Tuesday, September 20, 2011

Chittaprosad

 


প্রতিবাদের চিত্রভাষা...
মৃণালকান্তি দাস

গ্রামের বাড়ির লম্বা মাটির দাওয়া। ইতস্তত পড়ে থাকা শূণ্য মাটির হাঁড়ি-কলসি-পাত্র। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছের পাতাকোথাও গাছের ছায়া। এ সবই আঁকা কালো কালিতেস্কেচ। ছবিটির নাম পড়ে বোঝা যায় বাংলার কোনো এক তাঁতিপাড়ার ছবি। কোন একসময়ে এই তাঁতিপাড়ায় জীবন ছিল, আজ শূন্য ঐ পাড়াকোথায় গেল সব? ক্ষুধার জ্বালায় হয়তো বা লঙ্গরখানায়, কিংবা রিলিফ কমিটির অফিসে, অথবা হাসপাতালে। অথবা হয়ত ফ্যানের খোঁজে সুদুঢ় কোনো শহরে।
হাড়-পাঁজর বার করা মানুষ, হাসপাতাল আর লঙ্গরখানায় ছড়িয়ে থাকা মানুষ, সরু সরু পা, সামনে খাবারের শূণ্য বাটি নিয়ে বসে থাকা মানুষ। উলঙ্গ, অর্ধউলঙ্গছোট ছেলেদের ছবি, পরণে একরত্তি কাপড়, কী যন্ত্রণায় তাকিয়ে একের পর এক ছবিতে সেই মুহূর্তগুলির রচনা। যেখানে অবিশ্রান্ত মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও, এই মানুষগুলি, তাদের দীঘল আয়ত চোখ তুলে, শুধু একটি মুহূর্তের প্রাণ প্রার্থনা করে...।
দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা
যে চিত্রমালা জুড়ে থাকে কংকালসার মানুষের মিছিল। এরা সেইসব মানুষ, মানুষের স্রোত, যাদের ঘর গিয়েছে, স্বজন গিয়েছে, চলে গিয়েছে দেশ কাল। এখন তাদের নিত্যসঙ্গী শুধুই ব্যাধি, ক্ষুধা আর মৃত্যু।
খিদের ওই চিত্রমালা আমার আর কতটুকু জানাওই থুতু, ওই কষ, ওই দাঁতের দাগের গন্ধ প্রাণপনে শুঁকতে চাইছি। খিদের ওই গন্ধ আমরা ক-জন জানি! জানতেন আপনিনিজের গড়ে নেওয়া জীবন দিয়েই জেনে নিয়েছিলেনলোকাল ট্রেনে যাতায়াতের পথে কিংবা নিজের শৈশব থেকে যেমন জেনে নিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। খিদের স্বাদ, গন্ধ, ঝিমুনি, শ্বাস নিপাট জানতেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯২৬থেকে সাজাদপুরেশিলাইদহে বসবাস করার সময় ওই গন্ধটা চিনে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৩০০সালেই যে গল্প লিখেছিলেন, সেখানেই খিদের অক্ষর। রাধার যে বাক্যের জন্য দুখীরাম তাকে খুন করেছিলো— ‘ভাত কোথায় যে ভাত দিব। তুই কি চাল দিয়া গিয়াছিলি। আমি কি নিজে রোজকার করিয়া আনিব!’ —সে বাক্যটা সাধু ক্রিয়াপদে। তার ঠিক আগেই দুখীর সেই অমোঘ বাক্য—‘ভাত দে।যা বাক্যের ব্যাকরণ-গড়ন ফালাফালা করে ভেঙে ফেলে!
খিদের ওই নাড়ী-পোড়ানো গন্ধটা (তাঁর শব্দ ক্ষুধানল’) মনে রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ ছেড়ে আসার পরও। কতকাল পরে হেমন্তবালা দেবীকে যে সব চিঠি লিখেছিলেন তিনি, সেখানে মন্দিরের ধনী দেবতার বিরুদ্ধে ক্ষুধার্ত দেবতা। মন্দিরের বাইরে সত্যকার দেবতা সত্যকার মানুষের কঙ্কালশীর্ণ হাতের মুষ্ঠি প্রসারিত করে’...
১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ
আপনার সঙ্গী ফটোগ্রাফার সুনীল জানা। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকাগুলিতে চষে বেরিয়েছেন। ঘুরে ঘুরে আশ্রয়হীন, মুমূর্ষু মানুষের খবর সংগ্রহ করে পার্টির কাগজে প্রকাশ করাই ছিল আপনাদের দু’জনের কাজ। সাদা কাগজে কালো কালি, পেন, ব্রাশে আঁকিবুকিতে মানুষের দু:খ, দারিদ্র আর তার বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামের কাহিনী চিত্রিত করতেন‘জনযুদ্ধ’ কাগজের বিশেষ সংখ্যায় সেই ছবি কখনো কখনো কালোর বদলে লাল রঙের ব্যবহার। ফুটে উঠেছে চল্লিশের দশকের বামপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতির অনিবার্য ঐতিহাসিক প্রসঙ্গগুলি।
 


কিছু ছবি চারকোলে আঁকা। সব কিছুই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট, স্টার্ক। আপনার পেনের স্ট্রোকে, ছবির লাইনগুলোতে মৃত্যুপথ যাত্রী মানুষগুলি যেন, ‘আমরা যাইনি মরে আজও’ ঠিকই, আজ আপনাকে কেউ বলছেন অসাধারণ এক শিল্পী’, আবার কেউ সখেদে জানাচ্ছেন বিস্মৃতপ্রায় চিত্তপ্রসাদআপনাকে চেনার পথে কতো জল্পনা। রাজনীতি, সমাজ ও মানুষের অঙ্গাঙ্গিতা আজ আপনার ছবিকে শৈল্পিক আয়তন দিয়েছেঅথচ, একসময় আপনার ‘অতি সরল’ চিত্র ভাষায় বিষয়-নির্দিষ্ট ছবি আঁকার জন্য শিল্প মহলে আপনার কদর ছিলো নেহাতই আপনার পরিচয়। আপনি চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।
জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগণার নৈহাটিতে, ১৯১৫-র ২১শে জুন চট্টগ্রাম গভর্ণমেন্ট কলেজে পড়াশোনা শেষে কলকাতায় এসেই আলোড়ন তুলেছিলেন, আপনি তখন তরুণ। একসময় ভেবেছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসুর কাছে ছবি আঁকার তামিল নেবেন। হয়ে ওঠে নি আর। ৪০-এর দশকের প্রথমে যুক্ত হন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। হোলটাইমার হন। ৪৩-এর মন্বন্তরের সময়ে পার্টির নির্দেশে যান মেদিনীপুর। কালি, কলম আর খাতা নিয়ে। সঙ্গে সুনীল জানা, ফটোগ্রাফার। সুনীল জানার তোলা ফটোগ্রাফ, আপনার আঁকা ছবি ও রিপোর্টাজ ছাপা হত পার্টির মুখপত্র জনযুদ্ধ-এ, মন্বন্তরের বিবরণী। কিছুদিনের মধ্যে ঐ সব রিপোর্টাজ ও স্কেচ নিয়ে বম্বে থেকে প্রকাশিত হয় Hungry Bengal - A Tour Through Midnapur District, By Chittaprosad, In November 1943 নামে বইটি। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সমস্ত কপিই বাজেয়াপ্ত ও নষ্ট করা হয়।
চল্লিশের দশকে যখন একদিকে তেতাল্লিশের মন্বন্তর, আরেক দিকে রাজনৈতিক বিক্ষোভ সারা বাংলাকে উদ্বেলিত করছিল, তখনই আপনি পালন করছেন শিল্পী হিসেবে অনন্য ভূমিকা। শহর ও গ্রামের সুখ-দুঃখে জড়ানো মানুষ ও তার পরিবেশ ফুটে উঠেছিলো আপনার একান্ত নিজস্ব শৈলীতে কালিকলম ও তুলি কিংবা ছাপাই ছবির প্রকরণে। অচিরে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায় আপনাকে পাড়ি দিতে হয়েছিলো মুম্বইয়ে। সেখানেও নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন শিল্পভাষার প্রসারে। ব্যক্তিগত ও শিল্পগত দুই পরিচয়েই তিনি অনন্য। তাঁকে ওই সমগ্রতায় চিনুক সবাই— চাইতেন তাঁর বন্ধুরা, তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পানুরাগীরা।
স্কেচ-পোস্টার-কার্টুন ও আরও নানা চেনা মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ ও জনজীবন রূপ পেয়েছে আপনার হাংরি বেঙ্গল রচনাটিতেও। অসহযোগ আন্দোলন, তেলেঙ্গানার কৃষক-বিদ্রোহ, বাংলার তেভাগা আন্দোলন, ভারতের নৌ-বিদ্রোহ ইত্যাদি একের পর এক বিষয় আসা-যাওয়া করে আপনার ছবিতে। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র জনযুদ্ধপিপলস ওয়ার’-এ ছাপা সে-সব ছবি আজও চোখে ভাসে এ কালের সংস্কৃতিকর্মীদেরমন্বন্তরের ছবির সঙ্গেই কৃষক-জীবন ও তার চরম দারিদ্র কিংবা কৃষক-সমাবেশ ও প্রতিবাদ। পরে মুম্বইয়ের সুতাকল শ্রমিকদের ধর্মঘট বা রেল-ধর্মঘট। জাতীয় রাজনীতির মুখোমুখি আপনার নি:স্বার্থ প্রতিবাদ। ১৯৫৮-তে ৭ফুট বাই ১২ফুটের ম্যুরাল আঁকেন বিখ্যাত গায়ক পল রবসনের জন্ম উপলক্ষে।
এর পাশেই অবশ্য আপনার ছবির অন্য এক ঘর আছে যেখানে বার-বার ফিরে আসে বিশ্বশান্তিএই শিরোনাম, লোকজীবন লোকশিল্প বা লোকনৃত্যের অনুষঙ্গ, মা ও শিশুর অন্তরঙ্গতা, পুতুলনাচের পুতুল (শেষজীবনে যে-সৃজনকর্মে তাঁর মন গিয়েছিল)। মা তো বটেই, শিশুও তাঁর ছবিতে ভিড় করে আসে। সে যেমন হতভাগ্য শিশুশ্রমিক হতে পারে রূপকথাহীন দেবদূততেমনই কল্পনায় ভর করে মুক্তিপ্রয়াসী। ‘যে-রূপকথাকে হারিয়ে ফেলেছে শিশু, সেই বর্ণময় রূপকথারই যেন পুনরাবিষ্কার।’ এ সব ছবিও কখনও কালি-কলমে বা প্যাস্টেলে বা কদাচিৎ চারকোলে এবং অবশ্যই উডকাটে তবে সিংহভাগই লিনোকাটে।

বাংলা লোকশিল্পের ধারা কখনও সহায় হয়েছিলো আপনার শিল্পে। ভারতীয় ধ্রুপদী অভিজাত শিল্প অতি পরিশীলিত ও সুষমামণ্ডিত হওয়ার কারণে তার ব্যবহারের গন্ডি ভেঙে তছনছ হয়েছে। লোক-শিল্প আঙ্গিক তার বলিষ্ঠতার গুণে আপনার শিল্পে তার উপযুক্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে। ‘প্রথম শহুরে লোকশিল্পী’ যামিনী রায়ের শিল্পকে চিরাচরিত আঙ্গিকে নতুন গতি দিয়েছিলেন। একসময় যে লোক-শিল্প আঙ্গিক শুধুমাত্র লোকাচারগত অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হতো তা রূপ নিলো জীবন সংগ্রামের এক অনবদ্য প্রেক্ষাপটে।
শেষ জীবনে আপনি তখন মুম্বাইয়ে। গড়ে তুলেছিলেন পাপেট থিয়েটার ‘খেলাঘর’। লেখা, কস্টিউম ডিজাইন, পরিচালনা আপনার নিজেরই। শকুন্তলা, পৃথ্বীবারজ এবং সংযুক্তা নামে পাপেট শো এবং ছোটদের জন্য মজার লোককথার গল্প থেকে নেওয়া বিভিন্ন বিষয়। ডেনমার্কের ইউনিসেফ কমিটিকে দান করে গিয়েছিলেন শিশুদের জন্য সৃষ্টি সন্ধান ‘অ্যাঞ্জেলস উইদআউট ফেয়ারি টেলস’ এবং ‘নেগলেকটেড চাইল্ডহুড সিরিজ’-এর শিল্পকর্ম ১৯৭২-এ আপনাকে নিয়েই তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন চেকোশ্লোভাকিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালক প্যাভেল হবি।
আপনার শিল্পে ফুটে উঠেছে মানুষের শরীর ও মুখ যা রাজনীতির মানুষ হতে পারে, আবার দৈনন্দিনেরও। কিন্তু, সব কিছুতেই পুনরাবৃত্ত আপনার আসল জায়গা ছিলো শুধুই ছাপাই মাধ্যম। তাই আপনাকে বলতে পারি প্রিন্টার্স পার্সোনালিটি’, আপনার শিল্পের বিবর্তন ও বৈচিত্রও। আগে যা ছিল, তার পাশাপাশি নরনারীর যৌনজীবন, সুখী দাম্পত্য, ফুল বা জীবজন্তু কিছুই বাদ যায় না। এ কি শিল্পীর জীবনের ব্যর্থতাবোধেরই পরিপূরণ?
