তেল কোম্পানিগুলোর লীলাক্ষেত্র
মৃণালকান্তি দাসমেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চল এখন জ্বালানি তেলের লীলাক্ষেত্র। সেখানকার প্রতিমুহূর্তের নারকীয় দৃশ্যাবলির সঙ্গে মিল নাইজার বদ্বীপ এবং ইকুয়েডরের আমাজন অববাহিকার। ওবামা প্রশাসন মেক্সিকো উপসাগরে তেল উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পাওনা পরিশোধ না করার যে প্রস্তাব দিয়েছে ফেডারেল আপিল আদালতের তিনজন বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। কারণ বড় তেল কোম্পানির সঙ্গে আর্থিকসহ বিভিন্ন রকম সম্পর্কে তারা আবদ্ধ। নিউ অরলিন্সের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চারট্রেইন লেকটিও বি পি-র নিঃসৃত তেলে ভেসে গেছে। বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য বি পি যে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে সেই আগুনে এখন পুড়ে মরছে সাগর-উপকূলের সংকটাপন্ন কচ্ছপসহ অন্যান্য জলজপ্রাণী। স্থানীয় জেলে এবং ঝিনুক ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে। মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের শরীরে আশঙ্কাজনকভাবে বিষক্রিয়ার নমুনা লক্ষ্য করা গেছে।
তবে এইসব খবরে নাইজার বদ্বীপ কিংবা আমাজন অরণ্যাঞ্চলের অধিবাসীদের অবাক করে না। একইভাবে ১৯৬৯সালে সান্তা বারবারা এবং ১৯৮৯সালে এক্সন ভালদেজ কোম্পানির জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছিলো। নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলটি আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জলবেষ্টিত ভূমি। মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চল যেমন চিংড়ি ও ঝিনুকের অভয়ারণ্য, এই বদ্বীপটির জলজ বনভূমিও তেমনি কাঁকড়া আর ঝিনুকজাতীয় জলজপ্রাণীর আশ্রয়স্থল। আর আমাজানের গভীর অরণ্যাঞ্চলটি হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারী। ২০০কোটি বর্গমাইলব্যাপী বিস্তৃত এই গহিন অরণ্য এই গ্রহের ২০ভাগ অক্সিজেনের জোগানদাতা। অথচ, তেল কোম্পানিগুলো বিশ্বের সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী অঞ্চলগুলোকে কীভাবে নিজেদের স্বার্থে ধ্বংস করছে তা নিয়ে দুনিয়ার তাবড় তাবড় সংবাদপত্র নীরব!
নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলে গই নামের একটি গ্রাম। গ্রামটি যে নদীর তীরে অবস্থিত তার জলপ্রবাহ প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ বয়ে আনে। নদীতে জাল ফেললেই মাছে ভরে যেত। কিন্তু গ্রামটি ওই বদ্বীপের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলোর একটির বেশ কাছেই অবস্থিত। বছর ছয়েক আগে নদীতে জ্বালানি তেলের বড় ধরনের এক নিঃসরণ ঘটে এবং ভাসমান তেলে আগুন ধরে গিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে।
৫০বছর আগে ওই বদ্বীপ অঞ্চলে শেল কোম্পানি তাদের প্রথম ১৭টি কূপ খনন করে। সেই থেকেই দুঃস্বপ্নের ইতিহাসের যাত্রা শুরু। বাড়তে থাকে সরকারি পর্যায়ে সীমাহীন দুর্নীতি, পরিবেশবিপর্যয় এবং চরম দারিদ্র্য। এক হিসাব থেকে জানা গেছে, অর্ধশতাব্দী সময়ে ওই বদ্বীপ অঞ্চলে ৫৪কোটি ৬০লক্ষ গ্যালন পরিমাণ তেল নিঃসরণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ১০লক্ষ গ্যালন করে। নাইজার বদ্বীপের পাইপলাইন থেকে বছরে যে পরিমাণ তেল নিঃসৃত হতো তার পরিমাণ মেক্সিকো উপসাগরে নিঃসৃত তেলের চেয়ে বেশি।
