মোবাইল সেট নিয়েও যুদ্ধ? বিশ্ব অর্থনীতির নয়া রণক্ষেত্র
মৃণালকান্তি দাস
চীনের সোশ্যাল মিডিয়া ‘ওয়েইবো’তে এই
মুহূর্তে কী ঘটছে, তা
কলকাতার মাটিতে বসে আঁচ পাওয়া অসম্ভব। ঘটনা হল, আমেরিকা-বিরোধী উত্তেজনায় ওয়েইবো
এখন রীতিমতো রণক্ষেত্র। কিছুদিন আগে ভারতে চীনের পণ্য বয়কট আন্দোলন নিয়ে ওয়েইবোতে
হাসাহাসি হলেও এখন তারাই মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে। চীনের প্রযুক্তি
কোম্পানি হুয়েই-র বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিধিনিষেধ আরোপ
করায় জোর খেপেছে চীনের নাগরিকরা। তারা বয়কট করতে চাইছে আমেরিকান কোম্পানি অ্যাপলকে।
ওয়েইবোতে নিজস্ব আইডিতে অনেকে অ্যাপলের আইফোন ভেঙে ফেলার ভিডিও আপলোড করছে। কোনও
ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে,
বিভিন্ন সংস্থায় কর্তারা কর্মচারীদের ডেকে বলছেন, আইফোনের
বদলে হুয়েই-র ফোন ব্যবহার করলে বোনাস দেওয়া হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে,
আমেরিকা-চীনের মধ্যে এক ‘ফোন-যুদ্ধ’ চলছে। এ আসলে বাজার দখলের লড়াই। এই দুই
শক্তিশালী দেশের মধ্যে মহাসঙ্ঘাত যে বিশ্ব ইতিহাসের অতীতের সব যুদ্ধের চেয়ে প্রযুক্তিগত
ও উপাদানে ভিন্ন কিছু হবে,
তারই বহিঃপ্রকাশ হল অ্যাপল বনাম হুয়েই-র সম্প্রতি প্রতীকী লড়াই। একসময় যে
লড়াইয়ের আঁচ এসে পড়বে এই ভারতেও।
হুয়েই চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নয়। যদিও আমেরিকার
কাছে তারা চীনের ‘উত্থানের প্রতীক’। এটা হয়তো শুধু এই কারণে নয় যে, কোম্পানিটির
এখনকার সিইও রেন ঝেংফেই একসময় পিপলস লিবারেশন আর্মিতে কাজ করতেন। কে না জানে,
হুয়েই-র বিরোধিতা আসলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য আমেরিকার প্রতিদিনের
সংগ্রামেরই নতুন অধ্যায় মাত্র। খ্যাতনামা ফোন ব্রান্ড হলেও হুয়েই-র শুধু
স্মার্টফোন বানায় না। যোগাযোগপ্রযুক্তির নানা যন্ত্রপাতি তৈরিতে তারা অন্যতম
বিশ্বসেরা। অ্যাপল থেকে গুগল— চীনের মক্কেলদের তালিকায় কেউ বাদ নেই। বড় বড় এই
প্রতিষ্ঠানের কাছে চীন জনপ্রিয় সস্তা শ্রমের জন্য। ফোন ব্যবসায় যদিও হুয়েই এখনও
স্যামসাংয়ের থেকে পিছিয়ে। কিন্তু ইতিমধ্যে তারাই আমেরিকার
চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছে। তার কারণ একটাই, গত বছর অ্যাপলকে পিছনে ফেলে বিশ্বে দ্বিতীয়
স্থানে চলে যাওয়া। আমেরিকার এখনকার নীতিনির্ধারকরা হুয়েইকে নিজেদের ‘নিরাপত্তার
জন্য বিপদ’ মনে
করছেন। তাদের সঙ্গে ব্যবসা না করার জন্য নিজেদের দেশের কোম্পানিগুলোকে বলছেন।
সরাসরি নাম না করেই গত ১৫ মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের
কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবসায় একরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একে ‘জরুরি
অবস্থা’র
সঙ্গে তুলনা করেছেন ট্রাম্প নিজেই। ফলে, হুয়েই-র মতো চীনের প্রযুক্তি
কোম্পানিগুলো আমেরিকা থেকে চিপসহ কোনও প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার আমদানি করতে পারবে
না। সমস্যায় পড়বে সফটওয়্যার নিয়েও। শুধু তাই-ই নয়, আমেরিকার শীর্ষ মহল থেকে প্রচার
চালানো হচ্ছে যে, হুয়েই-র প্রযুক্তির মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের উপর গোয়েন্দা
নজরদারি চালাচ্ছে চীন। যদিও এখনও তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবুও, চীনের নজরদারি কথা
বলে সাধারণ নাগরিকদেরও এই যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পরিস্থিতি
