Thursday, February 23, 2023

 @saptahikbartaman

যে লিগ্যাসি বইতে হবে ক্যামিলাকে

বিবিসিকে দেওয়া ইন্টারভিউয়ে মনে আটকে রাখা গুমোট সত্যটাকে বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন প্রিন্সেস!

বলেছিলেন, ‘ওয়েল, দেয়ার ওয়াজ থ্রি অব আস ইন দিস ম্যারেজ, সো ইট ওয়াজ আ বিট ক্রাউডেড। এই বিয়েতে আসলে মানুষ আমরা তিনজন, এজন্যই একটু জনাকীর্ণ আর কী। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এমনিতে সন্তানদের ব্যক্তিগত কোনও সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারের পর আর চুপ থাকতে পারেননি। দু’জনকে আলাদা করে চিঠি পাঠিয়ে লিখেছিলেন, ‘তোমাদের সামনে শুধু একটা রাস্তাই খোলা— বিচ্ছেদ। প্রিন্সেস না হয়েও রাজপরিবারের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রিন্সেস আর কেউ নন— ডায়ানা। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ পূর্ণ রানি হতেন তিনিই। কিন্তু সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল ১৯৯৫ সালেই।

ক্যামিলা পার্কার ও ব্রিটিশ সেনা অফিসার অ্যান্ড্রু পার্কারের প্রথম দেখা ১৯৬৫ সালে। ক্যামিলা তখন ১৮। দু’জনের সম্পর্ক ছিল অনেকটা অন অ্যান্ড অফ। ক্যারোলিন গ্রাহামের ক্যামিলা অ্যান্ড চার্লস: দ্য লাভ স্টোরিবইতে বলা হয়েছে, ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অ্যান্ড্রু একাধিক প্রেম করেছেন। একসময় রাজকন্যা অ্যানের সঙ্গেও প্রেম শুরু করেন অ্যান্ড্রু। রাজকন্যা অ্যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একমাত্র কন্যা। এটা দেখে প্রতিশোধপরায়ণহয়ে রানির বড় ছেলে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন ক্যামিলা। ১৯৭০ সালে ক্যামিলাকে প্রথম দেখেছিলেন চার্লস। প্রথম দেখায় আত্মবিশ্বাসী ক্যামিলার প্রেমে পড়েন চার্লস। প্রায় ১৮ মাস চলেছিল তাঁদের চুটিয়ে প্রেম।

চার্লস প্রেমিকা ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্কের নাম দিয়েছিলেন গভীর, শুদ্ধ বন্ধুত্ব। ডায়ানাও শুরুতে ক্যামিলাকে সেভাবেই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু উইমেনস ইন্সটিঙ্কট’–এ ধরা পড়ে যান ক্যামিলা। চার্লস আর ক্যামিলার মধ্যে কী চলছে বুঝতে সময় লাগে না ডায়ানার। তাই ১৯৮১ সালে চার্লসের সঙ্গে বিয়েতে ক্যামিলার উপস্থিতি অস্বস্তি বাড়িয়েছিল ডায়ানার। রাজকীয় বিয়ের পরও ক্যামিলাকে ভুলতে পারেননি চার্লস। এমনকি ডায়ানা আর চার্লসের দুই সন্তান হওয়ার পরও। রাজপরিবারের নানা নিয়মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে ডায়ানার জনগণের রানিহয়ে ওঠাকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ভালোভাবে নেননি। ডায়ানার ব্যক্তিত্বের ছটায় রাজপরিবারের আর সবাই, আর সমস্ত কর্মকাণ্ড যেন ম্লান হয়ে পড়ছিল।

ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি ইন হার ওন ওয়ার্ডবইতে অ্যান্ড্রু মর্টন জানিয়েছেন, বিয়ের চার বছর পর ১৯৮৫ সালে একটি পার্টিতে দেখা হয় ডায়ানা ও ক্যামিলার। ক্যামিলাকে দেখেই ডায়ানা বলেছিলেন, ‘আই নো হু ইউ আর। ডোন্ট ট্রিট মি লাইক অ্যান ইডিয়ট।আপনি কে আমি জানি, আমাকে বোকা ভাববেন না। শুনে ক্যামিলা বলেছিলেন, আপনি বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানুষটির স্ত্রী। আপনি প্রিন্সেস অব ওয়েলস। আপনার সুন্দর দু’টি বাচ্চা রয়েছে। আর কী চান?’ উত্তরে ডায়ানা বলেছিলেন, ‘আই ওয়ান্ট মাই হাজবেন্ড। আমার স্বামীকে চাই...

দ্য ডাচেস: দ্য আনটোল্ড স্টোরিবইয়ে পেনি জুনর বলেছেন, চার্লসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ডায়ানার কাছে কোনও দিন দুঃখ প্রকাশ করেননি ক্যামিলা। যখন ডায়ানা আর চার্লসের বাগদান হয়, নিজের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ডায়ানাকে ক্যামিলা বলেছেন, ‘আ মাউস (একটা ইঁদুর)। আর বিয়ের কয়েক বছর পর বলেছেন, ‘দ্য ম্যাড কাউ (পাগলা গোরু)। ক্যামিলা জনসম্মুখে এও বলেছেন, ‘আমি সারা জীবন একজনকেই ভালোবেসেছি। আর ডায়ানার জীবনে ছিল অসংখ্য পুরুষ।এদিকে ডায়ানাকে প্রকাশ্যে কখনও ক্যামিলা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। তবে ডায়ানার মৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবী সিমোন সিমোন্স ডায়ানা: দ্য লাস্ট ওয়ার্ডবইতে লিখেছেন, ক্ষুব্ধ ডায়ানা নাকি একবার ক্যামিলাকে রটওয়েলার’ (বিশেষ একপ্রকার কুকুর) বলে ফেলেছিলেন।

১৯৯৯ সালে প্রথম ক্যামিলা এবং চার্লস হাতে হাত রেখে জনসম্মুখে আসেন। এরও ছয় বছর পর ২০০৫ সালে বিয়ে করেন এই জুটি। সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন রানি এলিজাবেথ। যদিও বিয়ের পর একাধিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম ছিল, ‘আ রয়্যাল কাপল, পিপল কুড নেভার লাভ। এক রাজকীয় দম্পতি, জনগণ যাঁদের কখনোই ভালোবাসতে পারবে না।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথই বছরের শুরুতে ঘোষণা করেন, তাঁর মৃত্যুর পর ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী হবেন প্রিন্স চার্লস। ক্যামিলার উপাধি নিয়ে অনেক কানাঘুষা ছিল। কারণ, রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী বিচ্ছেদ হয়েছে, এমন কেউ রানি হতে পারবেন না। এলিজাবেথই ক্যামিলার উপাধি ঠিক করে দেন কুইন কনসর্ট। পুরোপুরি রানি নন, রাজার জীবনসঙ্গী।

ক্যামিলা রানি কি রানি নন, তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ, ডায়ানার অনুপস্থিতিই রাজপরিবারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। যে লিগ্যাসি ক্যামিলাকে বইতে হবে আজীবন!

No comments:

Post a Comment