চারের দশকের বা যে কোনো সঙ্কটের সময়ে মানুষ যখন সঙ্কট থেকে উত্তরণ খোঁজে, তখন মানুষ সেই শিল্প উপভোগ করে যাতে সঙ্কটের কথা আছে। আছে তার থেকে মুক্তির ইঙ্গিত। শিল্পী সোমনাথ হোড়ের কথায়, মানুষের দু:খ দারিদ্র ছাড়াও জীবনের আর যা কিছু আছে তার রূপ দেওয়া শিল্পে দরকার। মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকা, আনন্দ, প্রেম-প্রীতি স্নেহ সবই তার জীবন সংগ্রামের অঙ্গ। আর তাই সৎ শিল্পের উপজীব্য। কোন্‌ ভাষায় তা প্রকাশিত হবে সে বিবেচনার ভার শিল্পীর ওপর ছেড়ে রাখাই ভালো।
চট্টগ্রাম থেকে কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও সোমনাথ হোরকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন সে সময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পি সি যোশী। তাঁরা অবশ্য আগেই চট্টগ্রামে, এমনকী মাঝে মাঝে কলকাতায় যাতায়াতে, পার্টির সাংস্কৃতিক কর্মে জড়িয়ে ছিলেন। যোশীর প্রেরণায় এসে পড়লেন বৃহত্তর জগতে। ততোদিনে চিত্তপ্রসাদ কালি-কলম-তুলির রেখায় এবং পরে কাঠখোদাই আর লিনোখোদাই মাধ্যমে নিজের ছবির একটা ভুবন তৈরি করে ফেলেছেনতিনি তাঁর ছবি আঁকা শুরুই করেছিলেন ৪৩-এর মন্বন্তর, কৃষক-আন্দোলন, গ্রাম ও শহরের মানুষের দুঃখকষ্ট নিয়ে। প্রগতি ভাবনার সঙ্গে যুক্ত থেকেছে তাঁর শিল্পতাঁর আসল জায়গাটা তখনও ছাপাই ছবিতেই। এই সব ছবির কথা অন্তরঙ্গ মহলের বাইরে অল্প লোকেই জানত। আরেকটা কারণ ছিল তাঁর আপসহীন মেজাজ। ছবিকে তিনি পণ্য করতে চাননি কখনও। অথচ তিনি যে কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন, তার স্বীকৃতি আছে নন্দলাল থেকে শুরু করে অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরই মুখে। পরে বিদেশি বন্ধু ও ভক্তদের তারিফও পেয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন নামুম্বইয়ের আন্ধেরিতে একটি ঘরে বসে দৈন্যদশাতেও নিঃসঙ্গ এই শিল্পী নিজের কাজ করে গিয়েছেন। কলকাতার জন্য একটা টান ছিল সব সময়ই। ১৯৭৮-এ জীবনের একেবারে শেষ পর্বে ফিরেও এসেছিলেন, কিন্তু তখন তো তিনি মৃত্যুর সীমান্তে
এ দেশে তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীর সংখ্যা বেশ সীমিত। ৪৩-এর সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে প্রথম একক, তার পর যৌথ ভাবে কয়েকটি। মুম্বই-পর্বে চিত্তপ্রসাদের ছবির প্রগাঢ় অনুরাগীদের পাওয়া গেল বিদেশে। ১৯৫৫-তে নিউ ইয়র্কের ইন্ডিয়া হাউসে চিত্তপ্রসাদের করা ৪০-টি সাদা-কালো প্রিন্টের প্রদর্শনী হয়, ঐ বছরেই ওনার লিনোকাট নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে Contemporary Woodcuts নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। ১৯৫৬সালে প্রাগ শহরে এবং ইউরোপের আরও কিছু জায়গাতেও (ডেনমার্ক, হল্যান্ড,জার্মানী) চিত্তপ্রসাদের কাজের প্রদর্শনী হয়। ১৯৬৪-তে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ চিত্তপ্রসাদের গ্রাফিক্সের শেষ একক প্রদর্শনী, ১৯৭৮-এ মৃত্যুর পর ১৯৯৪-এ শান্তিনিকেতন কলাভবনে। ১৯৬৫-তে মা-কে একটি চিঠিতে লেখেন – ‘কলকাতায় প্রদর্শনীর পরে কাগজে আমার কাজ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু আমার ছবি কেনার জন্য কেউই এক পয়সাও খরচ করে না। বিদেশীরা কিছু ছবি কেনাতেই আমি এখনও বেঁচে আছি। নিজের দেশের লোকের ওপর ভরসা করতে হলে, এতদিনে মরে ভূত হয়ে যেতাম।’
৫০-এর দশকের পর থেকে ভারতীয় চিত্রকলায় যে প্রবল বাঁক ও বদল, সে সবের থেকে চিত্রপ্রসাদের কাজ একটু দূরে ছিল। হয়ত বা ওনার জীবনাচরণ। ৫০-এর দশকের শুরু থেকে বম্বে শহরে এক কামরার একটা ঘরে কিছু বইপত্র, একটা কুকুর, একটা বেড়াল আর নিজের কাজকর্ম নিয়ে মূলতঃ একা জীবন কাটিয়েছেন। সেই সময়ে চেক দূতাবাসের এক কর্মী Ing Frantisek Salaba -র সাথে পুতুল নাচের সূত্রে সখ্যতা গড়ে ওঠে। Salaba পরে লেখেন - But his pride did not allow him to show it or to even try to sell some of his art works to me. When I understood his situation, I tried to help by purchasing his drawings and linocuts. The difficulty was that he was never able to state his price and I was force to offer him a valye myself, or to think of ingenious ways of puting money in his pocket.


