Friday, January 17, 2020

তাহলে কি মহাকাশে যুদ্ধ আসন্ন?


তাহলে কি মহাকাশে যুদ্ধ আসন্ন?
মৃণালকান্তি দাস

হলিউডের সেই বিখ্যাত সিনেমা আর্মাগেডন দেখেছেন? সে এক অন্তিম যুদ্ধ-এর কাহিনী। যার পরিণতিতে নাকি পৃথিবীটাই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে! বিলুপ্ত হতে পারে মানব জাতি। বাঁচাতেই হবে বসুন্ধরাকে। গত ২৭ মার্চের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে সেই আর্মাগেডন (১৯৯৮) সিনেমার একটি অনবদ্য দৃশ্যের কথা। যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে একটি মহাকাশ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছেন। যে ঘোষণায় গোটা দুনিয়া জানল, পৃথিবীর দিকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা এক গ্রহাণুর হানায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে মানব সভ্যতা! মানবজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একদল সাহসী বিজ্ঞানী তাঁদের জীবন তুচ্ছ করে সেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে চলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন এই ভাষণ দিচ্ছেন, তখন ব্রিটেন থেকে চীন, ফ্রান্স থেকে সৌদি আরব, গোটা দুনিয়ার সব মানুষ উদ্বেগের সঙ্গে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুণতে শুরু করে দিয়েছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করেছে। অজানা আতঙ্কে কেউ টিভির সামনে সেঁটে বসে। কেউ রেডিওতে কান পেতে।
২৭ মার্চ, দিনটি শুরু হয়েছিল একইভাবে। আচমকা টিভিতে ব্রেকিং নিউজ। একটি ট্যুইটবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, সকাল ১১.৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে তিনি দেশবাসীকে একটি বিশেষ বার্তা দেবেন। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ট্যুইটটির খবর। পরের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ছিল ভারতের কাছে ‘আর্মাগেডন’-এর মতো মুহূর্ত। যাবতীয় সম্প্রচারমূলক অনুষ্ঠান ও রিপোর্টিং বন্ধ করে দিয়ে টিভিতে দেখান হল উদ্বিগ্ন দর্শকদের মুখ। অফিস, কলেজের ক্যান্টিন, হাসপাতাল, রেল স্টেশন— সর্বত্র তখন একই ছবি। এই অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকল যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টিভির পর্দায় আবির্ভূত হলেন।
ইতিমধ্যে একটি টিভি চ্যানেলের সুবাদে ছড়িয়ে গিয়েছে, ‘বিগ ক্যাচ’! মাসুদ আজহার না দাউদ ইব্রাহিম? টেলিভিশনের পর্দাতেও শুধুই আলোচনা, কী হবে? শুধু কনফার্ম করা গিয়েছে, মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠক হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা সওয়া ১২টাও পেরিয়ে গেল। অতঃপর! প্রধানমন্ত্রী এলেন। ১০ মিনিটের লম্বা ভিডিও বার্তায় নরেন্দ্র মোদিকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছিল। তাঁর হাত কাঁপছিল। গোটা ভারতবাসীর প্রবল উদ্বেগে জল ঢেলে তিনি জাতির উদ্দেশে বললেন, ভারত আজ অন্তরীক্ষ মহাশক্তি হিসেবে নিজের নাম নথিবদ্ধ করেছে। এত দিন আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের এই সক্ষমতা ছিল। এবার ভারত হয়ে উঠল চতুর্থ দেশ, যারা এই সক্ষমতায় পৌঁছল। প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য এর চেয়ে গর্বের মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না। উপগ্রহ-বিধ্বংসী (এস্যাট) এই প্রকল্পের নাম মিশন শক্তি। দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও) এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হেনেছে যে উপগ্রহে, সেটিও ভারতীয় উপগ্রহ। লোয়ার অর্বিটে ভ্রাম্যমান উপগ্রহটির কার্যকাল আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই প্রকল্পটি কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের সর্বাধুনিক মহাকাশ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের প্রদর্শন মাত্র। সমালোচকরা বললেন, গোটা পর্বটাই একেবারে নির্বাচনী স্ক্রিপ্ট!
সেই সমালোচনাকে উসকে দিয়ে দেশের এই সাফল্যে মুহূর্তে রাজনীতির রং লাগালেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। বিজেপির মঞ্চ থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে পাশে নিয়ে অরুণ জেটলি অভিযোগ তুললেন, ২০১২-তেই দেশের বিজ্ঞানীরা এই কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের সেই ক্ষমতাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইউপিএ-সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। অরুণ জেটলির অভিযোগ, তখন সরকারের সেই সাহস ছিল না। চিন্তাভাবনার স্বচ্ছতা ছিল না। ইউপিএ-সরকার যে সাহস দেখাতে পারেনি, সেটাই নরেন্দ্র মোদি করে দেখালেন। ডিআরডিও-র প্রাক্তন প্রধান ভি কে সারস্বত, বর্তমানে মোদি সরকারের নীতি আয়োগের উপদেষ্টা তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, আমরা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সামনে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। একই যুক্তি দিয়েছেন ইসরো-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার। গত বছর বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নায়ারের বক্তব্য, ভারতের হাতে দশ বছর আগেই এই ক্ষমতা এসে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী মোদি উদ্যোগী হয়েছেন। যদিও তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের পাল্টা দাবি, ডিআরডিও তখন এমন কোনও আর্জিই জানায়নি। সারস্বতের বক্তব্য প্রসঙ্গে একটি ওয়েবসাইটকে মেনন বলেন, ‘এই প্রথম এমন কথা শুনলাম। এই বিষয়ে ডিআরডিও ঘরোয়া প্রেজেন্টেশন দিয়েছিল। কিন্তু সারস্বত কোনও দিন এমন পরীক্ষার জন্য আমার কাছে অনুমতি বা সম্মতি চাননি।’
বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে, কেন ঠিক ভোটের সময়ই মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হল? অভিযোগ, দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতেই ঢাকঢোল পিটিয়ে মহাকাশ সাফল্যের ঘোষণা করেছেন মোদি। ট্যুইটারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন, ‘ভারতের মহাকাশ গবেষণা বরাবরই বিশ্বমানের। তার জন্য আমাদের বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্ব বোধ করি। বহুবছর ধরে লাগাতার মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু নিজে সবকিছুর কৃতিত্ব নিতে অভ্যস্ত নরেন্দ্র মোদি। ভোটের আগে তাই ফায়দা তুলতে নেমে পড়েছেন।
ভোটকে কেন্দ্র করে ভারতের মাটিতে রাজনীতি যাই হোক না কেন, আসলে মহাকাশ এখন এক নতুন রণাঙ্গন। রাজনৈতিক স্বার্থে ভোটের মুখে কেউ কেউ বলছেন, ‘মিশন শক্তি’-র সাফল্য মানে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে আরও একবার সমঝে দেওয়া গেল। অত্যুৎসাহী এক নেতা এমনও বলছেন, এটা যথেষ্ট নয়। পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে আরও প্রত্যক্ষ আঘাত হানা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট, খাতায় কলমে মহাকাশে যু্দ্ধ এখনও হয়নি। কিন্তু সেই যুদ্ধের প্রস্তুতির যুদ্ধটাও কম বিপজ্জনক নয়।
কে না জানে, আকাশ, মাটি, জলের পর এখন মহাকাশ দখলই শক্তিশালী দেশগুলির লক্ষ্য। আটের দশকের গোড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান বলেছিলেন স্টার ওয়ার্স’, বা মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা। যদিও সেই প্রস্তাব ছিল শুধুই একটি পরিকল্পনা, যা এখনও তেমনভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। রেগান থেকে ট্রাম্পএই সময়ে আমেরিকা মহাকাশে স্থাপন করেছে সামরিক উপগ্রহ। একই পথে হেঁটেছে রাশিয়া, চীন। এই মুহূর্তে মহাকাশে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৮৫৯টি উপগ্রহ। এর মধ্যে ১৫৯টি সামরিকউপগ্রহ, যেগুলি সরাসরি অপারেট করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। চীন, রাশিয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৩৬টি সামরিক উপগ্রহ।
অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা যুদ্ধের সময় রাশিয়া এবং আমেরিকা পাল্লা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াচ্ছিল মহাকাশে। সেই সময় দুই দেশই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ১৯৫৯ সালে আমেরিকা প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ থেকে ছুঁড়তে হত। অন্য দিকে ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফল ভাবে মাটি থেকে ছোড়া যায় এমন উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করে। অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, মহাকাশে নিজের দেশের যে সমস্ত কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে এবং গবেষণামূলক কাজকর্ম চলছে সেগুলিকে নিরাপত্তা দেওয়া। সেই সঙ্গে মহাকাশ থেকে কোনও শত্রু দেশের আক্রমণ হলে তা যেন মহাকাশেই প্রতিহত করা যায়, তা নিশ্চিত করা। অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের সঙ্গে প্রয়োজনে পরমাণবিক অস্ত্রও যুক্ত করা যায়। আমেরিকা রাশিয়ার পর চীন তৃতীয় শক্তি হিসাবে ২০০৭ সালে সফল ভাবে ওই প্রযুক্তির ব্যবহার করে। চীনের সাফল্য মহাকাশে ভারতের নিরাপত্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর থেকে ভারতও সেই একই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১২ সালের মধ্যেই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল তৈরির প্রযুক্তি তৈরিতে সক্ষম হন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। এই সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য যতই চোখ ধাঁধিয়ে দিক, প্রশ্ন উঠছে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও। মহাকাশে এই সাফল্য ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য হয়ে উঠবে না তো?
জোসেফ ডব্লিউ এশি, কমান্ডার-ইন-চিফ অব ইউএস স্পেস কমান্ড। মহাকাশ বিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রোগ্রেসিভ ম্যাগাজিন, জানুয়ারি ২০০০-এ লিখেছিলেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে বিষয়টি স্পর্শকাতর। কিন্তু তা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। কিছু মানুষ তো বিষয়টি নিয়ে শুনতেই চায় না। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমরা মহাকাশ থেকে যুদ্ধ ও মহাকাশে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছি। আর তাই উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন ও মারণাস্ত্র তৈরি করছি। আমরা জাহাজে, বিমানে ও মূলত ভূমি হতে মহাকাশে নিক্ষেপণ-যোগ্য অস্ত্র তৈরির দিকে মনোযোগী হচ্ছি।’ আর সেই পথ ধরেই পেন্টাগন ও মার্কিন প্রতিরক্ষাদপ্তরকে স্পেস ফোর্সগঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সেনাবাহিনী হবে মার্কিন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, মেরিন, সেনাবাহিনী এবং উপকূলরক্ষীর সমকক্ষ, কিন্তু আলাদা। এটি হবে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা। ২০২০-র মধ্যেই খোলা হবে এই শাখা। মহাকাশে মার্কিন গর্বের উত্তরাধিকারকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর কথায়, মহাকাশ, একটি রণাঙ্গন, ঠিক যেমন আকাশ, মাটি, জল। নিজস্ব উগ্র জাতীয়তাবাদী মেজাজে ট্রাম্প বলেছেন: মহাকাশে আমেরিকার নিছক উপস্থিতিই যথেষ্ট নয়, মহাকাশে থাকা উচিত মার্কিন আধিপত্য। একই সুরে বলেছেন নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রাইডেনস্টাইন। সম্প্রতি ওয়াশিংটন এক্সামিনারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এনার্জি গ্রিড থেকে ওয়াল স্ট্রিটআজ মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল জিপিএস উপগ্রহগুলির উপর। প্রতিটি ব্যাঙ্কিং লেনদেনের জন্য জরুরি হল জিপিএস থেকে নিমেষে আসা সঙ্কেত। অন্যভাবে বললে, যদি কোনও জিপিএস না থাকে, অচল হয়ে যাবে মার্কিন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। সমস্ত কিছুর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে মুহূর্তে। এর জন্যই মহাকাশে আধিপত্য জরুরি।
তাহলে কি মহাকাশে যুদ্ধ আসন্ন? মহাকাশের অস্ত্র মানবজাতির জন্য যুদ্ধের নতুন অভিশাপ নিয়েই আসবে বলে অনেকে মনে করছেন। তা হলে কি আমরা পৃথিবীর শেষ দিনের অপেক্ষায়? বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ‘আর্মাগেডন’ হল শেষ বিচারের আগের দিন। সৎ ও অসতের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ! এই যুদ্ধ থামাবে কে?


