আমেরিকার
অস্ত্র গণতন্ত্র, ইরানের ড্রোন সন্ত্রাস
এতদিনে
আসল কথাটি লিখেছেন টরন্টোর গুয়েলফ-হাম্বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ অ্যান্ড মিডিয়া
স্টাডিজ বিষয়ের শিক্ষক গ্রেগরি শুপাক। সম্প্রতি তিনি লিখেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করায় আমেরিকার সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো খুব খেপেছে।
কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়মিতভাবে আমেরিকার অস্ত্র রপ্তানিকে মহৎ কাজ হিসেবে
দেখিয়ে যাচ্ছে।
ফোর্বস
ম্যাগাজিনে সাংবাদিক পল ইডোন তো ইরানকে ‘রাশিয়ার আগ্রাসী লালসার সহচর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফরেন পলিসি সাময়িকীতে এলি জেরানমায়ে ও সিনজিয়া
বিয়ানকো লিখেছেন, ‘ইউক্রেনে ইরানের অস্ত্র যাওয়া ঠেকানো এবং
ইরানের অভ্যন্তরের নাগরিকদের দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়, তার উপায় আমেরিকা ও ইউরোপের খুঁজে বের করা উচিত।’ ওই
একই সাময়িকীতে জন হার্ডি ও বেনহাম বেন ট্যালেবলু লিখেছেন, ইরানের
শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সন্ত্রাসের বিস্তারে’
সাহায্য করছে এবং এই ধরনের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি ‘পশ্চিমীদের বিরুদ্ধে ইরানের আক্রমণের শামিল’। এই
বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, এই ড্রোন
রপ্তানি করে ইরান ‘সমস্যা সৃষ্টি করছে’ এবং ‘রাশিয়ার ইউক্রেন ধ্বংসে সাহায্য করছে’।
অন্যদিকে
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো গত সপ্তাহেও আমেরিকার অস্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ভূয়সী
প্রশংসা করেছে। সাংবাদিক পিটার বারজেন সিএনএন টেলিভিশনে সম্প্রতি বলেছেন, মার্কিন
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে
এবং ইউক্রেনকে হিমার্স মিসাইল ও এমওয়ান ট্যাংকসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য
করে ‘সত্যিকারের নেতৃত্বের’ পরিচয়
দিয়েছেন।
কলম্বিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি ডি স্যাক্স বলেছেন, গত মার্চে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে
আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছিল এবং এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার দখল করা ভূখণ্ড হাতছাড়া
করতে রাজি হয়েই কিয়েভ যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন সেই
শান্তি উদ্যোগে ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়েছেন এবং ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিল থেকে উঠে যেতে
প্ররোচিত করেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ব্রেট স্টিফেন লিখেছেন, ‘এফ-১৬ যুদ্ধ বিমানসহ সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে ইউক্রেনের পাশে
দাঁড়ানোর এটিই মোক্ষম সময়।’ তবে এর মধ্যে দ্য বুলেটিন অব দ্য
অ্যাটোমিক সায়েন্সেস-এর অবস্থান উল্টো। তারা বলেছে, আমেরিকার
আলোচনার দ্বার খোলা রাখা উচিত। আমেরিকা, ন্যাটো জোট ও
অন্যান্য মিত্ররা যদি সামরিক সংঘাতকেই সমাধানের একমাত্র রাস্তা হিসেবে বেছে নেয়,
তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ওয়ার
রিজার্ভ স্টক পাইল অ্যামিউনিশন-ইজরায়েল (ডব্লিউআরএসএ-১) নামে ইজরায়েলে আমেরিকার যে
অস্ত্রের ভাণ্ডার রয়েছে,
তা তাদের ভাষায় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নিবেদিত। মধ্যপ্রাচ্যে কোনও
ধরনের যুদ্ধ লাগলে যাতে দ্রুত এই অস্ত্রভাণ্ডার থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করা যায়,
সে জন্য এই মজুত গড়ে তোলা হয়েছে। মিখাইল মাকোভস্কি ও ব্লেইজ মিজতাল
লিখেছেন, ইজরায়েলের ভাণ্ডার থেকে অস্ত্র নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে
ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। মিখাইল
মাকোভস্কি ও ব্লেইজ মিজতাল মনে করেন, এই যুদ্ধ মূলত রাশিয়ার
সঙ্গে ন্যাটো তথা আমেরিকার প্রক্সি যুদ্ধ। পশ্চিমীরা শুধু ইউক্রেনে গণতন্ত্রকে
বাঁচাতে এই যুদ্ধে জড়ায়নি, বরং রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর দড়ি–টানাটানির
ধারাবাহিকতা হিসেবেও তারা এই লড়াইয়ে নেমেছে।
ওয়াল
স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় মিখাইল মাকোভস্কি ও ব্লেইজ মিজতাল একটি উপসম্পাদকীয়তে
লিখেছেন, বাইডেন প্রশাসন যখন ইউক্রেনে কামানের গোলা পাঠিয়েছে, ঠিক তখন ইজরায়েলে আমেরিকার অস্ত্রভাণ্ডার ‘গণতন্ত্রের ডিপো’ হিসেবে কাজ
করছে। তবে সবাই বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইজরায়েলের
অস্ত্র ব্যবহারকে ‘গণতন্ত্র’ বলে
চালানো কতটা অযৌক্তিক। কারণ, ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার অস্ত্র
ব্যবহার গোটা অঞ্চলে যে ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তার
ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা আজ অসম্ভব।
কিন্তু
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো একপেশেভাবে ইরানের ড্রোন সরবরাহকে ‘সন্ত্রাসবাদী
কাজে সাহায্য’ হিসেবে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণ
মানুষের বিরুদ্ধে আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারকে গণতন্ত্রচর্চা বলে ন্যায্যতা দিচ্ছে।
আজ পশ্চিমের
গণমাধ্যমের এই দ্বিমুখী নীতি নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে
দিয়েছে!
ফোর্বস ম্যাগাজিনে সাংবাদিক পল ইডোন তো ইরানকে ‘রাশিয়ার আগ্রাসী লালসার সহচর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফরেন পলিসি সাময়িকীতে এলি জেরানমায়ে ও সিনজিয়া বিয়ানকো লিখেছেন, ‘ইউক্রেনে ইরানের অস্ত্র যাওয়া ঠেকানো এবং ইরানের অভ্যন্তরের নাগরিকদের দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়, তার উপায় আমেরিকা ও ইউরোপের খুঁজে বের করা উচিত।’ ওই একই সাময়িকীতে জন হার্ডি ও বেনহাম বেন ট্যালেবলু লিখেছেন, ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সন্ত্রাসের বিস্তারে’ সাহায্য করছে এবং এই ধরনের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি ‘পশ্চিমীদের বিরুদ্ধে ইরানের আক্রমণের শামিল’। এই বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, এই ড্রোন রপ্তানি করে ইরান ‘সমস্যা সৃষ্টি করছে’ এবং ‘রাশিয়ার ইউক্রেন ধ্বংসে সাহায্য করছে’।
কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো একপেশেভাবে ইরানের ড্রোন সরবরাহকে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজে সাহায্য’ হিসেবে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারকে গণতন্ত্রচর্চা বলে ন্যায্যতা দিচ্ছে।
No comments:
Post a Comment