Monday, June 13, 2011

মুনাফা বনাম গরিবের লড়াই



১৪৯২-এ কলম্বাসের প্রথম অভিযান থেকেই মহামারি এবং বাণিজ্যিক পুঁজির ইওরোপীয় উৎসের শক্তিগুলি আমেরিকার ভূখণ্ডের মূল অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছিল অভাবনীয় বর্ববতায়। এইভাবেই সংগঠিত হয়েছিল আমেরিকার প্রাচীন আদিবাসীদের সমগ্র জনসংখ্যাকে নির্মূল করার কাজ। এই দুই মহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের নিদারুণ ফলাফল দেখেই চার্লস ডারউইন মন্তব্য করেছিলেন : ইওরোপীয়ানরা যেখানেই গেছে সেখানেই ভূখণ্ডের প্রকৃত অধিবাসীদের নির্মূল করা হয়েছে ভয়াবহ নৃশংসতায়।
১৯৪২-এর পর এক শতাব্দীর মধ্যে আমেরিকার আদিবাসী ইন্ডিয়ান জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিলো ৯০শতাংশ। প্রান্তিক দেশগুলির অগ্রগতির সমস্ত প্রয়াস ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে চূড়ান্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যার মধ্য দিয়ে নিজস্ব অর্থনীতি অগ্রগতির পরিবর্তে, দরিদ্র, প্রান্তিক অর্থনীতির সম্পদ নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়েছিল কেন্দ্র বা উন্নত ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির ভাণ্ডার।
পরিবেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করে এই বিশ্বের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। প্রকৃতিকে গণ্য করেছে অফুরান সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবে। তাকে নিংড়ে, বিশৃঙ্খল, অবিন্যস্ত করে নিজেকে স্ফীত করেছে সম্পদের প্রাচুর্যে। আর সেই সম্পদ উৎপাদনের গতিপথে জমে ওঠা বর্জ্য পদার্থ ফেলার ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করেছে পৃথিবীকে। একটা সময় পর্যন্ত প্রকৃতির এই একপেশে লুন্ঠন আঞ্চলিক পরিবেশএ সর্বনাশা নিঃস্বতা নিয়ে এসেছিল। ক্রমান্বয়ে সমগ্র সভ্যতাই শেষ হয়েছিল এই লুন্ঠন আর ধ্বংসের চক্রাকার অনুবর্তনে।
আসলে পরিবেশের সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটায় মুনাফাইমুনাফার জন্য যা করা দরকার, তাই করতে পারে যে অর্থনীতি, মুনাফা-তৃষিত সেই অর্থনীতির পক্ষে দাঁড়ায় যে রাজনীতি, মুনাফার মধ্যে জীবন খুঁজে পায় যে চোখ ধাঁধানো জীবনধারা, সেটাই পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সেই অর্থনীতি, সেই রাজনীতি, সেই জীবনধারা নিজ স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু, অন্য কারো কথা ভাবে না, বিবেচনা করে না এ পৃথিবী, প্রকৃতি, প্রাণ, সবই তার কাছে বিবেচনা বহির্ভূত বিষয়। এ আসমান-জমিনই কেবল নয়, মহাকাশ, মহাসমুদ্রতল, ভূগর্ভ, রোদ, বাতাস, সবই সে অর্থনীতির, সে রাজনীতির, সে জীবন ধারার কাছে হয়ে ওঠে মুনাফার মাধ্যম, মুনাফার উপকরণ। মুনাফার অন্বেষা, মুনাফার তৃষ্ণার কাছে দূষণ, প্রাণ ধারণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচিত হয় না।
অথচ, পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রথম দিকে বলা হয়েছিল : দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটায়। আর সেই যুক্তিই দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল দুনিয়ার সর্বত্র। প্রকৃত বিশ্লেষণেও বিষয়টি তাই। মুনাফা তৈরি করে দারিদ্র্যকে। কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের জীবনে আটকে রেখে, তাদের বাড়তি মেহনত আত্মসাৎ করে তৈরি হয় মুনাফা। আর তৈরি হয় তারই উপজাত দারিদ্র্য।
দারিদ্র্যের বন্দিশালায় প্রজন্ম পরম্পরায় আটকে থাকা অগণিত মানুষ স্রেফ টিকে থাকার জন্য মাটি থেকে, ধুলো থেকে, কাদা থেকে, ইঁদুরের গর্ত থেকে, আর্বজনার স্তূপ থেকে, ধান গাছের শেষাংশ থেকে, ঝরাপাতা থেকে, ঝিনুক থেকে, গাছের শেষ শেকড়টুকু থেকে, ফেলে দেওয়া খাবারের শেষ থেকে, প্লাস্টিক বোতল বা কাগজের গ্লাস থেকে সংগ্রহ করেন নানা উপাদান। ময়লা কাগজের টুকরোগুলো, ভাঙা বিদ্যুৎ সুইচ, ভাঙা কলম, ভাঙা তালা, ছেঁড়া ময়লা ন্যাকড়া, এমন অসংখ্য সামগ্রী হয়ে ওঠে তাদের একটু বেঁচে থাকার উপায়। মুনাফা-দানবের জয় করে নেওয়া এ পৃথিবীতে এসবই এত নগণ্য যে, সে সব আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। গরিবরা এভাবে অবদানরাখেন পরিবেশ রক্ষায়, নানা সামগ্রী বারবার ব্যবহার করে, অপচয় রোধ করে। মুনাফা আর দারিদ্র্যের নির্মম হাত তাদের ঠেলে দেয় এই কর্তব্যের কারখানায়। তাদের জীবন পিপাসা ধনীদের পরিতক্ত্য প্রতি বিন্দু বারি, প্রতি টুকরো কাগজ, প্রতি টুকরো কাঠ, প্রতি পাতা ব্যবহারে বাধ্য করে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এতে প্রকৃতির ক্ষতি হয়বন থেকে, পথের ধারের গাছতলা থেকে সব পাতা কুড়িয়ে নিলে, ধান ক্ষেতে শেষ নাড়াটুকু তুলে নিলে জমি বঞ্চিত হয় খোরাক থেকে। কিন্তু সে তো গরিবের শখের কাজ নয়। তা গরিবের বেঁচে থাকার অবলম্বন। গরিবদের সে জীবনে ঠেলে না দিলেই হয়, যেখানে গরিবকে চেঁচে-পুঁছে-খুঁড়ে-খাবলে-ঝেটিয়ে-কেটে সব নিতে হয় না, যেখানে তেল মাখা ময়লা কাপড় উনুনে পুড়িয়ে ভাত রান্না আর বায়ুদূষণ ঘটাতে হয় না, যেখানে অপরিপক্ক পোনা মাছ ধরতে হয় না, যেখানে করতে হয় না বনের ডালপালা চুরি।
কিন্তু, এত সব করে গরিবরা ভোগ করেন কতটুকু? তারা সারাজীবনে কয়টি কাগজের তৈরি গ্লাস, কয়টি কাগজের তৈরি ন্যাপকিন, কয়টি হ্যামবার্গার, বোতল ঠান্ডা পানীয় সাবাড় করেন? তারা কতো মাইল পথ সারাজীবনে আকাশপথে পাড়ি দেন? বিদ্যুৎ, অন্যান্য জ্বালানি, জল তারা কতোটুকু খরচ করেন?
আর আমাদের এই সম্পদ সীমাবদ্ধ জগতে ধনীরা, অতি ধনীরা কি করেন? তাদের কয়েকশো কোটি টাকা দামের বাড়ি, নিজস্ব জেট বিমান, নিজস্ব দ্বীপ, অপচয় আর উচ্ছিষ্ট ছড়ানো প্রমোদ অনুষ্ঠান, দামি গাড়ির বহর, কল্পনা ছাড়িয়ে যাওয়া দামের পোশাক, আর বাহারি খাওয়া, সুরক্ষিত সাজানো বসত এলাকা, বিলাস করা বিনোদনের বিস্তৃত অশ্লীল আয়োজন এদেরই বিলাসের জন্য এ পৃথিবীর কত গাছ, কত আবাদি জমি, কত বাতাস, কত জল নষ্ট হয়, দূষিত হয়! পৃথিবীর প্রায় ৭৬ভাগ সম্পদ ভোগ করে ধনীরাই, সমাজের মাথায় বসে থাকা মাত্র ২০ভাগ মানুষঅথচ এরা তৈরি করে না সম্পদ। এরা তৈরি করে পরিবেশ দূষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য। প্রাণের টিকে থাকার জায়গাটুকুতে এরা এঁকে দেয় ধ্বংসের চিহ্ন। ভাবুন, পৃথিবীতে মোট ভোগের ০.৫শতাংশ পেতেন একেবারে গরিব ১০শতাংশ মানুষ, আর ৪৯শতাংশ যায় সবচেয়ে ধনী ১০শতাংশ লোকের পেটে। যদিও খোদ বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া এই হিসাব ছয় বছর আগের। আজ বৈষম্য বা ফারাক আরো বেড়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচির আরো আগের আরেকটি হিসাব থেকে দেখা যায় : সবচেয়ে ধনী ৫ভাগ লোক ভোগ করতো পৃথিবীর সব মাছ-মাংসের ৪৫ভাগ, মোট ইন্ধনের ৫৮ভাগ, মোট টেলিফোন লাইনের ৭৪ভাগ, মোট কাগজের ৮৪ভাগ, মোট গাড়ির ৮৭ভাগ।
তাকিয়ে দেখুন এই ভারতের দিকে। যেখানে কালো টাকা নিয়ে কতো গোপনীয়তাশুধু সুইস ব্যাঙ্ক নয়, গত ছদশকে এই ভারত থেকে বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬,২০০কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ২০লক্ষ ৩২হাজার ৮০০কোটি। এই অর্থ ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জি ডি পি) অন্তত ৪০শতাংশ। আর এই সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতের মোট কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ১,৫০,০০০কোটি ডলার। ৭০লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। অথচ, একবার এই অর্থ ফিরিয়ে আনলে, তাবৎ বৈদেশিক ঋণ মিটিয়ে দেওয়া যাবে এক চব্বিশ ঘন্টায়। এই অর্থ যাদের ঘামরক্ত শুষে তৈরি হয়েছে, তা যদি দেশে ফিরিয়ে এনে সেই ৪৫কোটি গরিব মানুষের প্রত্যেককে ১,০০,০০০টাকা করে দেওয়া যায়, তাহলেও উদ্বৃত্ত থাকবে ২৫লক্ষ কোটি টাকা। এনিয়ে সরকারকে ভৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বোধদয় হয়নি সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এটি না কী চটজলদি সমাধানের কাজ নয়।