সাবধান! দেওয়াল জুড়ে গ্রাফিতি নিয়ে ব্যাঙ্কসি এবার ভারতেও


সাবধান! দেওয়াল জুড়ে গ্রাফিতি নিয়ে ব্যাঙ্কসি এবার ভারতেও
মৃণালকান্তি দাস
কোনও রাজা নয়। রাজার মূর্তিও নয়। দুই নেতার টানাটানিতে দ্বিখণ্ডিত ভারত! এটাই ছিল মুম্বইয়ের রাজপথের পাশে কোনও এক দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি। দড়ি টানাটানি করছেন যাঁরা, তাঁদের একজন নাগরিকপোশাকে সজ্জিত কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। অন্যজনের পরনে সামরিক উর্দি। তিনি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কে এঁকেছেন, জানা নেই। নাই বা থাকুক, এই ভোট মরসুমে নজর কাড়তে সময় নেয়নি সেই গ্রাফিতি। তবে নিশ্চিত, শিল্পীমনে প্রভাব ফেলেছিল ‘ব্যাঙ্কসি’র চিত্রকর্ম। ব্যাঙ্কসি! সে আবার কে? হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা ব্রাড পিট একসময় যাঁর কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, তিনি এত সব করেও নিজেকে সকলের চোখের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। এ যুগে সবাই যখন বিখ্যাত হতে চান, তখন ব্যাঙ্কসি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি এখনও। এ এক অসাধারণ ব্যাপার। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন নিউ ইয়র্কার-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লরেন কলিন্স লিখছেন, তাঁর পরিচয় না জানা গেলেও, দুনিয়ার অনেক দেশের দেওয়াল দখল করে ফেলেছে তাঁর গ্রাফিতি। জার্মানি থেকে প্যালেস্তাইন, ব্রিটেন থেকে আমেরিকা— ব্যাঙ্কসির গ্রাফিতি সমাজ-রাজনীতির অনেক প্রশ্নকে জনগণের সামনে হাজির করেছে। এই ব্রিটিশ গ্রাফিতি আঁকিয়ের সৃষ্টি আজ গোটা দুনিয়াকে ভাবতে বাধ্য করেছে।
যেমন ভাবিয়েছে ভোটের ভারতকে। মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু দেয়ালচিত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরনে কেন সামরিক পোশাক? এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কে না জানে, এবারের ভোটের শেষবেলায় এসে প্রধানমন্ত্রীর ভোট-প্রচার পুরোপুরি নিরাপত্তানির্ভর হয়ে উঠেছিল। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা হত্যার পর যেদিন বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হল, প্রচারের অভিমুখ উন্নয়ন ও বিকাশের রাস্তা ছেড়ে সেই দিন থেকেই ধাবিত দেশের নিরাপত্তার দিকে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকে সরাসরি ভোট চাওয়া শুরু হয়েছিল দেশের সেনাবাহিনীর নামে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তো দেশের সেনাবাহিনীকে মোদির সেনাবলে হুঙ্কার করতেও ছাড়েননি। শিল্পী হয়তো এই কারণেই মোদিকে সেনা-পোশাকে মুড়েছেন। শিল্পীর হয়তো মনে হয়েছে, মোদির মোকাবিলায় সর্বভারতীয় স্তরে যদি কোনও দল থাকে, তা রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। তাই মোদির বিরুদ্ধে রাহুলকে দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু সেই গ্রাফিতিতে দুই নেতার দড়ি-টানাটানিতে ভারত কেন দুভাগে ভাগ? হয়তো শিল্পীমন বলতে চেয়েছে, এই দুই নেতার হাতে পড়ে দেশ ও জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে! শিল্পীমন যাই বলুক না কেন, ওই শিল্প আপনাকে ভাবাতে বাধ্য। হয়তো তাই এই গ্রাফিতি দেখেই এএফপির চিত্রসাংবাদিক ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা ঝলসে উঠেছিল। যে গ্রাফিতি অর্থ আদৌ স্পষ্ট নয়। আপনি ভাবতে পারেন আপনার মতো করেই। ভাবতে পারেন অন্য ভাবেও। আর প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাহলে কি ভোটের ভারতে সকলের নজর এড়িয়ে মুম্বই ঢুঁ মেরেছিলেন ‘ব্যাঙ্কসি’ নিজেই?
ইতিহাস বলে, নব্বইয়ের দশকে ব্রিস্টলের কুখ্যাত বার্টন হিল এলাকার দেওয়ালগুলি ভরে যাচ্ছিল অদ্ভুত সব গ্রাফিতি দিয়ে। যেমন রঙের ব্যবহার, তেমনই অভিনব বিষয়। অন্যসব গ্রাফিতি থেকে একে সহজেই আলাদা করা যেত। গ্রাফিতিতে স্প্রের বদলে স্টেনসিলের ব্যবহার হয়তো সেই প্রথম। কেউ জানতো না, এই গ্রাফিতিগুলি কার আঁকা। তবে একটি ছদ্মনাম ব্রিস্টলের কালোজগতে সবাই জানতেন। রবিন ব্যাঙ্কস। নামটি দ্ব্যর্থক। ইংরেজি শব্দ রবিং যার অর্থ দাঁড়ায় ডাকাতি। আর ব্যাঙ্ক বলতে আমাদের চিরপরিচিত লেনদেনের ব্যাঙ্ককেই বোঝায়। এই রবিন ব্যাঙ্কস নামটিই পরে বদলাতে বদলাতে ব্যাঙ্কসিতে পরিণত হয়। ব্যাঙ্কসির আসল পরিচয় এখনও কেউ জানেন না। তবে কিছু সাক্ষাৎকার ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানা যায়। যাঁর শুরুটা হয়েছিলেন ডেব্রিড ক্রুর গ্রাফিতি শিল্পীদের অংশ হিসেবে। সেই নব্বইয়ের দশকে। ব্যাঙ্কসি তখন কিশোর। সেই বয়সেই জীবনের অনেক অন্ধকার পর্ব দেখা হয়ে গিয়েছে। জন্মস্থান বার্টন হিল এলাকায় মারামারি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লেগেই থাকত। এরই মধ্যে তিনি তাঁর কাজ করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে তার দেখা হয় ব্রিস্টলের বিখ্যাত আলোকচিত্রী ও চিত্রপ্রদর্শনী উদ্যোক্তা স্টিভ ল্যাজারিডসের সঙ্গে। তিনি ব্যাঙ্কসির কাজের ব্যবসায়িক দিকটি প্রথম দেখতে পান। তাঁর কাজ বিক্রি করতে শুরু করেন। পরে লন্ডনেও কাজ শুরু করেন এবং অচিরেই গোটা ব্রিটেনে তাঁর কাজের তুলনা হতে থাকে জ্যঁ মিশেল বাস্কিয়াৎ এবং কিথ হ্যারিংয়ের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে। ব্যাঙ্কসির প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হল, ১৯৯৭ সালে আঁকা একটি বড় পরিসরের দেওয়াল অঙ্কন। নাম দ্য মাইল্ড মাইল্ড ওয়েস্ট। এঁকেছিলেন ব্রিস্টলের স্টোক্স ক্রাফটে। এই ছবির উদ্দেশ্য ছিল এক আইনজীবীর বিজ্ঞাপন ঢেকে দেওয়া। বিষয় ছিল, একটি টেডি বিয়ার তিনজন পুলিসের দিকে মোলোটভ ককটেল ছুঁড়ে মারছে। ব্যাঙ্কসির কাজে এরকম প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সবসময়ই লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁর কাজে বিচিত্র রকমের আবেগ ও বাস্তবতা উঠে আসে। বরাবর তাঁর কাজে উস্কানি দেন উচ্চ মধ্যবিত্ত, বিত্তশালী সমাজকে। কিন্তু কী অদ্ভুত! তাদের কাছেই তিনি উচ্চমূল্যে নিজের শিল্প বিক্রি করেন।
