Saturday, December 3, 2011

আগামীদিনে ২০ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান অনিশ্চয়তার মুখে

২০কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান অনিশ্চয়তার মুখে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লিন্ডন বি জনসনওয়ার অন পভার্টি’- স্লোগান তুলেছিলেন পাঁচ দশক পরে মার্কিন মুলুকের অবস্থা এইরকম২০০৯ সালে গরিব মানুষের সংখ্যা কোটি ৩৬ লক্ষ, ৩০ কোটি জনসংখ্যার ১৪. ভাগই গরিব, ‘সেনসাস ব্যুরোররিপোর্টে ছিল ২০০৮ সালে গরিব মানুষের সংখ্যা কোটি লক্ষ ২০ হাজার এক বছরে বৃদ্ধি হলো ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার মুক্তবাজার-অর্থনীতির প্রবক্তা নিজেই দারিদ্র্যের  চক্রে পাঁচ দশক ধরে আবর্তিত হচ্ছে ৮০ লক্ষ ৮০ হাজার পরিবার গরিব প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন গরিব কোটি মানুষ অভুক্ত ৫টি মার্কিন শিশুর মধ্যে একজন গরিব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ২০. ভাগ শিশুই অনাহারক্লিষ্ট ২০০৯- স্বাস্থ্যবীমার বাইরে ছিল কোটি মানুষ ২০০৮- ছিল কোটি ৬৩ লক্ষ হোয়াইট হাউসের অনুমান, ২০১১- শেষে প্রায় কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষ অর্থাৎ সাতজনের মধ্যে একজন খাদ্যাভাব জনিত কারণে মৃত্যুর ছোবল খেতে চলেছে বিশ্বব্যাপী মন্দার আঘাতে ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছে 
এহেন বিধ্বস্ত মার্কিন সাম্রাজ্যকে উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ১০ দিনের জন্য চারটি দেশে সফর করেছিলেন দেউলিয়া হয়ে-যাওয়া মার্কিন সংস্থাগুলোকে অক্সিজেন দেওয়া তাদের জন্য বরাত সংগ্রহ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য আর্থিক মন্দার করাল গ্রাস থেকে একাধিক মার্কিন কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে বাঁচাতে বাজার খুঁজতে এসেছিলেন সোনিয়া-মনমোহনজীদের অভ্যর্থনা জানাবার কোনো ত্রুটি ছিল না তাজ হোটেল স্বমহিমায় সেজে উঠেছিল চারিদিকে কঠিন নিরাপত্তার বেড়াজাল এশিয়া সফরে মোট খরচের পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ১৯৬৯ সালে নাসার অ্যাপেলো-১১ চন্দ্রাভিযানের খরচ ছিল ৩৫ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার মুদ্রাস্ফীতি বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলার এশিয়া সফরের খরচ চন্দ্রাভিযানের  চাইতেও বেশি ছিল মুম্বাই-এর দক্ষিণাংশে ছিল কঠিন নিরাপত্তার বেড়াজাল এয়ারফোর্স, ওয়ান বিমান, মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার, দুটি জাম্বো-জেট, চারটি হেলিকপ্টার, কঠিন নজরদারির ব্যবস্থা, বোমা নিক্ষেপ প্রযুক্তি, ৪৫ গাড়ির কনভয়, লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল এবং ক্যাডিলাক লিমুজেন, ৩৪টি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ-সহ রণতরী, বিমানবাহী জাহাজ, তাজ হোটেলের ৬০৪টি ঘর মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনীর দখলে, সফর-সঙ্গীদের জন্য তাজ হোটেলে ১৫০টি, গ্র্যান্ড হায়াতে ১০০টি, ওবেরয় ট্রাইডেন্টে ৯০টি ঘর বুক, সাথী ১৫০০ জন, সাংবাদিকসহ বড় বড় মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার সি -রা, পৃথক বিমানকর্মী, বিমান-সেবিকা, রাঁধুনী, পরিচারক-পরিচারিকা, ১৭০০ জন গোয়েন্দা পুলিস, কি ছিল না? মিনিট আগে এবং পরে সব ধরনের বিমানের উড়ান নিষিদ্ধ ছিল রানওয়ে ছিল যানমুক্ত একমাত্র লক্ষ্য ছিল বহুজাতিকদের জন্য বাজার খোঁজা