কর ফাঁকি দিতে বহু বেসরকারী সংস্থা এবং ধনী ভারতীয়ই বিদেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অর্থ জমা রেখে চলেছেন। সরকারী ত্রাণে আসলে মুনাফার পাহাড় বানাচ্ছে ধনীরা? ওয়াশিংটনের গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি গোষ্ঠীর বরিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ দেব করের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০২-২০০৬ পর্যন্ত ফিবছর গড়ে ২২০০-২৭০০কোটি ডলার বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পাচার হয়েছে। মুদ্রার বর্তমান বিনিময় মূল্য ধরলে কম করে ১,১০,০০০কোটি টাকা। যদি এর চারভাগের একভাগও কর হিসেবে উদ্ধার করা যেত, তাহলে ফিবছর গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে অর্থ সাহায্য করে হাঁটা যেত দীর্ঘ পথ।
অথচ, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮২টি দেশের মধ্যে ভারত ১৩৪। ভুটানও আমাদের ওপরে। আমাদের দারিদ্র্যের সংজ্ঞাটাই আসলে সবচেয়ে বড় প্রহসন! শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নিকাশীকে হিসেবের মধ্যে না রেখেই আমাদের দারিদ্র্যের সংজ্ঞা। বাড়ছে ক্ষুধা, কমছে মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ। বাড়ছে বেকারী, মাইগ্রেশন। গরিবের সংখ্যা কমাতে বি পি এলের সংজ্ঞা নির্ধারণে চলছে নির্লজ্জ টালবাহানা।
ভাবুন একবার, দেশের বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমের অবিরত প্রচারে আপনার মস্তিষ্কে কতো সহজে গেঁথে দিয়েছে একটাই কথা : আম-আদমির ভারত!
ভারতের সংবাদ জগতে এমন তীব্র সম্মিলিত উল্লাস এর আগে কখনো দেখা যায় নি। দেশের সুগভীর বিপন্নতায় কী স্পর্ধিত ঔদাসিন্য। সামান্যতম প্রতিফলন নেই সর্বনাশা বাস্তবতার! নেই সতর্কতার একটি অক্ষরও! কী পরিকল্পিত বিচ্ছিন্নতায় স্বনির্বাসিত দেশের গণ-মাধ্যম।
সম্প্রতি ‘কাউন্টার কারেন্ট’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফারুক চৌধুরীর এক প্রবন্ধে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো হিসাব আরো আছে। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রসাধনী সামগ্রীর পেছনে বছরে ব্যয় হয়েছে ৮০০কোটি ডলার ইউরোপে আইসক্রিমের পেছনে খরচ হয়েছে ১১০০কোটি ডলার ইউরোপে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুগন্ধীর পেছনে ঢালা হয়েছে ১২০০কোটি ডলারএ দুই মহাদেশে পোষা জীবজন্তুর জন্য ব্যয় হয়েছে ১৭০০কোটি ডলার জাপানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সময় বিনোদনে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৫০০কোটি ডলার ইউরোপে সিগারেটের পেছনে উড়ে গেছে পাঁচ হাজার কোটি ডলার, অ্যালকোহলের জন্য ঢালা হয়েছে গড়ে ১০হাজার কোটি ডলার। সামরিক খাতে বিশ্বে ব্যয়? লক্ষ-কোটি ডলার
আর গোটা দুনিয়ায় সবার জন্য শিক্ষায় খরচ ৬০০কোটি ডলার, সবার জন্য নিরাপদ জলের ব্যবস্থা করতে খরচ ৯০০কোটি ডলার, মৌলিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য ১৩০০কোটি ডলার, সব মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য ১২০০কোটি ডলারের ব্যবস্থা হলেই চলত। এ তথ্য দিচ্ছে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনেই রয়েছে
এ সব তথ্যের পরে তাই আর ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না যে, দূষণ কারা, কতোটুকু ঘটায়, কোন ব্যবস্থায় ঘটে। এ ব্যবস্থাটি টিকে থাকবে কিনা, টিকিয়ে রাখা দরকার কিনা সে প্রশ্নগুলো এসে পড়ে। ফ্রান্সের লা মঁদে পত্রিকার পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হার্ভে ক্যাম্প ‘হাউ দ্য রিচ আর ডেস্ট্রয়িং দ্য আর্থ’ (ধনীরা কিভাবে পৃথিবীকে ধ্বংস করছে) বইতে বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থা যা মানব সমাজকে এখন চালাচ্ছে, সেই ব্যবস্থা অন্ধের মতো দাঁড়িয়ে থাকে পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলোর বিপক্ষে।
আর এ ব্যবস্থারই অন্যতম স্তম্ভ দানবতুল্য শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দানবের মতো এরা কেটে নিচ্ছে বন, খাবলে তুলছে মাটি, গিলে নিচ্ছে জল, টেনে নিচ্ছে বাতাস, মাটির গভীর থেকে তুলে আনছে সম্পদতারপরে, মুনাফার জন্য পণ্য বানিয়ে উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা, দূষিত তরল পদার্থ, বিষাক্ত গ্যাস উগড়ে দিচ্ছে, ঢেলে দিচ্ছে, বাতাসের মধ্যে ছেড়ে দিচ্ছেনিজেদের কুর্কীতির কালো দাগ হাত থেকে মুছে ফেলতে, কুৎসিত চেহারা ঢেকে রাখতে সামাজিক দায়বোধেরযৎসামান্য পয়সা সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে ঢাকঢোল পিটিয়ে। সেই পয়সা কুড়িয়ে নিয়ে কতিপয় সমাজ হিতৈষী মেতে উঠছেন পরিবেশ রক্ষায়এক চমৎকার পরিবেশ রক্ষাউদ্যোগ তৈরি হচ্ছে। আর প্রতারিত হচ্ছে গরিবরাই।
অথচ পরিবেশ ধ্বংসের এমন আয়োজন আজ পৃথিবীকে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে যে, স্টকহোমে চলতি বছরের ১৬-১৯মে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বলা হয়েছে : এই গ্রহ এক নতুন ভূতাত্ত্বিক যুগে প্রবেশ করেছে। এ যুগের নাম এনথ্রোপোসেন। চলতি পথে চলা আমরা অব্যাহত রাখতে পারি না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পৃথিবীর টিকে থাকার পথ খুঁজে পেতে বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সমাজের কাছে বিজ্ঞানকে খোলাখুলিভাবে নিয়ে যেতে হবে। বলেছেন ১৯৯৫-এ রসায়ন শাস্ত্রে নোবেলজয়ী মারিও মলিনা। সম্মেলনে সুপারিশ করা হয়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত হচ্ছে টেকসই পরিবেশ। পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দিনে ২ডলারের চেয়ে কম অর্থে জীবন কাটায়। তাই, সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। নতুন কৃষি বিপ্লব ঘটাতে হবে যেখানে বর্তমান কৃষি জমিতেই টেকসই পন্থায় খাদ্য উৎপাদন করা হয়। বিজ্ঞান শিক্ষাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করতে হবে।
কিন্তু, প্রশ্ন হলো, কোন অর্থনীতি এসব পদক্ষেপ নেবে? কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড়াবে এসব পদক্ষেপের পক্ষে? সে কি সেই অর্থনীতি যা আপামর মানুষের কথা বিবেচনা না করে কেবল মুনাফার দিকে নজর রাখে? সে কি সেই অর্থনীতি যা সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশকে বিবেচনা করে পৃথকভাবে? অথচ এ তিনটি মিলেমিশে আছে? সমাজ আর অর্থনীতি তো পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গোটা সমাজ, পুরো অর্থনীতি ধসে পড়েছে। এমন উদাহরণ ইতিহাসে অনেক।
তাকিয়ে দেখুন, দারিদ্র্যের এই চরাচরে প্রতি রাতে আপনার এই ভুখা ভারত নিদ্রায় ডুব দেয় ‌আধপেটা খেয়ে কিংবা খালি পেটে। শুধু মাত্র এক আঁজলা পানীয় জল আর জোয়ার-বাজরার মোটা রুটি, নিদেনপক্ষে শাক-পাতার অভাবে আজন্মপ্রিয় স্থাবর-অস্থাবর সব কিছু পেছনে ফেলে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেয় আম-আদমির দল। আর কী অসহ্যঅশ্লীল নীরবতায় নতুন অর্থনীতির হাতে নিষ্ঠুর সব গণহত্যা আর ভিটেছাড়ার ঘটনাবলী অনুল্লেখিত কিংবা অর্ধ-উল্লেখিত হয়ে চাপা পড়ে থাকে এদেশের বৃহৎ দৈনিক সংবাদপত্রগুলিতে।

