মার্কিন প্রশাসনে অচলাবস্থা
রিপাবলিকানদের ভয়ংকর
খেলা
আমেরিকায়
বিরোধী দল সরকার অচল করে দিয়েছে। না, রাস্তায়
নেমে জ্বালাও-পোড়াও করে নয়, পুলিশ
ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মারামারি করেও নয়; তারা এটা করেছে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উপায়ে।
ওবামা সরকার ২০১৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেছে, বিরোধী রিপাবলিকান দল সেটা অনুমোদন করেনি। ফলে ১
অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে যে অর্থবছর, সেদিন
থেকে ওবামার জনপ্রশাসনের প্রায় আট লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে
গেছে;
লে-অফ হয়ে গেছে তাঁদের
চাকরি। চিকিৎসাসহ অনেকগুলো সামাজিক সেবাব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এটাকে বলা হচ্ছে ‘গভর্নমেন্ট
শাট ডাউন’। আসলে এটা সম্পূর্ণ
অচলাবস্থা নয়, আংশিক। তাই কোনো
কোনো সংবাদমাধ্যমে এটাকে ‘পার্শিয়াল শাট
ডাউন’ও লেখা হচ্ছে। সহজ ভাষায় বলা চলে, মার্কিন জনপ্রশাসনে একটা বড় ধরনের অচলাবস্থা
সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনা খুব ঘন ঘন ঘটে না; শেষবার
এমনটি ঘটেছিল ১৭ বছর আগে, ১৯৯৬ অর্থবছরে, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওবামার মতোই একজন
ডেমোক্র্যাট, বিল ক্লিনটন। তখনো
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা
ও পরিবেশ কর্মসূচির বিরোধিতা করে বিরোধী রিপাবলিকান দল বার্ষিক বাজেট আটকে
দিয়েছিল। সেবার বাজেট নিয়ে অচলাবস্থা চলেছিল ২৮ দিন। এখনকার অচলাবস্থাও একই
রকমের। তবে অনেকে আশা করছেন, এবার
হয়তো ২৮ দিনের আগেই একটা সমঝোতা হবে, অচলাবস্থা
কেটে যাবে। আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন, এবারের
সংকট বরং আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ, প্রেসিডেন্ট
ওবামার সামনে আর কোনো নির্বাচন নেই, তিনি
তাঁর অবস্থান থেকে নড়বেন না।
মজার বিষয় হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ওবামার সামনে যদি আরও একবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকত, তাহলে সে নির্বাচনে তিনি নির্ঘাত বিজয়ী হতেন। কারণ, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে বিরোধিতার কারণে সৃষ্ট এ অচলাবস্থায় তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কথা। যদিও এ মুহূর্তে এ সম্পর্কে কোনো জনমত জরিপের খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু এটা খুব সহজেই বোঝা যায়। কারণ ‘পেশেন্ট প্রটেকশন অ্যাক্ট’ ও ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ নামে দুটি আইনের মাধ্যমে তিনি আমেরিকান জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গরিববান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘ওবামাকেয়ার’, তা প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের প্রথম মেয়াদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার উদ্যোগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। ১৯৯৬ সালে রিপাবলিকানদের বাজেট-বিরোধিতার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ওই বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে, অথচ ১৯৯২ সালে প্রথমবার তিনি পেয়েছিলেন ৪৩ শতাংশ ভোট।
কিন্তু এ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ওবামার জনপ্রিয়তা বাড়া-কমা অন্তত তাঁর জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। আমেরিকান জনগণের জন্যও এটা গৌণ বিষয়। ওবামার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ তাঁর মৌলিক আদর্শের একটা অংশ। এই আদর্শিক লড়াইয়ে তিনি হারতে রাজি নন। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিতের নেতা, গরিবের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গরিবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্যবিমা করার সামর্থ্য নেই। ওবামা এ অবস্থা বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয়, বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি তাঁকে তা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে। আমেরিকান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান দলের হাতে, সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওবামাকেয়ার আটকে গেলে ডেমোক্র্যাটরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এ বাধা ক্ষণস্থায়ী। প্রেসিডেন্ট ওবামা তো আশা করছিলেন, শুক্রবারের মধ্যেই একটা সমঝোতা হয়ে যাবে। কিন্তু তা যখন হলো না, তখন বড়ই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হলো। ইতিমধ্যে মার্কিন অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে শেয়ারবাজারের সূচক।
জনগণের করের টাকা সরকার কীভাবে খরচ করবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। গণতান্ত্রিক বা প্রতিনিধিত্বশীল সরকারব্যবস্থার এ মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অনুশীলন আমেরিকায় বেশ ভালোভাবেই চলছে। বিরোধী দল সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করছে না বলে সরকার টাকা খরচ করতে পারছে না—বাংলাদেশে এমন কথা আমরা ভাবতেও পারি না। কিন্তু আমেরিকায় এটাই স্বাভাবিক অনুশীলন। অবশ্য এ অনুশীলন এবার কতটা গঠনমূলকভাবে ঘটছে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওবামাকেয়ার ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি।
পয়লা অক্টোবর সরকারের অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলার পত্রিকাটিতে লিখেছেন, ওবামাকেয়ার বানচাল করতে দক্ষিণপন্থীরা যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে মধ্যপন্থী, শান্তশিষ্ট লোকজন বিরক্তির বা হয়রানির (এক্সাসপারেশন) শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন। ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের এ বিরোধকে কেলার ‘ক্রুসেড’ হিসেবে বর্ণনা করে লিখেছেন, রিপাবলিকানদের এ তৎপরতাকে পণ্ডিতেরা বর্ণনা করছেন পাগলামিপূর্ণ, বুদ্ধিবিবেচনাহীন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অসৎ, সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, উদ্ভট এবং রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী বলে। এ রকম সমালোচনা শুধু যে উদারপন্থী-মধ্যপন্থীরাই করছেন, তা নয়। বিল কেলার আরও লিখেছেন, দক্ষিণপন্থীদের পক্ষে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার জন্য ব্লগ লেখেন জেনিফার রুবিন নামে যে রাজনৈতিক ব্লগার, তিনি পর্যন্ত রিপাবলিকানদের ওবামাকেয়ার-বিরোধিতার সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘তাঁদের কোনো ধারণাই নেই তাঁরা আসলে কী করছেন।’ সিএনবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ওবামাও ‘এক্সাসপারেশন’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেছেন, তিনি শান্ত থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তা পারছেন না।
বিল কেলার আরও মন্তব্য করেছেন, রিপাবলিকানদের দক্ষিণপন্থা ষাটের দশকের মতো রূপ নিয়েছে। তিনি তাঁদের ওবামাকেয়ারের বিরোধিতাকে বলেছেন ‘রিপাবলিকানদের ভিয়েতনাম’। আর কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-এর ওয়াশিংটন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার নেইল ম্যাকডোনাল্ড লিখেছেন, রিপাবলিকানদের এ তৎপরতার পেছনে রয়েছে একটা ‘পারভার্স ম্যাথ’ বা বিকৃত হিসাব-নিকাশ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ওবামা সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে লিখেছে, তিনি বলেছেন, ওবামাকেয়ার নিয়ে রিপাবলিকানরা যে বিরুদ্ধতার লড়াই শুরু করেছেন, তাতে তাঁরা শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারবেন না। ‘জয় আমাদেরই হবে। জনপ্রশাসনের এ অচলাবস্থা কাটতে কত সময় লাগবে, সেটা কোনো ব্যাপার না, শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতব। আর শেষ ফলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