সেদিন তিনি ঝুলিতে ২০টি চুক্তিতে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বরাত ভরে নিয়েছিলেন ৫০০০০ মার্কিন নাগরিকের চাকরির ব্যবস্থা পাকা করেছিলেন অনিল আম্বানির সঙ্গে ২২০ কোটি, বোয়িং-কে ৩০টি বিমানের বরাতসহ ২৭০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি সম্পূর্ণ করেছিলেন শুধু তাই নয়, দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাঁর বার্তা ছিল, ‘‘বাজার খুলে দাও কারণেই আমাদের এখানে আসা চাকরি তৈরি করতে হবে আমেরিকায়’’ এদেশের খুচরো বাণিজ্যে এবং আর্থিকক্ষেত্রে বহুজাতিকদের অবাধ প্রবেশের জন্যই সেদিন সওয়াল করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুক্তবাজার-অর্থনীতির প্রবক্তা উপদেশ পালনে বদ্ধপরিকর সংসদের আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রীমণ্ডলীর সভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন দেশের খুচরো বাণিজ্যে ওয়াল মার্ট, ক্যারোফোর, টেসকোর মতো ১৭টি বহুজাতিক সংস্থা দৈত্যের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার ছাড়পত্র পেয়েছে মাল্টি ব্র্যান্ডে ৫১% এবং একক ব্র্যান্ডে ১০০% বিনিয়োগ করবে সরকারের মুখপত্রতুল্য তথা মুক্তবাজার-অর্থনীতির প্রবক্তা স্বরূপ পত্রিকা বলছে, ‘‘খুশি, কিন্তু লগ্নির শর্ত নিয়েই সংশয়ে রিটেল বহুজাতিক সংস্থাগুলিবিস্তারিত খবরের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভারতের ৪৫০০০ কোটি ডলার মূল্যের খুচরো ব্যবসার বাজার খুলে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় রিটেল বহুজাতিকদের সামনে স্বাভাবতই খুশি ওয়াল মার্ট থেকে শুরু করে ক্যারোফোর বা টেস্কোর মতো বিভিন্ন রিটেল বহুজাতিক’’ সমালোচনার ঝড় বইছে দেশব্যাপী নানান প্রশ্ন

. দেশে খুচরো ব্যবসার উপর নির্ভরশীল ১৬ কোটি মানুষ তাঁদের জীবিকা নির্বাহের পথ কি হবে?

. বলা হচ্ছে, এই ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলেই নতুন কর্মসংস্থান হবে একজনের কর্মসংস্থান হলেও, ৪০টি খুচরো দোকানে ঝাঁপ পড়বে একজন কাজ পাবে, ৪০ জন কাজ হারাবে একজনের উপর নির্ভরশীল পরিবারের পাঁচজন খেতে পাবে আবার ৪০ জনের উপর নির্ভরশীল ২০০ জন না খেতে পেয়ে মরবে দেশের লাভ কতটা?

. লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ লক্ষ মানুষ কাজ হারাবে বৈদেশিক বিনিয়োগে নিট লাভ ৩৯ লক্ষ মানুষের বেকারে পরিণত হওয়া মুক্তবাজার-অর্থনীতির এটা কি ঋণাত্বক গতি নয়?

. তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে ১০০০ জন মানুষ-পিছু ১১টি ছোট দোকান রয়েছে কোটি ২০ লক্ষ ক্ষুদ্র দোকান কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করছেন ২০ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান হচ্ছে আগামীদিনে এই ২০ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান অনিশ্চয়তার মুখে নয় কি?

. দেশে ৩০ লক্ষ কোটি টাকার মুদ্রা বাণিজ্যের বাজার রয়েছে এই বিশাল বাজারের প্রতি বহুজাতিকদের লোভ আম-আদমির স্বার্থপূরণের এটি একটি অন্যতম পদক্ষেপ ছাড়া আর কী?