Friday, June 10, 2011

বি পি এল সেন্সাসের নামে গরিবের সংখ্যা কম করে দেখানোর চেষ্টা

ভারতের গ্রামাঞ্চলের জন্য বি ‍‌পি এল সেন্সাস ২০১১ শুরু হচ্ছে বাছাই করা কয়েকটি রাজ্যে। প্রথম শুরু  জুনে, ত্রিপুরায়। প্রতি রাজ্যে গরিবদের সংখ্যা যোজনা কমিশন ইতোমধ্যে নিরূপণ করেছে। যেমন ত্রিপুরায় বি পি এল সেন্সাসের পর গরিবের সংখ্যা যাই দাঁড়াক না কেন, মাত্র ৪৯ শতাংশেই বি পি এল কার্ড দেওয়া হবে। সুতরাং অন্তর্নিহিত গলদ থেকেই যাচ্ছে। যোজনা কমিশন প্রতিটি রাজ্যে গরিবের সংখ্যা (পভার্টি কোটা) ঠিক করছে গলদেভরা হিসাবের উপর নির্ভর করে। পাশাপাশি কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এবং রাজ্যগুলির গ্রামোন্নয়ন দপ্তরগুলি এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের হিসাব তৈরি করেছে। ভারতের মতো যেসব দেশে বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষ বাস করেন, সেখানে গরিব মানুষের সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি অনেকসময় গরিবের সংখ্যা কম দেখানো এবং গরিবদের মধ্যে বিভাজন তৈরির অজুহাত হিসাবে খাড়া করা হয়। কারণ নজর থাকে সর্বজনীন অধিকারের বদলে গরিব মানুষকে বিভক্ত করার মতো অমানবিক নীতি রূপায়ণের দিকে। যেহেতু এই বিষয়টি হলো বর্তমান অর্থনৈতিক নীতিগত কাঠা‍‌মোর অচ্ছেদ্য অঙ্গ তাই এই বি পি এল সেন্সাসের প্রকৃত চেহারা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

