@saptahikbartaman
কেউ তাঁকে
ভোলেনি। তা-ই যেন বারবার জানান দিতে আসা।
আজও ব্রিটেনের
জনপ্রিয় যুবরানিকে মনে রেখে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বহু মানুষ। রেখে যান ফুলের স্তবক, মোমের আলো। ডায়ানার
মৃত্যুর ২৫ বছর পূর্তিতে এটাই ছিল কেনসিংটন প্যালেসের গেটের ছবি।
১৯৯৭
সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল যুবরানির প্রাণ। তারপর
থেকে মানুষের কাছে কেনসিংটন প্যালেস আর তার চারপাশের বাগানটাই হয়ে উঠেছে ডায়ানার
স্মৃতির প্রতীক। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ‘সাম্রাজ্যে’ বহু
প্রেম সংক্রান্ত তুমুল বিতর্ক, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে
তাঁর সম্পর্কের অসম্ভব টানাপড়েন সত্ত্বেও জনমানসে যুবরানি ডায়ানার ভাবমূর্তি
এতটুকু টাল খায়নি। উল্টে, দিনে দিনে প্রচারের আলো থেকে
অনেকটা দূরে সরে যেতে হয়েছে ডায়ানার প্রাক্তন স্বামী যুবরাজ চার্লসকে। শুধু যুবরাজ
নন, ব্রিটিশ আমজনতা কখনওই ভালো চোখে দেখেনি চার্লসের স্ত্রী
ক্যামিলাকেও। তারা তাঁকে যুবরানি হিসেবে ভাবেওনি।
অথচ, রানির
দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী বড় ছেলে সেই যুবরাজ চার্লসই হয়েছেন
ইংল্যান্ড-সহ ১৫টি কমনওয়েলথ দেশের রাজা। ‘কুইন কনসর্ট’ হয়েছেন
তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা। তাঁর মাথায় আজ রানির ‘খেতাব’। ইতিহাসের কুৎসিত পরিণতি হয়তো একেই বলে!
গোটা
দুনিয়া জানে, দিনের পর দিন তাঁকে কীভাবে ঠকানো হয়েছিল। বলে গিয়েছেন ডায়ানা নিজেই। ‘ক্যামিলা আমাকে
বলল ও চার্লসের সঙ্গে শিকারে যেতে চায়। আমি কিছু না বুঝেই ওদের অনুমতি দিয়েছিলাম।
ক্যামিলাকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলাম। ভাবিনি পরে আমাকে ঠকতে হবে।
...একদিন একটি পার্সেল খুলে দেখি তার মধ্যে রয়েছে একটা ব্রেসলেট। শুনি চার্লস সেটা
উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছিলেন ওঁর প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলসকে। সেটা দেখেই আমি
পুরোপুরি ভেঙে পড়ি। ও (চার্লস) যেন আমার মাথাটাই সেদিন কেটে ফেলেছিল। এত রেগে
গিয়েছিলাম সেদিন। কতটা ঠকে গিয়েছি ভেবে ঠান্ডায় যেন জমে গিয়েছিলাম। অবশ হয়ে
পড়েছিলাম।’
১৯৭১-এ
চার্লস ও ক্যামিলার দেখা হয়। লুসিয়া স্যান্টা ক্রুজ নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁদের
পরিচয়। খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথার সঙ্গে
মাঝে মধ্যেই তাঁরা দেখা করতেন। দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। দু’বছর ধরে
ক্যামিলার সঙ্গে গভীর প্রেম থাকা সত্ত্বেও ১৯৮১-র ২৯ জুলাই সুন্দরী ডায়ানাকেই বিয়ে
করেছিলেন প্রিন্স চার্লস। অন্যদিকে, ক্যামিলাও বিয়ে করে
ফেলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে।
রয়্যাল
ফ্যামিলির জীবনীকার পেনি জুনোর ‘দ্য ডাচেস: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইটিতে
লিখেছেন, ক্যামিলাকে বোঝানো হয়েছিল, বাকিংহাম
প্যালেসের যুবরাজ তথা লর্ড মাউন্টব্যাটনের ভাইপোকে বিয়ে করার মতো অভিজাত পরিবারের
মেয়ে তিনি নন। প্রশ্ন উঠতে পারে তাঁর কুমারিত্ব নিয়েও! সব মিলিয়ে প্রিন্স চার্লসকে
নিজের জীবন থেকে সরিয়ে ফেলাই সে সময় ঠিক মনে করেছিলেন ক্যামিলা। বহু নারী সঙ্গে
অভ্যস্ত মেজর অ্যান্ড্রু পার্কার বোলসকে সব জেনেশুনেও বিয়ে করে ফেলেন ক্যামিলা।
চার্লস-ডায়ানার
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ক্যামিলাও। ক্যামিলার উপস্থিতি নাকি ডায়ানার অস্বস্তি
বাড়িয়েছিল। ক্যামিলার ছায়া নাকি তাড়া করেছিল হানিমুনেও। চার্লসকে বিশ্বাস করতে
পারতেন না। ১৯৯৪ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে চার্লস প্রথম
ক্যামিলার সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন। এরপরেই ক্যামিলার
সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যান তাঁর স্বামী অ্যান্ড্রু পার্কার। এক বছর পর একটি
বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেন ডায়ানাও। জানান, জেমস হিউইটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা।
ডায়ানাকে ঘোড়া চালানো শেখাতেন তিনি। সেখানে চার্লসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির
ইঙ্গিতও দেন ডায়ানা। নিজের দাম্পত্য সম্পর্কে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘এই বিয়েতে দু’জন নন, তিনজন
আছেন। তাই ভিড় একটু বেশিই।’ শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালে
বিবাহ-বিচ্ছেদ। ডায়ানা নামের পাশ থেকে হারিয়ে যায় ‘হার
রয়্যাল হাইনেস’ সম্বোধন। সিংহাসনের উত্তরাধিকারীর মা হিসেবে
তিনি রয়ে যান শুধুই ‘প্রিন্সেস অব ওয়েলস’ হয়ে। পরের বছর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ডায়ানার। প্রাক্তন স্ত্রীর মৃত্যুর
পর অবশ্য প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যামিলার কাছেই ফিরে যান প্রিন্স চার্লস। প্রায় ন’বছর পর ক্যামিলা পার্কারকে বিয়ে করেন প্রিন্স অব ওয়েলস। চালর্স-ডায়ানার
বিয়ের ব্যর্থতা এবং শেষমেশ ডায়ানার ওই পরিণতির জন্য আমজনতা আঙুল তোলেন যুবরাজের
দিকেই।
রাজ
সম্বোধন নিয়ে মোহ ছিল না ডায়ানার। শোনা যায়, রানির ইচ্ছে ছিল ডায়ানা বিচ্ছেদের পরেও ‘হার রয়্যাল হাইনেস’ ব্যবহার করুক। কিন্তু যুবরাজ
চার্লস সেটা চাননি। প্রিন্স উইলিয়াম নাকি মাকে বলেছিলেন, তিনি
যখন রাজা হবেন, হারিয়ে যাওয়া ‘রয়্যাল
হাইনেস’ উপাধি তাঁকে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু সে সুযোগ আর দেননি
ডায়ানা।
তবুও কেনসিংটন
প্যালেসের গেটে জমে থাকা ফুলের স্তূপ যুবরানি বলতে একজনকেই জানে— লেডি ডায়ানা!
No comments:
Post a Comment