তিনি এখনও পর্দার আড়ালেই। তাঁর দেওয়াল চিত্র এখন ইংল্যান্ডের বাইরে ভিয়েনা, স্পেন, আমেরিকা এবং ফ্রান্সের দেওয়ালে আলোড়ন তুললেও তাঁর গোপনীয়তা রক্ষা করে পেস্ট কন্ট্রোলনামে এক সংগঠন। যারা তাঁর কাজের সত্যতাও নিশ্চিত করে। তিনি নিজে অনেক জায়গায় ছবি দিয়েছেন, তবে চেহারা কাগজের ব্যাগের আড়ালে রেখে। তিনি যোগাযোগ করেন ইমেলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই ব্যাঙ্কসির ব্যাপারে যা জানা যায়, তার সবই তাঁরই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। এর সত্যতা নিশ্চিত করার আপাতত কোনও উপায় নেই। বাঙ্কসি পিৎজা খেতে পছন্দ করেন, তবে পিৎজার স্বাদ বাড়াতে এর উপরে যে বিভিন্ন উপাদানের স্তর দেওয়া হয়, সেটা তিনি পছন্দ করেন কিনা, তা নিশ্চিত করে বলা যায়নি। তাঁর একটা সোনার দাঁত আছে। তাঁর একটা দাঁত রুপোর। আর আছে কানে একটা রুপোর মাকড়ি। তিনি একজন নৈরাজ্যবাদী, নাকি পরিবেশবাদী। যিনি এসইউভি গাড়ি নিজেই চালিয়ে ঘুরে বেড়ান এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউ নিশ্চিত নন, তিনি ১৯৭৮ বা ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে জন্মেছিলেন নাকি ইয়টে। তিনি একজন কসাইয়ের সন্তান বা হয়তো একজন গাড়িচালক কিংবা হাসপাতাল কর্মীর সন্তান। তিনি মোটাসোটা নাকি কঙ্কালসার। কেউ বলবেন, ব্যাঙ্কসি কাজ-পাগল, আত্মমগ্ন। কেউ আবার বলবেন, কিছুদিন ধরে তিনি লন্ডনে বাস করছেন। আর তা না হলে শোরেডিচ, তারপর হোক্সটন। সবই ধারণা! তবে কয়েকজন তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। শেষ ২০০৩ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকার সাইমন হ্যাটেনস্টোন তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। সাইমনের বর্ণনায়, ব্যাঙ্কসি দেখতে ২৮ বছরের এক শ্বেতাঙ্গ, পরনে রঙচটা জিন্স আর টি-শার্ট। তিনি নাকি দেখতে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত গানের দল ‘দ্য স্ট্রিটস’-এর মাইক স্কিনারের মতো। ২০০১ সালে স্প্রে রঙে ব্রিটেনজুড়ে তাঁর স্বাক্ষর দেখা যায়। নিজেকে তিনি উপদ্রবকারীহিসেবে ভাবতেই পছন্দ করেন। পরিচয় গোপন রাখা যে পুলিসের হাত থেকে বাঁচার একটি কৌশল, সেটা কিন্তু ব্যাঙ্কসির ক্ষেত্রে খুবই সত্য।
দেওয়ালে আঁকা ছবিগুলো যেহেতু ক্ষণস্থায়ী, তাই মাঝে মাঝে তিনি নিজের ছবিগুলো দিয়ে তার সঙ্গে কিছু লেখা জুড়ে বই আকারে প্রকাশ করেন। তাঁর প্রথম তিনটি বই হচ্ছে এক্সিসটেনসিয়ালিজম, ব্যাংগিং ইওর হেড অ্যাগেইনস্ট আ ব্রিক ওয়াল ও কাট ইট আউট। তাঁর ওয়াল অ্যান্ড পিস বইটি প্রকাশ করেছে র‌্যানডম হাউজ এবং বইটি আড়াই লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। মোনালিসার মুখে হলুদ রঙের একটি স্মাইলি, ক্রাইম সিন টেপ দিয়ে ঘিরে থাকা চারণভূমির ছবি তিনি ছদ্মবেশ নিয়ে টানিয়ে দিয়েছিলেন লুভ্যর ও টেট মিউজিয়ামে। সেবার নাকি ট্রেঞ্চকোট আর মুখে দাড়ি লাগিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কসি। সেই ব্যাঙ্কসি এবার ভোটের ভারতে? মুম্বইয়ের দেওয়ালে?
তাহলে কি ব্যাঙ্কসিও জানেন, এই দেশের দুর্দশার কথা। কোটি কোটি কৃষক, শ্রমিক, দলিত ও আদিবাসীদের দমিয়ে রাখা কণ্ঠস্বর? জানেন, অত্যাধুনিক দুনিয়ায় এদেশে গোমাতা, গোমূত্র দিয়ে আজও চলে ব্রেইন ওয়াশ? জানেন, দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সেনাদের বিজয় নিয়ে চলে রাজনীতির উল্লম্ফন? জানেন, ছাতি ফুলিয়ে বিশ্রী ভঙ্গিতে এদেশের রাজনীতিবিদরা ভোটপ্রচারে চেঁচিয়ে বলেন হামারা সেনা’, ‘ঘুস কর মারেঙ্গে? ব্যাঙ্কসি জানেন, এ দেশের কোটি কোটি বেকার তাকিয়ে রয়েছে একটা কাজের আশায়? আর বাকিরা, কাজ হারানোর ভয়ে বিনিদ্র রাত কাটান, ঘরের কোনে দলা পাকিয়ে। হয়তো সব খোঁজ রাখেন। তাই তো এই ভোটের মরসুমে মুম্বইয়ের দেওয়াল ঝলসে ওঠে দড়ি টানাটানির লড়াই। এই প্রথম।
হয়তো আগামী দিনে গোটা দেশের দেওয়ালগুলির দখল নিয়ে ব্যাঙ্কসিও হয়ে উঠবেন ভারতীয় রাজনীতিবিদদের চক্ষুশূল। ব্যাঙ্কসির এই গ্রাফিতি যে সবহারার সব পাওয়ার...! কিন্তু, ব্যাঙ্কসিকে ধরবে কে? নিউ ইয়র্কার-এর লেখক লরেন কলিনসকে ব্যাঙ্কসি বলেছিলেন, নিজেকে অজ্ঞাত রাখার কিছু সমস্যা আছে। একবার আমার প্রিয় এক পাবে একটা চিত্রকর্ম দিয়েছিলাম। সেটা তারা তাদের বারের উপরে ঝুলিয়ে রেখেছিল। প্রচুর মানুষ সেই চিত্রকর্মটা নিয়ে পাবের লোকজনের কাছে প্রশ্ন করত। তাই আমি দু’বছর সেদিকে যাইনি। আসলে পত্রিকায় আপনার কাজ প্রকাশিত হওয়া একটা নির্বোধের মতো ব্যাপার, যদি আপনি অন্তত নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত অজ্ঞাত থাকতে চান। আপনি কে সেটা অন্যরা জানে না, এটা আমার কাছে ভালো লাগে। আমার খোঁজে আমার ডিলারের বাবার দোকানেও পৌঁছে গিয়েছিল ডেইলি মেলের সাংবাদিকরা। লস অ্যাঞ্জেলেসে একবার আমি রাস্তায় আঁকছিলাম, সেই সময় এক গৃহহীন তরুণ কাছে এসে বলল, আপনি কি বাঙ্কসি? পরদিনই আমি লস অ্যাঞ্জেলেস ছেড়ে চলে আসি।
সত্যিই তো, এ যুগে সবাই যখন প্রতি মুহূর্তে বিখ্যাত হতে চান, তখন ব্যাঙ্কসির মতো নিজের পরিচয় গোপন রাখা... কঠোর অনুশীলন বটে!


মোবাইল সেট নিয়েও যুদ্ধ?