বি পি এল প্রশ্নমালা
গ্রামাঞ্চলের জন্য বি পি এল সেন্সাসের প্রশ্নমালা এখন পাওয়া যাচ্ছে। তবে শহরাঞ্চলের জন্য বি পি এল প্রশ্নমালা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। গরিবদের চিহ্নিত করার জন্য গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এর আগে যে প্রশ্নমালা ব্যবহার করেছিলো সে সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ায় ঐ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার সংসদে আশ্বাস দিয়েছিলো।
নতুন প্রশ্নমালার সাহায্যে পাইলট স্ট্যাডিসহ ২৬০টিরও বেশি গ্রামে বিশদ সমীক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল আদৌ সন্তোষজনক নয়। ২০০২ সালের প্রশ্নমালার কয়েকটি অত্যন্ত আপত্তিকর প্রশ্ন বাদ দেওয়া ছাড়া গরিবদের চিহ্নিত করার পদ্ধতি বা ছকটি এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট আপত্তিকর অবস্থাতেই আছে।  আগের প্রশ্নমালায় জানতে চাওয়া হতো দিনে কবার খাওয়া হয় বা কটি শাড়ি আছে। একবার খাওয়া জুটলে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে একটিমাত্র শাড়ি থাকলে তবেই বি ‍‌পি এল পর্যায়ভুক্ত হওয়া যেত।
বি পি এল সেন্সাসের ক্ষেত্রে সহজে যাচাই করে বাদ দেওয়ার মতো স্তর নিরূপণ করা বেশ শক্তকারণ ভারতের গ্রামাঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য যথেষ্ট প্রকট। সেখানে রয়েছে ধনী, বড় জোতদার-জমিদার ও কৃষক, বড় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। কিন্তু বর্তমান যে মাপকাঠি তার উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় আরো বেশি মানুষকে বি পি এল তালিকার বাইরে রাখা। শোনা যাচ্ছে, গ্রামীণ জনসংখ্যার মোটামুটি ৩০ শতাংশকে বি পি এল তালিকার বাইরে রাখার লক্ষ্যনিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পাইলট স্টাডিতেও একই ধরনের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে। বি পি এল তালিকার বাইরে সরকারী কর্মচারী, আয়করদাতা, ট্র্যাকটর মালিক, কিষান ক্রেডিট কার্ডের মালিক (৫০ হাজার টাকার ক্রেডিট)-দের রাখলে আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু যাঁর দ্বিচক্র-যান আছে তাঁকে কেন ট্র্যাকটর মালিকদের পর্যায়ভুক্ত করা হবে এবং বি পি এল তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে? যাঁদের ল্যান্ডলাইন টেলিফোন আছে তাঁদের কেন বি পি এল তালিকায় রাখা হবে না? অনেক তফসিলী জাতি/তফসিলী আদিবাসী পরিবার বা দুর্বল সামাজিক পর্যায়ে পড়া প্রতিবন্ধী মানুষজনের টেলিফোন বুথ থাকতে পারে। এদিকে মোবাইল ফোনের প্রচলন বাড়ায় গ্রামাঞ্চলের ঐ বুথগুলি লোকসানে চলছে। আরো শোচনীয় দিক হলো, যে কৃষকের ২.৫ একর সেচসেবিত জমি আছে এবং যাঁর একটি নলকূপ আছে তাঁকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে। যেখানে কৃষকদের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বিরাট তারতম্য রয়ে‍‌ছে, যেখানে গরিব কৃষক পরিবারগুলির উপরে বিপুল ঋণের বোঝা, যেখানে প্রকৃতির খামখেয়াল, যেখানে খরা ও বন্যা প্রচণ্ড প্রকোপ সেখানে এইভাবে সরাসরি বি পি এল তালিকার বাইরে রাখার যে প্রক্রিয়া তাতে ভারতের গ্রামাঞ্চলের বিরাট অংশের প্রতি দারুণ অবিচার করা হচ্ছে।
বি পি এল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার আরেকটি আপত্তিজনক উদাহরণ হাজির করা যেতে পারে। যেমন যদি কোনো পরিবারের সরকারী নিবন্ধীভুক্ত অ-কৃষি ব্যবসা থাকে তা হলে তারা বি পি এল পর্যায়ভুক্ত হবে না। যেমন আজকাল মহিলাদের পরিচালিত স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলিও সরকারের রেজিস্ট্রিকৃত। তাই অন্যদের মতো এরাও সরাসরি বি পি এল পর্যায়ভুক্ত হবে না।
সরাসরি বাদ পড়ার যে তালিকা তা অযৌক্তিক। তা অবশ্যই সংশোধন করা উচিত। যাই হোক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে ভারতে (যেমন তামিলনাডু) এবং অন্যান্য অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে যাদের ভরতুকির সুবিধা পাওয়ার দরকার নেই। তাদের সরাসরি বাদ দিলে বি ‍‌পি এল তালিকা আরো নিখুঁত ও ন্যায্য ধরনের হয়। অধিকন্তু সরাসরি বাদ দেওয়ার মাপকাঠি তখনই অর্থবহ হয়ে উঠবে যখন জনসংখ্যার বাকি অংশ সরাসরি সামা‍‌জিক সুরক্ষা নিশ্চয়তা প্রকল্পের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু বর্তমান বি পি এল সেন্সাসে তা হচ্ছে না।

অন্তর্ভুক্তিকরণ
এবারের বি পি এল সেন্সাসে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হবার ক্ষেত্রে যে ৫টি পয়ন্ট ঠিক করা হয়েছে তা অবিশ্বাস্যমাত্রায় সঙ্কীর্ণ ধরণের। ঐ মাপকাঠি অনুসারে ভারতের গ্রামীণ জনসংখ্যার ৫ শতাংশও বি পি এল পর্যায়ভুক্ত হবে না। এই মাপকাঠি অনুযায়ী নিঃস্ব বলে গণ্য হবেন তাঁরা যাঁরা ভিক্ষাজীবী। তাঁরা আপনাআপনি বি পি এল তালিকাভুক্ত হবেন। অপরদিকে যে পরিবারে দুজন প্রবীণ ব্যক্তি আছেন এবং যাঁরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য মাসে ৪ অথবা ৫দিন কাজ করতে বাধ্য হন সেই পরিবার নিঃস্ববলে গণ্য হবে নাকারণ তাঁরা ভিক্ষা করেন না। আরেকটি সরাসরি অন্তর্ভুক্তিকরণের স্তর হলো আইনগত দিক থেকে মুক্ত হওয়া বেগার শ্রমিকেরা।এই শ্রমিকেরা যদি বেগার শ্রমের যাঁতাকল থেকে পালিয়ে যান তাহলে তাঁরা আইনগত দিক থেকে মুক্তবলে গণ্য হবেন না এবং তাঁদের স্বাভাবিক পর্যায়ে বি ‍‌পি এল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকার থাকবে না। সরাসরিভাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার (automatic inclusion) আরেকটি স্তর হলো যেসব পরিবার নিরাশ্রয় অথবা যেসব সাফাইকর্মী হাতেনাতে কাজ করেন (manual scavengers) বা আদিম আদিবাসী গোষ্ঠী।
এই পাঁচ পয়েন্টের ভিত্তিতে স্বাভাবিক অন্তর্ভুক্তিকরণ (automatic inclusion category) স্তর ব্যবস্থা আসলে আমাদের দেশের সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়এই পর্যায়ে আরো কিছু সামাজিক ক্যাটিগরির উ‍‌ল্লেখ করা হয়নি। যেমন, তফসিলী জাতি/তফসিলী আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, বিধবা, ক্যাজুয়াল ম্যানুয়াল শ্রমিক। এঁদের ঐ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