চিত্তপ্রসাদের ছবির প্রতিবাদী রূপ। হাংরী বেঙ্গল পর্বে এই প্রতিবাদী রূপ না থাকলেও, ৪৭ থেকে ৫০ সালের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবে অসংখ্য পোস্টারে এই প্রতিবাদী ধারাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নৌ-বিদ্রোহ, তেলেঙ্গানা আন্দোলন, কালোবাজারী, দুর্নীতি, কাশ্মীর সমস্যা, বিভিন্ন দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে আঁকা প্রোপাগান্ডামূলক পোস্টার আজকেও চমকে দেয়, এবং এর মধ্যে অনেক পোস্টারই আজকেও, এতদিন পরেও প্রাসঙ্গিক! ফলে ৫০-এর দশকের শুরু থেকেই চিত্তপ্রসাদ হয়ত বাঁধা পড়ে গিয়েছিলেন ওনার ৪৩-এর মন্বন্তরের ছবি ও প্রতিবাদী পোস্টারের সাথে।
আমরা যারা মধ্যবিত্ত কুরশিতে বসে লেখাজোখা করি, থলে হাতে বাজার যাই বটে, টের পাই দাম-বাড়ার দাপট, কিন্তু পাকস্থলী পূরণের অনিরাপত্তায় ততখানি কেঁপে উঠি না। ভাবি না দেশজোড়া মানুষের পেটের বিরুদ্ধে কাদের ষড়যন্ত্রে নিত্য লেজ আছড়াচ্ছে। শুধু তাকিয়ে দেখি, খাদ্যের বলয় থেকে প্রতিদিন ঠেলে বার করে দেওয়া হচ্ছে অগণন মানুষকে, তবু সাদা-নীল মলাটের ইকনোমিক সার্ভে-র রিপোর্ট হাতে অর্থমন্ত্রীর প্রশান্ত মুখ।
এ দেশের কোটি কোটি মানুষের ছিনার হাড়ের ভাঁজে ভাঁজে যে গর্ত, সে গর্তের গভীরতা বাড়ে, সেখানে শুধুই রাষ্ট্রের পরিসংখ্যান। শুখা উনুনফ্যান-ফোড়ন-ন্যাতায় না-ভিজে উনুন, গালের কষ, দিন-দিন সাদা হয়ে যাওয়া চোখ, সাদা চিটেল থুতুতে ওই পরিসংখ্যানের শব্দ, সংখ্যা গণিত...।
তারই মধ্যে আবিষ্কার করি কমরেড আপনাকে
আপনার শিল্পের প্রতিটি অণু ছিলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি জেহাদ। এখন সাম্রাজ্যবাদের চেহারা পালটেছে। সরাসরি দেশ দখলের চেয়েও অনুগত সরকারের মাধ্যমে সে দেশে পুঁজি লগ্নিতে তাদের আগ্রহ বেশি। এভাবেই কয়েক বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে ব্যাঙ্কে মানুষের গচ্ছিত আমানত রাতারাতি গায়েব হয়ে গেছে। এ দেশেও তেমনটা ঘটতে চলেছে। গরিব মেহনতী মধ্যবিত্তের সমষ্টিগত প্রতিরোধের এ মুহূর্তে বড় প্রয়োজন।
আর ততটাই প্রয়োজন ওদেরও এই প্রতিরোধ ভাঙার। ওরা অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রতিনিধিদল, আমরা অর্থাৎ খেটে খাওয়া মানুষ।
আপনাকে এ সময়ে লেখা কারণ এতোদিন পরেও আপনার শিল্পে অপরিবর্তিতভাবে রয়ে গেছে মেহনতী মানুষের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আপনার বিশ্বাসের কথা। চারপাশের নিজেকে ঘিরে থাকা লোভীদের মাঝে আপনার মতো রোমান্টিক যোদ্ধারা আমাদের সহায়। তাই অসময় নয়, বরং এটাই সময় আপনাকে লেখার।


Friday, September 9, 2011

ওয়ালমার্টের ভারত-স্বপ্ন!

ওয়ালমার্টের ভারত-স্বপ্ন!
 


বিজ্ঞাপন আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের জগতে। যেমন মাইক্রোসফ্‌টের বিজ্ঞাপন জানান দিচ্ছে ‘আজ তুমি কোথায় যেতে চাও?’ এধরণের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আমাদের মনও ভেসে বেড়ায়। অথচ সংবাদপত্রের পাতায় বিজ্ঞাপন অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত খবরের কাগজ তেমন আকর্ষণীয় হয় না। তা সে ব্যাঙ্কে চুরির ঘটনাই হোক বা কোন সংস্থার নতুন পণ্যসামগ্রী বাজারে নিয়ে আসার বিষয়েই হোক, সবই নির্দিষ্ট থাকে ক্রেতাদের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে। আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায় এইসব ক্রেতাদের নির্দিষ্ট কিছু পছন্দের দিকে তাকিয়ে। অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না ক্রেতাদের প্রলুদ্ধ করার বিষয়ে বিনোদন জগৎ, গণমাধ্যম ও খুচরো ব্যবসায়ীদের মধ্যে কী ধরণের বোঝাপড়া কাজ করে
নামী বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলি ক্রেতাদের পছন্দের ধরণ ঘন ঘন পরিবর্তনের জন্য তাদের মানসিক বিচ্ছিন্নতার কথা বলে। বাস্তবে বহুজাতিক সংস্থার কাজের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে টিনএজের ছেলেমেয়েদের পোষাকের ধরণ প্রায় একই রকমের। এখানে বাজার চলতি ভাষায় বিশ্বায়নে বিচ্ছিন্নতার কোনও জায়গা নেই। বরং পুরো উল্টো। বহুজাতিকদের শত্রুই হোল প্রচলিত ধারা, স্থানীয় ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় মানুষের রুচির ভিত্তিতে বাজার থেকে জিনিস কেনার অভ্যাস। সেকারণেই বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীদের দর্শনই হলো নিজস্ব ধারায় নিজস্ব ব্র্যাণ্ডের উপর ভিত্তি করে মানুষের রুচির পরিবর্তন করা
প্রশ্নটা আসলে ‘আজ তুমি কোথায় যেতে চাও’-এর থেকে বড় হয়ে ওঠে ‘আমরা তোমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছি’আমাদের পোষাক পরিচ্ছদে সুসজ্জিত হয়ে সেখানে তুমি পৌঁছে যাবে। সোজা কথায় আমার পছন্দই তোমার পছন্দ। আমরা সেই দিকেই তোমাকে ঠেলে নিয়ে যাব। বিজ্ঞাপনের ভাষার সঙ্গে কখন যে সহমত গড়ে ওঠে আমরা বুঝতে পারি না।
