europe jobless

ইউরোপে ভয়াবহ বেকারত্ব

বেকারত্বের অভিশাপ যে শুধু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে আছে তা নয়। অনেক উন্নত দেশও বেকার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার উপায় খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্রতো বটেই, ইউরোপের শিল্পোন্নত অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। বেকারত্ব দূর করে অর্থনীতির চাকা সচল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশগুলো। এতদিন দেশগুলোর ব্যাংকিং সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর সরকার প্রধানরা একত্রে বসে আলোচনা করলেও এখন তাদের আলোচনার মূলে চলে এসেছে বেকারত্ব নিরসন।

মাত্র কয়েকদিন আগে ইউরোপের নেতারা ব্রাসেলসে একত্রিত হয়েছিলেন বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কৌশল উদ্ভাবনের জন্য। কিছু উপায় তারা বেরও করে ফেলেছেন। তাদের সবার মুখে ছিলো একই বক্তব্য। আর সেটি হচ্ছে— প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ বেকার লোক সামনের দিনগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য হুমকি হবে। এছাড়া এত বড় জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন বেকার থাকলে তাদের মনে ইইউ সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্মাবে। আগে বেকারত্ব সমস্যা দেশগুলোর একার থাকলেও এখন আর তা নেই। ইউরোপের দেশগুলোতে যেহেতু অবাধ যাতায়াত করা যায় সেজন্য এখন এটি একটি সমন্বিত সমস্যা। সেক্ষেত্রে জার্মানিকে সবাই চাকরির জন্য স্বর্গরাজ্য মনে করে। ২০১২ সালে প্রায় ৪৫ হাজার ইতালিয়ান জার্মানিতে গিয়েছেন চাকরির জন্য। স্পেনের নাগরিকরাও কম যান না। এসময় ৩৭ হাজার স্পেনীয় জার্মানিতে এসেছেন। ৩০ হাজার এসেছেন গ্রিস থেকে। জার্মান সরকারও কাজের জন্য লোক চাচ্ছে। দেশটির সরকার ঘোষণা দিয়েছে এ মুহূর্তে তাদের প্রায় ৭০ হাজার ইঞ্জিনিয়ার দরকার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এক্সপার্ট যুক্ত করলে এ সংখ্যা দুই লাখ ছাড়াবে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল জোর দিয়ে বলেছেন, এটা সমস্যার কোন সমাধান করবে না। চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সরকারগুলোর আরো কিছু করার আছে। আর যারা সামনের দিনগুলোতে শিক্ষার পাঠ চুকাবে তাদেরকেও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাকরিতে প্রবেশের জন্য তৈরি থাকতে হবে। মার্কেল তার অতীত স্মরণ করে বলেন, সাবেক পূর্ব জার্মানির যে অঞ্চল থেকে আমি আইনপ্রণেতা হয়ে এসেছিলাম সেখানকার ৩০ শতাংশ লোক বেকার ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এসব বেকার লোকজন পশ্চিম জার্মানিতে এসে চাকরি নিয়েছিল। বেকারত্বের মর্মব্যথা মার্কেল বুঝেছেন বলেই জার্মানিতে পর্তুগাল এবং স্পেনের যেসব বেকার লোক কাজ করতে এসেছেন তাদের জন্য তিনি এক বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল তৈরি করেছেন।

বেকারত্বের কারণে শুধু সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা নয়। অনেক শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে ইউরোপ ছেড়ে যাচ্ছেন। যেমন ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে ৮৭ হাজার শিক্ষিত বেকার নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। এ বিষয়টিও ইউরোপের দেশগুলোর সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে। তবে ভালো করা খবরও আছে। সমপ্রতি ইউভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানরা ব্রাসেলসে বৈঠক করে বেকারত্ব নিরসনে ৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল তৈরি করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, চাকরির পাশাপাশি ছোট-খাটো ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টিতে এ তহবিল কাজে লাগবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হারমান ভ্যান রমপুই বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ৬ বিলিয়ন ইউরোর তহবিল তৈরির ঘোষণা আসলেও পরে তা বাড়িয়ে ৮ বিলিয়নে উন্নীত করা হবে।