দুনিয়ার তাবৎ মানুষ আজ নগ্ন
ডেনিয়েল এলসবার্গ, ব্রাডলি ম্যানিং ও এডওয়ার্ড স্নোডেন। ১৯৭১
থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নানা তথ্য ফাঁস করে দিয়ে আলোড়ন
তোলা তিন নায়ক।
দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের সকল
মানুষের টেলিফোন ও ইন্টারনেটের উপর গোপন নজরদারি করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় কাজের গোপন নথি সংবাদ
পত্রে প্রকাশ করে দিয়েছে এডওয়াড স্নোডেন। স্নোডেন যা ফাঁস করেছেন, তা নিছক কিছু
ই-মেল বা ফোন-ট্যাপের ঘটনার সঙ্গে তুলনীয় নয়। স্নোডেনের দাবিগুলি যদি সত্য হয়
(যার আংশিক সত্যতা মার্কিন প্রশাসন স্বীকার করেছে), তা হলে
প্রিজম হল, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নজরদারির প্রোজেক্ট,
যা হেলায় টেক্কা দেবে গেস্টাপো-কেজিবি-এম আই ফাইভ-এর সম্মিলিত
টিমকে। স্নোডেন এক সাক্ষাতকারে গোপন নথি ফাঁসের কারণ হিসেবে বলেন, ‘আপনি যখন দেখবেন আপনার তৈরি করা পৃথিবীকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নষ্ট
করে চলেছে, তখন আপনাকে এমন কাজ করতেই হবে। যদি আপনাকে এর
জন্য বিপদের ঝুকিও নিতে হয়, তবু আপনি তা করতে পিছপা হবেন না।
আমিও সেই কাজটি করেছি।’
তবে স্নোডেনই প্রথম না যিনি
মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে দিয়েছেন। স্নোডেনের আগেই এমন কাজ করে শাস্তি পেতে হয়েছে
ডেনিয়েল এলসবার্গ ও ব্রাডলি ম্যানিংকে। ডেনিয়েল এলসবার্গ ১৯৭১ সালে ভিয়েতনাম
যুদ্দের গোপন নথি ফাঁস করে দেন। তার এই কাজের পলরে ব্যাপক তোড়পাড় শুরু হয় মার্কিন
মিডিয়া এবং প্রশাসনের মধ্যে। শাস্তি পেতে হয় তাকে। ২০১০ সালে আড়াই লক্ষ তার বার্তা
উইকিলিসের কাছে ফাঁস করে দেন ব্রাডলি ম্যানিং। এই কাজের জন্য তাকে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী কোরট মার্শালের মুখোমুখী করে। তার বিচার আজও শেষ হয়নি।
একই অপরাধে উইকিলিসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করে
যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গ্রেফতার এড়াতে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যে ইকুইডরের দূতাবাসে
আশ্রয় নিয়ে আছেন দুই বছরের বেশি সময় ধরে।
মার্কিন গুপ্তচররা যে বিশ্বজোড়া
ফাঁদ পেতে রেখেছে, তিন মাস আগেই সে খবর ফাঁস করে দিয়েছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন। তা বলে পড়শি
দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও যে রেহাই পাননি, তা আন্দাজ করেননি
কেউই। ব্রাজিল ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টদের ই-মেল, ফোন এমনকী
মেসেজের উপরও মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা (এনএসএ) আড়ি পেতেছিল বলে দাবি করে হইচই ফেলে
দিয়েছেন স্নোডেন। ব্রাজিলের এক খবরের চ্যানেলে এ কথা জানান সাংবাদিক গ্রিনওয়াল্ড। এনএসএ-র গোপন কীর্তির যে
নথি স্নোডেনের হাতে আছে,
তার উপর ভিত্তি করে এক ব্রিটিশ দৈনিকে এত দিন ধরে একের পর এক খবর
লিখেছেন এই গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডই। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ ও মেক্সিকোর
এনরিকে পেনিয়া নিয়েতোর উপর নজরদারি চালানোর কথা জানাজানি হওয়ায় কড়া
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দুই দেশই। আন্তর্জাতির নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে
দেশের সার্বভৌমত্বর উপর আমেরিকা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন
ব্রাজিলের বিদেশমন্ত্রী। ব্রাজিলের মার্কিন দূত টমাস শাননকে ডেকে পাঠিয়ে লিখিত
জবাবও তলব করেছে রোসেফ প্রশাসন। গত বছর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন
এনরিকে। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তাঁর উপর নজর ছিল এনএসএ-র। ২০১২ সালের জুন মাস
থেকে এনরিকের উপর নজর রাখার যে নথি স্নোডেন ফাঁস করেছেন, তাতে
তাঁর মন্ত্রিসভায় কারা কারা থাকতে পারেন সেই সংক্রান্ত মেসেজ আদানপ্রদানের
বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
মেক্সিকোর বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, পুরো ঘটনার
তদন্ত করুক আমেরিকা।
জার্মানির ‘ডার স্পাইগেল ’
বা ফ্রান্সের ‘ল্য মঁদ ’ কিংবা স্পেনের ‘এল মুন্দো ’ সংবাদপত্র
বলছে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ব্যক্তিগত ফোনে প্রায় ১০ বছর ধরে আড়ি
পেতেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। মিত্র হওয়া সত্ত্বেও চ্যান্সেলর
অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সেলফোনে আড়ি পাতায় ক্ষুব্ধ জার্মানি। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা
বা বিশ্বের অন্য যে কোন স্থানের চেয়ে ওয়াশিংটনের কাছে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও
গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মসূচির বিরুদ্ধে
চীনের পাশাপাশি একযোগে ক্ষোভ আর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর এমন ক্ষোভের কারণ
অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির দু'টি পত্রিকার প্রতিবেদন। এ
অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ খবরটি প্রকাশ করে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও দার স্পাইজেল
ম্যাগাজিন। ঐ দু'টি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রিজম' গোয়েন্দা কর্মসূচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
একার নয়। বরং এর সাথে যুক্ত অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড। তাদের এই গোয়েন্দা সহযোগিতা চুক্তির নাম 'ফাইভ আইজ'। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানায়, দক্ষিণ-পূর্ণ
এশিয়ার রাজধানীগুলোতে ফোনে আড়ি পাতাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য সহযোগিতার জন্য
অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসকে ব্যবহার করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় আশিটি দূতাবাস ও কনস্যুলেট কার্যালয় থেকে আধুনিক প্রযুক্তি
ও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে গোপনে ব্যাপকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
দূতাবাসের ঐ নির্দিষ্ট কক্ষের
কোড নেইম বা সাংকেতিক নাম 'স্টেটরুম'। ইউরোপে এমন ঊনিশটি
দূতাবাসে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় স্টেটরুম স্থাপন করা হয়েছে। এশিয়ার কোন্ কোন্ নগরী
থেকে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে, তারও একটা তালিকা প্রকাশ করেছে
পত্রিকা দু'টি। এগুলো হলো- জাকার্তা, ব্যাংকক, হ্যানয়, বেইজিং,
পূর্ব তিমুরের দিলি, কুয়ালালামপুর এবং পাপুয়া
নিউগিনির মোর্সবি। এসব নগরীতে অবস্থিত বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস মার্কিন
গোয়েন্দা কর্মসূচিতে ব্যবহূত হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর প্রতিবাদে
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর কড়া সমালোচনা করে জাকার্তা।
ব্যক্তিস্বাধীনতার সমস্ত
রক্ষাকবচ হারিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের রক্তচক্ষুর সামনে দুনিয়ার তাবৎ মানুষ আজ