র‌্যাঙ্কিং
বি পি এল প্রশ্নাবলীতে সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হলো এখানে আগের সাতদফা প্রশ্নের জবাবে র‌্যাঙ্কিং প্রথা জিইয়ে রাখার চেষ্টা। এই সঙ্কীর্ণ ধরনের মাপকাঠির ভিত্তিতে সরাসরি অন্তর্ভুক্তি   ঠিক হয় একটি র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে গ্রামীণ গরিব মানুষের বিপুল অংশ গরিবঅথবা গরিব নয়এই দুইভাগে চিহ্নিত হবেন। প্রশ্নগুলি বেয়াড়া ধরনের। এগুলির সঙ্গে জনগণের প্রকৃত অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন ধরুন পাঁচজনের একটি আদিবাসী পরিবারের একজন ষাটোর্ধ্ব মহিলা আছেন যাঁর নাম ধরা যাক মীনা উসেন্ডি। ১৭ বছরের একটি ছেলে আছে। দুই কন্যা পোলিওয় আক্রান্ত। এই সংসারের মালিকানায় আছে আধবিঘা জমি, ঐ জমিতে পরিশ্রম করে ঐ পরিবারকে বেঁচে থাকতে হয়। এই পরিবারকে যদি সাতদফা প্রশ্নোত্তরের গণ্ডি পেরিয়ে বি পি এল কার্ডের জন্য যোগ্যঅথবা অযোগ্যবলে চিহ্নিত হতে হয় তার চেয়ে খেদের বিষয় আর কি হতে পারে?
১ নম্বর প্রশ্ন—‘কাঁচা দেওয়াল ও ছাদের একটি ঘরের বাড়ি।আপনার ছোট একটি জমির প্লটের মধ্যে আপনি কাঁচা ছাদের দুটি ছোটঘর (একটি নয়) নিয়ে যদি একটি বাড়ি বানান তা হলে আপনি পাবেন ’ (শূন্য)।
২ নম্বর প্রশ্নযে পরিবারে ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে কোনো পূর্ণবয়স্ক সদস্য নেই।এদিকে আপনার বয়স ৩৫ এবং পূর্ণবয়স্ক। সুতরাং আপনি পাবেন
৩ নম্বর প্রশ্ন—‘পরিবারের কর্তা একজন মহিলা। সেখানে ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সের কোনো পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সদস্য নেই।’’ এদিকে আপনি যদি এখন মহিলা হন এবং একটি পরিবার চালান, যেখানে আপনার বড় ছেলের বয়স ১৭ বছর, তাহলে আপনি এই প্রশ্নের উত্তরে পাবেন
৪ নম্বর প্রশ্ন—‘পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্য আছেন কিন্তু কোনো সক্ষম সদস্য নেই।এখন আপনার যদি পোলিওয় প্রতিবন্ধী হওয়া দুটি শিশু থাকে এবং আপনি যদি সক্ষম পূর্ণবয়স্ক হন, তাহলে আপনি ঐ প্রশ্নের উত্তরে পাবেন।
৫ নম্বর প্রশ্ন—‘তফ‍‌সিলি জাতি/তফসিলী  আদিবাসী পরিবারআপনি যদি একজন আদিবাসী হন, তাহলে আপনি ঐ প্রশ্নের উত্তরে পাবেন নম্বর।
৬ নম্বর প্রশ্ন—‘যে পরিবারের ২৫ বছরের বেশি বয়স এমন কোনো পূর্ণবয়স্ক সাক্ষর নেই।এখন আপনার বয়স যদি ৩৫ বছর হয় এবং আপনি যদি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে থাকেন তাহলে আপনি সাক্ষর এবং তাই আপনি ঐ প্রশ্নের উত্তরে পাবেন
৭ নম্বর প্রশ্ন—‘ভূমিহীন পরিবার যাদের আয়ের বেশিরভাগ আসে অস্থায়ী ধরনের কায়িক  পরিশ্রমের কাজ থেকে।কিন্তু যেহেতু আপনার আধবিঘা শুখা ও অনুৎপাদনশীল জমি আছে, যেখানে আপনি একজন ক্যাজুয়াল মজুর হিসাবে উদয়াস্ত কাজ করলেও আপনি ঐ প্রশ্নের উত্তরে পাবেন ’ (শূন্য)।
সুতরাং এই সাতদফা প্রশ্নাবলীর জবাবে মহিলা পরিচালনাধীন আদিবাসী পরিবার (যে পরিবারকে নির্ভর করতে হয় কায়িক পরিশ্রমের উপরে) পাবে ১।
এইসব তথ্য পঞ্চায়েত অফিসে টাঙানো হবে। গ্রামসভায়ও প্রকাশ্যে জানানো হবে যাতে দাবি বা আপত্তি পেশ করা সম্ভব হয়। যেহেতু মীনা উসেন্ডি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেশ করা হয়েছে তাই তিনি কোনো আপত্তি জানাবেন না।
তাহলে মীনা উসেন্ডি প্রশ্নাবলীর উত্তরে ১ নম্বর পেয়ে কিভাবে বি পি এল কার্ড পাবেন?
আসলে ঐ প্রশ্নমালার ছক এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গরিবদের মাত্র একটি ক্ষুদ্রাংশ সর্বোচ্চ বা সর্বোচ্চ নম্বরের ধারেকাছে স্কোর করতে পারেন। নয়া উদারনৈতিক নীতিসমূহের প্রবক্তারা রাজনৈতিকভাবে এই ধরনের পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে পারেন। তাঁরা প্রচার করতে পারেন, দেখা যাচ্ছে দেশে প্রকৃত গরিবের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এই ধরনের নম্বর দেওয়ার বা র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মূল সমস্যা হলো এখানে দারিদ্র্যের ধারণা সম্পর্কে এই পদ্ধতিতে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয় এবং অনেক ভাগ গড়ে তোলা হয় গরিব মানুষজনের মধ্যে। অর্থাৎ গরিব’, ‘খুব গরিব’, ‘ভীষণ ভীষণ গরিব’, ‘হতদরিদ্রইত্যাদি নানা বিভাজন তৈরি করে পার্থক্য টানার চেষ্টা। মূল উদ্দেশ্য হলো, জনসংখ্যা একটি ক্ষুদ্র অংশকে হতদরিদ্র’ (extremely poor) বলে চিহ্নিত করে গরিবদেরবাকি অংশকে তেমন গরিব নয়’ (not so poor) বলে আখ্যা দেওয়া। এইরকম ক্ল্যাসিক পদ্ধতিতে নয়া উদারনীতির প্রবক্তারা দারিদ্র্যউধাওয়ের ব্যবস্থা করেন। আপনি এখন আর গরিব নন। কারণ আপনি হতদরিদ্রের (poorest of the poor) মতো গরিব নন।

গরিবী রেখা’-র সন্ত্রাস
৭ দফা প্রশ্নের ভিত্তিতে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক এবং রাজ্যগুলির সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি কে বা কারা গরিব তা চিহ্নিতকরণের কাজটি করে থাকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কত মানুষ গরিব বলে গণ্য হবেন তা ঠিক হয় যোজনা কমিশনের সন্দেহজনক পদ্ধতি দ্বারা স্থিরীকৃত গরিবের সংখ্যার ভিত্তিতে।
যেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের ঊর্ধ্বসীমা হলো ৪২ শতাংশ। সেই অনুযায়ী কাট-অব স্কোরহতে পারে ৪ নম্বর। যারা ৪-এর নিচে নম্বর পাবেন তারা বি পি এল কার্ড পাবেন না। এক একটি রাজ্যের কাট-অব স্কোরএক একরকম। যেমন মধ্য প্রদেশে কেউ ৪ নম্বর পেলেও বি পি এল কার্ড পাবেন না। কারণ সেখানে যোজনা কমিশনের ঊর্ধ্বসীমাঅনুযায়ী কাট-অব স্কোর৫ হতে পারে। সেখানে ৫ থেকে ৭ পর্যন্ত নম্বর তোলা পরিবারের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি। এইভাবে গরিবী রেখার সন্ত্রাস নিহিত রয়েছে।
এই পটভূমিকায় আদিবাসী মহিলা মীনা উসেন্ডি মাত্র ১নম্বর পাওয়ায় তাঁর বি পি এল কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

