষ্ঠানটি। এটি হুয়াওয়ের জন্য অনুপ্রেরণা আর সতর্ক থাকার প্রতীক। ব্ল্যাক সোয়ান
মূলত অনিশ্চয়তা বা দুর্ভাগ্যের প্রতীক। মানুষের জীবনে বা প্রতিষ্ঠানের সব সময় ভালো
সময় যাবে না। যেকোনও সময় ব্যবসায় দুর্ঘটনা বা ক্ষতি হতে পারে। দুঃসময় আসতে পারে। এ
জন্য দুঃসময়কে সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ভালো কাজ করতে হবে। মানুষকে ফাঁকি দেওয়ার
অশুভ চিন্তা বাদ দিতে হবে। ভালো কিছু করার, নিখুঁত থাকার,
মান নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে,
দুঃসময় যেকোনও সময় আসতে পারে। কালো রাজহাঁস সবসময় সে কথাই মনে করিয়ে
দেয় হুয়াওয়ের কর্মীদের। একসময় যাঁরা বলতেন, অ্যাপল ফোনের
আদলে বাজারে চীন এনেছে হরেক ফোন। কিন্তু বানাতে পারেনি নতুন কোনও অ্যাপল। তাঁদের
ভাবনাকে এখনই আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিতে বলছে হুয়াওয়ে। যাঁরা বলতেন, আমেরিকা মন্থর গতি নিয়েও চীনা খরগোশকে টেক্কা দিতে পারে উদ্ভাবনী শক্তিতে।
ধনতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার পথে নেমেও ওই একটি জায়গায় চীন ডাহা ফেল। তাঁরাই আজ
দেখছেন, হুয়াওয়ের বাজার আটকাতে ট্রাম্পের লম্ফঝম্প। স্কুলশিক্ষকের
ছেলে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন
প্যারিসে। প্রকৃতি তাঁর দারুণ পছন্দের। তিনি হুয়াওয়ের ক্যাম্পাসে তাই প্রকৃতির
সঙ্গে জ্ঞান অর্জনের এক অপূর্ব সম্মেলন ঘটিয়েছেন। তিনি এখানে তৈরি করেছেন হুয়াওয়ে
ইউনিভার্সিটি। এখানে হুয়াওয়ের বিভিন্ন দেশের কর্মীরা পড়াশোনা করতে পারেন। এখানে
নানা রকম কোর্স রয়েছে। পড়াশোনা করে ডিগ্রি নিতে পারলে তবেই পদোন্নতি। ভাবতে পারেন
আপনি?
চীন এখন পৃথিবীর সব থেকে দক্ষ ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যেখানে আজ সবথেকে
জনপ্রিয় শব্দ ‘উন্নয়ন’। কিন্তু এই উন্নয়ন কার জন্য? এই উন্নয়নে কারা কতটা উপকৃত হচ্ছে? সেসব প্রশ্ন
তোলার কেউ নেই। চীন মানে এখন বিশাল বিশাল চওড়া রাস্তা অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়ে।
ফ্লাইওভার, ব্রিজ, টানেল। অত্যাধুনিক
বিমানবন্দর, স্টেশন, বুলেট ট্রেন। আকাশছোঁয়া
বাড়ি। কী নেই! চীনে এখন সম্ভোগী সমাজ। রাস্তাঘাটে বিদেশি পণ্যের প্রচার। সন্ধে
নামলে নিয়ন আলোয় উজ্জ্বল হোর্ডিং। যাতে বিদেশি পণ্য আলিঙ্গনের হাতছানি। বড় বড়
হোর্ডিংয়ে নতুন আইফোন, নতুন কোনও সুইস ঘড়ি, ফরাসি সুগন্ধি বা ইতালির পোশাক-আশাক। রাস্তাঘাটে আগে দেখা যেত সাইকেল আর
সাইকেল। এখন মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ-দের ছড়াছড়ি। আর্থিক
লেনদেন যে খুবই বেশি তা বোঝা যায় নানা ধরনের ব্যাঙ্কের ছড়াছড়ি দেখে। কৃষি ব্যাঙ্ক
থেকে শিল্প ব্যাঙ্ক সবই রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক
প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড মানের কথায়, ‘১৯৭০-এর দশকের শেষ দিক
থেকে তার পরের সময়ে আমরা দেখেছি যে, বিশ্বের অর্থনৈতিক ইতিহাসে চীনের অর্থনীতি এক
অলৌকিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’ ১৯৭৯ সালে চীন ও আমেরিকার মধ্যে
নতুন করে গড়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক। সস্তা শ্রম ও অল্প খরচের কথা বিবেচনায় রেখেই আমেরিকা
সেখানে অর্থ ঢালতে শুরু করে। এরপর ১৯৯০-এর পুরো দশক ধরেই চীনে খুব দ্রুত অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করে। দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় ২০০১ সালে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব বাধা ছিল সেগুলোও ক্রমে হ্রাস
পেতে শুরু করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যায় যে বিশ্বের সর্বত্র চীনের পণ্য
ছড়িয়ে পড়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৮ সালে চীনের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি ইউএস ডলার। ১৯৮৫
সালের মধ্যে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যায় এবং তার দুই
দশকেরও কম সময় পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। পণ্য রপ্তানির বিচারে চীন
পরিণত হয় বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হিসেবে। ডেভিড মান বলেছেন, ‘চীন
যেন এখন গোটা দুনিয়ার জন্য একটি ওয়ার্কশপ বা কারখানায় পরিণত হয়েছে।’
চীনে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূরণ হয়েছে ১
অক্টোবর। যে কমিউনিস্টরা সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তারাই
এতদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করত। এখন এক নায়কতন্ত্র বহাল রয়েছে কিন্তু সর্বহারার
নেতৃত্ব নেই। এখন সাধারণ পোষাক পরা মাও বা টায়ারের চপ্পল পায়ে হো চি মিনরা আর
সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বে নেই। এখন স্যুট টাই পরা বিলাসী সাহেবরা নেতৃত্বে।
কমিউনিস্ট নাম ধারণ করে আছে শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দলীয় একনায়কতন্ত্র অব্যাহত
রাখার গরজে। ব্রিটিশরা যেমন বলে থাকেন আওয়ার কিং ইজ ডেড, লং লিভ আওয়ার
কিং। ঠিক তেমনই। আগে ধনতন্ত্র পরে সমাজতন্ত্র। তার জন্য জানলা খুললে কিছু মাছি-মশা
আসবে। কথাটা বলেছিলেন দেং নিজেই। অবশ্য এই মাছি-মশা নিয়ে তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপ
নেই। কী করে সাচ্চা ক্যাপিটালিস্ট হতে হয় সেটাও শেখাচ্ছে চীন!
No comments:
Post a Comment