মোবাইল সেট নিয়েও যুদ্ধ? বিশ্ব অর্থনীতির নয়া রণক্ষেত্র
মৃণালকান্তি দাস

চীনের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবোতে এই মুহূর্তে কী ঘটছে, তা কলকাতার মাটিতে বসে আঁচ পাওয়া অসম্ভব। ঘটনা হল, আমেরিকা-বিরোধী উত্তেজনায় ওয়েইবো এখন রীতিমতো রণক্ষেত্র। কিছুদিন আগে ভারতে চীনের পণ্য বয়কট আন্দোলন নিয়ে ওয়েইবোতে হাসাহাসি হলেও এখন তারাই মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে। চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়েই-র বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিধিনিষেধ আরোপ করায় জোর খেপেছে চীনের নাগরিকরা। তারা বয়কট করতে চাইছে আমেরিকান কোম্পানি অ্যাপলকে। ওয়েইবোতে নিজস্ব আইডিতে অনেকে অ্যাপলের আইফোন ভেঙে ফেলার ভিডিও আপলোড করছে। কোনও ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, বিভিন্ন সংস্থায় কর্তারা কর্মচারীদের ডেকে বলছেন, আইফোনের বদলে হুয়েই-র ফোন ব্যবহার করলে বোনাস দেওয়া হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, আমেরিকা-চীনের মধ্যে এক ‘ফোন-যুদ্ধ’ চলছে। এ আসলে বাজার দখলের লড়াই। এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে মহাসঙ্ঘাত যে বিশ্ব ইতিহাসের অতীতের সব যুদ্ধের চেয়ে প্রযুক্তিগত ও উপাদানে ভিন্ন কিছু হবে, তারই বহিঃপ্রকাশ হল অ্যাপল বনাম হুয়েই-র সম্প্রতি প্রতীকী লড়াই। একসময় যে লড়াইয়ের আঁচ এসে পড়বে এই ভারতেও।
হুয়েই চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নয়। যদিও আমেরিকার কাছে তারা চীনের ‘উত্থানের প্রতীক’। এটা হয়তো শুধু এই কারণে নয় যে, কোম্পানিটির এখনকার সিইও রেন ঝেংফেই একসময় পিপলস লিবারেশন আর্মিতে কাজ করতেন। কে না জানে, হুয়েই-র বিরোধিতা আসলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য আমেরিকার প্রতিদিনের সংগ্রামেরই নতুন অধ্যায় মাত্র। খ্যাতনামা ফোন ব্রান্ড হলেও হুয়েই-র শুধু স্মার্টফোন বানায় না। যোগাযোগপ্রযুক্তির নানা যন্ত্রপাতি তৈরিতে তারা অন্যতম বিশ্বসেরা। অ্যাপল থেকে গুগল চীনের মক্কেলদের তালিকায় কেউ বাদ নেই। বড় বড় এই প্রতিষ্ঠানের কাছে চীন জনপ্রিয় সস্তা শ্রমের জন্য। ফোন ব্যবসায় যদিও হুয়েই এখনও স্যামসাংয়ের থেকে পিছিয়ে। কিন্তু ইতিমধ্যে তারাই আমেরিকার চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছে। তার কারণ একটাই, গত বছর অ্যাপলকে পিছনে ফেলে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে চলে যাওয়া। আমেরিকার এখনকার নীতিনির্ধারকরা হুয়েইকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বিপদমনে করছেন। তাদের সঙ্গে ব্যবসা না করার জন্য নিজেদের দেশের কোম্পানিগুলোকে বলছেন।
সরাসরি নাম না করেই গত ১৫ মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবসায় একরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একে জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন ট্রাম্প নিজেই। ফলে, হুয়েই-র মতো চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আমেরিকা থেকে চিপসহ কোনও প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার আমদানি করতে পারবে না। সমস্যায় পড়বে সফটওয়্যার নিয়েও। শুধু তাই-ই নয়, আমেরিকার শীর্ষ মহল থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে যে, হুয়েই-র প্রযুক্তির মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছে চীন। যদিও এখনও তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবুও, চীনের নজরদারি কথা বলে সাধারণ নাগরিকদেরও এই যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে হুয়েই-র মোবাইল সেটগুলো স্রেফ খেলনায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কিন হুমকির জেরে যে তাদের বিক্রি বড় ধাক্কা খেয়েছে তা স্বীকার করেছে চীনা টেলিকম সংস্থা হুয়েই। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও রেন ঝেংফেই জানিয়েছেন, উৎপাদন কমানো ছাড়া আর কোনও পথ নেই।
সোভিয়েত ইউনয়ন ভেঙে পড়ার ৩০ বছর পর এভাবেই বিশ্ববাজারে নিজের এতদিনের একচেটিয়া সাম্রাজ্য রক্ষায় নতুন এক রেষারেষিতে নেমেছে ওয়াশিংটন। অথচ, এই আমেরিকাই বহুকাল থেকে মুক্তবাণিজ্যের কথা বলে এসেছে। আর নিজের ক্রেতাদের পছন্দের স্বাধীনতাই সর্বাগ্রে হরণ করেছে। এটা অবশ্য মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, ‘প্রেম এবং যুদ্ধে যেকোনও কৌশলই গ্রহণযোগ্য! চীনের অর্থনৈতিক উত্থান থামাতেই যে এসব পদক্ষেপ, সেটা গোপন নেই আর। অভিযোগ উঠেছে, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করছে চীন। আমেরিকার প্রযুক্তি স্থানান্তর করছে তারা। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না। নিজের দেশের মুদ্রা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার মতো কাজগুলো করছে চীন। মার্কিন নীতির তোয়াক্কা না করে চীনের বেড়ে ওঠার বিষয়টিতে প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেছেন ট্রাম্প। অন্য কোনও মার্কিন রাজনীতিবিদ এতদিন তা বুঝতেই পারেননি। ট্রাম্পের তত্ত্ব হচ্ছে, মার্কিন মজবুত অর্থনীতি চীনকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করবে। তিনি ট্যুইট করেছেন, ‘তারা হারছে এবং হারবে।
গত বছরের এপ্রিলে চীনের হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান জেডটিই-এর উপর প্রথম আঘাত হেনেছিল আমেরিকা। ওই সময় নিষেধাজ্ঞার চোট সামলাতে না পেরে প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল জেডটিই। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য হল বাজার ও অর্থনীতির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণের জানান দেওয়া এবং চীনকে দাবিয়ে রাখা। তবে জেডটিইর ক্ষেত্রে যে কৌশল কাজে দিয়েছিল, সেটি হুয়েই-র ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। আমেরিকার লক্ষ্য শুধু হুয়েই-র মোবাইল সেট নয়। সারা বিশ্বে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বিস্তারের ক্ষেত্রে মূল যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজে এগিয়ে রয়েছে হুয়েই। ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেটেন্ট আছে হুয়েই-র দখলে। এই জায়গাতেও নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় আমেরিকা।
আমেরিকার অঙ্গুলিহেলনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তাদের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ককে হুয়েই ও জেডটিইমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরে কানাডায় হুয়েইর বড় এক কর্তার আটক হওয়াও আমেরিকার চীনবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধেরই বহিঃপ্রকাশ ছিল। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা হুয়েই-এর বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ এনেছে আমেরিকা। মোট ২৬টি অভিযোগের মধ্যে আছে, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, ব্যাঙ্ক দুর্নীতি এবং নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলি। যদিও সব ক’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছে চীনা সংস্থা হুয়েই। এই মুহূর্তে কানাডায় নজরবন্দি এই সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মেং ওয়াংজু। আমেরিকা কানাডাকে বাধ্য করেছিল ওই মেং ওয়াংজুকে আটক করতে। এই মুহূর্তে পায়ে একটি ডিজিটাল যন্ত্র লাগিয়ে তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। এখন হুয়েই-র কর্তা মেং ওয়াংজুকে নিজের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের চাপে হুয়েই-র অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্সও টেনে ধরেছে গুগল। মাইক্রোসফট উইনডোজ লাইসেন্স নিয়ে নেয় কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। আমেরিকা তার ঘনিষ্ঠ সব মিত্রকে বলছে চীনের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে। রাজনৈতিক স্বার্থে চীনের পণ্য সম্পর্কে নগ্নভাবেই ভীতি ছড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন, এমন অভিযোগ তুলেছে বেজিং। তাঁদের দাবি, চীনা কোম্পানিদের উপর এই মার্কিন জুলুম বন্ধ হোক। তবে শুধু হুয়েই কালো তালিকার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এই তালিকা আরও লম্বা হবে। এতে যুক্ত হবে হাইকেভিশন। চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারি চালানোর কাজে জি জিনপিংয়ের সরকারকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে হাইকেভিশন।
মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্টরা যা পারেননি, ট্রাম্প সেটাই করে দেখিয়েছেন। চীনকে বশে আনতে টুঁটি চেপে ধরেছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়েই-র। ট্রাম্পসমর্থকরা বলছেন, তাঁর নীতিতেই বশ মানবে চীন। বাণিজ্য চুক্তি থেকে লাভবান হবে আমেরিকা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করে বিদেশি শত্রুদের তৈরি যন্ত্রাংশ আমেরিকায় ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আমেরিকা বাণিজ্য দপ্তর তাঁর নির্দেশ অনুসরণ করে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়েইসহ কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এসব প্রতিষ্ঠান আমেরিকায় যন্ত্রাংশ কেনাবেচা করা ও কোনও পরিষেবা দিতে পারবে না। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ট্রাম্পের সমর্থকরা প্রচার করছেন যে, ট্রাম্পই চীনের উপর এতটা কঠোর হতে পারেন এবং পেরেছেন। রোনাল্ড রেগ্যান যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পেরেছিলেন, ট্রাম্পকে এখন তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে, একে তাঁর বিজয়বলা যায়। চীনকে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু, তা সত্ত্বেও অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিপদে পড়বে আমেরিকা নিজেও। ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক সম্প্রতি জানিয়েছে, রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে আগামী পাঁচ বছরে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বিপুল পরিমাণে কমে যেতে পারে। অঙ্কের হিসাবে যা প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আরও এক হিসেবে দেখা গিয়েছে, চীনা প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার হারাতে পারে। চিপ ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের লাইসেন্স ফি বাবদ চীনা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। সারা বিশ্বের অসংখ্য হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদনের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল। এই বিশাল বাজারের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। উদাহরণ হিসেবে অ্যাপলের কথা বলা যায়। এই মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির লাভের এক-পঞ্চমাংশ আসে চীন থেকে। ট্রাম্পের প্রযুক্তি যুদ্ধে অ্যাপলের লাভের অঙ্ক তাই তরতর করে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সবচেয়ে বড় বিপদে পড়তে চলেছে এশিয়ার অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় বলে ট্রাম্পের দেশের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকা এখন তাদের বলছে যে চীনকে বয়কট করতে হবে। ওদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বড় মক্কেল হল চীন। যেমন- তাইওয়ানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টিসিএমসি ও ফক্সকন পড়েছে শাঁখের করাতে। আমেরিকা ও চীন এই দুই দেশেই তাদের মক্কেল আছে। একই অবস্থায় আছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। চীনকে ছেড়ে দিলে তাদের গুনতে হবে বিশাল অঙ্কের লোকসান, আর চীনকে ধরে রাখলে ভ্রু কোঁচকাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। স্মার্টফোন থেকে মেডিক্যাল ডিভাইস, সব সামগ্রীর খুচরো যন্ত্রাংশেরও ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। অন্য দেশের অনেক ব্রান্ডই কার্যত চীন থেকে খুচরো যন্ত্রাংশ নেয়। ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর পুরো সাপ্লাই চেনের অনেকখানি চীনের নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ বিশ্বের অর্থনৈতিক সাপ্লাই চেনেই একটি বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে চলেছে।
প্রশ্ন হল, এর জবাবে কী করবে চীন? ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতিতে পাওয়া বিরল ধাতুর উৎপাদনে অন্য সকলের চেয়ে এগিয়ে চীন। স্মার্টফোন, ব্যাটারি, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে প্রয়োজন হয় এই সব বিরল ধাতু। এগুলোর উৎপাদনের ৯০ শতাংশই চীনের অবদান। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার জবাবে বিরল ধাতুর সরবরাহে রাশ টানতে পারে চীন। সে ক্ষেত্রে পুরো প্রযুক্তি খাত ও সামরিক উৎপাদনেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া চীন এখন চুপিচুপি তার বিকল্প বাজার তৈরিতে ব্যস্ত। তবে চীনের ক্ষোভও গোপন নেই। তাদের এক কূটনীতিবিদ ঝাও লিজিয়ান ট্যুইটারে এও বলে ফেলেছেন, আমেরিকার উচিত হুয়েই-র লোগো ভালো করে দেখা। অ্যাপলকে ঠিক এভাবেই টুকরো টুকরো করা হবে। কাকতালীয় হলেও সত্য, হুয়েইর লোগোকে মনে হয় অ্যাপলের লেগোর কয়েকটি খণ্ডাংশ। আদতে প্রযুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে আমেরিকা, তাতে করে চীনের আত্মনির্ভরশীল হওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই। ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, এভাবেই বিশ্বে আধিপত্য ধরে রাখা যাবে। কিন্তু এই ধাক্কায় যদি সত্যিই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে দৌড়ানো শুরু করে চীন? তখন বিশ্ব বাজারে আমেরিকার আরও বিপদ বাড়বে। শক্তি দেখাতে গিয়ে না আবার আছাড় খেতে হয় ট্রাম্পকে! ফোর্বস ম্যাগাজিন তো বলেই ফেলেছে, ’এসব ট্রাম্পের পাগলামি ছাড়া কিছু নয়।’

অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন


অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন
মৃণালকান্তি দাস

১৯৫৮ সালের ২৯ জুলাই।
ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাক্ট’-এ সই করলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। আনুষ্ঠানিক ভাবে নাসার জন্ম হল আরও দুমাস পর। অক্টোবরের ১ তারিখে। জন্ম হল মানবসভ্যতার আধুনিক ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের। নাসার জন্মের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হল বিল। বলা হল, ‘পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতর ও বাইরে বিমান চালনার সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে গবেষণার জন্যই গড়া হচ্ছে নাসা।ভাবনাটা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ছিল। মানুষ পাঠানো হবে চাঁদে। কিন্তু দুম করে তো আর মানুষ পাঠিয়ে দেওয়া যায় না চাঁদে! তার পিঠটা (সারফেস) ঠিক কেমন, কতটা এবড়োখেবড়ো, তা বুঝতে ১৯৬৪ সালে চাঁদে প্রথম একটি ল্যান্ডারমহাকাশযান পাঠাল নাসা। এই সেই ল্যান্ডারমহাকাশযানের নাম রেঞ্জার-৭। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগেই মার্কিন মহাকাশযানের পিঠে চেপে চাঁদের পিঠের মোট ৪ হাজার ৩১৬টি ছবি তুলেছিল রেঞ্জার-৭। সেই সব ছবি বিশ্লেষণ করে নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চাঁদের পিঠের কোন দিকটায় নামানো হবে মানুষ। কোন দিকে মানুষ নামালে বিপদের আশঙ্কা কম।
ঐতিহাসিক অধ্যায়ের শুরু ১৯৬১ সালে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি একদিন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে ডাকলেন। বললেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক। মহাকাশে যাওয়া প্রথম জীবিত প্রাণী লাইকা। চন্দ্রাভিযানে যাওয়া প্রথম রকেটে ছিল লাল পতাকা। চাঁদের দূরপ্রান্তের ছবি যে ক্যামেরায় তোলা হয়েছে, তা-ও সোভিয়েতের। আগে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণকারীরা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করত। আগামী দশকে মহাকাশ হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। যার নিয়ন্ত্রণে মহাকাশ, পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। কেনেডির এই কথায় লিন্ডন জনসন উপযুক্ত মানুষের খোঁজা শুরু করলেন। একপর্যায়ে পেয়েও গেলেন। তিনি বিজ্ঞানী ভের্নার ফন ব্রাউন। তাঁকে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশ কর্মসূচির গডফাদারবলে অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর জন্য তিনি রকেট বানিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে যোগ দেন নাসায়। তিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে বলেছিলেন, মহাকাশ জয়ের লড়াইয়ে আমেরিকা তখনই বিজয়ী হতে পারবে, যখন তারা চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারবে। মূলত এরপরই শুরু হয় চন্দ্রজয়ের প্রস্তুতি।
১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। আমেরিকার ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টারে সেদিন দমবন্ধ করা উত্তেজনা। অজানার পথে যাত্রা শুরু করলেন তিন দুঃসাহসী অভিযাত্রী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন (বাজ) অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স। লক্ষ্য চন্দ্রজয়। স্যাটার্ন ৫রকেটে চেপে তাঁদের বাহন মহাকাশযান অ্যাপোলো১১। যাত্রা শুরুর পর প্রথম চারদিন পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছিল সবকিছু। কিন্তু চাঁদের বুকে পা রাখার মিনিট বিশেক আগে হঠাৎই পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নভোচারীদের। এরপর একের পর এক আসতে থাকে আরও বিপত্তি। তিন মহাকাশচারীর চন্দ্রজয়ের সাক্ষী হতে গোটা দুনিয়ার নজর তখন টেলিভিশন ও রেডিওতে আটকে। এমন মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে যেন আতঙ্কের স্রোত বইয়ে দেয়। নিয়ন্ত্রণকক্ষ বুঝতে পারে, মহাকাশ যান ইগলের কম্পিউটারব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। কম্পিউটারটি ঠিক সময়ে সাড়া দিতে পারছে না।
এদিকে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় ঈগলের গতিও কমাতে পারছিলেন না আর্মস্ট্রং। তিনি বুঝতে পারেন, চাঁদের বুকে যে জায়গায় তাঁদের অবতরণের কথা, সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরে ছিটকে পড়তে চলেছেন। বাধ্য হয়েই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বন্ধ করে ইগলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেন আর্মস্ট্রং। এরপর অবতরণের নতুন জায়গা খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু চাঁদের পাথুরে পৃষ্ঠে তেমন কোনও জায়গাও পাচ্ছিলেন না। এদিকে ইগলের জ্বালানিও ফুরিয়ে আসছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে যান স্বল্পভাষী আর্মস্ট্রং। অলড্রিন হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘কন্ট্যাক্ট লাইট। অর্থাৎ চাঁদের বুকে অবতরণ করেছে ইগল। এরপরই আর্মস্ট্রং বার্তা পাঠান হিউস্টনে। নিয়ন্ত্রণকক্ষে তখন খুশির জোয়ার। ফিরতি বার্তায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্তা চার্লি ডিউক বলেন, ‘আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ধন্যবাদ তোমাদের, আমরা আবার শ্বাস নিতে পারছি।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই দুই মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের বুকে পা রাখেন। এই অভিযানের কমান্ডার ছিলেন আর্মস্ট্রং। অভিযানের ছবি তোলার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এডউইন অলড্রিন ছিলেন মহাকাশযানের পাইলট। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে এই দু’জন অ্যাপোলো১১ মহাকাশযানের লুনার মডিউল ঈগলে চেপে রওনা হন। মূল মহাকাশযান থেকে যান আরেক নভোচারী মাইকেল কলিন্স। ১৯৫৮-এ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার যে দিন সই করেছিলেন ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যাক্ট’-, তার ১৮ বছর পর চাঁদের মাটিতে প্রথম পা পড়ল মানুষের। ঐতিহাসিক সেই অ্যাপোলো মোমেন্ট। যা নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। নাসার দাবি, ১৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে ২৪-এ চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন আর্মস্ট্রংরা। কিন্তু আদৌ এমনটা ঘটেছিল, নাকি পুরোটাই স্টুডিয়োয় সাজানো? গোড়া থেকেই তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছে রাশিয়া। এখনও তারা প্রশ্ন তোলেচাঁদে পতাকা ওড়ে কীভাবে? ছবিতে এত ছায়াপাত কিসের? চাঁদের মাটিতে ভারী বুটের ছাপই বা পড়ল কী ভাবে? মহাকাশ নিয়ে দুই দেশের প্রতিযোগিতা