সঙ্গতিপূর্ণস্ট্র্যাটেজি
খাদ্য নিরাপত্তা বিলের যে চলতি খসড়া জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ (এন এ সি) তৈরি করেছে তার সঙ্গে এই বি পি এল প্রশ্নমালা চমৎকারভাবে খাপ খেয়ে যায়। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো একমাত্র ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতির বদলে এন এ সি ৪৬ শতাংশের অগ্রাধিকারমূলককয়েকটি অংশ ভাগ করেছে। যোজনা কমিশনও এই ৪৬ শতাংশ মেনে নিয়েছে। তাছাড়া ভৌগোলিক দিক থেকে বিভাজনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এন এ সি-র আরেকটি সুপারিশ হলো — ‘সামাজিক দিক থেকে অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, যাতে নির্দিষ্টভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল পর্যায়ভুক্ত মানুষদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।’ এর ফলে বি পি এল সেন্সাসের প্রতারণামূলক অটোমেটিক ইনক্লুসন’-র পথ প্রশস্ত হবেসুপ্রিম কোর্টের রায়েও এই ধরনের বিভাজনের সুপারিশ আছে। এখানেই শেষ নয়। বিশ্বব্যাঙ্ক সম্প্রতি যে রিপোর্ট (সোস্যাল প্রোটেকশন ফর এ চেঞ্জিং ইন্ডিয়া’) পেশ করেছে সেখানেও সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থার বিপক্ষেই মত প্রকাশ করা হয়েছে।
বর্তমান বি পি এল সেন্সাসের প্রশ্নমালা তৈরি হয়েছে গরিবদের চিহ্নিত করার মাপকাঠিকে আরো সঙ্কীর্ণ করে তোলার জন্য। যাতে যোজনা কমিশনের দেওয়া পুরোপুরি একতরফা ও চূড়ান্তভাবে অযৌক্তিক গরিবের সংখ্যার সঙ্গে এই সেন্সাসকে খাপ খাওয়ানো যায়। নতুন ছকও গলদে ভর্তি এবং অন্তর্ভুক্তি ও বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আগের লক্ষ্যই বহাল আছে। নম্বর দেওয়া বা র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভারতের গরিবদের কাছে আরো অপমানজনক বলে গণ্য হবে। যেমন আদিবাসী গরিব মহিলা মীনা উসেন্ডি বি পি এল কার্ড থেকে বঞ্চিত হবেন। খুব নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গোটা বি পি এল সেন্সাস ব্যবস্থায় গরিবদের কোনো উপকার হবে না। উলটে তাঁরা জাতীয় সম্পদের ন্যায্য ভাগ থেকে আরো বঞ্চিত হবেন।

- বৃন্দা কারাত

Monday, June 6, 2011

ব্ল্যাকওয়াটার-মনস্যান্টো-বিল গেটস

ব্ল্যাকওয়াটার-মনস্যান্টো-বিল গেটস

বাগদাদের শেষ অস্তিত্বটুকুকে নিশ্চিহ্ন করতে ২০০৯-এ আমেরিকা ইরাকের মাটিতে নামিয়ে ছিলো দুনিয়ার সর্ববৃহৎ বেতনভোগী আত্মঘাতী স্কোয়াডকে। পেন্টাগণের নিজস্ব ঠিকাদার সংস্থা এই আত্মঘাতী স্কোয়াড রক্তে ভাসিয়ে ছিলো বসরার মাটিও। কী নৃশংসতায় মার্কিন টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, অ্যাপাচে হেলিকপ্টার গানশিপ, স্মার্ট বোমার অহরহ আঘাতে দ্রুত নিশ্চিহ্ন করেছিলো ইরাকের জনপদ। আগুন জ্বালিয়েছিল সাদ্দামের সাম্রাজ্যে। খুন করেছিলো হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে। ঠিক যেমনটা চেয়েছে ওয়াশিংটন।
সংবাদমাধ্যমের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে নৃশংস সংস্থা হিসেবেই ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর খ্যাতি।
যখন উৎপাদনশীল সবল সামাজিক পুঁজির প্রাণশক্তিকে পৃথিবীর কোনো প্রান্ত থেকে নি:শেষে মুছে ফেলা হয়, তখন অন্য কোনো প্রান্তে ব্যক্তি মালিকানার পুঁজি স্ফীত হয়ে বিপুলায়তন পেতে থাকে, বিশেষ করে যখন পুঁজিবাদ অতি উৎপাদন আর অতি সক্ষমতার রুগ্নতায় রোগাক্রান্ত। ইরাকে এই প্রাণশক্তি মুছে ফেলার কাজটা দ্রুত সেরে ছিল এরিক প্রিন্সের সংস্থা ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর আত্মঘাতী স্কোয়াড। ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো একটা কদর্য মার্কিন বেসরকারী সংস্থা। যদিও পেন্টাগণের এই বেসরকারী হিংস্র আড়কাঠিদের নৃশংসতার কোনো দায় নিতে হয় নি হোয়াইট হাউসের মাতব্বরদের।
ইরাককে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এখন নিজেদের রক্তাক্ত হাত মুছতে চাইছে এরিক প্রিন্সের সংস্থা। খুনের ব্যবসার চরিত্র বদলেছে দ্রুত। ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর রাতারাতি নাম বদলে হয়েছে ‘জি সার্ভিসেস’। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন সি আই এ অফিসাররাও নেমে পড়েছেন কীভাবে ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর কুখ্যাতি মোছা যায়। কোম্পানির নাম বদলে এরিক প্রিন্স বেশ কিছুদিন ধরেই গোয়েন্দাগিরি, আধা সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কিংবা বহুজাতিক কোনো কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার চেষ্টা করছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত জোট গড়েছে বহুজাতিক কোম্পানি মনস্যান্টোর সঙ্গে। জোট গড়া ভুল হবে, বরং বলা ভালো গোটা ‘জি সার্ভিসেস’ কোম্পানি কিনে ফেলেছে মনস্যান্টো। সম্প্রতি ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে এই খবর ফাঁস করেছেন জেরিমি স্কাহিল।
স্কাহিল লিখছেন, মনস্যান্টো কিংবা শেভরনের মতো মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাগুলি নৃশংস গোয়েন্দাদের তাদের সংস্থায় যুক্ত করছে। ধরুন, সি আই এ-র প্রাক্তন এক ডিরেক্টর কাফের ব্ল্যাকের কথা। নিজেদের সংস্থার গোয়েন্দাগিরির জন্য এই কাফেরের সঙ্গে মনস্যান্টো চুক্তি করেছিলো ২০০৮সালে। এই কাফেরের কাজ মনস্যান্টোর হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা, পশুপ্রেমী সংস্থা কিংবা জি এম বিরোধী আন্দোলন দমন করা। যদিও মনস্যান্টোর অধিকর্তা কেভিন উইলসন তা অস্বীকার করেন। কিন্তু স্কাহিলের কাছে কাফের ব্ল্যাকের পাঠানো কিছু ই-মেলের কপি মনস্যান্টোর গোয়েন্দাগিরির কথা ফাঁস করে দিয়েছে। ই-মেলে কাফের স্বীকার করেছেন, উইলসনের সঙ্গে যে প্রাক্তন সি আই এ কর্তাদের কথোপকথন হয় তা ব্ল্যাকওয়াটারের নিজস্ব ই-মেলের মাধ্যমেই। শুধু তাই নয়, কাফের বলেই ফেলেছেন, গোয়েন্দাগিরি কিংবা ষড়যন্ত্রের জন্য মনস্যান্টো ২০০৮-এ ১লক্ষ ২৭হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছিলো। ২০০৯-এ ১লক্ষ ৫হাজার মার্কিন ডলার।
হালফিলের বিশ্ব কৃষি বাজারের একচেটিয়া বা প্রায়-একচেটিয়া কারবারকে কব্জা করে রেখেছে এই মনস্যান্টোসহ ছয় সংস্থা। এরাই নিয়ন্ত্রণ করে দানাশস্যের বিশ্ব বানিজ্যের ৮৫শতাংশকে। এই একচেটিয়াকরনের মধ্যে দিয়েই বহুজাতিক সংস্থাগুলি এখন নিয়ন্ত্রন করছে তাবৎ বিশ্বের খাদ্যপণ্যের দামকে। তাদের ক্ষমতা এতটাই যে, কেনার সময় তৃতীয় দুনিয়ার কৃষককে দাম দিচ্ছে নামমাত্র। আর বিশ্ব বাজারে তা বিকোচ্ছে চড়ামূল্যে। আর এভাবেই বানাচ্ছে মুনাফার পাহাড়। তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো মুনাফা করেছে বীজ প্রস্তুতকারক মনসান্টো। ভাবতে পারেন, তাদের মুনাফার বৃদ্ধির হার ৫৪শতাংশ। মনসান্টো,কার্গিলরা এখানেই থেমে থাকে নি। এই সময়েই তারা গরিব দেশগুলিকে বুঝিয়ে ছেড়েছে দেশীয় চাহিদার কথা মনে রেখে উৎপাদনের বদলে রপ্তানিমুখি কৃষিনীতি নেওয়ার জন্য।
বিশ্ব পুঁজিবাদের মুখপত্র ‘দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল’-এ পাতাজোড়া শিরোনাম, ‘বিশ্বায়িত খাদ্য সঙ্কট যত বাড়ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যশস্য কোম্পানিগুলির মুনাফা’। প্রতিবেদনে অসহায় স্বীকারোক্তি,‘এই মুহূর্তে বিশ্ব যখন খাবারের জন্য দাঙ্গার মুখোমুখি, তখন ডাকসাইটে কৃষি সংস্থাগুলি এক ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে—এই চ্যালেঞ্জ বিপুল মুনাফার চ্যালেঞ্জ’। আর এসবের জন্যই মনস্যান্টোর প্রয়োজন নৃশংস গোয়েন্দাগিরি!
স্কাহিল এখানেই শেষ করেন নি। ফাঁস করেছেন আরো ভয়াবহ তথ্য। ‘দ্য নেশনস্‌’-এ প্রকাশিত খবর বলছে, মনস্যান্টোর ৫লক্ষ শেয়ার কিনে নিয়েছে বিল গেটস এবং মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশন। যার মূল্য ২কোটি ৩০লক্ষ মার্কিন ডলারেরও বেশি। ভাবুন, দুই বহুজাতিক কোম্পানির মিলনের কথা। বিল গেটস এখন কম্পিউটার দুনিয়ার ৯০শতাংশের নিয়ন্ত্রক। আর মনস্যান্টো কৃষিক্ষেত্রে বীজ প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে বিশ্বের ৯০শতাংশ বাজারের নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের একচেটিয়া কারবার ফুলে ফেঁপে ওঠার পেছনে রয়েছে কতো রক্তাক্ত ইতিহাস!
বিল গেটস অবশ্য বলার চেষ্টা করেছেন, ফাউন্ডেশনে তাঁদের আর্থিক সাহায্য থাকলেও, তাঁর কোম্পানির সঙ্গে ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিল গেটস যাই বলুন, একথা ঠিক মনস্যান্টোর সঙ্গে তাঁর জোট যে আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে তা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে অজানা নয়। আরও দ্রুততার সঙ্গে ধ্বংস হবে বিশ্বের গ্রামীণ জীবন-জীবিকা। গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে তাদের চিরাচরিত বীজ উৎপাদনের অধিকার। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে জিন প্রযুক্তির বীজ। ফলে বিল গেটস-মনস্যান্টো ঠিক করে দেবে কোথায় কি চাষ হবে। কোন্‌ দেশে কোন্‌ খাদ্য কতোটা সরবরাহ হবে। খাদ্যের মূল্য কি হবে কিংবা মানুষ কি খাবে। মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চাবি কাঠি চলে যাবে এই নৃশংস বহুজাতিক সংস্থার জোটের হাতে। আর তাতে বাধা এলে মনস্যান্টোর অনুগত ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর খুনে বাহিনী তো আছেই!

ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক

ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক
ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের। ক্ষুদ্র ঋণ দাতাদের লাগামছাড়া সুদের হার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের ঋণের জালে আটকে ফেলছে। সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের শাসানি, অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে গরিব মহিলাদের শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের হাত থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রক্ষা করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা সুধা সুন্দররামনের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ডিরেক্টারের সঙ্গে দেখা করে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
ধরুন অন্ধ্র প্রদেশের ক্ষুদ্র ঋণদাতা বেসরকারী সংস্থা ‘এস কে এস’-র কথা। সম্পূর্ণ বহুজাতিক কাঠামোয় তৈরি এই সংস্থা ক্ষুদ্র ঋণদাতার ব্যবসা ফেঁদে কাড়ি কাড়ি টাকা মুনাফা লুটছে। চড়া সুদের হারে গরিব মানুষকে শুধু ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলাই নয়, সেই ঋণ শোধার জন্য যেভাবে গরিবের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তা আজ প্রকাশ্যে এসে গেছে। মহিলা সমিতি জানিয়েছে, ঋণ শোধার জন্য গরিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এই ঘটনা ঘটছে গোটা দেশজুড়েই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের সাহায্য করার দেশের ব্যাঙ্কগুলির যে কাঠামো তৈরির প্রয়োজন তা না থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতোই গজাচ্ছে বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণদাতার সংখ্যা। যার পরিণতি ভয়াবহ। ভাবতে পারেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের ঋণ দেয় এরকম মাত্র ৩৫টি বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থা দেশের ৮৫শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে। এই ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থাগুলির হাত থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের বাঁচানোর দাবি জানানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে দেওয়া চিঠিতে।
কী ধরনের অত্যাচারের কথা বলা হচ্ছে? এপ্রিল ২০১০, হায়দরাবাদ ডেটলাইনে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা জানাচ্ছে : ‘কিছু কিছু ঋণ সংগ্রাহক ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কী কী উপায়ে ঋণ সংগ্রহ করছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে লঘু শাস্তিগুলোর মধ্যে কী কী পড়ে? ঋণখেলাপিকে প্রচন্ড রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা, গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা এবং খোলা মাঠের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চক্কর খাওয়ানো।’ অসহ্য নির্যাতন! অন্ধ্র প্রদেশে ৪০টি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ওই রাজ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে। ঋণ বিতরণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা। যেসব গরিব মহিলা ইতোমধ্যে ‘ইন্দিরা ক্রান্তি পাথম’-এর ব্যানারে ‘সেলফ হেলপ গ্রুপ’-র অন্তর্ভুক্ত তাদের অধিকাংশকে জোরপূর্বক এই ঋণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। চলছে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই ঋণ বিতরণ এবং আদায়।
মহিলা সমিতির অভিজ্ঞতা, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার বাড়বাড়ন্ত সবচেয়ে বেশি অন্ধ্র প্রদেশে। তারা চড়া সুদে গরিব মহিলাদের ঋণ দিচ্ছে। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পাওয়ায় গরিবরা ঋণ নিতে হচ্ছে বাধ্য হচ্ছেন ঐ বেসরকারী সংস্থার কাছ থেকেই। ঋণ শোধ করতে না পারলে তার জীবন হয়রানি করে তুলছে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কর্মীরা। গত কয়েক মাস ধরে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কর্মীদের আতঙ্কে অন্ধ্র প্রদেশে অন্তত ৩০জন আত্মহত্যা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, অন্ধ্র প্রদেশে সবচেয়ে বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকায় ঐ রাজ্যেই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার বাড়বাড়ন্ত। প্রায়ই এইসব সংস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনকল্যাণের নামে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঐ কর্মসূচীর অজুহাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের এক জায়গায় জড়ো করে তাদের বোঝানো হয় এবং ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলা হয়। অথচ, এই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থাগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কারবার। তারা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিচ্ছে যৎসামান্য সুদের হারে। আর গরিব মানুষকে ঋণ দিচ্ছে চড়া সুদে।
ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার হয়রানি এখন অন্ধ্র প্রদেশে সামাজিক সমস্যা। রাজ্যের সরকারী হিসেবে এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৯লক্ষ ৩৫হাজার। আর ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন করার কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৪লক্ষ ৩০হাজার গোষ্ঠীর। রাজ্য সরকার ঠিক করেছিলো চলতি য়ছরে ১২হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। কিন্তু বছর শেষে দেখা যাচ্ছে সরকার মাত্র ১হাজার ৮৯০কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ২০০৮সাল থেকে ঋণের জন্য সুদের হার প্রতি মাসে ২৫পয়সা অথবা বার্ষিক ৩শতাংশ কার্যত বন্ধই হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে রাজ্যের ৪০শতাংশ মহিলা ছুটছেন ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কাছে। সমীক্ষা করে দেখা গেছে শুধু অন্ধ্র প্রদেশেই ৩০টি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ২৫হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে।
ওড়িশায়ও এই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার হয়রানির প্রতিবাদে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ভুবনেশ্বরের রাস্তায়। মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসার এবং ওড়িশার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদপত্র জমা দেন। মহিলা সমিতি সমীক্ষা করে দেখেছে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ঋণের ওপর গড়ে ১৫থেকে ৪৫শতাংশ সুদ বসাচ্ছে। একই অবস্থা দিল্লিতেও। প্রায় ১৫০থেকে ২০০ এন জি ও রাজধানীতে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার ভূমিকা পালন করছে। তারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে গড়ে ২৫থেকে ৫০শতাংশ সুদ নিচ্ছে।
মহিলা সমিতি দাবি জানিয়েছে, অবিলম্বে এইসব এন জি ও এবং ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার ওপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক স্তরে কোনো সরকারী পদ্ধতি আনা প্রয়োজন যাতে ঐসব সংস্থার ওপর নজরদারি বাড়ানো সম্ভব। ঐসব ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার তালিকাভুক্তকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ আনাও জরুরী। যেসব ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা মহিলাদের ওপর হয়রানি কিংবা নির্যাতন চালায় তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারির জন্য জাতীয় এবং রাজ্যস্তরে আলাদা মন্ত্রক গঠনেরও দাবি তুলেছে মহিলা সমিতি।
ভারতের গরিব মানুষ এখন গিনিপিগ