এমন দাঁড়িয়েছে যে হুয়েই-র মোবাইল সেটগুলো স্রেফ খেলনায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা
দিয়েছে। মার্কিন হুমকির জেরে যে তাদের বিক্রি বড় ধাক্কা খেয়েছে তা স্বীকার করেছে চীনা
টেলিকম সংস্থা হুয়েই। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও রেন ঝেংফেই জানিয়েছেন, উৎপাদন কমানো
ছাড়া আর কোনও পথ নেই।
সোভিয়েত ইউনয়ন ভেঙে পড়ার ৩০ বছর পর এভাবেই বিশ্ববাজারে নিজের
এতদিনের একচেটিয়া সাম্রাজ্য রক্ষায় নতুন এক রেষারেষিতে নেমেছে ওয়াশিংটন। অথচ, এই
আমেরিকাই বহুকাল থেকে মুক্তবাণিজ্যের কথা বলে এসেছে। আর নিজের ক্রেতাদের পছন্দের
স্বাধীনতাই সর্বাগ্রে হরণ করেছে। এটা অবশ্য মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, ‘প্রেম এবং
যুদ্ধে যেকোনও কৌশলই গ্রহণযোগ্য!’ চীনের অর্থনৈতিক উত্থান থামাতেই যে এসব পদক্ষেপ, সেটা গোপন
নেই আর। অভিযোগ উঠেছে, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করছে চীন। আমেরিকার
প্রযুক্তি স্থানান্তর করছে তারা। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে তথ্য
দিচ্ছে না। নিজের দেশের মুদ্রা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার মতো
কাজগুলো করছে চীন। মার্কিন নীতির তোয়াক্কা না করে চীনের বেড়ে ওঠার বিষয়টিতে
প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেছেন ট্রাম্প। অন্য কোনও মার্কিন রাজনীতিবিদ
এতদিন তা বুঝতেই পারেননি। ট্রাম্পের তত্ত্ব হচ্ছে, মার্কিন মজবুত অর্থনীতি চীনকে মাথা
নোয়াতে বাধ্য করবে। তিনি ট্যুইট করেছেন, ‘তারা হারছে এবং হারবে।’
গত বছরের এপ্রিলে চীনের হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান জেডটিই-এর উপর
প্রথম আঘাত হেনেছিল আমেরিকা। ওই সময় নিষেধাজ্ঞার চোট সামলাতে না পেরে প্রায় ধ্বংসের
কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল জেডটিই। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে
নিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য হল বাজার ও অর্থনীতির উপর নিজেদের
নিয়ন্ত্রণের জানান দেওয়া এবং চীনকে দাবিয়ে রাখা। তবে জেডটিইর ক্ষেত্রে যে কৌশল
কাজে দিয়েছিল, সেটি
হুয়েই-র ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। আমেরিকার
লক্ষ্য শুধু হুয়েই-র মোবাইল সেট নয়। সারা বিশ্বে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বিস্তারের
ক্ষেত্রে মূল যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজে এগিয়ে রয়েছে হুয়েই। ফাইভ-জি মোবাইল
নেটওয়ার্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেটেন্ট আছে হুয়েই-র দখলে। এই জায়গাতেও
নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় আমেরিকা।
আমেরিকার অঙ্গুলিহেলনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তাদের
ফাইভ-জি নেটওয়ার্ককে হুয়েই ও জেডটিইমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরে
কানাডায় হুয়েইর বড় এক কর্তার আটক হওয়াও আমেরিকার চীনবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধেরই
বহিঃপ্রকাশ ছিল। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা
হুয়েই-এর বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ এনেছে আমেরিকা। মোট ২৬টি
অভিযোগের মধ্যে আছে,
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি,
ব্যাঙ্ক দুর্নীতি এবং নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলি। যদিও সব ক’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছে চীনা
সংস্থা হুয়েই। এই মুহূর্তে কানাডায় নজরবন্দি এই সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার
(সিএফও) মেং ওয়াংজু। আমেরিকা কানাডাকে বাধ্য করেছিল ওই মেং ওয়াংজুকে আটক করতে। এই
মুহূর্তে পায়ে একটি ডিজিটাল যন্ত্র লাগিয়ে তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই নজরবন্দি করে রাখা
হয়েছে। এখন হুয়েই-র কর্তা মেং ওয়াংজুকে নিজের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে
যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের চাপে হুয়েই-র অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্সও টেনে ধরেছে গুগল।
মাইক্রোসফট উইনডোজ লাইসেন্স নিয়ে নেয় কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
আমেরিকা তার ঘনিষ্ঠ সব মিত্রকে বলছে চীনের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক
পদক্ষেপ নিতে। রাজনৈতিক স্বার্থে চীনের পণ্য সম্পর্কে নগ্নভাবেই ভীতি ছড়াচ্ছে
ট্রাম্প প্রশাসন, এমন অভিযোগ তুলেছে বেজিং। তাঁদের দাবি, চীনা
কোম্পানিদের উপর এই মার্কিন জুলুম বন্ধ হোক। তবে শুধু হুয়েই কালো তালিকার একমাত্র
প্রতিষ্ঠান নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এই তালিকা আরও লম্বা হবে। এতে যুক্ত
হবে হাইকেভিশন। চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারি চালানোর কাজে জি জিনপিংয়ের
সরকারকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে হাইকেভিশন।
মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্টরা যা
পারেননি, ট্রাম্প
সেটাই করে দেখিয়েছেন। চীনকে বশে আনতে টুঁটি চেপে ধরেছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
হুয়েই-র। ট্রাম্প–সমর্থকরা
বলছেন, তাঁর
নীতিতেই বশ মানবে চীন। বাণিজ্য চুক্তি থেকে লাভবান হবে আমেরিকা। মার্কিন
সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করে বিদেশি শত্রুদের তৈরি যন্ত্রাংশ আমেরিকায় ব্যবহারে
নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আমেরিকা বাণিজ্য দপ্তর তাঁর নির্দেশ অনুসরণ করে চীনের
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়েইসহ কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এসব প্রতিষ্ঠান আমেরিকায় যন্ত্রাংশ কেনাবেচা করা
ও কোনও পরিষেবা দিতে পারবে না। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ট্রাম্পের সমর্থকরা প্রচার
করছেন যে, ট্রাম্পই চীনের উপর এতটা কঠোর হতে পারেন এবং পেরেছেন। রোনাল্ড রেগ্যান
যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পেরেছিলেন, ট্রাম্পকে
এখন তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে নীতিতে
অগ্রসর হচ্ছে, একে
তাঁর ‘বিজয়’ বলা যায়।
চীনকে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু, তা সত্ত্বেও অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, চীনের
প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিপদে পড়বে আমেরিকা নিজেও। ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি
অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক সম্প্রতি জানিয়েছে, রপ্তানির উপর
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে আগামী পাঁচ বছরে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বিপুল
পরিমাণে কমে যেতে পারে। অঙ্কের হিসাবে যা প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আরও এক হিসেবে
দেখা গিয়েছে, চীনা
প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০ বিলিয়ন
ডলার হারাতে পারে। চিপ ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের লাইসেন্স ফি বাবদ চীনা কোম্পানিগুলোর
কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। সারা বিশ্বের
অসংখ্য হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদনের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল। এই বিশাল
বাজারের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। উদাহরণ হিসেবে অ্যাপলের কথা বলা যায়।
এই মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির লাভের এক-পঞ্চমাংশ আসে চীন থেকে। ট্রাম্পের প্রযুক্তি
যুদ্ধে অ্যাপলের লাভের অঙ্ক তাই তরতর করে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকেরা
বলছেন, সবচেয়ে
বড় বিপদে পড়তে চলেছে এশিয়ার অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার
করতে হয় বলে ট্রাম্পের দেশের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকা
এখন তাদের বলছে যে চীনকে বয়কট করতে হবে। ওদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বড় মক্কেল
হল চীন। যেমন- তাইওয়ানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টিসিএমসি ও ফক্সকন পড়েছে শাঁখের
করাতে। আমেরিকা ও চীন— এই
দুই দেশেই তাদের মক্কেল আছে। একই অবস্থায় আছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।
চীনকে ছেড়ে দিলে তাদের গুনতে হবে বিশাল অঙ্কের লোকসান, আর চীনকে
ধরে রাখলে ভ্রু কোঁচকাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। স্মার্টফোন থেকে মেডিক্যাল ডিভাইস, সব
সামগ্রীর খুচরো যন্ত্রাংশেরও ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। অন্য দেশের অনেক ব্রান্ডই
কার্যত চীন থেকে খুচরো যন্ত্রাংশ নেয়। ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর পুরো সাপ্লাই চেনের
অনেকখানি চীনের নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ বিশ্বের অর্থনৈতিক সাপ্লাই চেনেই একটি
বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে চলেছে।
প্রশ্ন হল, এর জবাবে কী করবে চীন? ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, প্রকৃতিতে
পাওয়া বিরল ধাতুর উৎপাদনে অন্য সকলের চেয়ে এগিয়ে চীন। স্মার্টফোন, ব্যাটারি, ক্ষেপণাস্ত্র
ও অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে প্রয়োজন হয় এই সব বিরল ধাতু। এগুলোর উৎপাদনের ৯০
শতাংশই চীনের অবদান। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার জবাবে বিরল ধাতুর সরবরাহে রাশ টানতে
পারে চীন। সে ক্ষেত্রে পুরো প্রযুক্তি খাত ও সামরিক উৎপাদনেই নেতিবাচক প্রভাব
পড়বে। তাছাড়া চীন এখন চুপিচুপি তার বিকল্প বাজার তৈরিতে ব্যস্ত। তবে চীনের ক্ষোভও
গোপন নেই। তাদের এক কূটনীতিবিদ ঝাও লিজিয়ান ট্যুইটারে এও বলে ফেলেছেন, আমেরিকার
উচিত হুয়েই-র লোগো ভালো করে দেখা। অ্যাপলকে ঠিক এভাবেই টুকরো টুকরো করা হবে।
কাকতালীয় হলেও সত্য,
হুয়েইর লোগোকে মনে হয় অ্যাপলের লেগোর কয়েকটি খণ্ডাংশ। আদতে প্রযুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে আমেরিকা, তাতে করে চীনের আত্মনির্ভরশীল হওয়া
ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই। ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, এভাবেই বিশ্বে আধিপত্য ধরে রাখা
যাবে। কিন্তু এই ধাক্কায় যদি সত্যিই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে দৌড়ানো শুরু করে চীন? তখন বিশ্ব
বাজারে আমেরিকার আরও বিপদ বাড়বে। শক্তি দেখাতে গিয়ে না আবার আছাড় খেতে হয়
ট্রাম্পকে! ফোর্বস ম্যাগাজিন তো বলেই ফেলেছে, ’এসব ট্রাম্পের পাগলামি ছাড়া কিছু
নয়।’
No comments:
Post a Comment