ফ্রেন্ডস অব আর্থ ইন্টারন্যাশনালের নাইজেরীয় প্রধান নিমো বাসে ঘটনার পরপরই ওই অঞ্চলটি পরিদর্শনে যান। সম্প্রতি এক রেডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, পুরোপুরিভাবে পুড়ে যাওয়া বিশাল এক জলজ বনাঞ্চল। নদীর পাশ দিয়ে অবস্থিত মাছের খামারগুলোও পুড়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নদীতীরবর্তী ঘরবাড়িগুলো। এ যেন জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া এক রণক্ষেত্র। জনজীবন পুরোপুরিই বিধ্বস্ত।
নাইজেরিয়ায় তেল উত্তোলনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানি রয়াল ডাচ শেল বারবার বলে আসছে, তারা গই গ্রামটি পরিষ্কার করে দিয়েছে। কিন্তু নিমো বাসে জানিয়েছেন, ‘তেলের ঘটনা আপনি লুকিয়ে রাখতে পারবেন না। গিয়ে দেখুন, সবই আপনার চোখে পড়বে। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪-এ। চলতি বছরেও আমি ওখানে দু’বার গিয়েছি। বিপর্যয়ের চিত্রটি সেদিন যে রকম ছিল এখনো ঠিক সে রকমই আছে। আপনি এখনো নদীর জলে ভাসমান তেলের আস্তরণ দেখতে পাবেন। জলজ যে গাছপালা পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল সেগুলোর সেই ধ্বংসস্তূপ এখনো আগের মতোই পড়ে রয়েছে। কোনো রকম পরিবর্তন সেখানে ঘটেনি। ধ্বংস হয়ে যাওয়া মাছের পুকুরগুলোও আপনার চোখে পড়বে। চোখে পড়বে পুড়ে যাওয়া জাল এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোও। সব কিছু ঠিক একই রকম আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চিহ্নটুকুও আপনি খুঁজে পাবেন না। বাসে জানান, স্থানীয় অধিবাসীরা এখনো সেখানে রয়ে গেছেন বটে; তবে জীবিকার জন্য তারা আগের মতো আর মাছ ধরার ওপর নির্ভর করতে পারছেন না। শেষবার যখন আমি সেখানে গেলাম, দেখলাম একটি ছোট্ট শিশু তার বাবার সঙ্গে চিংড়ি ধরতে নদীতে এসেছে। তার হাতে ছিল ছোট্ট একটি প্লাস্টিকের ডুলা। সারা রাত চেষ্টা করে সকালে যখন তারা ফিরে যাচ্ছিল তখন তাদের ডুলার একেবারে তলাটায় কয়েকটা মাত্র বাগদা চিংড়ির পোনা। ডুলাটার সারা গায়ে নষ্ট তেল লেগেছিল। মাছগুলোও ঢেকে গিয়েছিল তেলের আস্তরণে। ভাবছিলাম এগুলো দিয়ে তারা কী করবে। জিজ্ঞেস করতেই ছেলেটি জানালো, ভালো করে ধুয়ে নিয়ে এগুলোই খাবে তারা। গই গ্রামটির লোকজনকে বাজার থেকে এমন মাছ কিনে খেতে হয়। এসব মাছও আবার তাজা নয়। কোনো কোনোটি সিদ্ধ। তা ছাড়া মাছ কিনে খাওয়াটা সেখানে বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে। কারণ, নাইজেরিয়ায় ৭০ভাগ মানুষই এখন দিনে এক ডলারের কম আয়ে জীবনধারণ করে থাকেন।
ষাট ও সত্তর দশকের গোড়ার দিকে নাইজেরিয়া তার তেলসম্পদ জাতীয়করণ করে। তথাপি তেল উৎপাদনের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত শেল কোম্পানিরই নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে। সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয় তার সবই প্রায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, শুধুমাত্র মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বার্থে। ১৯৬০থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত নাইজেরিয়ার রাজনীতিকরা তেলের মাধ্যমে আসা ৭০হাজার কোটি মার্কিন ডলার দেশটির জাতীয় রাজস্বভান্ডার থেকে আত্মসাৎ করেছেন। ৭৫ভাগ জ্বালানিসম্পদই দেশের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের পকেটস্থ হয়েছে।
নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলের ওগোনি উপজাতির মানুষ বৈষম্যমূলক অর্থনীতির শিকার দীর্ঘদিন ধরেই। ১৯৯০সালে তাদের অহিংস আন্দোলনের নেতা কেন সারোভিয়া এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘যে সম্পদ আমাদের কাছ থেকে শোষণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা ফেরত পেতে একফোঁটা রক্ত ঝরুক তা আমরা চাই না। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের পথে রয়েছি। বিজয় আমাদের হবেই।’ তার এই আন্দোলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুসৃত জাতিবিদ্বেষবিরোধী কৌশলটিই গ্রহণ করা হয়েছিল যার মাধ্যমে একপর্যায়ে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ঘটিয়ে শেল কোম্পানিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা যেত। কিন্তু বিষয়টি অতি দ্রুতই শেলের নজরে আসে এবং নাইজেরিয়ার তৎকালীন সামরিক শাসকরাও এই জাতীয় একটি আন্দোলনকে নিজেদের শাসনের বিরুদ্ধে যাবে বলে আশঙ্কা করতে লাগল। কারণ এই আন্দোলন ছিল নিজেদের সম্পদের ওপর স্থানীয় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। ফলে ১৯৯৫সালে সরকার সারোভিয়াকে তার অন্য আরো আটজন সতীর্থ অহিংস নেতাসহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। এই হত্যার বিরুদ্ধে দেশের সাংবিধানিক অধিকার কেন্দ্র একটি মামলা দায়ের করে। তবে চতুর শেল কোম্পানি ১ কোটি ৫৫লক্ষ ডলারের বিনিময়ে আদালতের বাইরেই মামলাটির নিষ্পত্তি করিয়ে নেয়।
সারোভিয়ার হত্যাকান্ডের পর পুরো অঞ্চলজুড়েই বিক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভিয়ার অনুসৃত অহিংস আন্দোলনের ধারণা বাতিল করে দেয়। ‘নাইজার বদ্বীপ মুক্তি আন্দোলন’ নামে জন্ম নেয় নতুন এক বিদ্রোহ। আন্দোলনকারীরা তেলের বিভিন্ন পাইপলাইন ধ্বংস, তেল কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশীদের অপহরণের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিতে শুরু করেন। ফলে শেল কোম্পানি তাদের অধিকাংশ কার্যক্রমই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ২০০৭সালে বিশ্বব্যাঙ্কের এক সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলের ৩৬শতাংশ তরুণই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে এবং চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
তেল কোম্পানিগুলো ইকুয়েডর, পেরু ও ব্রাজিলের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত আমাজন বনাঞ্চলেও তাদের বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। ইকুয়েডরের অরিয়েন্ট অঞ্চলে সেকোয়া আদিবাসী হামরারটো পিয়াগিজের কথায়, ‘একসময় কতো সুন্দরই না ছিল আমাদের জীবন। চারদিকে পাখির কলকাকলি, লতাগুল্ম, জীবজন্তু আর গাছপালা। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদীনালা যাদের শেষ গন্তব্য আমাজন নদী। মনে হতো পুরো অঞ্চলটিই একটি স্বর্গোদ্যান। এসবের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার কথা আমাদের মনেই আসত না। আক্ষরিক অর্থেই গভীর এই বনাঞ্চল সর্বসাধারণের সম্পত্তি বলেই আমাদের কাছে মনে হতো। আমরা মনে করতাম এই মাটির নিচে জমে থাকা তেলসম্পদ হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্ত। এখানে বসবাসকারী সব মানুষের কাছেই গভীর এ অরণ্য হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তার কাছ থেকে জানার আছে অনেক কিছু। এখানকার ঔষধি লতাপাতা ও গাছপালা যেন একটি গণহাসপাতাল।
কিন্তু টেক্সাকো এই জঙ্গলে এলো আধিপত্য বিস্তার করতে। কোকান উপজাতির এমারগিল্ডো ক্রাইলো তার স্মৃতি হাতড়ে টেক্সাকোর আগমনের কাহিনিটি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, ‘১৯৬৭সালে তার বয়স ছিল আট। হঠাৎ এক দিন দেখলেন একটি হেলিকপ্টার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে এমনটা কখনো দেখেননি বলে ভাবলেন, এটি বুঝি অদ্ভুত ধরনের কোনো পাখি। কিন্তু পরে দেখতে পেলেন জঙ্গলের মধ্যে টেক্সাকো একটি দোকানঘর বসিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই দেখলেন বাড়ির কাছের একটি খালের মধ্য দিয়ে তেল ভেসে যাচ্ছে। পরিণত বয়সে এই টেক্সাকোর কারণেই ক্রাইলো তার দুটি সন্তানকে হারান। জন্মের ছয় মাস পর থেকেই ছোট সন্তানটির শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আর বড়টি নিঃসৃত তেলের কারণে দূষিত হয়ে যাওয়া নদীর জলে স্নান করতে গিয়ে জল খেয়ে ফেলে। বাড়ি এসেই তার রক্তবমি শুরু হয়ে যায়। পর দিনই মারা যায় সে।