অন্ধ্রের আদিবাসী অধ্যুষিত খাম্মাম জেলার ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ১৫০০ মেয়েকে ২০০৯ সালে এইচ পি ভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা দেওয়া হয়েছিলো, সারভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে তা কতটা কার্যকর যাচাই করার জন্য। এটা ছিলো ভ্যাকসিনটি নি‍য়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অঙ্গ। টিকা দেওয়ার পরপরই বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারা যায় ছ’জন। এরপর এই পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ এই বিপজ্জনক পরীক্ষার নীরব মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে তাদের বাবা-মার সম্মতি নেওয়া তো দূরের কথা এমনকি তা তাদের জানানোও হয়নি। অথচ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যাদের উপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে তাদের অনুমতি পাওয়া। এজন্য সংস্থাটিকে যাদের শরীরের উপর পরীক্ষা চলবে তাদের সঙ্গে বিধিসম্মতভাবে চুক্তি করতেই হয়। এতে খরচও বিপুল। সেই খরচ এড়াতে ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের বড়ো কর্তাদের সঙ্গে বহু অঙ্কের টাকার লেনদেনে বহুজাতিক ওষুধ ব্যবসায়ীরা ব্যবস্থা করে ফেলে। কোনোও গরিব এলাকার মধ্যে থেকে রাতারাতি খুঁজে নেওয়া হয় পরীক্ষার জায়গা। সরকারও তাতে মদত দেয়। এই মদতের পরিণতিতে মানুষের শরীরে ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে দেশে মৃত্যু সংখ্যাও বাড়ছে। ২০০৬-এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বলি ছিলেন ১৩২জন, ২০০৭-এ ৬৩৭জন এবং ২০১০-এর জুন মাস পর্যন্ত এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬২জন। অথচ এক্ষেত্রে যে তদন্ত হয় তাতে বহু ক্ষেত্রেই ফল হিসাবে জানানো হয় ট্রায়ালটির সঙ্গে মৃত্যু বা দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
এই মদত দেওয়ারও নানানরকম পন্থা আছে। প্রথমেই বড়ো অঙ্কের টাকার টোপ দিয়ে মৃত বা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ির লোকের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়। তারপর রাষ্ট্র বলে, এটা ঠিক ট্রায়াল নয়, এটা আসলে একটা স্টাডি হচ্ছিল। রাষ্ট্রের এহেন তৎপরতায় বহুজাতিকরাও খুশি, কারণ তাদের লক্ষ্য তো একটাই, তাড়াতাড়ি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যথটা সম্ভব কমিয়ে বাজারে দ্রুত ওষুধটি আনা। ভারতে তো সেই সুবিধাগুলিই তারা পাচ্ছে। ইউরোপের কোনোও দেশে হৃদরোগের কোনোও ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খরচ ভারতের থেকে ২০ গুণ বেশি। আর ট্রায়ালটি মার্কিন মুলুকে হলে এই খরচ দাঁড়াবে ৬০ গুণ। আর এতো সস্তার জায়গা বলেই ২০০৫ সালে যখন আমাদের দেশে মাত্র ১০০টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হতো তার জায়গায় এখন সেই সংখ্যাটি ১০০০-এর বেশি।
কে নেই এখানে? জনসন অ্যান্ড জনসন থেকে গ্ল্যাক্সো সবাই আছে। কোনোও ওষুধ বা রোগ নির্ণয় পদ্ধতি কতটা কার্যকর, হাতেকলমে পরীক্ষা করে তা জানার এই বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলির কাছে ভারত ভূখণ্ড এক আদর্শ জায়গা। ইতোমধ্যেই অনেক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি তাদের তৈরি ওষুধগুলির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য ভারতে তাদের সংস্থা খুলেছে। ভারতে এখন ট্রায়াল চালাচ্ছে ১৩৯টিরও বেশি সংস্থা।
মানুষের কী উপকার হয়েছে জানা নেই, কিন্তু ওষুধ ও রোগ নির্ণয় নিয়ে পরীক্ষা চালানোর ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ এখন সামনের সারিতে। কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন পরিষেবা প্রদানে আমাদের দেশের ব্যবসা ২০০৮ সালে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০১৫-তে এটা দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ওষুধের বাজারে প্রতি‍যোগিতা এখন তীব্র থেকে তীব্রতর।
এর পরশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতের মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও গবেষণা পদ্ধতির উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কম, যেখানে মানুষকে নির্বিচারে সহজেই পরীক্ষার মাধ্যম করে তোলা যায়, সেখানে ট্রায়াল কতটা সঠিক হচ্ছে সেই প্রশ্নও উঠেছে। পরীক্ষা পদ্ধতির স্বচ্ছতা, গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল নিয়েও বিতর্ক আছে। অভিযোগ উঠেছে, মানুষের উপর ওষুধ-বিষুধ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে হেলসিঙ্কি ডিক্লারেশনে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিলো, এক্ষেত্রে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ হলো, যেহারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ব্যাপারে নজরদা‍রি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বাড়ছে না। টাকার জন্য বা নিরুপায় হয়ে যারা নিজেদের শরীরে এই পরীক্ষা চালাতে দিচ্ছে তারা জানেই না ব্যাপারটা কী? অধিকাংশই নিরক্ষর, লিখিত সম্মতিদানের প্রশ্নও নেই। এটা চূড়ান্ত অনৈতিক এবং বিপজ্জনক।