নগ্ন। যে নজরদারির জাল বোনা হয়েছে দুনিয়া জুড়ে, সেটাই ফাঁস করে দিয়েছেন
এডওয়ার্ড স্নোডেন।
মার্কিন গোয়েন্দাকর্তা জেমস
ক্ল্যাপার অবশ্য সমালোচনা সত্ত্বেও বৈদ্যুতিন আড়িপাতার পক্ষেই সওয়াল করেছেন৷ তাঁর
দাবি , যে ভাবে সন্ত্রাসবাদ বাড়ছে তাতে আমেরিকাকে বাঁচাতে এ ছাড়া রাস্তা নেই৷ তাই
আক্রান্ত হওয়ার আগেই আক্রমণ প্রতিহত যদি করতে হয় তা হলে নজর রাখতেই হবে৷ এনএসএ
কর্তা জেনারেল কিথ আলেকজান্ডারের দাবি, একা নয় আমেরিকা , ইউরোপের
একাধিক দেশের নাগরিকদের ওপর যে বৈদ্যুতিন নজরদারি চালিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা ,
তাতে শরিক সেই দেশের গোয়েন্দাসংস্থাও৷ মার্কিনদের সঙ্গে সবাই মিলেই
ভাগ করে নিয়েছে নজরদারির ফল৷ জার্মানির ‘ডার স্পাইগেল ’
বা ফ্রান্সের ‘ল্য মঁদ ’ কিংবা স্পেনের ‘এল মুন্দো ’ সংবাদপত্র
যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তা সত্য নয়৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষের মোবাইল
ফোন কিংবা ই -মেল অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন ধরে যে নজরদারি চলে এসেছে তা একেবারে গোপনে
নয়৷ আমেরিকার ‘হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটি ’-র কাছে জেনারেল আলেকজান্ডার জানিয়েছেন , ‘আক্রান্ত ’
দেশগুলির রাজনীতিকরা যতই বিরক্তি প্রকাশ করুন না কেন , কিছুই তাঁদের অজান্তে হয়নি৷ সন্দেহভাজনদের তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার
সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দারা৷ অভিযোগ তুলেছে ইন্টারনেট জগতের
অন্যতম সংস্থা গুগলও৷
অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর৷ সংস্থার
আইনজ্ঞ ডেভিড ড্রামন্ড দাবি করেছেন , মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতে কোনও তথ্যই
দেয়নি গুগল , ওঁরা যা পেয়েছেন তার সবটাই চুরি করা। নজরদারি চালাতে গিয়ে
গুগলের ডেটাবেস হ্যাক করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা৷ বাষিক ৫ হাজার কোটি মার্কিন
ডলারেরও বেশি মূল্যের ব্যবসা করে মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা গুগল৷ শেয়ার বাজারের
নিরিখে আমেরিকার সেরা একশোটি সংস্থার মধ্যে অনায়াসে জায়গা পায় গুগল৷ এমন শক্তিশালী
একটি সংস্থার তথ্যভাণ্ডারে চুরি ? আমেরিকার মাটিতে বসে কেউ রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত করছে
কিনা তা জানার অধিকার রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের৷ সেই মতো সরকারকে সাহায্যও করে গুগল
ও ইয়াহু -র মতো বড় সংস্থারা৷ নজরদারির জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল
সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ ) তৈরি করেছিল ‘প্রিজম ’ নামে একটি শক্তিশালী সফটওয়্যার৷ কিন্ত্ত মার্কিন ভূখণ্ডের বাইরে এমন
নজরদারি একেবারেই আইনবিরুদ্ধ বলে জানিয়েছেন গুগলের কর্তারা৷ পুরো ঘটনার সূত্রপাত
অবশ্য ‘ওয়াশিংটন পোস্ট ’ কাগজে
প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে৷ মার্কিন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড স্নোডেনই
নাকি মার্কিন ওই সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন খোদ ‘ইন্টারনেট দৈত্য
’ গুগলের -ই ডেটাবেস হ্যাক করে ফেলেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা৷
এমনিতে আমেরিকায় ব্যক্তির উপর
নজরদারি এবং তার ডকুমেন্টেশন কোনও নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে তার
চরিত্রে একাধিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। তথ্য হয়ে উঠেছে আকার ও ক্ষমতায়