কোন পর্যায়ে উঠেছিল, এ থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই-ই নয়, অ্যাপোলো-১১ মিশনের উৎক্ষেপের দিন তিনেক আগে, ১৩ জুলাই সোভিয়েত চাঁদের বিভিন্ন এলাকার মাটি খুঁড়ে সংগ্রহ করার ও পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য পাঠায় লুনা-১৫। লুনা-১৫ কিন্তু ঈগলের আগেই চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে এবং ঈগলের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য সোভিয়েত লুনা ১৫-এর পরিকল্পনা আমেরিকাকে আগাম জানিয়ে দেয়। সোভিয়েতের কপাল মন্দ ছিল। চাঁদে অবতরণের সময় যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে লুনার শেষপর্যন্ত আর চাঁদে অবতরণ করা হয়নি, তা বিধ্বস্ত হয়ে চাঁদের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। লুনার এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের মানমন্দিরের রেডিও-টেলিস্কোপটি রের্কড করেছিল। ২০০৯ সালে অ্যাপোলো ১১-র ৪০তম বার্ষিকীর সময় তা প্রকাশ করা হয়। সোভিয়েত যাই প্রচার করুক না কেন, অ্যাপোলো ১১-র সাফল্য আমেরিকাকে মহাশূন্য প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতে নিয়ে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো ইউরি গ্যাগারিনের প্রথম মহাকাশ পরিভ্রমণ যে আত্মশ্লাঘার সৃষ্টি করেছিল, আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের বুকের প্রথম ছাপটি তার অনেকখানিই মসৃণ করে দেয়।
মই বেয়ে লুনার মডিউল ঈগল থেকে চাঁদের বুকে নামতে নামতে নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘একজন মানুষের এই একটি পদক্ষেপ হবে মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রযাত্রা।সেই ছিল চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদচিহ্ন আর মানবজাতির সেদিনের প্রমিথিউস ছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। চাঁদের বুকে নিলের পা ফেলার মাধ্যমে মানুষ চাঁদকে জয় করেছিল। রূপকথার চাঁদ এসেছিল মানবজাতির পদতলে। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সেই সময় চাঁদের বুকে মার্কিন পতাকার ছবিটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক। আমেরিকা চাঁদে তাদের পতাকা উড়িয়ে জানান দিয়েছিল সামনের দিনগুলোতে শুধু দুনিয়া নয়, মহাশূন্যের নিয়ন্ত্রণও তারা নিতে চলেছে। চন্দ্র বিজয়ের পিছনের কারিগরদের অন্যতম নাসার বিজ্ঞানী ক্রিস ক্রাফট বলেছিলেন, ‘১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি যখন আমাদের চাঁদকে জয় করার কথা বলেছিলেন, তখন সেটা ছিল একেবারে অসম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা সম্ভব করেছি, আমেরিকা সেটা সম্ভব করেছে। পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ এবং ফের পৃথিবীতে অবতরণএই মিশনটা সম্পূর্ণ হতে মোট সময় লেগেছিল ৮ দিন ৩ ঘণ্টা এবং ১৮ মিনিট। মানুষের চন্দ্রজয়ের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এই বছর। আক্ষেপ একটাই, বছর সাতেক আগেই মারা গিয়েছেন মিশন কমান্ডার নিল আর্মস্ট্রং। ২০ জুলাই আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশেই নানা আয়োজনে উদ্‌যাপন করা হবে মুহূর্তটিকে। কেনেডি স্পেস সেন্টারও উৎসবের মেজাজে।
চাঁদের বাতাস নেই, কিন্তু সেখানে নাকি একটা ঘ্রাণ আছে। মডিউলে ফেরার পর নিজের হেলমেট খুলে নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘আমরা কেবিনে একটা নতুন ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। পরিষ্কারভাবেই বুঝতে পারছিলাম, এটা আমাদের পোশাকে লেগে থাকা এবং নিয়ে আসা চাঁদের ধূলিকণার ঘ্রাণ।তার কথায় এটা ভেজা ছাইয়ের গন্ধ। আর তার সহযাত্রী বাজ অলড্রিনের মনে হয়েছিল এটা বাজি পোড়ানোর পর বাতাসে যে গন্ধ পাওয়া যায় সে রকম। গত বছর চাঁদে মানুষের প্রথম পা রাখা, সেই অভিযানের ১৯ হাজার ঘণ্টার অডিও টেপ প্রকাশ করেছিল নাসা। মোট ১৯,০০০ ঘণ্টার এই কথোপকথন-কে ডিজিটালাইজড করে নিজেরে অনলাইন আর্কাইভে রেখেছে নাসা। যে কেউ সেই কথোপকথনের রেকর্ড শুনতে পারবেন। তাছাড়া চাঁদ থেকে যা কিছুই পৃথিবীতে আনা হয়েছিল তার সবই আমেরিকা সবাইকে গবেষণা করার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ব্যাগে নমুনা হিসেবে ২১.৫ কিলোগ্রাম চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে ফিরে এসেছিলেন তিন মহাকাশচারী। পরে জানা গিয়েছিল, সেই ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছিল নাসা। তবে ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ মেলে।
চন্দ্র বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে নাসা অ্যাপোলো মিশনের কন্ট্রোল সেন্টারটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সেন্টার থেকেই অ্যাপোলো ১১-এর অভিযান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে এই সেন্টারটিকে নাসা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল। তারপর থেকে এখানে আর কোনও কাজ হয়নি। নাসার উদ্যোগে পাঁচ বছর ধরে এই সেন্টারটি সংস্কারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। দুই বছরের সংস্কার শেষে সাধারণ মানুষের জন্য সেন্টারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কেনেডি স্পেস সেন্টারে ১৭ মিনিটের শো। দেখানো হচ্ছে সে দিনের কাউন্ট ডাউন, ‘স্যাটার্ন ৫’-এর উৎক্ষেপণ, ‘অ্যাপোলো ১১’-এর দুষ্প্রাপ্য সব ছবি। মিউজ়িয়ামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোটা উৎসব বিনামূল্যে দেখতে পাবেন সবাই। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে, ‘অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন। জনসন স্পেস সেন্টারের পরিচালক মার্ক গেয়ার বলেছেন, ‘৫০ বছর আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষ চাঁদে যেতে পারে এবং নিরাপদে দুনিয়ায় ফিরতে পারে সেটা প্রমাণ করা। আর এখন আমাদের লক্ষ্য বসবাসের জন্য চাঁদে ফিরে যাওয়া।
আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গত মার্চেই নতুন চন্দ্রাভিযানের ঘোষণা করেছেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই মার্কিন মহাকাশচারীরা নতুন এই অভিযান সফল করে দেখাবেন বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। অনেকেই বলছেন, চাঁদ আসলে এখানে একটা উপলক্ষ্য। মূল লক্ষ্য, মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার। পেন্সের কথাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ২৬ জানুয়ারি নতুন চন্দ্রাভিযানের কথা ঘোষণা করার সময় চীন ও রাশিয়াকে প্রতিপক্ষআখ্যা দিয়ে পেন্স বলেছিলেন, ‘কোনও ভুল হওয়ার কথা নয় যে, আমরা মহাকাশে আজ লড়াইয়ে অবতীর্ণ, ঠিক যেমনটা ছিল ১৯৬০-এর দশকে।
লড়াইটা এবার শুধু আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যেই নয়, চীনের সঙ্গেও!