এসব ক্ষেত্রে মানুষের পছন্দের তালিকাও ক্রমশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর জন্য গ্রহণ করা হয় নানা ধরণের পন্থা। যেমন— ১) বিভিন্ন সংস্থার সংযুক্তিকরণ, ২) ছোট ছোট সংস্থাকে বড় সংস্থা কিনে নিয়ে এক ছাতার তলায় ব্যবসা এবং ৩) স্থানীয় সংস্থাগুলিকে বাধ্য করা বড় সংস্থার কাছে নিজেদের বেচে দিতে।
বহুজাতিক সংস্থা সবসময় ক্রেতাদের পছন্দের দিকে সবিশেষ নজর দেয় এমন ভাবে যাতে মানুষের রুচি সংস্কৃতি আমূল পরিবর্তন হতে বাধ্য। সেই সঙ্গে মানুষের মেলামেশার প্রকাশ্য স্থানগুলি নষ্ট করে দেয়। বিগবক্‌সের শোরুম তথা বিপণন কেন্দ্রগুলি এত বিশাল যে সত্তর হাজার ধরণের পণ্য সামগ্রী সুন্দর করে থরে থরে সাজানো থাকে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের নজর সেদিকে চলে যাবে। সেখানে একসঙ্গে প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করতে পারে। এতে করে সেই অঞ্চলের ভৌগলিক চেহারাটাও পাল্টে যায়। শহরের প্রধান প্রধান রাস্তায় জনপ্রিয় কাফে, হার্ডওয়্যারের দোকান, স্বতন্ত্র বইয়ের দোকান অথবা আর্ট ভিডিও হাউস যা ছিল সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্যাক-ম্যান চেনের : স্টারবাক্‌স, হোম ডিপো, দ্য গ্যাপ, চ্যাপ্টার্স, বর্ডার্স কিম্বা ব্লকবাস্টারের বিপণন কেন্দ্র। যেখানেই আপনি যান না কেন আর কিছু না কিছু জিনিস কিনুন না কেন জানবেন সবই যাবে কোন না কোন বহুজাতিক সংস্থার ঘরে।  প্রকাশ্য জায়গা বা পাবলিক প্লেস বলে পরিচিত জায়গায় গজিয়ে উঠছে বিরাট বিরাট মল। মুখে বলা হচ্ছে প্রকাশ্য জায়গাআর এখানে কেউ যদি কোনও প্রচারপত্র বা হ্যান্ডবিল বিলি করতে আসে তৎক্ষনাৎ তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয় এভাবেই শহরের পাবলিক প্লেসগুলি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হচ্ছে
এক শতাব্দী আগে মানুষের রুচি, সংস্কৃতি, নিত্যদিনের অভ্যাস বদলের সুপরিকল্পিত কোনও প্রয়াস ছিল না। ছিল না চেন পদ্ধতিতে বিক্রির উন্মাদনা। কপিরাইট, ট্রেডমার্ক আইন সহ ব্যক্তিগত শুভাকাঙ্খী সংস্কৃতি বলতে কিছুই ছিল কি? অথবা ব্যবসায়িক মহলে বাক স্বাধীনতার প্রশ্ন ছিল কি? কিন্তু আজকে ক্রেতাদের ব্যক্তিগত পচ্ছন্দ অপচ্ছন্দের কথা ভেবে বহুজাতিকরা ব্যবসা করবে একথা কল্পনা করা যাবে না। আমরা কী কিনবো, কেমন করে সাজবো, আমাদের বাড়ি কী করে নির্মাণ করবো সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রকাশ্য স্থানের মতন চলে যাচ্ছে বহুজাতিকদের কবজায়। আমাদের পছন্দ অপছন্দ সব কিছু ঠিক করে দিতে মরিয়া বহুজাতিক সংস্থার বিপণন পদ্ধতি।
গত শতাব্দীর আট ও নয়ের দশকে বহুজাতিক সংস্থার যে সব চেন বাজারে এলো, যেমন- আইকিয়া, ব্লকবাস্টার, দ্য গ্যাপ, কিনকো’স, দ্য বডি শপ, স্টারবাক্‌স। এই সব বিপণন কেন্দ্রগুলি ছয় ও সাতের দশকের ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট ও মলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পুরাতন ধ্যানধারণা ভেঙে ব্যবসার নতুন ধরণ উন্মোচিত হলো এদের হাত ধরে আট ও নয়ের দশকের মলগুলি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নতুন যুগের কথা বলে। আগেকার সেই কার্টুন, প্ল্যাস্টিকের হলুদ খোল বা সোনালী আর্চের দোকানের কথা এখন আর কেউ ভাবে নাআধুনিক মলে প্রবেশ করলে দেখা যাবে কিনকো’স, ব্লকবাস্টারের কর্মচারীরা কাজ করছে সাদা ও খাকি রঙের পোষাক পড়ে যা ‘দ্য গ্যাপ’ থেকে কেনা। পোষাকে জ্বল জ্বল করছে ‘গ্যাপে আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ’কফি পরিবেশনের সময় স্টারবাক্‌সের কর্মচারীদের পোষাকে হয়ত জ্বল জ্বল করছে ‘কিনকো’-তে আপনাকে স্বাগত’। এই চেনের বিভিন্ন আউটলেটে কর্মরতদের চাকরির আবেদনপত্র পরীক্ষা করলে দেখা যাবে সবই কিনকো’স-এর কোন বন্ধুর কম্পিউটার মেসিনে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ১২পয়েন্ট হেলভেটিকাতে মূদ্রিত নবাগত কর্মীরা সেখানে সি কে ওয়ান সুরভিতে আবৃত হয়ে কাজ করে। একমাত্র স্টারবাক্‌সের বিপনীতে কেউ কোন রকম সুরভি ব্যবহার করে না। তাহলে কফির গন্ধ ঢাকা পড়ে যাবে। এরা মুখ ধুয়ে আসে বডিশপের ব্লু কর্ণ মাক্স দিয়ে। আর যেখানে তারা বসবাস করে দেখা যাবে সেগুলি সাজানো আইকার আসবাবপত্রে।
অনেকগুলি বিপণন কেন্দ্র নিয়ে এক একটি চেন তৈরি করে প্রথমেই এরা নিকটবর্তী খুচরো ব্যবসায়ীর থেকে কম দামে বাজারে জিনিস বিক্রি করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অর্থনৈতিক দিক থেকে কাবু করে ফেলে। দ্বিতীয় ধারায় বিদ্যুতের ন্যায় ঝটিকা বেগে চেনগুলি তৈরি করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের একঘরে করে ফেলে। তৃতীয় ধারায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা। যেখানে একজাতীয় ব্যবসা না করে বহুমুখী ব্যবসা চালু করা। অনেকটা সুপারস্টোরের ধারায় নতুন নতুন জিনিসের আমদানি বাড়িয়ে ত্রিমাত্রিক রূপদান করে সেই ব্র্যাণ্ডের বাজার দখল করা।