এ কথায় খেপে গিয়ে কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার বলেছেন, ‘এটা কোনো খেলা নয়’ যে এখানে জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন থাকবে। স্পিকারের এ মন্তব্য ধরে নিউইয়র্ক টাইমস-এ ৪ অক্টোবর খুব কড়া একটা নিবন্ধ লিখেছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকার চার্লস ব্লো। তিনি স্পিকারের সমালোচনা করে লিখেছেন, স্পিকারের বক্তব্য ভুল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা একটা খেলাই বটে এবং রিপাবলিকানদের এ খেলায় মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন স্পিকার নিজেই, যা থেকে বের হওয়ার এখন আর কোনো সহজ পথ নেই। নিশ্চিতভাবেই এটা একটা খেলা, রিপাবলিকানরা এ ভয়ংকর ও মর্মান্তিক খেলায় মেতেছেন জনগণের পার্লামেন্টে বসে।
মজার বিষয় হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ওবামার সামনে যদি আরও একবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকত, তাহলে সে নির্বাচনে তিনি নির্ঘাত বিজয়ী হতেন। কারণ, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে বিরোধিতার কারণে সৃষ্ট এ অচলাবস্থায় তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কথা। যদিও এ মুহূর্তে এ সম্পর্কে কোনো জনমত জরিপের খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু এটা খুব সহজেই বোঝা যায়। কারণ ‘পেশেন্ট প্রটেকশন অ্যাক্ট’ ও ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ নামে দুটি আইনের মাধ্যমে তিনি আমেরিকান জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গরিববান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘ওবামাকেয়ার’, তা প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের প্রথম মেয়াদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার উদ্যোগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। ১৯৯৬ সালে রিপাবলিকানদের বাজেট-বিরোধিতার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ওই বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে, অথচ ১৯৯২ সালে প্রথমবার তিনি পেয়েছিলেন ৪৩ শতাংশ ভোট।
কিন্তু এ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ওবামার জনপ্রিয়তা বাড়া-কমা অন্তত তাঁর জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। আমেরিকান জনগণের জন্যও এটা গৌণ বিষয়। ওবামার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ তাঁর মৌলিক আদর্শের একটা অংশ। এই আদর্শিক লড়াইয়ে তিনি হারতে রাজি নন। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিতের নেতা, গরিবের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গরিবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্যবিমা করার সামর্থ্য নেই। ওবামা এ অবস্থা বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয়, বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি তাঁকে তা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে। আমেরিকান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান দলের হাতে, সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওবামাকেয়ার আটকে গেলে ডেমোক্র্যাটরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এ বাধা ক্ষণস্থায়ী। প্রেসিডেন্ট ওবামা তো আশা করছিলেন, শুক্রবারের মধ্যেই একটা সমঝোতা হয়ে যাবে। কিন্তু তা যখন হলো না, তখন বড়ই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হলো। ইতিমধ্যে মার্কিন অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে শেয়ারবাজারের সূচক।
জনগণের করের টাকা সরকার কীভাবে খরচ করবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। গণতান্ত্রিক বা প্রতিনিধিত্বশীল সরকারব্যবস্থার এ মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অনুশীলন আমেরিকায় বেশ ভালোভাবেই চলছে। বিরোধী দল সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করছে না বলে সরকার টাকা খরচ করতে পারছে না—বাংলাদেশে এমন কথা আমরা ভাবতেও পারি না। কিন্তু আমেরিকায় এটাই স্বাভাবিক অনুশীলন। অবশ্য এ অনুশীলন এবার কতটা গঠনমূলকভাবে ঘটছে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওবামাকেয়ার ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি।
