@saptahikbartaman
সুধীন্দ্র কুলকার্নির কথাগুলি জরুরি...
অবজারভার
রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান তিনি।
সুধীন্দ্র
কুলকার্নি ছিলেন একসময় অটল বিহারি বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতাও।
উপপ্রধানমন্ত্রী আদবানির রাজনৈতিক কৌশলী হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ভারতীয় রাজনীতির
এক বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক তো বটেই। অথচ, নরেন্দ্র মোদি জমানায় তাঁর সঙ্গে দূরত্ব আশমান-জমিন।
আর তাই গেরুয়া শিবিরের চোখে সুধীন্দ্র আজ কখনও ‘নকশালদের সহমর্মী’ আবার কখনও ‘পাক-এজেন্ট’।
হবেই বা
না কেন? তাঁকে আজ প্রশ্ন করলে অকপটে বলেন, বাজপেয়ীর বিজেপির সঙ্গে আজকের বিজেপির
কোনও মিল নেই। ফারাকটা চেখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রথমত, এখন বিজেপিতে
কোনও যৌথ নেতৃত্ব নেই। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলেও কিছু নেই। বাজপেয়ী অত্যন্ত
আকর্ষণীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষও ছিলেন,
ফলে দলটাও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলত। সেই সংস্কৃতি সম্পূর্ণ মুছে
গিয়েছে। আজকের বিজেপিতে কোনও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নেই। এই দল চালাচ্ছেন দুই
ব্যক্তি (নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ) এবং মানুষকে দেখানোর জন্য একজন দলীয় সভাপতি
(জে পি নাড্ডা) আছেন। কোনও বড় ইস্যু নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয় না। নেতৃত্ব
যা বলে, বাকিরা তা শুনতে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, বাজপেয়ী একজন জনপ্রিয় নেতা হলেও তাঁকে ঈশ্বরে পরিণত করেনি বিজেপি। কোষাগারের
অর্থ খরচ করে নরেন্দ্র মোদিকে একজন অবতার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয়ত, এবং সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বাজপেয়ী ও
লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁদের পরের প্রজন্মের নেতাদের তৈরি করেছিলেন। সেই কারণেই তাঁরা
অবসর নেওয়ার পর সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, গোবিন্দচার্য, প্রমোদ মহাজন, এমনকি
নরেন্দ্র মোদির মতো নেতা উঠে এসেছেন। এখন আর সে রকমটা হচ্ছে না। বর্তমান নেতৃত্ব
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করেনি। নরেন্দ্র মোদির পর এক বিরাট শূন্যতা বিজেপির জন্য
অপেক্ষা করছে।
ভারতে
একটা নতুন হিন্দুত্ববাদ তৈরি হচ্ছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইয়েতি নরসিংহানন্দের
মতো সাধুরা। তাঁরা খোলাখুলি সংখ্যালঘুদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এই নতুন
হিন্দুত্ববাদ বিজেপিকে শক্তিশালীই করছে। তাই নয় কি? সুধীন্দ্র
কুলকার্নির জবাব, এসবের কোনও সামাজিক স্বীকৃতি নেই। রাজনৈতিক অনুমোদন আছে। সাধুরা
এসব কথা বলছেন, কারণ, এর একটা রাজনৈতিক
স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে প্রমাণিত হয় না যে সামাজিক স্তরে মানুষ এই
ধর্মান্ধতা মানছেন। আমার ধারণা, ভারতের বড় অংশের হিন্দুরা এই
ধরনের কথাবার্তা সমর্থন করেন না। আবার অন্যদিকে এটা করা হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়কে
প্ররোচিত করতে। সেখানেও এটা লক্ষণীয় যে মুসলিম সম্প্রদায় কিন্তু প্ররোচিত হচ্ছে
না। এটা তাদের বিরাট কৃতিত্ব।
সম্প্রতি
বাংলাদেশের এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুধীন্দ্র বলেছেন, এতকিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা না কমার কারণ, বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প শক্তির অভাব। তবে
মোদির সমর্থকদের একটা বড় অংশ এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মূল্যবৃদ্ধি,
কর্মহীনতা এবং কোভিড নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
তারা এটা প্রকাশ্যে বলছে না। কারণ, একটা বিরাট ভয় রয়েছে,
যেটা ভারতে অতীতে ছিল না।
কিন্তু মোদির
ভারতে বিজেপি তো হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন মানুষকে দেখাতে পেরেছে। সে ক্ষেত্রে
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কেন আপনি পরের প্রজন্মের নেতা বলবেন
না? উত্তরে
সুধীন্দ্র কুলকার্নি বলেছেন, মানুষ তাঁকে মানবে না। রাজনীতিতে অবশ্যই মেরুকরণের
একটা জায়গা রয়েছে। সেটাকে একটা সময় পর্যন্ত কাজেও লাগানো যায়, কিন্তু তারপর মেরুকরণের রাজনীতি আর কাজ করে না। এর কারণ, একটা সময়ের পর মেরুকরণের রাজনীতি সমাজ ও রাজনীতি দুয়েরই অপরিসীম ক্ষতি
করে। এটা অবশ্যই বাস্তব, মেরুকরণের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেই
নরেন্দ্র মোদি সফল হয়েছেন। কিন্তু একটা বড় তফাত আছে। তিনি একজন অত্যন্ত কৌশলী
রাজনীতিবিদ, যেটা আদিত্যনাথ নন। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি
একটা সময়ের পর আর কাজ করে না।
ঘটনাটা
এমন নয় যে, এক দিন সকালে বিজেপি ভাবতে শুরু করল যে এই হিন্দু সমাজকে আরও সম্প্রসারিত
করতে হবে। বরং সঙ্ঘপরিবার ধীরে ধীরে এই কাজ করে চলেছে বহু দিন ধরে। গোধরা কাণ্ডের
পর সে সম্প্রসারণ দেখেছি চোখের সামনে। মোদি-অমিত শাহ আজ উন্নয়নের কথা যতই বলুন,
দলের সাম্রাজ্য বিস্তারের কৌশল তৈরি করছেন সেই উগ্র হিন্দুয়ানার
পথেই। বিজেপির সাম্রাজ্য বিস্তারের কৌশলে তাই দেখছি ভারতীয় ইতিহাসের নতুন
ব্যাখ্যা। এখন এক অখণ্ড হিন্দু পরিবার গড়ার চেষ্টা হচ্ছে যা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি।
এই ভয়ঙ্কর
সময়ে সুধীন্দ্র কুলকার্নির কথাগুলি জরুরি!
No comments:
Post a Comment