দেউলিয়া পাকিস্তানকে বাঁচাতে ইমরানের ‘ডাবল গেম’ শুরু!


দেউলিয়া পাকিস্তানকে বাঁচাতে ইমরানের ‘ডাবল গেম’ শুরু!
মৃণালকান্তি দাস

আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে জঙ্গি সক্রিয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ইমরান। বলেছেন, ‘পনের বছর ধরে পাকিস্তানে সক্রিয় ছিল ৪০টি জঙ্গি সংগঠন। তাদের অনেকেই আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে লড়াই করেছে। কিন্তু এই তথ্য বারবারই আমেরিকার কাছে গোপন করেছে পূর্ববর্তী সরকারগুলো। পাকিস্তানেরও সেই সেময় কিছু করার ছিল না। গোটা পরিস্থিতি পাক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’ আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি শুনে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই।
পূর্বসূরিরা যে ভুল করে গিয়েছেন, সে ভুল আর করতে চান বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইমরান। তাঁর দাবি, ‘আমরা জঙ্গি সংগঠনগুলির মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠানের দখল নিয়েছি। সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ দমনে জোরকদমে চেষ্টা চালাচ্ছে। তালিবানদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছে তারা। ভালো সাড়াও মিলেছে।’ শান্তি ফিরিয়ে আনতে যা যা করা প্রয়োজন তাই করবেন। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে কী ভাবে তাঁরা এগচ্ছেন গোটা প্রক্রিয়াটাই আমেরিকাকে জানাবে পাকিস্তান, এমনটাই দাবি ইমরানের। এই সংবাদ প্রকাশের পর যারা ‘পাকিস্তানকে এতদিন পর বাগে আনা গিয়েছে’ গোছের ভাবনা শুরু করে দিলেন, তারা খেয়ালই করলেন না, ইমরানের আসল উদ্দেশ্য। সব কিছু বলার মাঝে ইমরান কিন্তু মার্কিন সফরে গিয়ে শুনিয়ে এসেছেন, পুলওয়ামা হামলা নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণগোলমালের ফল। ফলে এখনও কাশ্মীরে সন্ত্রাস-দমনে পাক প্রধানমন্ত্রীর তরফে তেমন আন্তরিকতার সম্ভাবনা দেখছেন না ভারতীয় কূটনীতিকরা। জঙ্গিরা রয়েছে বলে যদি মেনেই নিলেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন? প্রশ্নই তুলেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও।
জঙ্গি মদতের প্রশ্নে অনেক আগেই সুর বদল করে ফেলেছিল পাকিস্তান। গত জুনে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর চরম হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর বাজওয়া দাবি করেছিলেন, দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদকে সর্বতোভাবে উপড়ে ফেলতে চেষ্টার কোনও কসুর রাখছেন না তাঁরা। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন তাঁরা। এফএটিএফ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর বিরুদ্ধে আগামী অক্টোবরের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ইসলামাবাদকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। সন্ত্রাসবাদের কারণে বিদেশি বিনিয়োগও মুখ ফিরিয়েছে পাকিস্তান থেকে। ফলে ভয়ঙ্কর চাপ মাথায় নিয়ে আমেরিকা উড়ে গিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
আমেরিকা সফরে শুরুতেই অবশ্য ধাক্কা খেয়েছেন ইমরান। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে মার্কিন কর্তাদের কেউই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। যা প্রথা এবং সৌজন্যের বাইরে। পাক মাটিতে বেড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনগুলির মোকাবিলায় এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে বহু বছর ধরেই আমেরিকা লক্ষ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই জঙ্গি দমনে কড়া হওয়ার জন্য পাক সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করেন ট্রাম্প। বেশ কয়েক বার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে নিরাপত্তা খাতে দেওয়া লক্ষাধিক ডলারের ত্রাণ প্যাকেজ বন্ধ করে দেন গত বছরের গোড়াতেই। এই তিক্ততা কাটিয়ে উঠতেই তিনদিনের মার্কিন সফরে গিয়েছিলেন ইমরান। ত্রাণ প্যাকেজ ফিরিয়ে আনাই ছিল পাক প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র উদ্দেশ্য। ফলে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ইমরান অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানে জঙ্গি সক্রিয়তার কথা। একইসঙ্গে জানিয়ে এসেছেন, তাঁর সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কতটা আগ্রহী। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। ইমরান খান আমেরিকা সফর সেরে যাওয়ার পরেই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি-সহ নানা ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর কথাই ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, সামরিক খাতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে দুদেশে। চুক্তি মোতাবেক, এ বার থেকে অন্তত ৬০টি সংস্থাকে দিয়ে ওই যুদ্ধবিমানগুলির দেখভাল করাবে পেন্টাগন। নয়াদিল্লি মুখ না খুললেও, এই চুক্তিকে তেমন সুনজরে দেখছে না কূটনীতিক মহলের একটা বড় অংশ। তা হলে কি পাকিস্তানের উপর থেকে সেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল? ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েনের প্রেক্ষিতে আমেরিকার এই ঘোষণায় তাই অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। যদিও পেন্টাগনের বক্তব্য, এতে কোনও ভাবেই উপমহাদেশে সামরিক ভারসাম্য নষ্ট হবে না। আর ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নেমে মার্কিন সফরের সাফল্যবর্ণনা করতে গিয়ে ইমরান বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমি যেন বিশ্বকাপ জিতে ফিরলাম। তাহলে এটাও ঠিক যে, ইমরান একটা খেলায় নেমেছেন। কিন্তু কী সেই খেলা?
ইমরান জমানার পাকিস্তান বলে, তাদের ভালো বন্ধু চীন। আবার আমেরিকাও। তাদের যেটুকু প্রভাব প্রতিপত্তি, তার অন্যতম কারণও এই দুই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। অথচ, কে না জানে, চীন ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কটি মধুর নয়। তাই বিরোধপূর্ণ দুই দেশ চীন ও আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পাকিস্তানের অবস্থানকে বিশ্লেষকরা বলছেন ডাবল গেমবা দ্বৈত খেলা। ব্যাপারটি এখন আমেরিকার সঙ্গে প্রেম, আর চীনের সঙ্গে বিয়ের মতো বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও বেজিংকে নিয়ে দ্বৈত খেলায় মেতেছেন ইমরান খান। প্যারিসে নির্বাসিত পাক সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকির কথায়, পাকিস্তান এখন ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পাকিস্তানের খুব প্রয়োজন। আবার পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগের বিষয়টি আঁকড়ে ধরে রাখার ব্যাপারটিও রয়েছে। আমেরিকা এই অঞ্চলে চীনের অগ্রগতি থামাতে চায়। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হোক। কামার জাভেদ বাজওয়া জানেন, আফগানিস্তান প্রশ্নে ইসলামাবাদকে প্রয়োজন ওয়াশিংটনের। আবার আগামী দিনে ইরানের সঙ্গে আমেরিকা যদি কোনও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তবে পাকিস্তান ভাড়াটে রাষ্ট্র হিসেবে পরিষেবা দিতে পারবে। সে ক্ষেত্রেও তাদের পাকিস্তানকে প্রয়োজন। ফলে, আমেরিকা ও চীনকে নিয়ে ইমরান দ্বৈত খেলা শুরু করেছেন। এই ফাঁকে আমেরিকা ও চীন উভয়ের থেকেই সর্বাধিক আর্থিক সুবিধাও আদায় করতে চান ইমরান। আর পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এই খেলার ক্ষেত্রটা কিন্তু ইমরানের পক্ষে।
চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক যে ভালো সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাকিস্তানের বিষয়ে চীনের পক্ষপাতিত্ব যে একটু বেশিই সেকথা রাষ্ট্রসঙ্ঘও ভালো করে জানে। যে কারণেই মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণার সিদ্ধান্তে বারবার ভেটো প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয় পাকিস্তানের সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে ইকোনমিক করিডোর। এই নিয়ে ভারতের আপত্তিও উপেক্ষা করেছে বেজিং। আমেরিকা সফরের আগে গত এপ্রিলে চীনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। চীনের কাছে কার্যত ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল ইমরানকে। ফলে মার্কিন সফরে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে ইমরান যে কিছু একটা করবেন তা বোঝাই গিয়েছিল। এতে একদিকে আমেরিকা খুশি হবে, অন্যদিকে চাপে পড়বে ‘বন্ধু’ চীন। যাকে বলে ডাবল গেম
ইমরান খানকে এখন পাক সাংবাদিকরা কী বলে ডাকেন, জানেন? ইউটার্ন খান!
পাকিস্তানের ৭৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে নোংরা নির্বাচনে জিতে আসা ইমরান খানের নির্বাচনী প্রচারের স্লোগান ছিল নয়া পাকিস্তান’, কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের এক বছর পার হলেও তাঁর নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। তাঁর অনেক প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়েছেন নিজেই। ইমরান জমানায় এইমুহূর্তে পাকিস্তানের অবস্থা কী জানেন? পাক সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকি আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখছেন, গত এক বছরে পাকিস্তানের অর্থনীতির বারোটা বেজে গিয়েছে। দেশের মুদ্রার মান দিনে দিনে পড়েছে এবং মাত্র এক বছরে এর মূল্য ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ইমরান খানকে তাঁর মন্ত্রিপরিষদ রদবদল করতে হয়েছে। পাকিস্তানের আর্থিক সঙ্কটের সমাধান হিসেবে তিনি বছরের পর বছর ধরে যার প্রশংসা করেছিলেন, সেই অর্থমন্ত্রীকেও বরখাস্ত করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় ইমরান খান কোনও বিদেশি ঋণ গ্রহণ ছাড়াই পাকিস্তানের ডুবন্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ, তাঁর সরকার মাত্র এক বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর কোনও আর্থিকবছরে বিদেশি ঋণ নেওয়ার এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত এক বছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও অর্ধেকে নেমেছে। ৩.৩ শতাংশ। গত ৯ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। রেকর্ড তো বটেই।
তাছাড়া পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় এখন তলানিতে। মাত্র ৮০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিত আছে। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে পাকিস্তান দেড় মাসের মতো আমদানি খরচ মেটাতে পারবে। ক্ষমতায় আসার আগেই ইমরান খান জানতেন, প্রধানমন্ত্রী হলে পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে টেনে তোলার কঠিন চাপ নিতে হবে। এসব জেনেও নির্বাচনী প্রচারে আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে এবার সেই সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শুরুতে ভরসা রেখেছিলেন বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর উপর। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সৌদি আরবের কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলার, চীনের কাছ থেকে ২২০ কোটি ডলার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলারও পেয়েছেন ইমরান। ইউএই আরও কিছু অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, পাকিস্তানকে ঋণ-ফাঁদের কূটনীতিতেফেলছে চীন। এত কিছুর পরও বাজেট ঘাটতি মেটানো, আমদানি খরচ মেটানো ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিরাপদ রাখতে পারছে না ইমরানের সরকার। ফলে পাকিস্তান গত বছরের আগস্ট থেকে আইএমএফের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে আবেদন করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে বাঁচাতে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৬০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৬০০ কোটি ডলারের মধ্যে ১ কোটি ডলার দ্রুত পাকিস্তানকে হস্তান্তর করা হবে। বাকি অর্থ আগামী তিন বছরে দেওয়া হবে। শর্ত একটাই। ওই অর্থে চীনের ঋণ মেটানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমশ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান। ফলে আমেরিকার কাছে মাথানত করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না ইমরানের।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়ে এক ঢিলে দুটো পাখি মারতে চেয়েছেন ইমরান। একদিকে, আমেরিকাকে বার্তা দেওয়াও হল যে, ইসলামাবাদ সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রচন্ড ভাবে আগ্রহী। আবার অন্যদিকে, এই বার্তার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ টানারও চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে ইমরানের এই সফর ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের কূটনীতিকে যে গুরুত্বের সুযোগ দিয়েছে, যার পুরো সদ্ব্যবহারই ইসলামাবাদ করতে চাইবে। যদিও পাকিস্তান ও আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। কারণ, এ ধরনের সম্পর্ক সব সময় স্বার্থের উপর নির্ভর করে।