এতদিন ওয়ালমার্ট ও বিগবগসের বিরুদ্ধে প্রচুর বইপত্র লেখা হয়েছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক বোওতের্গা লেখে ‘‘শ্যাম-উই-ট্রাস্ট’’। হোমডিপো (গৃহস্থালীর যাবতীয় জিনিস), অফিসডিপো ( স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালতের যাবতীয় সামগ্রী), বেড বাথ অ‌্যাণ্ড বিয়ণ্ডকে (বিছানাপত্র, বাথরুমের প্রয়োজনীয় জিনিস ও অন্যান্য) একত্র করে একটি সুবিশাল বিপণন কেন্দ্র খোলা হলো ‘‘পাওয়ার সেন্টার’’ নাম দিয়ে। খুচরো ব্যবসায়ীরা সকলে একে ‘ক্যাটাগরি কিলার’’ নামে অভিহিত করলো। কারণ এদের ক্রয় ক্ষমতা এত বেশি যে নিকটবর্তী সব ছোট ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীকে শেষ করে ফেলতো।
খুচরো একচেটিয়া ব্যবসার জগতে শ্যাম ওয়ালটনের সাম্রাজ্য এত বিশাল যে তাকে ক্যাটাগরি কিলার বললে কম বলা হয় এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক অনেক দিকও ছিল। নানান পন্থায় বিগবক্সের এবং তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহযোগী সংস্থার অমানবিক পর্যায়ের ধারা—ফুটপাত ব্যতীত রাস্তা, সরাসরি বিপণন কেন্দ্রের ভিতরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা যায় এমন ব্যবস্থা, বিপণন কেন্দ্রের এক একটা স্টোরের আয়তন যেন ছোটখাটো একটা গ্রামের মতন। আর এসব কিছুই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুন্দর ভাবে নকশা করা। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। ডিসকাউন্ট স্টোরগুলি ক্রেতাদের পয়সা বাচানোর জায়গা। শহরের প্রান্তে কংক্রিটের সমুদ্রের মতন ডিসকাউন্ট স্টোরগুলির বাড়বাড়ন্ত ঘটতে লাগলো। শহরের ঐতিহ্যময় প্রাণকেন্দ্র টাউন স্কোয়ারে আগে মানুষজন নানান উপলক্ষ্যে মেলামেশা এবং সভা-সমিতিকে কেন্দ্র করে মিলিত হবার সুযোগ পেত। এখন সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে  বড় বড় বিপনন কেন্দ্র বা মলগুলি। সেখানেই এখন মানুষজন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা ছাড়া যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে মেনে নিয়েছে। অন্য দিকে স্টারবাক্‌স, ভার্জিন মেগাস্টোর ও মাইক টাউনের পত্তনের জন্য এরাই প্রাথমিক পর্বের যাবতীয় কাজ সেরে রাখেবিগবক্স তাদের আয়তনকে ব্যবহার করে অবিশ্বাস্যভাবে প্রচুর পরিমানে সামগ্রী মজুত করতে পারে। সেখানে নতুন নতুন খুচরো ব্যবসায়ীরা নিজেদের ভালো ভালো ব্র্যাণ্ডনেম ব্যবহার করে ওয়ালমার্টের ডিসকাউন্ট যেখানে কম তার পাশে যতটা উচুতে রাখা সম্ভব রাখবার চেষ্টা করে যাতে মানুষের নজরে পড়ে। বিগবক্সের প্রয়াস ছিল মানুষের মধ্যে কম দামে জিনিস কেনার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলা। আর নতুন খুচরো ব্যবসায়ীরা ব্র্যাণ্ডের চেনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট দামে মানুষ যাবতীয় কেনার অভ্যাস রপ্ত করুক সেই প্রয়াস অব্যহত রাখল।
সংবাদপত্র ও সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে স্টারবাক্‌সের ঘোষণা ছিল এই হচ্ছে তৃতীয় পছন্দের জায়গা যেখানে নিশ্চিন্তে নিরিবিলিতে মিলিত হওয়া যায়। যা ম্যাকডোনাল্ড বা ওয়ালমার্টের মতন ঘিঞ্জি জায়গা নয়। স্টারবাক্‌স মানেই সম্ভ্রান্ত রুচিশীল মানুষের পছন্দ অনুযায়ী আধুনিক বিন্যাসে তৈরি। যেখানে এক পেয়ালা কফি নিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিরিবিলিতে আড্ডা দেওয়া যায়। শহরের এঁদোগলির পাশে আগেকার পুরনো ছোটখাটো কফিশপের থেকে স্টারবাক্‌সের কফিশপগুলি সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে ঝা চকচকে বিশালতা নিয়ে তৈরি। একথা অবশ্যই ঠিক এটা সভাসমিতির জায়গা নয় কিন্তু একসঙ্গে অনেক মানুষ এখানে নিরিবিলিতে পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবেন স্টারবাক্‌স শুধুমাত্র কফিশপ নয়, এখানে রয়েছে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। যেখানে সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতা কর্মীরাও সময় কাটাতে পারবেন। কপির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে হাতের সামনে বইয়ের পাতায় চোখ রাখলে নীরব সমুদ্রের মতন বিশ্বকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
এটাই হচ্ছে ওদের দৃষ্টিভঙ্গী। বিগবক্‌সের মতন খোলামেলা প্রচুর জায়গা দেখে মানুষ প্রলুদ্ধ হবে এখানে আসতে। স্টারবাক্‌স বিগবক্‌সের থেকে আলাদা হলেও এদের ব্যবসার ধরণ কিন্তু একই। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে প্রথম তেরো বছরে স্টারবাক্‌সের শ্রীবৃদ্ধি দেখলে মাথা ঘুরে যাবে কিন্তু সারা বিশ্বে ওয়ালমার্টের খুচরো ব্যবসা ধরনের সঙ্গে সায়ূয্য আছে। এবং এখানেই ব্যবসায়িক সাফল্য লুকিয়ে আছে।