দৈত্যাকৃতি। প্রথমত,
প্রযুক্তির কারণে তথ্যের পরিমাণ অকল্পনীয় রকম বেড়ে গেছে। প্রয়োজন
থাক বা না থাক, প্রতিনিয়ত রেকর্ড করা হচ্ছে মানুষের ‘স্বভাব’, ‘চরিত্র’, ‘স্বাস্থ্য’
ইত্যাদির হিসেবনিকেশ। ‘ক্রেডিট হিস্ট্রি’
অর্থাৎ ধার নেওয়ার ইতিহাস দিয়ে মেপে রাখা হচ্ছে ব্যয়ের অভ্যেস ও
তার প্যাটার্ন। এর পর আছে ড্রাইভিং রেকর্ড, ক্রিমিনাল রেকর্ড,
মেডিক্যাল হিস্ট্রি। এবং তা ছাড়াও জমিয়ে রাখা হচ্ছে আরও অজস্র
আপাতদৃষ্টিতে অদরকারি তথ্যসমূহকে। যা হয়েছে ইয়াহু-গুগলের ক্ষেত্রে।
কী ভাবে চলছে গুগলের মতো
বহুজাতিক সংস্থার ডেটা সেন্টারে হ্যাকিংয়ের কাজ ? সার্ভার হ্যাকিংয়ের পথে হাঁটেননি
মার্কিন গোয়েন্দারা৷ স্নোডেন জানিয়েছেন , ওই পথে কাজ সারা
খুব সহজ কাজ নয়৷ কারণ , গুগল বা ইয়াহু -র মতো সংস্থাগুলি
তাদের সার্ভারকে এমন শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেয়৷ কিন্ত্ত
ফাইবার অপ্টিকের মধ্যে দিয়ে যখন অজস্র তথ্য আদান -প্রদান করা হয় , তখনই সেই তথ্য চুরি করে নেয় এনএসএ৷ বহু ক্ষেত্রেই গুগলের সার্ভারে তথ্য
পৌঁছানোর আগেই ডেটা সেন্টার থেকেই তথ্য তুলে নেয় এনএসএ৷ কতটা পরিমাণ তথ্য এমন ভাবে
সরানো হয় নিয়মিত ? প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে প্রতিদিন সারা
বিশ্বে লক্ষ লক্ষ রেকর্ড এমন বেআইনি পদ্ধতিতে হাতিয়ে নেওয়া হয়৷ প্রতিদিন অডিও ,
ভিডিও , টেক্সট সবই আছে তালিকায়। কেবলমাত্র মার্কিনরাই নন
, এই
চুরিতে তাঁদের দোসরের ভূমিকা নিয়েছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারাও৷ গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন
হেডকোয়ার্টার্স (জিসিএইচকিউ ) গোয়েন্দাদের কাছে চুরির পর যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া
হয় ‘মাস্কিউলার ’ নামে এক কম্পিউটার
প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে৷ ‘মাস্কিউলার ’ নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত ব্রিটিশ গোয়েন্দাসংস্থা জি সি এইচ কিউ। এরপর সেই বিপুল পরিমাণ
তথ্যের শ্রেণিবিভাগ করে তা বিভিন্ন বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিশ্লেষণের জন্য৷
গুগলের পক্ষ থেকে সংস্থার আইনজ্ঞ ডেভিড ড্রামন্ড জানিয়েছেন , এমন যে হতে পারে
তা তাঁরা আগেই আন্দাজ করেছিলেন৷ এখানেই শেষ নয়। হ্যাকার হামলার মুখে বিখ্যাত
সফটওয়্যার নির্মাতা অ্যাডোব-ও৷ শুরুতে আশঙ্কা করা হয়েছিল প্রায় ২৯ লক্ষ অ্যাডোব
অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন , সংখ্যাটা
অন্তত ৩ কোটি ৮০ লক্ষ৷ চুরি হয়েছে অ্যাডোবের নামকরা ‘ফটোশপ ’
সফটওয়্যারের সোর্সকোডও৷
স্নোডেন যা দাবি করেছেন (যেটা
আংশিক ভাবে মার্কিন সরকার স্বীকারও করেছে, যদিও পুরোটা নয়), সেখানে
দেখা যাচ্ছে যে, দুনিয়াজোড়া বিপুল তথ্য চালাচালির বৃহদংশই
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার হাতের নাগালে। যে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্যগুলিকে এত
দিন স্রেফ মার্কেটিং বা ওই জাতীয় কোনও নির্দোষ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেই তথ্যকে ইচ্ছে করলেই একটি নিরাপত্তা সংস্থা ব্যবহার করতে পারে। আর
গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্য হল ‘ব্যক্তি’, সুতরাং ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’। ব্যক্তিস্বাধীনতার সমস্ত
রক্ষাকবচ হারিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের রক্তচক্ষুর সামনে দুনিয়ার তাবৎ মানুষ আজ
নগ্ন।
No comments:
Post a Comment