টেক্সাকো তার প্রথম ২৫বছরেই অরিয়েন্ট অঞ্চল থেকে ১৫০কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করে। এক হিসাবে জানা যায়, টেক্সাকো ইকুয়েডরের গভীর অরণ্যাঞ্চল এবং জলপ্রবাহগুলোতে ৩৪কোটি ৫লক্ষ গ্যালন অশোধিত তেল নিঃসৃত করে। ২০০৯সালে টেক্সাকোর নিজস্ব হিসাবকে উদ্ধৃত করেই আমাজন রাইট ওয়াচ নামক একটি সংস্থা জানায়, কোম্পানিটি ১হাজার ৮০০কোটি গ্যালন পরিমাণ বিষাক্ত তরল বর্জ্য সরাসরি প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তা ছাড়া টেক্সাকো জঙ্গলের মধ্যে যেসব তেলকূপ খনন করেছিল সেগুলোর প্রতিটির পাশে অন্তত দুটি করে ময়লা ফেলার গর্ত খুঁড়ে রেখেছিল। এসব গর্তের ময়লা উপচে পড়েও স্থানীয় নদ-নদী ও জলাশয়গুলোকে দূষিত করে দিয়েছে। দীর্ঘ ৪০বছরের তেল অনুসন্ধান এবং তেলের উৎপাদন অরিয়েন্ট অঞ্চলের ভূমি, মানুষ, প্রাণীকুল আর খেতের ফসলকে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ার শিকারে পরিণত করেছে। কোনো রকম বিকল্প উৎস না থাকার কারণে নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের মতোই এখানকার আদিবাসীরা দূষিত জলে স্নান এবং তা দিয়ে রান্নার কাজ সারতে বাধ্য হয়েছে। এই দূষিত এবং বিষাক্ত জল থেকে অন্তত আট ধরনের ক্যান্সার হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড মেডিকেল টিম ও ইকুয়েডরের স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা। এই অঞ্চলে শারীরিক ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্মগ্রহণ এবং নানা ধরনের চর্মরোগ নৈমিত্তিক ব্যাপার। ১৯৯৩-এ ইকুয়েডরের ৩০হাজার আদিবাসী একত্রে টেক্সাকোর (২০০১-এ শেভরনের সঙ্গে কোম্পানিটি একীভূত হয়ে শেভরন-টেক্সাকো নাম ধারণ করে। যা এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ তেল কোম্পানি) বিরুদ্ধে একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে। তারা জানিয়েছে, পরিবেশগত বিষয়ে করা এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মামলা। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ২হাজার ৭০০কোটি ডলার। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
গত মাসে ইকুয়েডরের একদল আদিবাসী নেতা মেক্সিকো উপসাগর অঞ্চল পরিদর্শনে যান। উদ্দেশ্য আরেক আদিবাসী সম্প্রদায় লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের হউমাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা। যারা সম্প্রতি তেল নিঃসরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দলটি নৌকায় চড়ে হউমাদের মাছ শিকারের ক্ষেত্রগুলোও পরিদর্শন করে। তারা দেখতে পান পুরো এলাকা অশোধিত জ্বালানি তেলের কারণে দূষিত হয়ে গেছে। তারা জানিয়েছেন, এই বিপর্যয় একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। হউমা আদিবাসীরা পুরুষানুক্রমে এখানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। সে সুযোগ এখন আর নেই। এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিপির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করুক বা না করুক আমাদের এখন নতুন পথে এগোতে হবে। তবে সে পথ বিশ্বায়নের প্রবক্তা ও প্রচারকদের পথ নয়। তেলের প্রতি আমাদের নেশা মানবসভ্যতাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।
No comments:
Post a Comment