কোক, ম্যাকডোনাল্ড এবং এ অ‌্যাণ্ড পি’র সঙ্গে তুলনাকে সর্বদাই স্বাগত জানায় কিন্তু স্টারবাক্‌স নিজের ব্র্যাণ্ডের সুখ্যাতির কারণেই এই তুলনাকে সমর্থন করে না  সর্বপরি গ্যাপ কাপড় এবং তার ব্র্যাণ্ড নাম নিয়ে পরিপূর্ণ জিনিষই বাজারজাত করে যা সহজেই গ্যাপ থেকে কেনা যায়। যেমন— খুব সহজেই এক ক্যান কোক বা দুধ কেনা যায়। অন্য দিকে স্টারবাক্‌স এক শ্রেণীর ব্যবসাতেই বেশি আগ্রহী যেমন এক কাপ কফি এবং পরিপূর্ণ ভাবে তাকেই জনপ্রিয় করে তোলে। স্টারবাক্‌সের কফি খেলেই মনে হবে কোনও আধ্যাত্বিক বা বিশিষ্ট কোনও পরিকল্পকের স্বাদ রুচির সঙ্গে আপনার সংযোগ ঘটছে। যে কারণে স্টারবাক্‌স ব্লকবাস্টার হিসাবে  পরিচিত হতে চায় না চায় একচেটিয়া বিপণনের অধিকারী হতে। আপনার হৃদয়ের সঙ্গে হার্দিক সম্পর্ক স্থাপনে নিজেকে অগ্রপথিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
চেন ব্যবসার প্রকৃত চিন্তা ভাবনা নিয়ে শহুরে ক্রেতাদের মাথাব্যথা নেই। বরং সামান্য পরিমাণে হলেও বিক্রেতার নিজের পণ্য সামগ্রী বিক্রির পিছনে কিছু যুক্তি ও ভাবাবেগ কাজ করে। প্রতিটি ব্র্যাণ্ড উপাদানের ক্ষেত্রে এটা ওঠানামা করে। টুকরা-টাকরা খণ্ড জুড়ে তৈরি কোন জিনিষ কতটা প্রগতিশীল বা ঘরে তৈরি কিনা এটা তাদের কাছে কোনও বিষয়ই নয়। ‘লেগো’র মত জুড়ে জুড়ে এক একটা চেন, এক একটা চেনের মধ্যে শতাধিক নিজস্ব খণ্ড খণ্ড অংশ জুড়ে তৈরি বিপনন কেন্দ্রচেনের যুক্তির মধ্যে যদি উক্ত খণ্ড খণ্ড অংশগুলি ম্যাকডোনাল্ডের কড়া করে মাছ ভাজা বা হামবার্গার অথবা ‘‘চারটি মৌল আইকন’’ হয় তবেই কিছু কথা থাকে। প্রতিটি স্টারবাক্‌সের বিপণন কেন্দ্রের নক্‌শার জন্য ভবন নির্মাণের সময়ই সর্বাধিক নজর দেওয়া হয়। যেন শান্তির প্রতীক।
এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক স্তরে চেন সম্প্রসারণের সময় দৃশ্যত নজরে আসে। যখন খুচরো ব্যবসায়ীরা নিজেদের দেশ ছেড়ে বাইরে পা রাখেন তখন স্টারবাক্‌সের এক ছাতার তলায় অনেক ব্যবসার সঙ্গে এক সঙ্গে প্রচুর জিনিস নিয়ে বিক্রির রণকৌশলের সঙ্গে ওয়ালমার্টের বিপণনের ধরণ মিলে মিশে যায় নতুন বাজারে জিনিষের দাম কম রাখতে ওয়ালমার্ট, হোমডিপো এবং ম্যাকডোনাল্ডের মতন চেনগুলি তুরুফের তাস হিসাবে একসঙ্গে অবিশ্বাস্য রকমের প্রচুর জিনিষ পাইকারদের কাছ থেকে কেনে এবং প্রতিযোগী ব্যবসায়ীদের থেকে কম দামে ক্রেতাদের কাছে মাল বিক্রি করে। যে কারণে অন্যরা নিজেদের দেশেই একটির বেশি বিপণন কেন্দ্র খুলতে পারে না বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ওয়ালমার্ট ও অন্যান্যরা বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের সময় সেখানকার চালু চেনগুলি কিনে নিয়ে নাটকীয়ভাবে নিজেদের ব্যবসা শুরু করে। আসলে এসব কৌশলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বহুজাতিক খুচরো ব্যবসার সাফল্যের চাবিকাঠি।

ধরুন আমাদের দেশের কথা। ভারতে সংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরি বা কাজের সুযোগ খুবই সীমিত। দেশের বেকার সমস্যা দিন দিন জটিল আকার নিচ্ছে। যাঁরা শিক্ষার সুযোগ সেভাবে পাননি, তাঁদের সামনে তো বটেই, শিক্ষিত ও পেশাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যাঁরা, তাঁদের সামনেও কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। এই অবস্থায় অতি সাধারণভাবেই জীবনযাপন করার জন্য বেকার মানুষ খুচরো বাণিজ্যে উপার্জনের পথ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারী তথ্য বলছে, কারখানায় পণ্য উৎপাদন (অ-কৃষি) ক্ষেত্রে ১৯৯০থেকে ১৯৯৮সালের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির হার ছিল ৫শতাংশের কম। স্পষ্টতই অন্যত্র কাজের সন্ধান করতে হয়েছে বিশাল শ্রমশক্তিকে। সেক্ষেত্রে রুটি-রুজির পথের হদিশ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে খুচরো বাণিজ্য, যা প্রায় সবটাই অসংগঠিত। সেদিক থেকে বলা যায়, খুচরো বাণিজ্যের এই প্রসার আসলে দেশের ছদ্ম বেকারত্বেরই প্রতিফলন। যাঁরা বেকার, তাঁরা চাকরির সুযোগ না পেয়েই নিজের যৎসামান্য পুঁজি নিয়ে ও নিজের পরিশ্রম করার ক্ষমতার ওপর ভরসা রেখে কোনোরকমে একটা ছোট দোকান চালু করে খুচরো বাণিজ্যকে জীবিকা করতে বাধ্য হচ্ছেন। অর্থাৎ একজন খুচরো ব্যবসায়ি জন্ম নিচ্ছেন পরিস্থিতির শিকার হয়ে। তারপরেও উদয়াস্ত কী পরিশ্রম করে তাঁরা পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করেন, ভারতের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকালে তা উপলব্ধি করা যেতে পারে। আজ যখন ইউ পি এ সরকার খুচরো বাণিজ্যের দরজা খুলে দিতে চাইছে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের স্বার্থে, তখন আসলে এই সামান্য পুঁজির স্বল্প রোজগেরে খুচরো ব্যবসায়ীদের জীবিকার লড়াইকে থামিয়ে দিতে চাওয়া হচ্ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা হলো, খুচরো বাণিজ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরুতে বিলাস দ্রব্য নিয়ে বহুজাতিক সংস্থাগুলি প্রবেশ করে। মূলত, সমাজের উচ্চবিত্তদের কাছে তুলনামূলকভাবে সস্তায় সেগুলি তারা বিক্রি করে। ক্রমশ তারা হাত বাড়ায় অন্যান্য পণ্যের দিকে। অর্থাৎ বিলাস দ্রব্যের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতিকে প্রতিষ্ঠা করে গোটা বাজার গিলতে উদ্যত হয় বহুজাতিকরা। এভাবেই তারা সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির বাজারেও দখল কায়েম করে। মার্কিন কৃষি দপ্তরের তথ্য বলছে, খোদ আমেরিকাতেই ২০টি বৃহৎ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ২০০১সালে মুদি দ্রব্যের মোট বিক্রির ৫৮.৭শতাংশ অংশীদারি দখল করেছে, যা ১৯৮৭সালে ছিল ৩৬.৫শতাংশ। বস্তত, উন্নত দেশগুলির বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলির বাজারে ঢুকতে চাইছে বিপুল সংখ্যক ক্রেতাকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্য। একটি হিসেব দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। এখন ভারতের জনসংখ্যা ১৩০কোটির মতো। এর ২০ শতাংশ মানে ২৬কোটি। নয়া অর্থনৈতিক নীতিতে দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫-২০শতাংশ রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে আর্থিক ক্ষমতার দিক থেকে। শতাংশের হিসেবে সংখ্যাটি ছোট হলেও জনসংখ্যার হিসেবে এর মানে ১৯.৫—২৬কোটি মানুষ। আমেরিকা, ইউরোপ মিলিয়ে অনেকগুলি দেশের জনসংখ্যা যোগ করলে তবে এই সংখ্যা পাওয়া যাবে। অতএব শুধু ভারতেই যদি বহুজাতিকরা খুচরো বাণিজ্যের মাধ্যমে এত বিপুল সংখ্যক ক্রেতা পাওয়ার সুযোগ হাসিল করতে পারে, তাহলে তাদের মুনাফার পরিমাণ বাড়ানোর মূল লক্ষ্য যে অনেক বেশি অনায়াসে পূরণ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনো কোনো মহল থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে, এরা ভারতে যে সাপ্লাই চেন গড়ে তুলবে, তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। ঠিকই, তবে কর্মসংস্থানের সুযোগ যা সৃষ্টি হবে, তার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যায় কর্মচ্যুতি ঘটবে দেশীয় খুচরো ব্যবসায়ীদের বাজার বহুজাতিকরা দখল করে নিলে। তারপরেও ইউ পি এ সরকার খুচরো বাণিজ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগকে অনুমতি দিতে ব্যগ্র। স্পষ্টতই দেশের এক বিশাল সংখ্যক মানুষের জীবিকার ওপর আঘাত হানতে চাইছে সরকার, যার নেতৃত্বে কংগ্রেস এবং যার অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। সুতরাং এই প্রচেষ্টা আর যা-ই হোক, দেশের গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের স্বার্থে নয়।

প্রায়শই বলা হয়ে থাকে, ভারতে যদি খুচরো বাণিজ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগকে অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ভারতীয় ক্রেতারা বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন। আরো বলা হয়ে থাকে যে, ভারতে যদি বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা দক্ষ সাপ্লাই চেনগড়ে তুলবেন। তাতে শুধু ভারতীয় ক্রেতারাই উপকৃত হবেন না, আন্তর্জাতিক বাজারে ঢোকার রাস্তাও খুলে যাবে। পরিণতিতে আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্র ও কারখানায় পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্র উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করতে আরো বড় বাজার পাবে। কিন্তু সত্যিই যদি বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে সস্তার পণ্য নিয়ে এসে এদেশে বেচতে শুরু করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশীয় উৎপাদকরা বাজার হারাবেন, সরাসরি তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ঐসব উৎপাদকদের উৎপাদিত সামগ্রী যাঁরা বিক্রি করেন, সেই দেশীয় খুচরো ব্যবসায়ীদের ওপর। এমনকি যদি বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ীরা ভারতীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে সামগ্রী কিনে এখনকার তুলনায় সস্তায় বেচতে চায়, তাহলেও তাঁরা ভারতীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে সামগ্রী কিনতে চাইবে কম দামে। বলা যায়, বাজার হারানোর আশঙ্কায় বহুজাতিকদের কাছে ভারতীয় উৎপাদকরা তখন অলাভজনক বা কম দামে সামগ্রী বিক্রি করতেও বাধ্য হবেন। পরিণতিতে তাঁদের উপার্জন আসলে নির্ভর করবে বহুজাতিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর।