নীরবতার
সংস্কৃতি, ভয়ের সংস্কৃতি
কাশ্মীর যেন
‘শান্তির
নিকেতন’। তিন দশকের অন্ধকার পেরিয়ে উপত্যকায় এখন আলোর ঝলকানি।
গত বছর এই অক্টোবরেই বলেছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ মিশ্র।
দেশের প্রাক্তন
বিচারপতি সেদিন বলেছিলেন,
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জন্যই জম্মু-কাশ্মীরে নতুন
যুগের সূচনা হয়েছে। সেই যুগ, রাজ্য দ্বিখণ্ডীকরণ ও সংবিধানের
৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের মধ্য দিয়ে যার শুরু, তা পুরোপুরি অমিত
শাহের মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই সিদ্ধান্ত ছিল ‘ঐতিহাসিক, সাহসী ও যুগান্তকারী।’
অমিত শাহের
বন্দনা ঠিক সেই সময় করা হয়েছিল, যখন উপত্যকার ঘড়ি পিছিয়ে গিয়েছিল বত্রিশটা বছর। ফিরে
এসেছিল ‘টার্গেটেড কিলিং’-এর দিন। আপেল
সংগ্রহ শিকেয় তুলে দলে দলে বিহার-ছত্তিশগড়ের শ্রমিকদের ফিরে যেতে হয়েছিল ভিটেতে। শাহ-বন্দনার
এক সপ্তাহের মধ্যে খুন হয়েছিলেন ১১ জন। সেই সংখ্যা বেড়েছে ক্রমশ। বধ্যভূমিতে পরিণত
হয়েছিল গোটা কাশ্মীর উপত্যকা। তবুও প্রশ্নহীন আনুগত্যের নমুনা পেশ করতে উপত্যকায় ‘শান্তি’
খুঁজে পেয়েছিলেন অরুণ মিশ্র।
আসলে, ২০১৯
সালের ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর জম্মু-কাশ্মীরে কোনটা সত্য-কোনটা অসত্য,
কোনটা রঞ্জিত-কোনটা অতিরঞ্জিত বোঝার কোনও উপায়
আর নেই। কারণ, উপত্যকাজুড়ে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের আর কোনও
চিহ্নই নেই। কে করবে বিরোধিতা? মোদি-অমিত শাহরা বলেছেন, কাশ্মীরে
গণতন্ত্র তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। সুসময় স্রেফ দু’হাত
দূরে। অপেক্ষায়। স্বপ্ন দেখিয়েছেন কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মকেও। বলেছেন, আগের প্রজন্মের মতো আপনাদের আর কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে না। চাকরি দেব। মুখে
হাসি ফোটাব। সোনালি দিন উপহার দেব। ঘটা করে তা প্রচারও হচ্ছে। দেশ-বিদেশকে জানানো
হচ্ছে, কীভাবে বিশ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প একদা উপদ্রুত এই ভূখণ্ডে
রূপায়ণ হচ্ছে। সরকারি এই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ জানাবে কে? তা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার
নামান্তর। ‘কাশ্মীরিয়ৎ’-এর কফিনে শেষ
পেরেকটি পোঁতা হয়ে গিয়েছে কবেই! কাশ্মীরে এখন নীরবতার সংস্কৃতি, ভয়ের সংস্কৃতির বীজ বপন হচ্ছে। সেটাই ভবিষ্যৎ।
যাঁরা
দাবি করেন, সত্তর বছরে দেশ উচ্ছন্নে গিয়েছে, যা কিছু উন্নয়ন গত আট
বছরে এবং তাঁরাই এই কাশ্মীরের রূপকার। সেই মোদি-অমিত শাহের এখন একমাত্র অ্যাজেন্ডা
ভূস্বর্গকে ‘আবদুল্লা-মুফতি-গান্ধীমুক্ত’ করা। পরোক্ষে সেই কাজ করে চলেছে ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’। কারও কোনও ওজর-আপত্তি ধোপে টিকছে না। লক্ষ্য, হিন্দুত্ববাদের প্লাবন
ঘটিয়ে ক্রমে কাশ্মীরের ‘ভারতীয়করণ’।
কিন্তু এভাবে কি কাশ্মীরিদের দেশের মূল স্রোতে ফেরানো যায়?
খোঁজ নিন,
দেশের কোথাও না কোথাও কাশ্মীরি শাল-বিক্রেতারা লুণ্ঠিত হচ্ছেন, কোথাও ভারতমাতা ও
রামের নামে জয়ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে— তাঁরা
কাশ্মীরি এবং মুসলিম। হিন্দু পণ্ডিতদের তাঁরাই পিটিয়ে ঘরছাড়া করেছেন। কেন্দ্রীয়
গোয়েন্দারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানিয়েছিল, ‘দ্য কাশ্মীর
ফাইলস’ সিনেমা রিলিজের পর কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি হিন্দু
ভারতীয়দের একাংশের মনোভাব আরও কঠোর হয়েছে। কাশ্মীরের দুর্দশার জন্য কারা দায়ী,
কীভাবে দায়ী, কোন রাজনীতির বোড়ে হয়েছে
উপত্যকা, সেসব ‘পূর্ণ সত্য’ এই সিনেমায় ঠাঁই পায়নি। এই উপাখ্যান রচনার উদ্দেশ্য উগ্র-হিন্দুত্ববাদের
পালে বাতাস জোগানো। অনেক হিন্দু পরিবারের কাছেই এই সিনেমা ক্যাথারসিস ঘটাবে,
যন্ত্রণা দেবে— এটাই দস্তুর। নির্মাতার সেই লক্ষ্য আঠারো আনা সফল।
তর্কাতীতভাবে ‘সত্য’ এটাই। নইলে
বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে কর মকুবের এমন ধুম দেখা যেত না। লক্ষ্মীর কৃপাধন্য হওয়ার
পাশাপাশি পরিচালক নিজেকে শাসকপ্রিয়ও করে তুলেছেন। তাঁকে মাথায় তুলে নাচানাচি তারই
প্রমাণ। গেরুয়া শিবির চায় কাশ্মীর ফাইলস জাতীয় মন্দ ইতিহাসকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক
স্বার্থ গুছিয়ে নিতে। বলেছিলেন, সোপিয়ানের আপেল ব্যবসায়ী রশিদ আহমেদ।
২০০৫ সাল।
‘দ্য
কাশ্মীর ফাইলস’ তখন কোথায়? মুক্তি পেয়েছিল
‘পারজানিয়া’। ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গায়
এক পার্শি পরিবারের সন্তান হারানোর রক্তাক্ত স্মৃতি সিনেমার মধ্য দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড়
করে দিয়েছিল। আমেদাবাদে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগে, পরিচালক
রাহুল ঢোলাকিয়াকে ‘মাল্টিপ্লেক্স থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন’
তলব এবং সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, স্থানীয় বজরং
দলের নেতা বাবু বজরঙ্গি ‘অনুমতি’ দিলে
তবেই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটি দেখানো যাবে! গুজরাতের তৎকালীন সরকার এই ঝামেলায়
কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে, সিনেমাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া
ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না ঢোলাকিয়ার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি ‘সত্য’ উদ্ঘাটনের জন্য ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং
তাঁর দলের সাংসদদের ছবিটি দেখতে উৎসাহিত করেছেন, সেই তিনিই
ছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে এই নেতারা এবং তাঁদের পক্ষপাতদুষ্ট
স্তাবক দল কোনওদিনই ইতিহাসের তেতো সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না।
নরেন্দ্র
মোদির ‘নতুন’ ভারতের প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র প্রচলিত ‘ইসলামোফোবিক’ ঘৃণার রাজনীতিকেই উসকে দিতে চায়,
যা ইতিমধ্যে গোটা দেশের সমাজকে দ্রুত গ্রাস করছে। স্বাভাবিকভাবেই ‘জঙ্গি মানেই মুসলিম’ এই আখ্যান লেপটে গিয়েছে
ভূস্বর্গের মাটিতেও। মেরুকরণের ব্যাপারে ঐতিহাসিক নির্ভুলতা অন্বেষণের সময় কোথায়? ইসলামি
চরমপন্থার উচ্চকিত জোয়ার এবং ‘হিন্দু জাগরণ’-এর মাঝে গোত্তা খেয়ে একটা গোটা প্রজন্ম যেন ‘অপর’
করার ভাবনাতেই মগ্ন। অপরকে ভয় এবং ঘৃণার চোখে দেখতেই অভ্যস্ত। অতএব,
সেনাবাহিনীর হাতে কাশ্মীরকে ছেড়ে দেওয়া। ‘কমপ্লিট ইমিউনিটি
ফর দি আর্মি’। এটাই কাশ্মীরের ‘নিউ
নর্মাল’।
কাশ্মীর
নিয়ে ভারত কী ভাবে,
আর ভারত নিয়ে কাশ্মীর কী ভাবে, এই আলোচনা এখনও
এ দেশে ঠিকমতো শুরুই হয়নি। সেই ’৯০ সাল থেকে বছর বছর সেনা
অত্যাচারের অভিযোগে উপত্যকা তোলপাড় হয়েছে। গাওয়াকাদাল, হান্ডোয়ারা,
সোপোর, বিজবেহরা, কুপওয়ারা—
অগুনতি অভিযোগ। এমন অভিযোগও প্রমাণিত, পদোন্নতির অদম্য তাড়নায়
নিরপরাধ কাশ্মীরিদের হত্যার পর ‘জঙ্গি’ তকমা সাঁটা হয়েছে। কেউ ‘ফেক এনকাউন্টার’-এ, কেউ সেনা অত্যাচারে, কেউ
পুলিসের হেফাজতে, কেউ অতর্কিতে ছোড়া গ্রেনেডে, কেউ জঙ্গি হানায়, কত-শত স্রেফ বেপাত্তা! কাশ্মীরি
পণ্ডিতদের দুর্দশা যতটা ‘সত্য’, কাশ্মীরি
মুসলমানদের দুর্দশাও ততটাই। ‘নফরত ফয়লানা বহত আসান হ্যায়,
প্যায়ার বাটনা মুশকিল’। সুপারহিট ফিল্ম ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর সেই সাড়া জাগানো লাইনের সারবত্তা
টের পাওয়া যায় কাশ্মীরের মাটিতে দাঁড়ালেই। সত্যই তো, হিংসা ছড়ানো খুব সহজ কাজ,
কিন্তু ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়াটাই চাপের...
কাশ্মীরের ক্রমাবনতির দায় কেউ ঝেড়ে ফেলতে পারে না। একদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত, অন্যদিকে কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতাসীনদের অনুসৃত নীতি, আমলাশাহি, সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনী কিংবা পুলিস-গোয়েন্দা প্রত্যেকে নিজের মতো করে ‘কাশ্মীর’ নামে গিনিপিগকে হিংস্র পশুতে পরিণত করেছে। যে-রাজ্য আটের দশকের শেষার্ধ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থেই ভূস্বর্গ ছিল। যেখানকার মানুষ ছিল শান্তিপ্রিয়, ঘরকুনো, অলস ও আয়েশি। খুন-খারাপির ধারকাছ দিয়েও যাদের চলাফেরা ছিল না। রাতারাতি কীভাবে তারা রক্তের হোলিতে মত্ত হয়ে ওঠে?
গোটা দেশে
হিজাব, হালাল, আজান বিতর্ক যত তীব্র হচ্ছে, ধর্মগুরুরা যত জোরে গণহত্যার হাঁক পাড়ছেন, ততই তীব্র
হচ্ছে ধর্মীয় বিভাজন এবং গভীর হচ্ছে সাম্প্রদায়িক ফাটল। কাশ্মীর উপত্যকাতেও সেই
অনুরণন পরিলক্ষিত। অনুকূল পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতির পরিবেশ তৈরি কীভাবে
সম্ভব? কে করবেন লগ্নি, কিংবা ব্যবসা, যদি
একদিকে সেনাবাহিনীর চাপ ও অন্যদিকে উগ্রপন্থী হামলা অব্যাহত থাকে? কোনও অঞ্চলের যুবশক্তির আস্থা হারিয়ে ফেললে তাকে আর উন্নয়ন-কাজে ফিরিয়ে
আনা সহজ নয়। এ সবই প্রধানমন্ত্রী জানেন, কিন্তু তবু তাঁকে
রাজনীতির প্রয়োজনেই শূন্যগর্ভ ঘোষণা চালিয়ে যেতে হয়।
কাশ্মীরে পর্যটকদের
ঢল যে স্বাভাবিকতার নমুনা নয়, কবুল না করলেও দেশের সরকার তা বোঝে। নিরাপত্তায়
ছিটেফোঁটা ঢিলেমিতে তাই তারা রাজি নয়। ‘স্বাভাবিক’ কাশ্মীর আজও তাই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি। প্রশ্ন হল, অবশিষ্ট ভারত
স্বাভাবিক না হলে কাশ্মীর কি স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারে? সংখ্যালঘুর
প্রতি ‘বৈষম্য’-র যে ছবি জ্বলজ্বলে,
যার উল্লেখ সরকারকে ক্ষিপ্ত করে, সেই
মানসিকতার বদল না হলে কাশ্মীর কী করে স্বাভাবিক হবে?
কে না
জানে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হানা বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোলযোগ চিরকালই হাত ধরে
পাশাপাশি চলেছে। যখনই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের, কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে
আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার চেষ্টা হয়েছে,
তখনই অতর্কিত ভাবে কেঁপে উঠেছে উপত্যকা। দাম দিয়েছেন উপত্যকার
বিপন্ন সাধারণ মানুষ। এই ভাবেই হয়তো কাশ্মীরি মানুষের নিরাপত্তা বারবার বিনষ্ট হবে,
ভারতীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমতার দাবি বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ওদিকে গোয়েন্দা-জঙ্গি-বিচ্ছিন্নতাবাদীর দুষ্টচক্র যেমন বহাল তবিয়তে ছিল, তেমনই থাকবে। কাশ্মীরের ভাগ্যে যা-ই থাকুক, একের পর
এক বালাকোট কিংবা পুলওয়ামার ঘটনা হয়তো ঘটেই চলবে। লোকসভা ভোটের আগে এমন আশঙ্কাও তাড়া
করছে ভূস্বর্গকে।
এটা যেন স্থায়ী
নকশা— যার ক্ষয়ও নেই, লয়ও নেই। নকশাটি অবশ্য সুপরিচিত!
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট থেকে পুরোপুরি বদলে গিয়েছে কাশ্মীর। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংবিধানের ৩৫এ-ও বাতিল করা করা হয়েছে। রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে আপাতত জম্মু ও কাশ্মীর হল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখ আলাদা হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা আসন পুনর্ঘটিত হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন এখনও হয়নি। কবে হবে, সেই বিষয়ে কোনও ধারণা নেই কারও। এই সবের মাঝেও অবশ্য নাশকতা জারি থেকেছে। তবে হয়ত আগের থেকে অনেকটাই কম হয়েছে জঙ্গি হামলা। তারণ সেনা, আধাসেনা মোতায়েন করে উপত্যকাকে দুর্গে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর এই আবহে এবার কাশ্মীর নিয়ে বড় মন্তব্য করে বসলেন ভারতের প্রাক্তন 'র' প্রধান অমরজিৎ সিং দৌলত।
ReplyDeleteদৌলতের কথায়, মোদী শরকারের বাহুবল ও সেনা মোায়েনের ফলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি 'ভারত-বোধ' হারিয়ে ফেলেছে কাশ্মীর। প্রাক্তন 'র' প্রধানের কথায়, কাশ্মীরের প্রয়োজন 'স্নেহের ছোঁয়া'। নিজের বই 'অ্যা লাইফ ইন দ্য শ্যাডোস' নিয়ে এক আলোচনা সভায় দৌলত বলেন, 'শ্রীনগরের লালচকে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে উপত্যকায় ভারতের ধারণা ফিরিয়ে এনেছেন রাহুল গান্ধী।' উল্লেখ্য, এর আগে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রার সময় দৌলত রাহুল গান্ধীর পাশে হেঁটেছিলেন। যার জেরে বিজেপির তরফে তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ শানানো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৯০-এর দশকে যখন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকা থেকে বলপূর্বক তাড়ানো হচ্ছিল, সেই সময় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-তে কাশ্মীর গ্রুপের প্রধান ছিলেন দৌলত। এহেন দৌলত কাশ্মীর প্রসঙ্গে সরকারের মনোভাব নিয়ে নিজের 'অসন্তোষ'কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সরকারের বাহুবলী নীতি সফল হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ কমছে। তবে কাশ্মীর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভারত-বোধ।' রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'লালচকে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করার পিছনে রাহুল গান্ধীর যে উদ্দেশ্যই থেকে থাকুক না কেন, বিগত বেশ কয়েক বছরে এই প্রথম কাশ্মীরে ভারত-বোধকে তুলে ধরা হল।' এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাঁর অনুযোগ, 'জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। তবে সেটা কবে করা হবে, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট তারিখ বলা হচ্ছে না।' প্রাক্তন 'র' কর্তা জোর গলায় বলেন, 'আমি নরেন্দ্র মোদীকে আশ্বাস দিতে পারি যে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হলে তিনি শ্রীনগরে এসে কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই খোলা জিপে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।' তিনি বলেন, 'কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।' অবশ্য তিনি এও বলেন, 'কাশ্মীক ইস্যুর সমাধান সূত্র হয়ত কখনও বেরিয়ে আসবে না। তবে কাশ্মীরের স্নেহের স্পর্ষের প্রয়োজন রয়েছে এখন।'