ব্যাঙ্কের রাহুমুক্তি কবে? তাকিয়ে দেশের মানুষ


ব্যাঙ্কের রাহুমুক্তি কবে? তাকিয়ে দেশের মানুষ
নীরব মোদির প্রতারণা কাণ্ড ফিকে হয়নি। পিএনবিতে নীরবের জালিয়াতির অঙ্ক ছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটিরও বেশি। ভুয়ো লেটার অব আন্ডারটেকিং ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল ওই হিরে ব্যবসায়ীর সংস্থা। প্রতারণা কাণ্ডে নীরবের মামা মেহুল চোকসিও সঙ্গী হয়েছিলেন। এই মুহূর্তে নীরব লন্ডনের জেলে বন্দি। আর মেহুল নাগরিকত্ব নিয়েছেন অ্যান্টিগায়। এখনও উদ্ধার করা যায়নি সেই বিপুল টাকা। তার দেড় বছরের মাথায় জানা গেল আরও এক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। জানা গেল, নতুন ঋণ জালিয়াতির শিকার হয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)। গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছিল, ,৮০০ কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের জালিয়াতি হয়েছে। ভূষণ পাওয়ার অ্যান্ড স্টিলকে (বিপিএসএল) যা দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্কের অভিযোগ, সংস্থাটি সেই তহবিলই নয়ছয় করেছে। হিসেবের খাতায় গরমিল করেছে ঋণদাতাদের গোষ্ঠীর কাছ থেকে ধার নেওয়ার জন্য। গোটা বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জানিয়েছিল পিএনবি। এখানেই শেষ নয়!
পিএনবি-র পর জালিয়াতির শিকার হয় পিএমসি! টানা ছ’-সাত বছর ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চোখে ধুলো দিয়ে হিসেবে গরমিল দেখিয়ে গিয়েছে পাঞ্জাব-মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। আরবিআই-এর পাশাপাশি ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কিছু না জানিয়েই হাউজিং ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (এইচডিআইএল)-এর কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণকে নন প্রফিটেবল অ্যাসেট (এনপিএ) হিসেবে দেখাননি ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয় টমাস। আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে রিয়েল এস্টেট সংস্থা এইচডিআইএল। পিএমসি ব্যাঙ্কের কাছে এই সংস্থার দেনা গত কয়েক বছরে বাড়তে বাড়তে প্রায় ৪,৩৫৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যোগসাজশে ৪৪টি ঋণ অ্যাকাউন্টকে ২১,০০০টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে বদলানো হয়। চাপা দেওয়া হয় ঋণ খেলাপের ঘটনাও। কিন্তু আগে থেকে তার বিন্দু-বিসর্গও আঁচ করতে পারেনি আরবিআই। কারণ, বছরের পর বছর ধরে ব্যাঙ্কের এমডি এই সংস্থার অ্যাকাউন্টকে সন্দেহের তালিকায় রাখেননি। বরং আরবিআই-কে ভালো অ্যাকাউন্ট হিসেবেই দেখিয়ে এসেছে। ফলে এইডিআইএল চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। ওই ঋণও ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত শেষ। ফলে সঙ্কট ঘনিয়ে আসে পিএমসি ব্যাঙ্কেও।
পিএমসি ব্যাঙ্কে ৪,৫০০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির জেরে কী হয়েছে জানেন? আর্থিক কেলেঙ্কারিতে চোট খাওয়া পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কোঅপারেটিভ (পিএমসি) ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলায় বিধিনিষেধ বসিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গ্রাহকদের অভিযোগ, তার পর থেকে তাঁদের দুর্দশা শুধুই বেড়েছে। টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের মধ্যে এক রকম আতঙ্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। কেউ জমা টাকা তুলতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন, তো কেউ অস্ত্রোপচারের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে না পেরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। সেই মৃত্যু মিছিল চলছেই। কেউ ছেলেমেয়ের স্কুলের ফি দিতে পারছেন না। কারও আটকে গিয়েছে চিকিৎসা। টাকা তুলতে না পেরে কারও আবার সংসারের খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট আছে যাঁদের, তাঁদের অনেকেরই আশঙ্কা সারা জীবন ধরে জমানো টাকা হয়তো হারাতে হবে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের প্রশ্ন, অডিটে এত বড় আর্থিক নয়ছয় ধরতে পারল না কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? তাতে দেশের মানুষের ব্যাঙ্কের প্রতি ভরসা কমছে। বাড়ছে অবিশ্বাসের আবহও।
সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে একের পর এক প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসার পরে অস্বস্তি বেড়েছে মোদি সরকারের। সেই অস্বস্তি আরও কয়েক দফা বাড়িয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট জানিয়েছে, গত অর্থবর্ষে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে প্রতারণা-জালিয়াতির ঘটনা বেড়েছে আরও অনেকখানি। প্রায় ১৫ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতেই। জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছমাসে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৯৫,৭০০ কোটি টাকার বেশি প্রতারণা হয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতারণার ঘটনা ছুঁয়েছে ৫,৭৪৩টি। সম্প্রতি এই কথা জানিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যেখানে তার আগের বছর ২,৮৮৫টি ঘটনায় নয়ছয়ের অঙ্ক ছিল ৩৮,২৬০ কোটি। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কেন্দ্র বার বার নজরদারিতে জোর দেওয়ার কথা বললেও, প্রতারণা এতখানি বাড়ছে কী করে? কে বা কারা করছে এই প্রতারণা? শীর্ষ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে যে সব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, তার সিংহভাগ জুড়েই আছে ঋণ। এ পোড়া দেশে এ বড় লক্ষ্মীছাড়া সময়!
এখন প্রশ্ন হল, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে আপনার সঞ্চয়ের টাকার কী হবে?
কে না জানে, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে প্রতারণা-জালিয়াতির ঘটনার দায় এসে পড়ছে গ্রাহকদের উপর। পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র সমবায় (পিএমসি) ব্যাঙ্ক ফেল পড়ার পর দেশে ব্যাঙ্কে জমা টাকার উপর কম পরিমাণ বিমা নিয়ে বিতর্ক ফের শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়ে যদি ভারতে কোনও ব্যাঙ্ক ফেল পড়ে, তাহলে কোনও গ্রাহক তাঁর জমা একলক্ষ টাকার বিমা দাবি করতে পারেন। তাঁর জমা যদি এক লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলেও ঊর্ধ্বসীমা ওই এক লক্ষ টাকাই থাকবে। ব্যাঙ্ক ফেল পড়লে এক লক্ষ টাকার বেশি উদ্ধার করার কোনও আইনি উপায় গ্রাহকের কাছে নেই। এই পরিমাণ অর্থ ডিপোজিট ইনশিওরেন্স বলা হয়ে থাকে। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা টাকা ফেরত দেবে ডিপোজিট ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ডিআইসিজিসি)। এই সংস্থা সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মালিকানাধীন ভর্তুকিপ্রাপ্ত সংস্থা।
প্রশ্ন উঠেছে, আরবিআই কেন ইনস্যুরেন্স মানির উর্ধ্বসীমা বাড়াচ্ছে না?
১৯৬৮ সাল থেকে প্রথম এই ইনস্যুরেন্স চালু হয়। তখন ঊর্ধ্বসীমা ছিল পাঁচ হাজার টাকা। ১৯৭০ সালে আইনের সংস্কার হয়। ঊর্ধ্বসীমা পাঁচ হাজার থেকে বেড়ে হয় ১০ হাজার টাকা। এর ছবছর পর ১৯৭৬ সালে ফের আইনের সংস্কার হয়। ১০ হাজার টাকা থেকে ইনস্যুরেন্সের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হয় ২০ হাজার টাকা। অর্থাত্ ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে গ্রাহক সর্বাধিক ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা ফেরত পেতেন। তারপর ১৯৮০ সালে ঊর্ধ্বসীমা ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। আর শেষবার আইন সংস্কার হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। যখন এই ঊর্ধ্বসীমা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করে আরবিআই। কিন্তু তার পর ২৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও নতুন করে আর এই ঊর্ধ্বসীমার সংস্কার করা হয়নি। ফলে গ্রাহকদের ইনস্যুরেন্সের ঊর্ধ্বসীমা একই রয়ে গিয়েছে। আইনে অবশ্য এই ঊর্ধ্বসীমা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। সর্বাধিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করা যেতেই পারে এই ঊর্ধ্বসীমা। যদিও এখনও আরবিআই সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি এখনও। ভয়ঙ্কর এই আতঙ্ক নিয়ে কোথায় যাবেন এদেশের মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ? অন্যদিকে, প্রবীণদের মূল আয় হল ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের সুদ। দুর্ভাগ্যের হল, সুদের হার ক্রমশ কমছে। অন্য দিকে বাড়ছে খরচখরচা। বিপাকে পড়েছেন সুদ-নির্ভর মানুষরা। তাহলে কি বাজারশাসিত এই সমাজে অন্য কেউ আমার-আপনার কথা ভাববে না?
তার উপর সম্প্রতি জল্পনা ছড়িয়েছে, কেন্দ্র নাকি ফের এফআরডিআই বিল আনার কথা ভাবছে। অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকার সময় যে আমানত বিল আনার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র। তাতে প্রস্তাব ছিল, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়ালে গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই তাঁর জমা টাকা ব্যাঙ্ক চাঙ্গা করতে ব্যবহার করা যাবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় শেষে বিলটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, অনাদায়ী বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকা আদায়ের দায়িত্ব কার? ব্যাঙ্কের বোর্ডগুলিরযারা এই ঋণ মঞ্জুর করেছে, সরকারের রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরযাদের তত্ত্বাবধানে ব্যাঙ্কগুলি চলে, সবার উপরে দায়িত্ব সরকারের। এরা কেউই তাদের দায়িত্ব পালন কেন করে না? শিল্পপতিরা বিপুল ঋণ নিয়ে তা মেটাচ্ছেন না কেন? তাদের অজুহাত, শিল্প রুগ্ন, তাই ঋণ অনাদায়ী। বাস্তবে কোনও শিল্পপতিকেই রুগ্ন দেখা যাচ্ছে না। তাদের  মুনাফার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তা ছাড়া কোনও শিল্প রুগ্ন হলে তার দায় কি সাধারণ মানুষের? মালিকরা যখন শতসহস্র কোটি টাকা মুনাফা করে তার ভাগ তো তারা জনগণকে দেয় না! তাহলে তাদের দায় সাধারণ মানুষ নেবে কেন?
এফআরডিআই বিলে প্রস্তাব করা হয়েছিল, আর্থিক সঙ্কটে ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার মুখে থাকলে, আমানতের টাকা গ্রাহকের অনুমতি না নিয়েই বাড়তি সময় আটকে রাখতে পারবে ব্যাঙ্ক। গ্রাহকের সঙ্গে সবরকম চুক্তি অস্বীকার করে জমা টাকার উপর সুদের হার কমাতেও পারবে। এমনকী প্রয়োজনে তা বদলে দিতে পারবে শেয়ার, ডিবেঞ্চার বা বন্ডে। বিরোধীদের তোপ, আসলে এফআরডিআই বিল তথা ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স বিল মানে, ঋণ নেবে ধনকুবেররা, শোধ করবে জনগণ।
দেশে ব্যাঙ্কের এই রাহুমুক্তি কবে? তাকিয়ে দেশের মানুষ।