Thursday, February 23, 2023

 @saptahikbartaman

‘স্পেয়ার’ হ্যারির জীবন!

নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’।

বিতর্ক বইটির নামেও। রাজকুমারের নিজের বয়ানে, রাজপরিবারের প্রথম সন্তান হচ্ছেন এয়ারবা উত্তরাধিকারী, যাঁর জন্য সংরক্ষিত থাকে সিংহাসন। আর বাকি সন্তানরা স্পেয়ারবা বাড়তি। অর্থাৎ উপস্থিত থাকা ছাড়া যাঁদের কোনও কাজে লাগে না। তিনি নিজেও সেই রকমই এক স্পেয়ারবা বাড়তি, লিখেছেন হ্যারি। আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন স্পেয়ারহওয়ার নানা সমস্যার কথা। হ্যারির এই বই নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে রাজপরিবার।

হবেই বা না কেন? বেলাগাম জীবনযাপনের নিরন্তর অভিযোগ থেকে স্ত্রী মেগানকে নিয়ে রাজবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। তিনি ব্রিটেনের রাজপরিবারের অচলায়তন ভেঙে দেওয়া বজ্রনির্ঘোষ, কারও কাছে তিনি বেয়াদপ, যিনি মানেন না কোনও নিয়ম। নিজের বাবা রাজা তৃতীয় চার্লস, মা প্রিন্সেস ডায়ানা, ভাই উইলিয়াম, মেগানের সঙ্গে বিয়ে থেকে শুরু করে রাজপরিবারের গোপন আর চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে এই বই। যে বই জানাচ্ছে, চার্লস-ক্যামিলার বিয়ে হোক চাননি হ্যারি-উইলিয়াম। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, সৎমা হিসেবে ক্যামিলা খুব খারাপ হবেন। হ্যারি লিখেছেন, ক্যামিলাকে বিয়ে করতে বাবা চার্লসকে কাতর অনুরোধ করেছিলেন তিনি ও তাঁর বড় দাদা উইলিয়াম। এমনকি বিয়ের আগে তাঁরা ক্যামিলার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। তবে বাবার সুখের কথা চিন্তা করে তাঁরা একসময় ক্যামিলাকে মেনে নেন।

সেই প্রিন্স হ্যারি বই লিখবেন, তাতে মা ডায়ানা জড়িয়ে থাকবে তা তো স্বাভাবিক। আত্মজীবনী স্পেয়ার জুড়ে প্রিন্স হ্যারি তাঁর জীবনে মা ডায়ানা না থাকার কষ্টের কথা বলেছেন। পাঠককে তাঁর মায়ের গাড়ি দুর্ঘটনার দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন হ্যারি। লিখেছেন, বাবা চার্লসই তাঁর কাছে মায়ের দুর্ঘটনার খবর প্রথম জানান। শুনেই ভেঙে পড়েছিলেন প্রিন্স হ্যারি। কিন্তু ওই রকম একটি কঠিন মুহূর্তে তাঁকে একবারের জন্যও জড়িয়ে ধরেননি চার্লস। মায়ের মৃত্যুর পর মাত্র একবার কেঁদেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। দেহ সমাহিত করার সময়। কেনসিংটন প্যালেসে সেদিন ফুল ছড়ানো রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে হাঁটার সময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিল। হ্যারি বলছেন, ‘আমাদের মায়ের কাছে তখন ৫০ হাজার ফুলের তোড়া। আমরা সেখানে মানুষের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলাম...। যাঁদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলাম, তাঁদের হাত তখন ভেজা। চোখের জলে তাঁদের হাত ভিজে গিয়েছিল। বুঝেছিলাম, সবাই মায়ের কত কাছের মানুষ ছিলেন।

হ্যারি লিখেছেন, ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত মা ডায়ানার মৃত্যুর শোক কাটানোর উপায় খুঁজতে তিনি অপার্থিব ক্ষমতা’-এর অধিকারী এক মহিলার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। হ্যারির বয়স তখন ১২। ওই অলৌকিক ক্ষমতাশালী মহিলা হ্যারিকে বলেছিলেন, তুমি এমন জীবন-যাপন করছ যেটি তিনি পারেননি। তুমি এমন জীবন-যাপন করছ যেটি তোমার মা চেয়েছিলেন।

বাবার গল্পের স্মৃতিচারণা করে হ্যারি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, চার্লস তাঁকে একবার বলেছিলেন, ‘আমি যে তোমার আসল বাবা কি না, কে জানে? সম্ভবত তোমার বাবা আসলে ব্রডমুরেই রয়েছেন! বাবার এমন কথাকে তেতো স্বাদেরকৌতুক হিসেবেই দেখেছেন হ্যারি। বাবা তো হাসি থামাতেই পারছিলেন না। যদিও সেটা মজা পাওয়ার মতো কোনও কৌতুক ছিল না। কারণ, ঠিক তখনই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল আমার প্রকৃত বাবা আমার মায়ের প্রাক্তন প্রেমিকাদের একজন। মেজর জেমস হিউইট। হিউইট ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অশ্বারোহী দলের অফিসার ছিলেন।

হ্যারি জানিয়েছেন, যখন তাঁর বয়স ১৭, তখন কেউ একজন তাঁর হাতে কোকেন তুলে দিয়েছিলেন। এরপর আরও কয়েকবার কোকেন সেবনের কথা স্বীকার করেছেন হ্যারি। যদিও এটা তাঁর ভালো লাগেনি। ইটন কলেজে পড়া অবস্থায় কলেজের বাথরুমে প্রথম গাঁজা সেবন করেছিলেন। একবার ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে ম্যাজিক মাশরুমও খেয়ে দেখেছিলেন। তার থেকেও আরও খারাপ লেগেছে ওই বয়সে তাঁর যৌনসম্পর্ক। বইয়ে সে কথা গোপন করেননি। লিখেছেন, ১৭ বছর বয়সে তাঁর চেয়ে বড় এক মহিলার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক হয়েছিলেন। কিন্তু এটা তাঁর কাছে অপমানজনকছিল। কারণ, ওই মহিলা তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করছিলেন, যেন হ্যারি তাঁর অবৈধ প্রেমিক

আত্মজীবনীতে প্রিন্স হ্যারি লিখেছেন, অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে বিয়ে করায় দুই ভাইয়ের সম্পর্ক ভেঙে যায়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে এই সংঘাত চরম আকার নেয়। হ্যারি লেখেন, উইলিয়াম একদিন আমার কলার চেপে ধরে, গলার চেন ছিঁড়ে ফেলে এবং ...মেঝেতে ছিটকে ফেলে দেয়। আর যাঁকে ঘিরে এত লড়াই, সেই মেগানই তাঁকে গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করেছে। অকপটে বলেছেন প্রিন্স হ্যারি। সমালোচক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, ব্রিটেনে রাজপরিবারের কঠোর নিয়মকানুনের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন মা ডায়ানাও। নিজের আচরণে বার বার ইঙ্গিত দিতেন দ্রোহের। ছোট ছেলে বরাবরই হেঁটেছেন সেই পথে। অভিযোগ, রাজপরিবার তো বটেই, গোটা ব্রিটেনের সম্মানই নাকি ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তবে হ্যারি মানেই তো শিরোনাম।

 

No comments:

Post a Comment