. ২০০৪-০৫ আর্থিক বছরের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বছর ভারতে খুচরো বিক্রির পরিমাণ ছিল লক্ষ ১২ হাজার ১৮০ কেটি টাকা তৎকালীন জি ডি পি- ১১% কর্মসংস্থান কোটি ধরলে, কর্মী-পিছু লেনদেন ৭৮০৪৫ টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের এই নয়া-নীতি জি ডি পি- ক্ষেত্রে আঘাত হানবে কী না?

. দ্বিতীয় ইউ পি সরকারের কর্ণধারগণ নিশ্চয়ই জানেন, সংগঠিত কর্পোরেটদের প্রবেশের ফলে ২০০০ সাল থেকে ২০০৪-০৫ সাল পর্যন্ত ছোট দোকান উঠে যাওয়ার ফলে কাজ হারিয়েছেন ১২ লক্ষ দোকানকর্মী  আগামীদিনে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়বে না নিশ্চয়তা কোথায়?

বারাক ওবামাসহ মনমোহন-সোনিয়াজীদের নিশ্চয়ই জানা আছে, ১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুচরো ব্যবসায় কর্মসংস্থান  হয়েছিল ১৯ মিলিয়ন ২০০০ সালে ১৭ মিলিয়ন ২০০৯ সালে ১২ মিলিয়ন ২০১১ সালের অদ্যাবধি ১১ মিলিয়ন বছরে গড়ে ২০ হাজার করে কর্মসংস্থান কমবে অথচ বলা হচ্ছে, ভারতে খুচরো ব্যবসায় বহুজাতিক হাঙরেরা প্রবেশ করলে নাকি ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে নিজ দেশের তথ্য ঘাটলে নিশ্চয়ই বারাক ওবামা সাহেব একথা বলতে
প্রতিবাদের ঝড় উঠছে মুক্তবাজার-অর্থনীতির প্রবক্তা আনন্দবাজার কাগজের হেড লাইন, ‘‘খুচরোয় বিদেশী লগ্নী নিয়ে অচল সংসদ, সরব তৃণমূল-ডি এম কে....আজ সর্বদল’’ পাল্লার একদিকে কংগ্রেস, এন সি পি, বি জে ডি এবং আকালিদল আর অন্যদিকে বি জে পি, জে ডি ইউ, বি এস পি, ডি এম কে, তেলুগু‍‌দেশম এবং ডি এম কে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগে চীনের ক্ষতি হয়নি বলা হচ্ছে কিন্তু না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হচ্ছে না শ্যামল চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘চীন যা পারে, তা আমরা কেমন করে পারবো? চীনে উৎপাদন-শিল্প এক নম্বরে, আর ভারতে উৎপাদন-শিল্পের চেয়ে পরিষেবাক্ষেত্র এগিয়ে চীন নিজেই ২০টি বড় চেনের মালিক ওরা প্রতিযোগিতা করতে পারে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না’’ ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়াসারাদেশে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে খুচরো ব্যবসায় বন্ ডেকেছেফেডারেশন অব ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনসি পি আই (এম), সি পি আই, সি পি আই (এম এল)সহ একাধিক বামপন্থী দল সমর্থন জানিয়েছে জোরদার প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলাই এখন একমাত্র লক্ষ্য  দেশের এক রাজ্যের এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমি যতদিন মুখ্যমন্ত্রী আছি, ততদিন উত্তর প্রদেশে এই বিদেশীদের দোকান খুলতে দেবো না’’ আর এক রাজ্যের বর্তমান মুখ্য-প্রশাসক মুখ্যমন্ত্রী পূর্বে বিরোধীনেত্রী তথা ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীমণ্ডলীর সভায় সমর্থন কিংবা অনুপস্থিত থাকার নাটক করে রাজ্যে বিরোধিতা করা এরূপ একাধিক দ্বিচারিতা এবং স্ববিরোধিতার নিদর্শন রেখেছেন এখন তার ভূমিকার দিয়ে তাকিয়ে রাজ্যসহ দেশবাসী