পয়লা অক্টোবর সরকারের অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলার পত্রিকাটিতে লিখেছেন, ওবামাকেয়ার বানচাল করতে দক্ষিণপন্থীরা যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে মধ্যপন্থী, শান্তশিষ্ট লোকজন বিরক্তির বা হয়রানির (এক্সাসপারেশন) শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন। ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের এ বিরোধকে কেলার ‘ক্রুসেড’ হিসেবে বর্ণনা করে লিখেছেন, রিপাবলিকানদের এ তৎপরতাকে পণ্ডিতেরা বর্ণনা করছেন পাগলামিপূর্ণ, বুদ্ধিবিবেচনাহীন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অসৎ, সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, উদ্ভট এবং রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী বলে। এ রকম সমালোচনা শুধু যে উদারপন্থী-মধ্যপন্থীরাই করছেন, তা নয়। বিল কেলার আরও লিখেছেন, দক্ষিণপন্থীদের পক্ষে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার জন্য ব্লগ লেখেন জেনিফার রুবিন নামে যে রাজনৈতিক ব্লগার, তিনি পর্যন্ত রিপাবলিকানদের ওবামাকেয়ার-বিরোধিতার সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘তাঁদের কোনো ধারণাই নেই তাঁরা আসলে কী করছেন।’ সিএনবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ওবামাও ‘এক্সাসপারেশন’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেছেন, তিনি শান্ত থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তা পারছেন না।
বিল কেলার আরও মন্তব্য করেছেন, রিপাবলিকানদের দক্ষিণপন্থা ষাটের দশকের মতো রূপ নিয়েছে। তিনি তাঁদের ওবামাকেয়ারের বিরোধিতাকে বলেছেন ‘রিপাবলিকানদের ভিয়েতনাম’। আর কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-এর ওয়াশিংটন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার নেইল ম্যাকডোনাল্ড লিখেছেন, রিপাবলিকানদের এ তৎপরতার পেছনে রয়েছে একটা ‘পারভার্স ম্যাথ’ বা বিকৃত হিসাব-নিকাশ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ওবামা সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে লিখেছে, তিনি বলেছেন, ওবামাকেয়ার নিয়ে রিপাবলিকানরা যে বিরুদ্ধতার লড়াই শুরু করেছেন, তাতে তাঁরা শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারবেন না। ‘জয় আমাদেরই হবে। জনপ্রশাসনের এ অচলাবস্থা কাটতে কত সময় লাগবে, সেটা কোনো ব্যাপার না, শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতব। আর শেষ ফলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
এ কথায় খেপে গিয়ে কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার বলেছেন, ‘এটা কোনো খেলা নয়’ যে এখানে জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন থাকবে। স্পিকারের এ মন্তব্য ধরে নিউইয়র্ক টাইমস-এ ৪ অক্টোবর খুব কড়া একটা নিবন্ধ লিখেছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকার চার্লস ব্লো। তিনি স্পিকারের সমালোচনা করে লিখেছেন, স্পিকারের বক্তব্য ভুল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা একটা খেলাই বটে এবং রিপাবলিকানদের এ খেলায় মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন স্পিকার নিজেই, যা থেকে বের হওয়ার এখন আর কোনো সহজ পথ নেই। নিশ্চিতভাবেই এটা একটা খেলা, রিপাবলিকানরা এ ভয়ংকর ও মর্মান্তিক খেলায় মেতেছেন জনগণের পার্লামেন্টে বসে।
রাজনৈতিক কাজিয়া
যুক্তরাষ্ট্রও তা হলে মুক্ত নয়!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে তালা
পড়েছে। দেশের আইন সভায় বার্ষিক বাজেট সময়মতো পাস না হওয়াতেই এ বিপত্তি। আর এ ধরনের
বিপত্তির পেছনে রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তার
বিরোধী পক্ষ রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি
পরিষদের তীব্র দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের আপাত কারণ বারাক ওবামার চালু করা সবার জন্য
স্বাস্থ্য পরিসেবা সংক্রান্ত আইন। 'ওবামা-কেয়ার' নামে সমধিক পরিচিত এ আইনের
কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব নাগরিককে কম খরচে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
আইনটি পাস হয় ২০১০ সালে। চলতি অক্টোবর মাস থেকেই এর একটি বড় অংশ কার্যকর হওয়ার
কথা। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির এতে ঘোরতর আপত্তি। তারা যুক্তি দিচ্ছে, ওবামা প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে
করদাতাদের অর্থের অপচয় করছে। প্রতিনিধি পরিষদে যেহেতু রিপাবলিকান পার্টির যথেষ্ট
সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই
তারা বাগড়া লাগিয়েছে। তারা দাবি করছে,
বাজেট পাস করব। কিন্তু সেজন্য 'ওবামা-কেয়ার' বাতিল না হোক, অন্তত বছর খানেক স্থগিত রাখা
হোক। প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রতিপক্ষ দলের এ ধরনের মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, 'তারা সরকার চালানোর জন্য
মুক্তিপণ দাবি করছে।' বাংলা
ভাষায় প্রবাদ আছে_ বাঘে-মহিষে
লড়াই হয়/উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। যুক্তরাষ্ট্রে যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে
কর্তৃত্ব করা দুটি রাজনৈতিক দলের এই জেদি ও অনড় মনোভাবের পরিণতিতে গভীর অর্থনৈতিক
সংকট ও মন্দা থেকে মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ফের রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে বলে রাজনীতি ও
অর্থনীতির পণ্ডিতরা মনে করছেন। এই অচলাবস্থা যদি দুই সপ্তাহ ধরে চলে, তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার
০.৩ শতাংশ কমতে পারে। আর যদি তিন বা চার সপ্তাহ টানা চলে তা হলে এটা কমে যাবে ১.৪
শতাংশ। এমন পরিস্থিতি নিকট অতীতে নয়,
বরং ১৭ বছর আগে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বের
সবচেয়ে ধনী এবং এক নম্বর সামরিক পরাশক্তির দেশটিতে রাজনৈতিক কাজিয়া ও পাল্টাপাল্টি
বেশ ভালো মাত্রাতেই রয়েছে। তবে এর চেয়েও বড় বিপদ রয়েছে সামনের দিনগুলোতে। অক্টোবর
মাসের মাঝামাঝি প্রতিনিধি পরিষদে সরকারের ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বা সিলিং বাড়ানোর
প্রস্তাব পাস হতে হবে। বর্তমানে সরকার ১৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ধার করতে পারে।
এর পরিমাণ বাড়ানো না হলে অনেক খরচ চালাতে পারবে না। বেতন পাবেন না সরকারি
কর্মচারীরা। টান পড়বে সামরিক তহবিলে। দুই দলের এই ঠোকাঠুকিতে বিশ্বের অর্থনীতিও
টালমাটাল হয়ে উঠতে পারে।
বাংলা ভাষায় ধনী-গরিবের প্রভেদ
বোঝাতে একাধিক প্রবাদ রয়েছে। যেমন_ ধনীরা
খেলে বাতাসা, গরিবে
চাটলে চাঁড়া। যার ব্যাখ্যা অনেকটা এরূপ হতে পারে_ ধনীরা মাটির চাঁড়া বা ভাঙা টুকরা খেলেও সেটাকে
চিনির বাতাসা হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্যদিকে, গরিবদের ক্ষেত্রে বিষয়টি দাঁড়ায় এ রকম_ তারা কি আর বাতাসা খেতে পারে? এত পয়সা কোথায় ওদের? ধনবান কেউ হয়তো দেখতে পেলেন যে, দরিদ্র কেউ বাতাসার মতো কিছু
একটা খাচ্ছে। তবে এটা নিশ্চয়ই চাঁড়া হবে। বাংলাদেশে প্রধান দুটি দলের মধ্যে
রাজনৈতিক সংঘাত প্রায় তিন দশকের পুরনো। তারা নির্বাচন করে। কিন্তু পরাজিত পক্ষ
পারতপক্ষে জাতীয় সংসদের পথে পা মাড়ায় না। এক পক্ষ উত্তরে হাঁটে তো অন্য পক্ষ রওনা
হয় দক্ষিণে। বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষ যে সন্তুষ্ট, সেটা বলা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো
ধনবান দেশগুলোও বাংলাদেশের 'দুই
দলের সংঘাতের রাজনীতিতে' নিয়মিত
উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সালিশ-মধ্যস্থতার উদ্যোগও দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রধান
রাজনৈতিক দলগুলোর এমন ধরনের কাজিয়া যে তাদের আদৌ পছন্দ নয়, সেটা প্রকাশ্যেই বলে তারা।
এজন্য তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করা হয়। এ ধরনের উন্নত দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাসের এমনকি
সাধারণ কর্মীরাও নিজেদের জন্য অবস্থান নির্ধারণ করেন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্থানে। এই
অভাবী দেশে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিজেদের দেশে কী ঘটে, তার প্রতি নজর দেওয়ার অবকাশ
কোথায় তাদের!